‘পুলিশের সংবাদপত্রের কথাগুলোই যে মেনে নিতে হবে এমন কথা নেই’
১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ডয়চে ভেলে: পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ‘পুলিশ নিউজ’ নামে একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম চালু করা হচ্ছে৷ পুলিশ সদস্যরাই সাংবাদিকতা করবেন৷ এটা কতটা সফল হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
মোহাম্মদ নুরুল হুদা : পুলিশ বাহিনী একটি পেশাগত বাহিনী৷ আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ জনগণের সেবা করা তাদের কাজ৷ সেখানে তাদের সেবামূলক কাজ সম্বন্ধে, পেশাগত উৎকর্ষতা, পেশাগত যে সীমাবদ্ধতা, যদি সেগুলো জানাতে চায় জনগণকে, সেগুলো জানানো তো বাঞ্ছনীয়৷ এই কাজটি করা হলে, পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সেই লক্ষ্য তারা অর্জন করতে পারে৷ আমার জানা মতে কোনো আইন বা বিধিগত বাধা নেই এটা করার জন্য৷
আপনার জানা মতে, পুলিশে এ ধরনের উদ্যোগ কি আগে ছিল?
ডিটেকটিভ-এর কথা বলবো৷ কিন্তু ডিটেকটিভ ওই রকম প্রফেশনাল জার্নাল নয়৷ এর মধ্যে সাহিত্য আছে৷ পুরো প্রফেশনাল জার্নাল বলা যায় না৷ এখন যেটা করা হচ্ছে, সেটা হয়তো প্রফেশনাল হবে৷ ডিটেকটিভে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, স্মৃতিকথা আরো অনেক কিছু থাকে৷ যতদূর শুনেছি, এখন যেটা হচ্ছে, সেটা পুরো প্রফেশনাল ব্যাপার হতে যাচ্ছে৷
হ্যাঁ ৷ আইজিপি সাহেব বলেছেন৷ তিনি সাংবাদিকতার গোল্ডেন রুলস অনুসরণের কথা বলেছেন...
ভালো৷ দেখা যাক৷ যখন হবে তখন তো দেখাই যাবে৷
পুলিশের কি এরকম একটি পূর্ণাঙ্গ সংবাদমাধ্যমের প্রয়োজন আছে? যদি থাকে তাহলে তো তারা পত্রিকা ও টেলিভিশনেও যেতে পারে...
নিজেদের প্রতিষ্ঠানগত একটা পরিচিতি আছে৷ সেই প্রতিষ্ঠান যদি তাদের নিজেদের কথা বলতে চায়, তাতে অসুবিধা তো দেখি না৷ অসুবিধা কোথায়?
তারা তো শুধু নিজেদের কথা বলবেন না৷ তারা পূর্ণাঙ্গ সাংবাদিকতা করবেন৷ নিজেদের বাইরেও অন্যান্য খবর ছাপবেন৷ তারা বলছেন, পুলিশ সদস্যরাই এখানে সাংবাদিকতা করবেন৷ সেক্ষেত্রে টেলিভিশন বা পত্রিকাও কি তারা করতে পারেন?
আইনগত বা বিধিগত কোনো ব্যত্যয় আছে কিনা আমার জানা নেই৷ যদি আইনগত ও বিধিগত দিক ঠিক করে একটি পেশাদার সংবাদমাধ্যম হয়, তাতে তো অসুবিধা দেখি না৷ এখন তো অনেক ধরনের মিডিয়া- ইলেকট্রনিক, অনলাইন৷ পুলিশেরটা তো এখনো চালু হয়নি৷ আগে চালু হোক, দেখি৷
পুলিশের পক্ষে কি স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা করা সম্ভব? এতে কি পুলিশের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে?
তারা তো এটা স্বচ্ছতার জন্যই করছে৷ তারা তো তাদের কথাগুলোই বলবে৷ তাদের কথাগুলোই যে মেনে নিতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই৷ তারা সাংবাদিকতা করবে, একটা ভিউ আসবে৷ আর নিরপেক্ষতা তো আপেক্ষিক কথা৷ কারো কাছে যেটা নিরপেক্ষ মনে হবে, অন্যের কাছে সেটা নিরপেক্ষ না-ও মনে হতে পারে৷ পুলিশ বাহিনী একটা আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটা সংস্থা৷ তারা আইন-কানুন মেনেই কাজ করবে৷
মূল ধারার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক হবে, নাকি ‘কনফ্লিক্ট’ হবে?
কনফ্লিক্ট হওয়ার কিছু তো নেই৷ এটা সম্পূরক হোক, পরিপুরক সেভাবেই তো আসবে৷ কনফ্লিক্ট হওয়ার তো কোনো জায়গা দেখি না৷ আর এখনো তো বের হয়নি৷ বের হোক, তারপর দেখা যাবে৷
এখানে তো একজন সম্পাদক আছেন৷ একইসঙ্গে একজন পেশাদার সম্পাদক ও পুলিশ কর্মকর্তা- এই দুই দায়িত্ব পালন সম্ভব ? দুইটি পদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হবে না তো?
দেখতে হবে এখন সরকারি কর্মচারিদের যে আচরণ বিধি আছে, ১৯৮৯ সালের, সেটার সাথে এটার কোনো সংঘর্ষ হয় কিনা৷ আমার জানা মতে, পুলিশ অফিসাররা তাদের পাবলিকেশন করতে পারবেন, যেগুলো পিওরলি লিটারারি এবং কালচারাল ভ্যালু আছে, যতদূর মনে হয়৷ এই জিনিসটা যখন তারা করছে, নিশ্চয়ই তারা আইন দেখে নিয়েছে, বিধি দেখে নিয়েছে বলে আমি ধরে নেবো৷
পুলিশ তো একটি প্রশিক্ষিত বাহিনী৷ এখন কি সাংবাদিকতার জন্য তাদের প্রশিক্ষণ এবং পড়াশুনা চালু করা উচিত?
অসুবিধা দেখি না৷ আধুনিক পুলিশে যতরকম ব্রাঞ্চ তার ততরকমের দক্ষতা থাকে, ভালো তো৷ তার যে নির্দিষ্ট একটা লক্ষ্য আছে, সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য জনগণের সহযোগিতা চাওয়া, জনগণকে ইনফর্ম করা- সেই কাজগুলো যদি হয়, সেটা তো সুস্থ সমাজের লক্ষণই বলবো আমি৷
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কিন্তু একটি নিউজ পোর্টাল আছে৷ নাম ডিএমপি নিউজ৷ সেখানে দেখি শুধু উদ্ধার, অভিযান ও তাদের কার্যক্রমের খবর ছাপা হয়৷ শুধুমাত্র এই উদ্ধার অভিযানের খবর দিয়ে একটি পেশাদার সংবাদমাধ্যম হতে পারে?
সেগুলো ভবিষ্যতে বলা যাবে৷ এখন তো হাইপোথেটিক্যাল হয়ে যায়৷ এটা বের হোক৷ তারা যে অবজেকটিভের কথা বলছে, তার সাথে তখন মিলিয়ে দেখা যাবে৷
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, এনজিও বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মাল্টিমিডিয়া ওয়েবাসাইট আছে৷ তারা সেখানে তাদের নানা খবর ও তথ্য দেয়৷ পুলিশেরও যে রকম৷ সেটাকে আমরা সংবাদমাধ্যম বলতে পারি?
এটা তো আমি বলতে পারবো না৷ সংবাদমাধ্যমের সংজ্ঞা কী এটা আমার জানা নেই৷ যদি কোনো স্বীকৃত সংজ্ঞা থাকে, তাহলে সেটা দেখতে হবে৷ সাংবাদিকতা করতে আমাদের দেশে কোনো প্রশিক্ষণের দরকার হয় কিনা, তাদের একটা বডি আছে কিনা৷ কে সাংবাদিক হতে পারবেন, কে পারবেন না- এগুলো আমার জানা নেই৷ অতএব, এটা সংবাদমাধ্যম হতে পারে কি না পারে সেটা তো ওই ধরনের সংজ্ঞার আলোকে দেখতে হবে৷
পুলিশের পোর্টালে কাজ করা পুলিশ সদস্যরা যদি সাংবাদিক হন, তাহলে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে যারা কাজ করেন, তারাও তো সাংবাদিক হবেন?
বললাম তো আমি জানি না৷ সাংবাদিক কে, সাংবাদিকতার সংজ্ঞা কী, এটার প্রফেশনাল বডি কার কী আছে, এগুলো আমার জানা নেই৷ একটা রাজনৈতিক দলের একটা প্রচার মাধ্যম থাকে৷ এটা একটা সরকারি প্রতিষ্ঠান, তার একটা প্রচারমাধ্যম হচ্ছে৷ দুটিকে তো একভাবে দেখা যাবে না৷ সংবাদমাধ্যম হবে কিনা এটা আপনারা বলতে পারবেন৷ আমি বলতে পারবো না৷
এর সঙ্গে তো অর্থ বরাদ্দের প্রশ্ন উঠবে৷ তারা বিজ্ঞাপনও তো নেবেন৷ সরকারি প্রতিষ্ঠান এটা কিভাবে ‘ম্যানেজ’ করবে?
তারা যদি সরকারি ফান্ড না নিয়ে করে, তাদের অন্য জায়গা থেকে ফান্ড আনতে হবে৷ কোথা থেকে ফান্ড আসবে, সেটা জানতে হবে৷ আমার ধারণা সরকারি ফান্ড হবে না হয়ত৷ বেসরকারি ফান্ড থাকে, যেখানে তাদের নিজেদের প্রাইভেট ডোনেশন থাকে৷ প্রাইভেট ফান্ড মানে ফোর্সের মধ্য থেকে, ফোর্সের কন্ট্রিবিউশনে কিছু ফান্ড থাকে৷ সেখান থেকে তারা করতে পারে হয়তোবা৷
বিজ্ঞাপনের প্রশ্নও তো আসবে৷ তাদের তো বিজ্ঞাপনের প্রয়োজন হবে আর্থিক কারণে...
তারা যদি বেসরকারি বডি হিসেবে কাজ করে, তাহলে তো বিজ্ঞাপন নিতে অসুবিধা নেই৷ যেভাবে ডিটেকটিভ (পুলিশ ম্যাগাজিন) নিয়েছে, সেভাবে তারা নিতে পারবে৷