1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নজরদারিতে একশ সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

পর্নো ওয়েবসাইট, লিংক ও অ্যাপ বন্ধের পাশাপাশি ব্যক্তিকে টার্গেট করছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ডিভিশন৷ একসঙ্গে কাজ করছে পুলিশ, বিটিআরসি ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, সাফল্য কতটা আসবে?

প্রতীকী ছবিছবি: AFP/Getty Images

পুলিশের সাইবার ক্রাইম ডিভিশনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম৷ ‘নিরাপদ ইন্টারনেট' অভিযানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন৷ তিনি জানান, ‘‘এই অভিযানের কাজটি করছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ডিভিশন, বিটিআরসি এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে৷ কাজটি হচ্ছে তিনভাবে৷ ওয়েবসাইট ও লিংক ব্লক, ব্যক্তিকে সাবধান করা এবং প্রয়োজনে মামলা করা৷''

এরই মধ্যে ২০ হাজারেরও বেশি পর্ন ওয়েবসাইট লিংক ব্লক করা হয়েছে৷ কিছু জনপ্রিয় অ্যাপও বন্ধের কথা বলা হয়েছে৷ তবে  সাইটগুলোর প্রায় সবই বিদেশি৷ এর বাইরে ব্যক্তির ওপর নজরদারি করা হচ্ছে৷ ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের তৎপরতা লক্ষ্য করা হচ্ছে৷ এরইমধ্যে একজন চিত্রনায়িকা এবং জনপ্রিয় ইউটিউবারকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷

নাজমুল ইসলাম জানান, ‘‘আমাদের নজরদারিতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেলিব্রেটিসহ কমপক্ষে একশ'রও বেশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী আছেন, যাঁরা পর্নোগ্রাফি করছেন৷ আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে দুই ধরণের অ্যাকশনে যাচ্ছি৷ প্রথমত, তাঁদের কাজ যদি সরাসরি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে না যায় তাহলে তাঁদের ডেকে কন্টেন্টগুলো সরিয়ে ফেলে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে দিচ্ছি৷ আর যাঁরা ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো পর্নোগ্রাফির অপরাধ করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হবে৷ যিনি ক্ষতিগ্রস্ত তিনি যদি মাফ করে দেন তাহলে আলাদা কথা৷ তবে দুই ক্ষেত্রেই সিরিয়াস ক্রাইম হলে তা অমার্জনীয়৷''

তিনি বলেন, ‘‘আর সাধারণভাবে আমরা বিদেশি ও দেশি পর্নো ওয়েবসাইটগুলো যার ইউজার বাংলাদেশ আছে সেগুলো চিহ্নিত করে ব্লক করছি বিটিআরসির মাধ্যমে৷''

পর্নোগ্রাফি কতটা রোধ করা সম্ভব?

 বাংলাদেশে অনলাইন পর্নোগ্রাফি এবং এর ব্যবহার যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তা স্বীকার করছেন সবাই৷ এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন তাও তাঁরা অনুভব করেন৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই প্রক্রিয়ায় সেটা কতদূর বন্ধ করা যাবে?

নানা বিকল্প পথ থাকায়, যারা পর্নো সাইট দেখতে চান তাদের বিরত রাখা সম্ভব নয়: সুমন আহমেদ সাবির

This browser does not support the audio element.

তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং ‘বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অপারেটরস গ্রুপ' বিডিনগ-এর বোর্ড অফ ট্রাস্টির চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ সাবির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই প্রক্রিয়ায় একটা নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত বন্ধ করা সম্ভব৷ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ইউজারকে বিরত রাখাও সম্ভব৷ কিন্তু সমস্যা হলো, যাঁরা পর্নোসাইট ব্যবহার করতে চান, শেষ পর্যন্ত তাঁদের বিরত রাখা সম্ভব নয়৷ কারণ নানা বিকল্প পথ আছে৷ অনলাইনে নানা পদ্ধতি আছে৷ যেসব দেশে সেন্সরশিপ আরোপ করা হয় সেসব দেশে বিকল্প পথেই ব্যবহার করা হয়৷ তাই যারা পর্নোসাইট ব্যবহার করতে চায় তারা করবেই, আটকানো সম্ভব নয়৷''

তিনি বলেন, ‘‘এখানে আরো একটা আশঙ্কার জায়গা হলো অপারেটরের মাধ্যমে ওয়েবসাইট ফিল্টারিং করা হলে আরো অনেক নির্দোষ ওয়েবসাইটে এর প্রভাব পড়তে পারে, জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে৷ যে কারণে নির্বাচনের সময় অনেকগুলো ওয়েবসাইট, এমনকি গুগল, জিমেইলের অনেক সার্ভিস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ আমাদের এখানে সবার দক্ষতা সমান নয়৷ সরকারের নির্দেশ পেয়ে যে যার মতো বন্ধ করছে৷''

সুমন আহমেদ সাবিরের মতে, ‘‘অনলাইন কেন, অফলাইনেও বাংলাদেশ অনেক পর্নোগ্রাফি হচ্ছে৷ এগুলো পুরোপুরি কখনোই বন্ধ করা সম্ভব নয়৷ তবে এই ধরণের তৎপরতার পাশাপাশি আমাদের শিক্ষা, মূল্যবোধ, পারিবারিক বন্ধন এগুলো যদি ঠিক ঠাক থাকে, রাখা যায় তাহলে এগুলো বন্ধ হয়ে যাবে৷ শিশু-কিশোর-তরুণদের জন্য পারিবারিক পরিবেশ, খেলার মাঠ, সুস্থ বিনোদন এগুলোর ব্যবস্থা করতে হবে৷''

টেলিকম কেম্পানিগুলো বড় ভূমিকা রাখতে পারে, তাদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেই তো এগুলো হয়: ফাহিম মাশরুর

This browser does not support the audio element.

তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষক এবং ‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস' বেসিস-এর সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর মনে করেন, ‘‘এই অভিযানে একদম যে কিছু হবেনা তা নয়, কিছুতো হবে৷ তবে যারা ব্যবহার করতে চায় তারা বিকল্প পথ খুঁজে নেবেই৷ এটা যে কীভাবে বন্ধ করা যাবে সেটাই এখন চিন্তার বিষয়৷ অনলাইন পর্নোগ্রাফি মহামারি আকার ধারণ করছে৷ অল্পবয়স্করাও ব্যবহার করছে৷ কে যে কীভাবে ব্যবহার করে বোঝাও মুশকিল৷''

তিনি বলেন, ‘‘তবে এখানে টেলিকম কোম্পানিগুলো একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে৷ কারণ তাদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেইতো এগুলো হয়৷ এখানে তাদের একট কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট আছে৷ বাংলাদেশে যে ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহার হয় তার শতকরা ৫০ ভাগ হলো স্ট্রিমিং৷ আর স্ট্রিমিংয়ের একটি বড় অংশই হলো এই ধরণের সাইটের ব্যবহার৷ টেলিকম কোম্পানিগুলো যত ডাটা বিক্রি করতে পারে ততই তাদের লাভ৷ তারা চাইলে এই সাইটগুলো বন্ধ করতে পারে৷ কিন্তু করেনা৷ উলটো তারা আরো উৎসাহিত করে৷ এছাড়া স্কুল, কলেজে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করা যায়৷''

ফাহিম মাশরুরও বলেন, ‘‘ ইউটিউবের কোনো লিংক বা কানেকটেড সাইট বন্ধ হলে ক্ষতি হতে পারে৷ গুগল, জিমেইলের সেবা ব্যাহত হতে পারে৷ তবে এখনো হয়নি৷''

কাজটি কাজটি হচ্ছে ওয়েবসাইট ও লিংক ব্লক, ব্যক্তিকে সাবধান করা এবং প্রয়োজনে মামলা করা: নাজমুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলামও বলেন, ‘‘পর্নোসাইট বন্ধ করার কারণে অন্য সাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা হতে পারে এই আশঙ্কা অমূলক নয়৷ আমরা সেগুলোও লক্ষ্য করছি৷ যেখানে সমস্যা হবে আমরা তা ঠিক করে দেব৷''

তিনি স্বীকার করেন, ‘‘যদি সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা না যায় তাহলে শেষ পর্যন্ত কোনো অভিযান বা পদক্ষেপই ফলপ্রসূ হয়না৷ একারণে আমরা যাদের আনছি তাদের কাউন্সেলিং করছি৷ মুচলেকা রাখছি, নিরাপদ ইন্টারনেটের জন্য কাজ করবেন, সহায়তা করবেন৷ তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তাদের সামনে নিয়ে আসছি সামাজিক দায়বদ্ধতা সৃষ্টির জন্য৷ আর আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আমরা নিরাপদ ইন্টারনেট নামে হ্যাশট্যাগ ক্যাম্পেইন শুরু করছি৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ