পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, জার্মানিতে অভিবাসীর মৃত্যু
৮ জানুয়ারি ২০২৪
জার্মানির ম্যুলহাইম শহরে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির পর হাসপাতালে এক অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। শহরের অভিবাসীদের একটি কেন্দ্রে তিনি বাস করতেন৷
বিজ্ঞাপন
২৬ বছর বয়সি গিনির ওই অভিবাসীর ঠিক কীভাবে মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি৷ তবে মৃত্যুর কারণ জানতে বিস্তারিত তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
পুলিশ জানিয়েছে, গিনির এই নাগরিক আশ্রয়প্রার্থীদের অভ্যর্থনা কেন্দ্রে নিরাপত্তাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছিলেন। সেসময় তাকে ঠেকাতে দুইবার টেসার (একটি ছোট বন্দুকের মতো যন্ত্র যা কাউকে সাময়িকভাবে অক্ষম করে দেয়) বৈদ্যুতিক ডার্টের গুলি চালানো হয়৷ এরপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তিনি মারা যান৷
বোখুম পুলিশ রোববার বলেছে, কী কারণে গিনির ওই তরুণের মৃত্যু হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ম্যুলহাইম পুলিশের কাছ থেকে তারা তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে।
ঘটনা সম্পর্কে যা জানা গেল
কেন্দ্রটির নিরাপত্তা পরিষেবার তরফে শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশকে সতর্ক করে বলা হয়, ওই ব্যক্তি নিরাপত্তাকর্মীদের উপর হামলা করেছে।
অফিসাররা যখন ওই অভিবাসীকে ধরতে করতে তার ঘরে প্রবেশ করেন, পুলিশ জানায়, সেই সময়েও ওই অভিবাসী তাদের উপর হামলা করেন।
তাকে বাধা দিতে পুলিশ অফিসাররা দুবার টেসার ব্যবহার করেন৷ পুলিশ জানায়, ওই ব্যক্তির উপর টেসারের কোনো স্পষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করেনি তারা।
পুলিশ তাকে ধরার চেষ্টা করে এবং কেন্দ্রটিতে তাকে ধাওয়া করে।
পুলিশ জানিয়েছে, এরপর ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়। সেই সময় দুই পুরুষ অফিসারকে কামড়ে দেয় ওই ব্যক্তি, নারী অফিসারের মাথায় লাথি মারে। অভিবাসী এবং অফিসারদের উভয়ের চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হয়।
পুলিশের বক্তব্য, অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে চিকিৎসা নেওয়ার সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন ওই ব্যক্তি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তিনি মারা যান।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের কাউন্সেলিং করা হচ্ছে।
নর্থ-রাইন ওয়েস্টফালিয়ার সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস (এসপিডি) পার্লামেন্টারি গ্রুপ রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ঘটনাটির অপারেশনাল রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যের সংসদে সেই প্রতিবেদনের সর্বশেষ ফলাফল জমা দিতেও অনুরোধ করেছে তারা।
জার্মানিতে অভিবাসন: কে, কেমন সুবিধা পাচ্ছে?
জার্মানিতে শরণার্থীরা কী ধরনের রাষ্ট্রীয় সুবিধা পান তা নিয়ে নানা সময় নানা ধরনের বক্তব্য দেন রাজনীতিবিদরা৷ এই নিয়ে বিভ্রান্তিও সৃষ্টি হয়৷ চলুন জেনে নেই এ সংক্রান্ত কিছু তথ্য৷
ছবি: Bodo Schackow/dpa/picture alliance
স্বাস্থ্যসেবা
রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীরা শুধুমাত্র অত্যন্ত প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা এই দাঁতের চিকিৎসা পেয়ে থাকেন৷ এধরনের সেবা বলতে শারীরিক আঘাত পাওয়ার মতো ব্যাপার বোঝানো হয় যার চিকিৎসা হাসপাতালে হয়ে থাকে৷ জার্মানির সমাজ কল্যাণ দপ্তর সেই সেবার খরচ বহন করে৷
ছবি: picture alliance/dpa/I. Wagner
রাজ্যভেদে নিয়ম আলাদা
জার্মানির ষোলো রাজ্যে স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷ তবে অধিকাংশ রাজ্যে, আশ্রয়প্রার্থীরা চিকিৎসা নেয়ার আগে সমাজ কল্যাণ দপ্তর থেকে সেটির অনুমতি নিতে হয়৷
ছবি: Paul Zinken/dpa/picture alliance
নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা
তবে, জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন করার পর ১৮ মাস পেরিয়ে গেলে কিংবা আশ্রয় মঞ্জুর হয়ে গেলে তখন সেই ব্যক্তি নিয়মিত চিকিৎসা সেবা পেতে পারেন, যার খরচ সংবিধিবিদ্ধ স্বাস্থ্য বিমা তহবিল থেকে আসে৷ কসমেটিক সার্জারির খরচ স্বাস্থ্যবিমা বহন করে না৷
ছবি: Friso Gensch/dpa/picture alliance
প্রাথমিক আশ্রয় ও আবাসন
জার্মানিতে আশ্রয়প্রার্থীরা শুরুতে বিভিন্ন প্রাথমিক অভ্যর্থনাকেন্দ্রে থাকার সুযোগ পান৷ এগুলোতে সাধারণত অনেক মানুষ একত্রে থাকেন৷ সেখানে রুম শেয়ার করে থাকতে হয়৷ তবে সেখানে নিজেদের রান্নাবান্না করার আয়োজন থাকার পাশাপাশি সব বেলা খাবার সরবরাহও করা হয়৷ এসব কেন্দ্রে কয়েক সপ্তাহ থেকে ১৮ মাস অবধি থাকতে হতে পারে৷
ছবি: Patrick Pleul/picture alliance/dpa
আশ্রয়প্রার্থীদের ছড়িয়ে দেয়া হয়
অভ্যর্থনাকেন্দ্র থেকে আশ্রয়প্রার্থীদেরকে একপর্যায়ে বিভিন্ন শহরে থাকা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ছড়িয়ে দেয়া হয়৷ এসবকেন্দ্রে কয়েক ডজন থেকে কয়েকশত মানুষ একত্রে থাকেন৷
ছবি: Markus Schreiber/AP Photo/picture alliance
আর্থিক সহায়তা
একজন আশ্রয়প্রার্থী আশ্রয়কেন্দ্রে সাধারণত প্রয়োজনীয় সবকিছু পেয়ে থাকেন৷ এসবের মধ্যে রয়েছে, খাবার, থাকার ব্যবস্থা, হিটার, পোশাক, প্রসাধনী, এবং গৃহস্থলিতে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্য৷ পাশাপাশি একক ব্যক্তিরা পকেট খরচ হিসেবে মাসে ১৫০ ইউরো অবধি পান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তবে ব্যতিক্রমও আছে
যদি আশ্রয়প্রার্থীকে খাদ্য, পোশাক এবং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ সম্ভব না হয়, তখন তাকে প্রতিমাসে সেসবের জন্য প্রতিমাসে ৩৬৭ ইউরো দেয়া হয়৷ পাশাপাশি তারা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে পারেন৷ কিন্তু সেজন্য মাসে ২০০ ইউরোর বেশি নিতে পারবেন না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য
জার্মান রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে দেশটিতে আশ্রয় নেয়া আশ্রয়প্রার্থীদের সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে৷ এ নিয়ে বিতর্কও দেখা দেয়৷ কারণ, সেখানে অতিরঞ্চিত তথ্যও থাকে৷ ডয়চে ভেলে তাই এধরনের কিছু তথ্য যাচাই করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Grubitzsch
8 ছবি1 | 8
আরকেসি/আরআর (ডিপিএ)
প্রথম প্রকাশ: ৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ইনফোমাইগ্রেন্টস বাংলা
অভিবাসী বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইনফোমাইগ্রেন্টস তিনটি প্রধান ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমের নেতৃত্বে একটি যৌথ প্লাটফর্ম৷ প্লাটফর্মটিতে রয়েছে জার্মানির আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে, ফ্রান্স মিডিয়া মোন্দ, এবং ইটালিয়ান সংবাদ সংস্থা আনসা৷ এই প্রকল্পের সহ-অর্থায়নে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷