স্কুলের পর পুলিশে নিয়োগেও প্যানেল বাতিল। অনিয়মের জেরে এমনই নির্দেশ দিয়েছে আদালত। অনেক পুলিশকর্মী চাকরি হারাতে চলেছেন।
বিজ্ঞাপন
রাজ্য সরকার ২০১৯ সালে কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ প্যানেল বেরোয়, যা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ২০২২ সালে স্টেট ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা দায়ের করেন অভিযোগকারীরা। চ্যালেঞ্জ করা হয় ৮ হাজার ৪১৯ জন পুলিশ কনস্টেবলের নিয়োগকে। পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া খারিজের দাবি করেন মামলাকারীরা।
ট্রাইব্যুনাল নিয়োগ সংক্রান্ত গলদ সংশোধনের নির্দেশ দেয় রাজ্যের পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডকে। এরপর প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় মেধা তালিকা। কিন্তু তাতে বিতর্ক থামেনি। অভিযোগ, সংরক্ষণের নিয়ম সঠিক ভাবে অনুসরণ করা হয়নি।
পুরনো তালিকার ১৩৭ জনকে বাদ দেওয়া হয় নতুন তালিকায়। এই দ্বিতীয় তালিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। হাইকোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ দেয়।
‘সংরক্ষণ সংক্রান্ত নিয়ম না মানায় প্যানেল বাতিল হয়েছে’
তালিকা বাতিল
এবার সেই দ্বিতীয় তালিকা বাতিল করে দিল হাইকোর্ট। বুধবার প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, রিক্রুটমেন্ট বোর্ড ২০২১ সালে যে প্রথম তালিকা প্রকাশ করেছিল, সেটি বৈধ। চলতি বছরে যে সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তা বাতিল করেছে আদালত।
অর্থাৎ যাদের নাম দ্বিতীয় তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে, তাদের চাকরিও বাতিল হতে চলেছে। সেই শূন্যস্থান পূরণ করা হবে প্রথম তালিকা থেকে বাদ যাওয়া সংরক্ষিত শ্রেণিভুক্ত চাকরিপ্রার্থীদের থেকে।
যদিও যাদের চাকরি আপাতত বাতিল হচ্ছে, তাদের জন্য আশার কথাও শুনিয়েছে আদালত। প্রথম তালিকার প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়ার পর প্রয়োজন থাকলে বা শূন্যপদ তৈরি হলে আপাতত বাদ পড়া প্রার্থীদের নিয়োগ করা যাবে।
বিরোধীদের বক্তব্য, রাজ্য সরকার যে কোনো স্তরেই নিয়োগ করুক না কেন, সেখানে নিয়ম ভাঙা হচ্ছে। যদিও স্কুল থেকে পুরসভায় যে দুর্নীতি বা টাকার লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে, কনস্টেবলের ক্ষেত্রে তা হয়নি।
এই মামলার আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "অনেক সংবাদমাধ্যম এর ভুল ব্যাখ্যা করছে যে দুর্নীতির ফলে প্যানেল বাতিল হয়েছে। আসলে সংরক্ষণ সংক্রান্ত নিয়ম মানা হয়নি। সেই অভিযোগই আমরা করেছিলাম। দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়নি।"
বিক্ষোভকারী কমেছে, তাও প্রতিবাদ চলছে
কলকাতায় শহিদ মিনারের কাছে একধিক প্রতিবাদ চলছে। একটি তো প্রায় নয়শ দিন ধরে। এখন কেমন সেই প্রতিবাদের চেহারা?
ছবি: Subrata Goswami/DW
সবচেয়ে বেশিদিনের প্রতিবাদ
২০১৬ সালে তারা শিক্ষক হওয়ার পরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন। তারপরেও চাকরি পাননি। কারণ, নিয়োগ-দুর্নীতি। অভিযোগ, পয়সা দিয়ে অযোগ্য প্রার্থীরা চাকরি পেয়ে গেছেন। প্রায় ৮৮০ দিন ধরে তারা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। আগে এই বিক্ষোভে প্রচুর মানুষ আসতেন। এখন দেখা যাচ্ছে মাত্র একজনকে। কোনো দিন আরো কিছু বিক্ষোভকারী আসেন। কিন্তু আগের মতো প্রতিদিন এক-দেড়শ মানুষের বিক্ষোভ হয় না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ডিএ আদায়ের দাবিতে
একই হাল বকেয়া মহার্ঘভাতা বা ডিএ আদায়ের জন্য গঠিত সংগ্রামী যৌঘ মঞ্চের। সেখানে কয়েকজন বসে-শুয়ে আছেন। একটা সময় এই মঞ্চও গমগম করত। প্রচুর মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে আসতেন। উৎসাহ-উদ্দীপনা তুঙ্গে ছিল। এখন আর সেই ছবি নেই।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিসিটিভি ক্যামেরা
যৌথ সংগ্রামী মঞ্চে সিসিটিভি ক্যামেরা বসেছে। কারা আসছেন, কী করছেন, তার উপর নজর রাখার জন্য। বিশেষ করে বহিরাগতরা যাতে ঢুকে কিছু করতে না পারে, তার জন্য বেশি করে এই সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অর্থ চাই
এই আন্দোলন টিকিয়ে রাখার জন্য অর্থের আবেদনও জানানো হয়েছে। রাখা হয়েছে ইউপিআইয়ের কিউআর কোড। যা স্ক্যান করে মানুষ পয়সা দিতে পারবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
টেট-বিক্ষোভের একই হাল
যারা টেট পরীক্ষায় পাস করেও চাকরি পাননি, তারা আলাদা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। টেট মানে টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট। যা পাস করলে প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর জন্য শিক্ষকের চাকরি পাওয়া যায়। এখানেও বিক্ষোভকারীর সংখ্যা কমেছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কেন এই অবস্থা?
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, শিক্ষকরাই তাদের মঞ্চে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় আসতেন। এখন স্কুল খুলে গেছে। পরীক্ষা চলছে। প্রশ্নপত্র থেকে খাতা দেখার কাজ আছে। তাই শিক্ষকরা সেভাবে আসতে পারছেন না। অন্য অনেকে ব্যস্ততার জন্য আসতে পারছেন না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
দীর্ঘ আন্দোলনের প্রস্তুতি
অনিরুদ্ধের দাবি, দীর্ঘ আন্দোলনের প্রস্তুতি তারা নিয়েছেন। অগাস্টে তারা দুইটি কর্মসূচি হাতে নিচ্ছেন। ১৪ অগাস্ট তাদের বিক্ষোভের দুইশ দিন পূর্ণ হবে। তখন একটা কর্মসূচি হবে। অগাস্টের প্রথম সপ্তাহেও একটা কর্মসূচি নেয়া হবে। তিনি স্বীকার করেছেন, সকলের একইরকমভাবে লেগে থাকার মানসিকতা থাকে না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উৎসাহ কমছে
মধ্যমগ্রামের অভিষেক সেন স্বীকার করে নিয়েছেন, মানুষের উৎসাহ কমেছে। আগের মতো তাই বিক্ষোভকারী আসছেন না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এভাবে কতদিন?
কল্যানীর তনয়া বিশ্বাস বললেন, এভাবে আর কতদিন চলা যায়? পেট তো চালাতে হবে। কিছু না কিছু কাজ করতে হচ্ছে। তাই আন্দোলনে আর প্রতিদিন আসা যায় না। সবকিছু ছেড়ে যারা আন্দোলনে ঝাঁপিযে পড়েছিলেন, তারা এখন এই কঠোর বাস্তবের সামনে পড়েছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তবু প্রতিবাদ চলছে
মানুষ আগের মতো আসতে পারছেন না। তা সত্ত্বেও প্রতিবাদ থেমে যায়নি। চলছে। প্রতিটি প্রতিবাদমঞ্চে অল্প হলেও মানুষ আসছেন। আগের মতো রোজ প্রত্যেকে আসতে পারেন না। কিন্তু প্রতিবাদের আগুন নিভে যায়নি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
10 ছবি1 | 10
মন্ত্রীকে তলব
স্কুলে নিয়োগের দুর্নীতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরগরম এই রাজ্য। প্রাথমিক স্তরে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় খোদ নিম্ন আদালতের বিচারক হাইকোর্টের বিচারপতির ক্ষোভের মুখে পড়েছেন। এ জন্য বুধবার রাজ্যের আইন মন্ত্রীকে হাইকোর্টে হাজিরা দিতে হয়।
আলিপুর সিবিআই আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায় নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলায় পুলিশকে যুক্ত করেন। কলকাতা হাইকোর্ট সিট গড়ে তদন্ত করানো সত্ত্বেও সিবিআই আদালতের নির্দেশে হাইকোর্ট ক্ষুব্ধ হয়। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিচারকের বদলির নির্দেশ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সরকারি আদেশনামা না বেরোনোয় এখনো বদলির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।
এতে ক্ষুব্ধ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বুধবার খোদ রাজ্যের আইন মন্ত্রী মলয় ঘটককে তৎক্ষণাৎ হাজিরার নির্দেশ দেন। দ্রুত বিচারপতির এজলাসে উপস্থিত হন মন্ত্রী। তিনি জানান, অসুস্থতার জন্য বদলি সংক্রান্ত ফাইলে সই করতে পারেননি। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, ৬ অক্টোবরের মধ্যে বদলির প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
এসএসসি আন্দোলনের ৬০০ দিন, রাস্তায় চাকরিপ্রার্থীরা
৬০০ দিন ধরে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন স্কুলের চাকরিপ্রার্থীরা। ৬০০ দিনের মাথায় কী বলছেন আন্দোলনকারীরা?
ছবি: Subrata Goswami/DW
টানা ৬০০ দিন
কলকাতায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ৬০০ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এসএসসি চাকরিপ্রার্থীরা। আদালতের রায় মেনে এখন তারা সকালে এসে বসেন, বিকেলে উঠে যান।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আন্দোলনের শুরু
চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ ছিল, স্কুলে চাকরির নিয়োগ পদ্ধতিতে দুর্নীতি হয়েছে। আদালতের হস্তক্ষেপে সে বিষয়ে একাধিক মামলা শুরু হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ একাধিক কর্মকর্তা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আদালতের নির্দেশ
আদালতের নির্দেশে বেশ কিছু ব্যক্তিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কিছু আন্দোলনকারীকে চাকরি দেওয়া হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বর্তমান দাবি
চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্য, এসএসসি পাশ করা সকলকেই চাকরি দিতে হবে সরকারকে। চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সঙ্গে অনেকে
শুধু এসএসসি নয়, ময়দানের অন্য প্রান্তে আন্দোলন চালাচ্ছেন টেট, শারীরশিক্ষা, কর্মশিক্ষার চাকরিপ্রার্থীরাও। সকলেরই দাবি, দ্রুত চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সরকারের মনোভাব
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, আন্দোলন করলেই চাকরি পাওয়া যাবে না। আদালতের নির্দেশ মেনেই চাকরি দেওয়া হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আন্দোলনকারীদের পাল্টা
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, তারা দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছেন। সরকার তাদের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। এবার সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
৬০০ দিনের কনভেনশন
শুক্রবার গান্ধীমূর্তির পাদদেশে একটি কনভেশনের আয়োজন করেন চাকরিপ্রার্থীরা। কলকাতার বেশ কিছু বিশিষ্ট মানুষও সেই কনভেনশনে যোগ দিয়েছিলেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আর কতদিন
আন্দোলনকারীরা শিশুদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে এসে যোগ দিচ্ছেন। বিক্ষোভস্থলে বসেই তারা ছেলেমেয়েদের পড়াচ্ছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অসুস্থ আন্দোলনকারী
কঠিন অসুখ নিয়েও দিনের পর দিন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। আন্দোলন চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েছে বহু বিক্ষোভকারী। কিন্তু আন্দোলন গুটিয়ে নেওয়ার প্রশ্নই নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন তারা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
10 ছবি1 | 10
চাকরিপ্রার্থীদের মিছিল
স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে কলকাতার রাস্তায় দিনের পর দিন আন্দোলন অবস্থান চলছে। মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির নীচে ৪০০ দিন অবস্থান করছেন গ্রুপ ডি চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের নিয়ে বুধবার মিছিল করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ছিলেন কংগ্রেস নেতা কৌস্তুভ বাগচীও।
আদালতের অনুমতি নিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দপ্তরের কাছ থেকে শুরু হয় মিছিল। বিজেপি ও কংগ্রেস নেতার তথাকথিত অরাজনৈতিক মিছিলে যোগ দেয়ার মধ্যে অনেকেই রাজনৈতিক তাৎপর্য খুঁজছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এক বছরের বেশি সময় ধরে যারা চাকরির জন্য পথে বসে আছেন, তাদের কী দাবিপূরণ হবে?
স্কুল থেকে সরকারি দপ্তর কিংবা পুরসভা, সব ক্ষেত্রের আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের নিয়ে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। একই সুর কৌস্তুভের মুখে। তাদের দাবি, কর্মসূচির দিনক্ষণ দ্রুতই ঠিক করা হবে।
লোকসভা নির্বাচনের আগে এ ধরনের আন্দোলন ঘিরে রাজনীতি আরও সরগরম হবে নিশ্চিতভাবে। কিন্তু বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীরা কি আদৌ নিয়োগ পাবেন?