1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুলিশের নিস্ক্রিয়তার সুযোগে বাড়ছে পোশাক নিয়ে ‘খবরদারি’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৩ মে ২০২২

নরসিংদী রেলষ্টেশনে পোশাকের জন্য এক নারীর হেনস্থার শিকার হওয়ার ঘটনায় পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের তাৎক্ষণিক নিস্ক্রিয়তা বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশের নিস্ত্রিয়তায়ই এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে৷

বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে মাঝে মাঝেই নানা কর্মসূচি দেখা যায় (প্রতীকী ছবি)ছবি: Sazzad Hossain/DW

এমনকি পুলিশের মধ্যেও পোশাকের বিষয়ে তথাকথিত ‘কট্টর' মানসিকতার মানুষ থাকায় পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে বলেও মনে করেন তারা।

এজন্য মর‌্যাল পুলিশিং-এর গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে তারা বলছেন, ঢাকায়  রোজার মাসে টিপ পরায় এক নারীকে এক পুলিশ সদস্যই ‘অপমান' করেছিলেন। কিন্তু ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারী ব্যবস্থা এখনো দৃশ্যমান নয়। 

পুলিশের জেন্ডার সেনসিটিভ বিষয়গুলো বুঝতে হবে:

This browser does not support the audio element.

নরসিংদী রেলস্টেশনের ঘটনা গত ১৮ মে'র। কিন্তু পুলিশ ঘটনার পর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, মামলা করেনি। হেনস্থার ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরে একজনকে আটক করা হয়। আটক যুবককে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানোর পর আদালতের নির্দেশে ২২ মে পুলিশ একটি মামলা দায়ের করে। তবে এরপর পুলিশ এখন পর্যন্ত আর কাউকেই আটক করেনি। রেলওয়ে থানা পুলিশ মামলা নেয়ার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে থানার সাব ইন্সপেক্টর হাসানুজ্জামান রুমেলকে।

তিনি দাবি করেন, " আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তু এখন পর্যন্ত আটক যুবক ছাড়া আর কাউকেই চিহ্নিত করতে পারিনি।” কিন্তু যে ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, তাতে হামলাকারীদের অনেকের চেহারাই স্পষ্ট। আর পোশাক নিয়ে আপত্তিকর কথা বলে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করেছিলেন এক নারী। একাধিক সূত্র জানায়, হেনস্থার শিকার ওই নারী তার দুই বন্ধুকে নিয়ে ঢাকা থেকে গেলেও হামলাকারীরা স্থানীয়। নারী ও তার বন্ধুদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করা ওই যুবকরা রেল স্টেশন এলাকার পরিচিত মুখ।

নরসিংদীর ঘটনার পর একই ধরনের আরো কিছু ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

পুলিশ মামলা না করে অপরাধীকে সুযোগ করে দিয়েছে: ইশরাত হাসান

This browser does not support the audio element.

নরসিংদীর ঘটনা সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, " যে নারী হেনস্থার শিকার হয়েছেন, তিনি মামলা না করলেও পুলিশ নিজেই মামলা করতে পারতো। তার সঙ্গে যা হয়েছে তা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অপরাধ। তার স্বাধীন চলাচলেও বাধা দেয়া হয়েছে। পুলিশ মামলা না করে অপরাধীকে সুযোগ করে দিয়েছে। আর পুলিশের এই ধরনের নিস্ক্রিয়তার কারণেই পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। পুলিশ ভাবতেই পারছে না যে এটা অপরাধ। এখানে মর‌্যাল পুলিশিং-এর সংকট আছে।”

তিনি বলেন, " বাংলাদেশের আইন ও সংবিধান নাগরিকদের পোশাকের স্বাধীনতা দিয়েছে।  তবে তা যদি নুইসেন্স তৈরি করে, তাহলে আইনে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বিশেষ কোনো ধরনের প্রতিষ্ঠান বা পেশায় ড্রেস কোড থাকতে পারে। ওই নারী জিন্স, টপস পরে কোনো অপরাধ করেননি। যারা হেনস্থা করেছেন তারাই অপরাধী।”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক ফাতেমা শুভ্রা বলেন, "পোশাক এক ধরনের আইডেন্টিটি।  এর মধ্যে এক ধরনের রাজনীতি আছে। আছে ধর্মীয় প্রভাব।   পোশাকের মাধ্যমে সেই রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটে।  কিন্তু সাংবিধানিকভাবেই এটা নির্ধারিত। সেটা উপেক্ষা করে কেউ অন্যের ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করে আধিপত্য স্থাপন করতে চায়। শুধুমাত্র পোশাক নয়, ওই নারীকে হেনস্থার পিছনে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবও কাজ করেছে।  পুরুষতন্ত্র কিন্তু নারীর মধ্যেও থাকতে পারে। যে নারী প্রথম হেনস্থা শুরু করেন, তিনি পুরুষতন্ত্রেরই বাহক।''

তার কথা, "মানুষের স্বাতন্ত্রবোধকে যে সম্মান করতে হয়, এটা যে তার অধিকার, পুলিশে সেই প্রশিক্ষণ এখনো নেই। এটা আসলে ধারণ করতে হয়। সেটা না থাকায় আমরা পুলিশকেও দেখি একই আচরণ করতে। আর আমাদের রাষ্ট্র কাঠামোরও সমস্যা আছে।” 

পোশাক এক ধরনের আইডেন্টিটি: ফাতেমা শুভ্রা

This browser does not support the audio element.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ মনে করেন, "আমাদের সমাজে যে প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গি, তার কারণেই ওই নারী হেনস্থার শিকার হয়েছেন। আর সেই প্রধাগত দৃষ্টিভঙ্গি হলো নারীকে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ রাখতে হবে। তবে সেটার পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা। তাদের কাজ হচ্ছে নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়া । কিন্তু এখানে তারা সেটা করেননি। তাদের মধ্যেও ওই দৃষ্টিভঙ্গি থাকার কারণে তারা নিরাপত্তা দেননি।”

তার কথা, "পুলিশের জেন্ডার সেনসিটিভ বিষয়গুলো বুঝতে হবে। আর ব্যক্তিগত চিন্তাকে প্রাধান্য দিয়ে নয়, কাজ করতে হবে রাষ্ট্রীয় আইন মেনে। এগুলো দুই-এক দিনের প্রশিক্ষণে সম্ভব নয়। মানসিক পরিবর্তন আনতে হলে বিষয়গুলো চর্চার মধ্যে আনতে হবে।”

আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান মনে করেন, "আমাদের সমাজে ট্রানজিশন পিরিয়ড চলছে। কিন্তু অনেকেই পুরোনো ধ্যান ধারণা নিয়ে আছেন। তারা তাদের সেই মাননিকতা ছাড়তে পারছেন না। আক্রমণ করছেন। কিন্তু পুলিশের মধ্যেও পরিবর্তন আসছে না। এটা হওয়া জরুরি। টিপের ঘটনায় পুলিশই তো অপরাধীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।  রাষ্ট্রের মধ্যেও সমস্যা আছে। রাষ্ট্র চাইছে দুই পক্ষকে সন্তুষ্ট রাখতে । কিন্তু সেটা হয় না।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ