1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
বিচার ব্যবস্থাবাংলাদেশ

‘পুলিশের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কর্মশালা প্রয়োজন’

২৪ জানুয়ারি ২০২৫

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর থেকে এক ধরনের ট্রমার মধ্যে আছে পুলিশ। ট্রমা কাটিয়ে পুলিশের পুরোদমে কাজে ফেরার উপায় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মেহতাব খানম।

ঢাকায় একটি আদালতের সামনে কয়েকজন পুলিশ সদস্য
পুলিশের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি রাতারাতি বদলাবে না বলে মনে করেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মেহতাব খানমছবি: Komol Das/DW

ডয়চে ভেলে : পুলিশ তো এক ধরনের ট্রমার মধ্যে আছে৷ এই ট্রমা থেকে বের হওয়ার পথ কী?

অধ্যাপক ড. মেহতাব খানম : যেভাবে ওদের ব্যবহার করা হয়েছে, ওদের তো কমান্ডার যেভাবে নির্দেশনা দেন, সেভাবে ওরা করতে বাধ্য হয়৷ সরকার তো ব্যবহার করেছে৷ যেহেতু ওরা একটু বেশি করে ফেলেছে, সরাসরি মেরেছে স্টুডেন্টদের বা প্রোটেস্টারদের, ফলে ওরা এখন ভয় পাচ্ছে৷ এটা তো স্বাভাবিকভাবেই হওয়ার কথা৷ যদি সাধারণভাবে বলি, ট্রমা থেকে বের হওয়া কঠিন৷ এটা নির্ভর করে কখন কোন পরিস্থিতিতে ট্রমাটাইজ হয়েছে তার ওপর৷ ট্রমার অনেকগুলো ধরন আছে৷ যেমন, ছোটবেলায় যদি কেউ সেক্সসুয়ালি অ্যাবিউজড হয় বা মা-বাবার অনৈতিক কিছু দেখে যদি সে ট্রমাটাইজ হয়, এমন অনেক ট্রমা আমরা ছোটবেলায় ফেস করি৷ এই ট্রমাটা সারাজীবন ধরে আমাদের পীড়া দিতে থাকে৷ এ কারণে নানা ধরনের মানসিক অসুস্থ্যতা হয়৷ কিন্তু এদের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে সেটা তো অ্যাডাল্টদের হয়েছে৷ এখন এরা কোন ধরনের ট্রমায় ভুগছে সেটা আমরা নির্ধারণ করতে পারছি না৷ এটা নির্ধারণ করা খুবই মুশকিল৷ যতক্ষন না তারা সেটা বলছে৷ ওরা তো এগিয়ে আসছে না যে, ‘আমরা ট্রমাটাইজ হয়েছি তোমরা আমাদের সহযোগিতা করো৷'

তাদের স্বাভাবিক কাজে ফিরিয়ে আনতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন বা সরকারের কিছু করণীয় আছে?

মানসিক অসুস্থতা নিয়ে জেনারেলি বলা মুশকিল৷ এখানে ব্যক্তি ধরে ধরে সমস্যার সমাধান করতে হয়৷ এখন ধরেন, আমি এভাবে বলতে পারি, তোমরা ভয় পেয়ো না, তোমাদের কিছু হবে না৷ উপর থেকে এভাবে বলা যায়৷ কিন্তু অভিভাবকরা বাচ্চাদের কখন আমাদের কাছে নিয়ে আসেন? যখন তারা চেষ্টা করে ব্যর্থ হন৷ আমি করোনার সময় অনেকগুলো কেস পেয়েছি৷ তারা প্যানিক অ্যাটাকে ভুগছিল৷ তারা রাতে ঘুমালেই ঘুম ভেঙে যাচ্ছে এবং তাদের মনে হচ্ছে, তারা এক্ষুনি মারা যাবে৷ তাদের চিকিৎসা করতে গিয়ে আমি দেখেছি, রুটটা অনেক পেছনে৷ এখন ধরেন, পুলিশের যারা কাজে যোগ দিয়েছেন, কিন্তু কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে দেখতে হবে, তাদের আগে কোনো ট্রমা ছিল কিনা৷ মানসিক স্বাস্থ্যটা ভিন্ন একটা ক্ষেত্র৷ একটা মলম দিয়ে দিলে কিছু হবে না৷ এখন ঊর্ধ্বতনরা তাদের নিয়ে বসলেও হবে না, কারণ ঊর্ধ্বতনদের তো ট্রমার স্কিলটা নেই৷ এখন কার মধ্যে কতটুকু ট্রমা কাজ করছে, সেটা দেখতে হবে৷

পোশাকের পরিবর্তন অনেকটা মলম লাগানোর মতো: ড. মেহতাব খানম

This browser does not support the audio element.

পুলিশের পোশাক পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এতে কি মানসিকতায় বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আমরা দেখতে পাবো?

না৷ আমি এই সিদ্ধান্ত একেবারেই পছন্দ করিনি৷ একদমই চিন্তা করে সিদ্ধান্তটা নেওয়া হয়নি৷উপর থেকে কাপড় বদলে দিলে কী হবে? এতে কি মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে? অথবা তাদের ভেতরে যে ভয়টা জমেছে, সেখান থেকে বের হতে পারবে? এটা তো সম্ভব না৷ আমরা সবকিছু উপর থেকে মলম দিয়ে করতে চাই৷ এটাও অনেকটা মলম লাগানোর মতো৷

আমরা দেখছি, অন্য ক্ষেত্রে সরকার মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে৷ যেমন স্কুলে বেতের ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে৷ এখন তো শুধু পুলিশের পরিবর্তন হলে হবে না, সাধারণ মানুষের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনও দরকার৷ সেটা হবে কিভাবে?

সাধারণ মানুষও তো ভীতির মধ্যে আছে৷ তারাও তো কষ্টের মধ্যে আছেন৷ বেতের বিষয়টা উঠাতেই মনে পড়ে গেল, আমি ওই অনুষ্ঠানটাতে ছিলাম৷ ব্যারিস্টার সারা হোসেন মামলাটি করেছিলেন৷ অনুষ্ঠানে সবাই বললেন, যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত৷ সবাই প্রসংশা করলেন৷ কিন্তু আমি শেষে বক্তব্য দিতে গিয়ে বললাম, এই সিদ্ধান্ত আমার পছন্দ হয়নি৷ শিক্ষকের কাছ থেকে বেত কেড়ে নিলাম, কিন্তু তাকে বিকল্প কোনো অপশন তো দিলাম না, তাকে আমরা কোনো ট্রেনিংও দেইনি৷ একটা ক্লাসে ৮০ জন থেকে ১০০ জন শিক্ষার্থী থাকে, শিক্ষক কিভাবে তাদের সামলাবেন? আমরা শিক্ষকদের বেতন বাড়াইনি, জীবন মান উন্নয়ন করিনি৷ অথচ অনেক সুন্দর সুন্দর পদ্ধতি আছে, কিভাবে ক্লাসরুম সামলাতে হয়৷ শিক্ষক ক্লাসে কিভাবে শৃঙ্খলা রাখবেন? পুলিশের কাপড় পরিবর্তন বা বেত কেড়ে নেওয়াকে আমি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখি না৷

পুলিশের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কিভাবে পরিবর্তন হতে পারে?

পুলিশের প্রতি আমাদের রাগটা এত তাড়াতাড়ি কমবে না৷ আমাদের মধ্যে যে ভয় ঢুকেছে, রাগ হয়েছে, বিরক্ত হয়েছি- সেটা যেতে সময় লাগবে৷ জনগণ কি পুলিশকে গিয়ে বলবে যে, ‘আপনারা মন খারাপ করেন না, আমরা আপনাদের সহায়তা করবো৷’

অভ্যুত্থানের পর আমরা দেখছি, পথে-ঘাটে পুলিশকে নিগৃহীত করা হচ্ছে৷ পুলিশ কিছু বললেই উল্টো তাদের উপর চড়াও হচ্ছেন সাধারণ মানুষ৷ এমন পরিস্থিতিতে পরিবর্তনটা কিভাবে হবে?

এটাকে বলা হয় মব আচরণ৷ মানুষ যখন একত্রে থাকে, তখন এক ধরনের আচরণ করে৷ আবার যখন একা থাকে, তখন আরেক ধরনের আচরণ করে৷ এই পুলিশই হয়ত, কাউকে একা পেলে অন্য ধরনের আচরণ করবে৷ আবার মব যখন আক্রমণ করে, তখন সে ক্ষমা চাচ্ছে৷ একটা মবের আচরণ পরিবর্তনের জন্য সামাজিকভাবে কাজ করতে হবে৷ এই পরিস্থিতিতে যেটা হতে পারে, পুলিশের উর্ধ্বতন যারা কর্মকর্তা আছেন, তারা প্রচুর কর্মশালার আয়োজন করতে পারেন৷ যারা বেশি ভীতু আছে তাদের নিয়ে৷ আবার যারা অপারেশনে যাচ্ছেন, তাদের নিয়েও আয়োজন করা যেতে পারে৷ সেখানে যারা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন, তাদের ডাকা যেতে পারে৷ তখন তাদের কথা আলাদাভাবে শুনে পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে, যাতে তারা মন খুলে কথা বলতে পারে৷ তখন দেখা যাবে, এদের মধ্যে কেউ কেউ ভয়াবহভাবে মানসিক অসুস্থতায় পড়েছে৷ তাদের দেখা যাবে, রাতেও ঘুম ভেঙে যাচ্ছে৷ তারা ভয় পাচ্ছেন৷

এত মানুষের দেশে সমাজে যেখানে অস্থিরতা রয়েছে, সেখানে কোনো একটি বাহিনীর কাছে ‘বন্ধুসুলভ' আচরণ প্রত্যাশা করা কতটা সঠিক?

এত মানুষের দেশ বলে কি আমরা কিছু আশা করবো না? মানুষের সংখ্যা দেখেই তো পুলিশ বাহিনীর সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়৷ আমি জানি না, দেশে এখন কত মানুষের জন্য কতজন পুলিশ আছেন৷ এত মানুষের দেশ হলেও আমরা যদি উদ্যোগগুলো নিতে পারতাম, স্কুলগুলোতে যদি সঠিক উদ্যোগ নিতে পারতাম, তাহলে পরিস্থিতি এমন হতো না৷ ছোটবেলা থেকে যদি এগুলো শেখানো যেতো, পুলিশরা তো এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছে৷ পুরো সোসাইটির মধ্যে কাজ করা দরকার৷ আসলে নৈতিক শিক্ষায় আমরা একেবারেই ফেল করে গেছি, নৈতিক শিক্ষাটাই আমরা শিখিনি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ