1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন খোদ পশ্চিমবঙ্গের পুলিশমন্ত্রীর

পায়েল সামন্ত পশ্চিমবঙ্গ
২২ মে ২০২৫

প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর রোষের মুখে পড়লেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের ডিজি। পুলিশমন্ত্রীর মুখেই শোনা গেল পুলিশের গ্রুপবাজির কথা। আবার চাকরিহারাদের আন্দোলনে ক্ষেত্রে পুলিশের অতিসক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ছবি: Debajyoti Chakraborty/picture alliance/NurPhoto

বুধবার উত্তরবঙ্গের ছটি জেলাকে নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিলিগুড়ির উত্তরকন্যা প্রশাসনিক ভবনে এই বৈঠক হয়। সেখানে পুলিশের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা।

পুলিশের ডিজিকে প্রশ্ন

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভায় গ্রামীণ রাস্তা নিয়ে অভিযোগ করেন কোচবিহারের তৃণমূল সাংসদ জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া। তিনি বলেন, "আমি জেলার বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় ঘুরেছি। সেখানে একদিকে রাজ্য সরকার নতুন রাস্তা তৈরি করছে। অন্যদিকে পুরনো রাস্তাগুলি ভেঙে যাচ্ছে। ভারী ট্রাক গ্রামের রাস্তায় ঢুকে রাস্তা নষ্ট করে দিচ্ছে ৷ কেউ দেখছে না।"

এই অভিযোগ শোনামাত্রই ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে। মমতা বলেন, "আমি বারবার বলেছি গ্রামের রাস্তায় কোনও লোডেড ট্রাক যাবে না ৷ কেন পুলিশ এটা দেখছে না ?" এর পরেই সভামঞ্চে উপস্থিত রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের দিকে তাকিয়ে বলেন, "রাজীব, আমি এক কথা কতবার বলব? বারবার আইসি, এসপি আর ডিএমদের বলা হচ্ছে  কেউ টাকা খেয়ে গ্রামের রাস্তায় ট্রাক ঢোকাবেন না।"

মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ দেখে তাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন ডিজি। তা সত্ত্বেও মমতা এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। স্পষ্টতই তিনি প্রশ্ন তোলেন, আর কবে পুলিশ এই বিষয়গুলি দেখবে! মাটি, পাথর, বালি ইত্যাদি পরিবহণের ক্ষেত্রে প্রতিটি ট্রাক একটি নির্দিষ্ট ওজনের পণ্য বোঝাই করতে পারে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ট্রাক ওভারলোড করে বেআইনিভাবে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রকাশ্যে এই অনিয়ম চলতে থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না বলে অভিযোগ ওঠে।

সেই অভিযোগ প্রশাসনিক বৈঠকে করে পুলিশকে কাঠগড়ায় তুলে দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ, যার জন্য রাজীব কুমারের মতো দক্ষ আইপিএস অফিসারকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। অথচ এই রাজীব কুমার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থাভাজন হিসেবেই পরিচিত। তাকে ভরা সভায় প্রশ্নের মুখে ফেলে মুখ্যমন্ত্রী পুলিশের সব অংশের কর্মীদের বার্তা দিতে চাইলেন বলে মনে করা হচ্ছে।

পুলিশের মধ্যে দলবাজি 

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী। উত্তরবঙ্গের প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি পুলিশের মধ্যে দলবাজির অভিযোগ তুলেছেন।

উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা-সহ বিভিন্ন জেলার আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। সীমান্ত লাগোয়া জেলার জেলাশাসক, পুলিশ সুপারদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কোচবিহারের পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্যের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। 

মমতা বলেন, "উনি (চন্দন দাস) হেডকোয়ার্টার দেখেন। তাকে কাজ করতে দাও না। একজনকে হেডকোয়ার্টারে বসিয়ে রাখবে আর সে শুধু চা-বিস্কুট খেয়ে চলে যাবে? সে কাজ চায়, তুমি কাজ করতে দেবে না! তোমরা নিজেদের মধ্যেই গ্রুপ তৈরি করে নিচ্ছ! এটা করবে না। ওকে কাজে লাগাবে। দিনহাটা, শীতলখুচি, সীমান্ত এলাকায় ওকে কাজে লাগাও। আমরা রাজনীতির লোকজন বেশি গ্রুপ করি। আমরা তাই জেনে এসেছি।"

পুলিশের মধ্যে দলবাজি নিয়ে এর আগেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের সাবেক পুলিশ কর্তা নজরুল ইসলাম ডিডাব্লিউকে বলেন, "পুলিশমন্ত্রী বার্তা দিতে চেয়েছেন যে, তিনি পুলিশকে কাজ করতে বলেছেন। কিন্তু তারা ঠিক মতো কাজ করছে না। পুলিশ যদি ঠিক কাজ না করে তার দায়িত্ব মন্ত্রীকেও নিতে হবে।"

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে বলেন, "পুলিশমন্ত্রী হিসেবে তার যে দায়িত্ব আছে, সেটা থেকে সরে গিয়ে উনি পরিবারের মাথা হিসেবে নিজেকে উপস্থিত করছেন। এটা একটা রাজনৈতিক কৌশল। এই পরিবারের মধ্যে পুলিশ যেমন আছে, তেমন চাকরিহারারাও আছে। বগটুইতে যারা খুন করেছে, সন্দেশখালিতে যারা জমি লুট করেছে, সকলেই আছে। তিনি পরিবারের কর্ত্রী হিসেবে এদের শাসন করছেন। এটা আসলে নিজের দপ্তরের ত্রুটি-বিচ্যুতি আড়াল করার কৌশল।"

যে দলই সরকারে আসুক না কেন তারা পুলিশকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থে: রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী

This browser does not support the audio element.

অতিসক্রিয়তার অভিযোগ 

সুপ্রিম কোর্টের রায় চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা বিকাশ ভবন অবরুদ্ধ করে দিয়েছিলেন। এর ফলে শুধু সরকারি কর্মী নয়, হাজার হাজার মানুষ আটকে পড়েছিলেন এই প্রশাসনিক ভবনে। গত বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থানরত চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের সরায় পুলিশ। তুমুল গন্ডগোল হয়। আন্দোলনকারীদের দাবি, পুলিশের লাঠির আঘাতে রক্তাক্ত হন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা। 

আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে পুলিশ। বিকাশ ভবনের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে বিক্ষোভ দেখানোয় জামিন অযোগ্য-সহ ১৫টি ধারায় মামলা রুজু করে বিধাননগর উত্তর থানা। সরকারি কাজে বাধা, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস, পুলিশকে মারধর, সরকারি কর্মচারীদের আটকে রাখা, এমন একাধিক ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে ১৭ জন চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর বিরুদ্ধে।

এই মামলার ফলে তাদের গ্রেপ্তারির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদিও আদালত কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে আন্দোলনকারীদের। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ নির্দেশ দিয়েছেন, গ্রেপ্তারির মতো কোনো কঠোর পদক্ষেপ করা যাবে না আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, এই প্রতিবাদীদের মনে রাখতে হবে যে তারা শিক্ষক। বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলন না করে তাদের সেন্ট্রাল পার্কে অবস্থানের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। 

পুলিশের সমন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল দশটার কিছু পরে আন্দোলনকারী ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল ও সুদীপ কোনার বিধাননগর উত্তর থানায় হাজিরা দেন। চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বক্তব্য, তারা ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করছেন। কেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করছে পুলিশ? কেন তাদের ক্ষেত্রে পুলিশ অতিসক্রিয়?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, "যে দলই সরকারে আসুক না কেন তারা পুলিশকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থে। যখন পুলিশের দোষ-ত্রুটি ধরা পড়ে, তখন প্রয়োজন মতো সেটাকে শাসক তুলে ধরে বা গোপন রাখে। সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে এতদিন সরকার চিন্তাভাবনা করেনি। এখন পুলিশের ঘাড়ে দোষ দিয়ে নিজেদের ত্রুটি ঢাকতে চাইছে। আবার কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলন ভেঙে দেয়ার জন্য পুলিশকে কাজে লাগানো হচ্ছে।"

তার মতে, "পুলিশকে যদি এভাবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে পেশাদার বাহিনী হিসেবে তাদের গড়ে তোলা সম্ভব নয়। বিদেশে পুলিশ কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ নেয় না। সেভাবেই তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের দেশে পুলিশ শাসক দলের পক্ষ নেয়। নিজেদের চাকরির স্বার্থেই এটা করতে হয়। এতে সাধারণ মানুষ বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ে। শুধু এই সরকার নয়, আগের সরকারও এভাবেই চলেছে। তাই ২১ জুলাই নিরস্ত্র মানুষের উপর গুলি চালিয়েছিল পুলিশ। অথচ তাদের যদি স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়, তারা দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামলাতে পারে।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ