পুলিশের বেতন বন্ধ করে দিতে সরকারের প্রতি দাবী জানিয়েছেন সংসদ সদস্য মইনউদ্দীন খান বাদল৷ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনায় এমন দাবী জানান জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের একাংশের এই কাযর্করী সভাপতি৷
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে খবর প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম৷ যুগান্তর তাঁকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, ‘‘আমার কাছে একজন কনস্টেবল চাকরির জন্য এসেছিলেন। আমি তাকে বললাম, এ চাকরি করে কয় টাকা বেতন পাবা? তার উত্তর ছিল, বেতন লাগবে না। কেবল পোশাক থাকলেই চলবে। কনস্টেবলের চাকরি করে তার অবস্থা এখন বেশ ভালো। তাই সরকারকে বলব- পুলিশের বেতন বন্ধ করুন। পোশাকই তাদের জন্য যথেষ্ট।''
পাশাপাশিভিআইপিদের আইন লঙ্ঘনেরওসমালোচনা করেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ৷ বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনি বলেন, ''ভিআইপিরাই সবচেয়ে বেশি নিয়ম লঙ্ঘন করেন। তারা ক্ষমতার দম্ভ দেখান। যাদের ওপর আইন প্রয়োগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা আরও বেশি আইন লঙ্ঘন করেন। ঢাকা সিটির ফুটপাত ঠিক করে মানুষের হাঁটার উপযোগী করা জরুরি। ফুটপাত ঠিক না হওয়ার প্রধান কারণ, এখান থেকে কোনও টাকা ইনকামের রাস্তা নেই।''
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকারকর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল৷ তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, জনগণকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। তারা এখন প্রজায় পরিণত হয়েছে৷
ঘুস দিন, সেবা নিন?
কাঙ্খিত সেবা পেতে ঘুস দিতে হয় বাংলাদেশের জনগণকে৷ টিআইবি পরিচালিত ‘সেবাখাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ ২০১৭’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা গেছে ২০১৭ সালে সেবা পেতে ১৮৬৭ দশমিক ১ কোটি টাকা ঘুস দিতে হয়েছে জনগণকে৷
ছবি: bdnews24.com
নিরাপত্তা পেতে ঘুস
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের৷ টিআইবি পরিচালিত জরিপেও দেখা গেছে, সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত খাত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা এবং ২০১৭ সালে এ খাতে খানা প্রতি ঘুস প্রদানের হার শতকরা ৭২ দশমিক ৫ ভাগ৷ সংস্থাটির কাছ থেকে সেবা নিতে গিয়ে গড়ে প্রতিটি খানাকে ৬ হাজার ৯৭২ টাকা ঘুস দিতে হয়েছে৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
পরিচয়পত্র পেতেও ঘুস
পাসপোর্ট পাওয়া নাগরিকের অধিকার৷ কিন্তু টিআইবি জরিপ বলছে, এ অধিকার পেতে ২০১৭ সালে খানা প্রতি ঘুস প্রদানের হার ছিল শতকরা ৬৭ দশমিক ৩ ভাগ৷ এ খাতে খানাপ্রতি গড় ঘুসের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৮৮১ টাকা৷
ছবি: DW/D. Guha
তৃতীয় অবস্থানে বিআরটিএ
সম্প্রতি নিরাপদ সড়কের দাবিতে করা ছাত্র আন্দোলনের সময়ও রাস্তায় দলবেঁধে ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন কিংবা ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানোর প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল৷ কিন্তু ওঝার ঘাড়েই যে ভূত! টিআইবি জরিপে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সেবা দিতে গিয়ে ঘুস নেয়ার তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
আরো যারা ঘুস নেন
টিআইবি করা এ জরিপে সেবা দিতে গিয়ে ঘুসগ্রহণকারী অন্য সংস্থাগুলো হলো যথাক্রমে: বিচারিক সেবা (৬০ দশমিক শতাংশ), ভূমিসেবা (৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ), শিক্ষা (সরকারি ও এমপিওভুক্ত) (৪২ দশমিক ৯ শতাংশ) এবং স্বাস্থ্য (৪২ দশমিক ৫ শতাংশ)৷
ছবি: DW
বেড়েছে ঘুস প্রদানের পরিমাণ
টিআইবি বলছে, জাতীয়ভাবে প্রাক্কলিত মোট ঘুসের পরিমাণ ২০১৫ সালে ছিল ৮ হাজার ৮২১ দশমিক ৮ কোটি টাকা৷ ২০১৭ সালে তা এক হাজার ৮৬৭ দশমিক ১ কোটি টাকা বা শতকরা ২১ দশমিক ২ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৬৮৮ দশমিক ৯ কোটি টাকা , যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের (সংশোধিত) শতকরা ৩ দশমিক ৪ ভাগ৷
ছবি: Privat
ঘুস না দিলে সেবা দেয়া হয় না
‘ঘুস না দিলে কাঙ্খিত সেবা পাওয়া যায় না’ এমনটি মনে করেন জরিপে অন্তর্ভুক্ত শতকরা ৮৯ খানা৷ ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল শতকরা ৭০ দশমিক ৯ ভাগ৷ টিআইবি বলছে, ‘‘এর মাধ্যমে ধারণা করা যায় যে, দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ তুলনামূলক বৃদ্ধি পেয়েছে৷’’