1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা আর বাড়াবাড়িতে রণক্ষেত্র

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৯ এপ্রিল ২০২২

পুলিশ চাইলেই থামাতে পারতো। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ সোমবার রাতেই শেষ করে দিতে পারতো। কিন্তু তারা মঙ্গলবার সকালে ফের শুরু হওয়া সংঘর্ষের চার ঘন্টা পর সক্রিয় হয়।

Bangladesch | Ausschreitungen in Dhaka
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images

আর সক্রিয় হয়ে করে বাড়াবাড়ি। ফলে নীলক্ষেত থেকে সায়েন্স ল্যারেটরি পর্যন্ত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত সংঘর্ষে ৫০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক। কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।  ব্যবসায়ীরা টার্গেট করে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই হামলায় দুই পক্ষই লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে।

মঙ্গলবার দুপুর একটার পর পুলিশ গিয়ে ব্যাপক রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ছুড়ে সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টা করে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে ঢাকা কলেজের দিকে। ব্যবসায়ীরা তাদের পিছনেই ছিলেন। আর ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ছাত্ররা কলেজের ১০ তলা ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। তবে দুই পক্ষেরই অভিযোগ পুলিশ শুরুতে নিষ্ক্রিয়  ছিলো।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্য ৬টা) সংঘর্ষ চলছিলো। বিকেল ৪টার দিকে সংঘর্ষ থামাতে ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসগুলো বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা জানিয়ে ইডেন কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী মহিলা কলেজ ও তিতুমীর কলেছের শিক্ষার্থীরাও তাদের কলেজের সামনে অবস্থান নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।

মোহাম্মদ শহিদ

This browser does not support the audio element.

ঘটনা সামান্য

শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার রাত ১০টার দিকে নিউমার্কেটের চার নাম্বার গেটে  ঢাকা কলেজের কয়েকজন ছাত্র একটি দোকান থেকে বার্গার কিনতে গেলে দাম নিয়ে ঝামেলা হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়। তখন  দোকানের কর্মচারীরা এক হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়। কলেজে ফিরে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বন্ধুদের নিয়ে ফিরে আসলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায়। আরো শিক্ষার্থী আসলে সংঘর্ষ বাধে। রাত তিনটার দিকে ওই সংঘর্ষ শেষ হয়। পুলিশ এসে লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। তখন ঢাকা কলেজের সামনে পুরো মিরপুর রোড বন্ধ হয়ে যায়।

নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শহিদ বলেন,"কোনা চাঁদাবাজির ঘটনা নয়, বার্গারের দাম নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। তবে পুলিশ চাইলে রাতেই দুইপক্ষের সঙ্গে বসে বিষয়টি সমাধান করে দিতে পারত।”

তিনি অভিযোগ করেন,"সকাল ৯টার দিকে ছাত্ররা আবার বেরিয়ে এলেও পুলিশ আসে দুপুর একটার পরে। তারা ঠিক সময়ে আসলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ত না।”

ঢাকা কলেজের  ছাত্র ও ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ফুয়াদ হাসান অভিযোগ করেন,"মঙ্গলবার রাতে নিউমার্কেটে ছাত্রদের মারধর করার পরও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এরপর ছাত্ররা উত্তেজিত হলে সংঘর্ষ হয়। তখন পুলিশ এসে ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে ছাত্রদের ওপর চড়াও হলে পরিস্থিতি খারাপ হয়। রাতেই এটা সমাধান করা যেত। আমাদের বলা হয়েছিল পুরো বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নিউমার্কেটের দোকাপাট খুলবে না। কিন্তু সকালে আবার দোকানপাট খুললে ছাত্ররা প্রতিবাদ জানাতে বের হয়ে আসে। সকাল ৯টার দিকে ফের সংঘর্ষ শুরু হলেও পুলিশ আসেনি। পুলিশ আসে দুপুর একটার পর। আর এসে ছাত্রদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস ছোড়ে। ব্যবসায়ীরা পুলিশের ছত্রছায়ায় থেকে আমাদের ওপর হামলা করে।”

সাজ্জাদ হোসেন

This browser does not support the audio element.

নীলক্ষেত থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি

এই সংঘর্ষে নীলক্ষেত থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি পর্যন্ত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। পুরো এলাকার রাস্তাঘাট ও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়ায় পুরো এলাকা আচ্ছন্ন হয়ে হয়ে পড়ে। রাবার বুলেটের শব্দে মনে হয়েছে যেন কোনো যুদ্ধক্ষেত্র। এর প্রভাবে পুরো ঢাকা শহরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আর শুধু নিউ মার্কেট নয়, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, গাউছিয়াসহ ওই এলাকার ১৫-২০টি মার্কেট বন্ধ হয়ে যায়।

সংঘর্ষ চলাকালে রোগী নিয়ে যাওয়ার সময় একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করা হয়। ব্যবসায়ীরা একটি দেকানে আগুন দেয়ারও অভিযোগ করেন।

দুপুরের আগে ঢাকা কলেজের একদল শিক্ষক বাইরে এসে ছাত্রদের কলেজের ভিতরে নেয়ার চেষ্টা করেন। তখন ব্যবসায়ীরা তাদের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে। তাতে উত্তেজনা আরো বেড়ে যায়। আর ছাত্ররা তাদের ওপর হামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত সড়কে থাকার সিদ্ধান্তে অনঢ় থাকেন।

বিকেল চারটার দিকে ছাত্রলীগের সভাপতি  আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য একটি বিলাসবহুল গাড়িতে করে ঘটনা স্থলে গিয়ে ছাত্রদের নিবৃত্ত করতে চাইলে তোপের মুখে পড়েন। তারা শিক্ষকদের সঙ্গেও কথা বলেন। এর কিছুক্ষণ পর ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাস বিকেল ৫টার মধ্যে বন্ধ করে দেয়ার ঘেষণা আসলে আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্ররা হল না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

আসাদুজ্জামান খান কামাল

This browser does not support the audio element.

পুলিশের শুরুতে নিষ্ক্রিয়তা পরে বাড়াবাড়ি

দুই পক্ষই শুরুতে  পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও পরে বাড়াবাড়ির অভিযোগ করেছেন। আলী হোসেন নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন,"ভাই আমাদের এখন ঈদের বাজার। গত দুই বছর ধরে  আমরা ব্যবসা করতে পারিনি। এখন দোকানপাট বন্ধ থাকলে আমরা পথে বসে যাব। তাই সোমবার রাতেই আমরা এর একটা সমাধান চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আর সকালেও পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়নি।”

তিনি জানান, ওই এলাকায় শুধু নিউ মার্কেট নয় আরো অনেক মার্কেট আছে। ছোট বড় মিলিয়ে অনেক ব্যবসায়ী এখানে ব্যবসা করেন।

একজন ছাত্র আব্দুল কাইউম বলেন,"আমাদের সহপাঠীরা এখন হাসপাতালে আছে। দুইজন আছে আইসিইউতে। আমরা এটা চাইনি। আমরা আমাদের ওপর হামলার বিচার  চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের ওপর উল্টো হামলা করেছে।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সোমবার রাতে পুলিশের আচরণ ছিলো ভয়াবহ। একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলতে দেখা যায়,"তোদের রাজনীতি খেয়ে দেব।”

তবে রমনা জোনের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সাজ্জাদ হোসেন দাবি করেন,"মঙ্গলবার সকালে পুলিশ আশপাশেই ছিলো। তারা পরিস্থিতি পর্যক্ষেণ করছিলেন। ফলে অ্যাকশনে যেতে সময় লেগেছে। ইচ্ছে করে সময়ক্ষেপণ করা হয়নি।”

পুলিশের বাড়াবাড়ি প্রসঙ্গে তিনি বলেন,"করোনার পর আবার ব্যবসা বাণিজ্য শুরু হয়েছে। পুলিশ সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে।”

আর পুলিশ কমিশনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন," পুলিশকে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নিতে হয়। পুলিশ তাই করেছে।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন," যারা এই সংঘর্ষের সাথে জড়িত তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।”

তবে সকালে নিউ মার্কেট থানায় গিয়ে দেখা গেছে রিজার্ভ ফোর্সের পুলিশ সদস্যরা বসে আছেন। তারা জানান উপরের আদেশ না আসা পর্যন্ত তারা বের হবেন না।

এদিকে সন্ধ্যার পর নিউমার্কেট ও আশপাশের এলাকায় মেবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ