1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুলিশে অপরাধ কমাতে পারে জবাবদিহিতা ও কঠোর শাস্তি?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৩ আগস্ট ২০২১

পুলিশ সদস্যদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা কমছে না৷ তারা হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন৷ পুলিশের সাবেক আইজি নূর মোহাম্মদ মনে করেন, ‘‘এটা কমাতে হলে সুপারভাইজিং অফিসারদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে৷’’

ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/Z.H. Chowdhury

তবে অপরাধ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান মনে করেন, ‘‘পুলিশে জবাবদিহিতার অভাবেই এই পরিস্থিতি৷’’

ফেনীতে এক স্বর্ণব্যবসায়ীকে আটক করে ২০টি সোনার বার লুটে নেয়ার ঘটনায় পুলিশের অপরাধ আবারো আলোচনায়৷ ফেনী ডিবির ওসি মো. সাইফুল ইসলামসহ ছয় পুলিশ কর্মকর্তাকে ওই ঘটনায় আটক করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে৷ তবে ২০টি সোনার বারের মধ্যে ১৫টি ওসির কাছ থেকে উদ্ধার করা হলেও পাঁচটি বার এখনো উদ্ধার করা যায়নি৷ লুটকরা সোনার দাম প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ টাকা৷

ব্যবসায়ী গোপাল কান্তি দাস চট্টগ্রাম থেকে ওই সোনার বার নিয়ে ঢাকা যাওয়ার পথে ৮ আগস্ট বিকেলে ডিবির ওই সদস্য তাকে আটক করে ও তিন ঘণ্টা নির্যাতনের পর সোনার বারগুলো লুটে নেয়৷ কাউকে জানালে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়া হয়৷ তিনি সোনার বৈধ কাগজপত্র দেখানোর পরও তাকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হয় বলে এজাহারে অভিযোগ করেছেন গোপাল কান্তি দাস৷

গোপাল কান্তি দাস

This browser does not support the audio element.

বৃহস্পতিবার বিকেলে তার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় বলেন, ‘‘আমি এখনো শঙ্কার মধ্যে আছি- এইটুকু বলতে পারি৷ কারণ, বোঝেন তো পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করেছি৷ ক্রসফায়ারে দেয়া ছাড়াও আমাকে ইয়াবা দিয়ে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়৷ আমার কাছে এক কোটি টাকাও দাবি করেছিল তারা৷’’

এই ঘটনার মধ্যেই বুধবার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআিই)-র এসপি মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছেন পুলিশেরই এক নারী ইন্সপেক্টর৷

পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ আরো অনেক আছে৷ গত বছরের ২৯ জানুয়ারি ঢাকার সদরঘাটে সোহেল নামের এক ব্যক্তিকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৪ লাখ টাকা ছিনতাইয়ে সাত পুলিশ সদস্য জড়িত থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়৷

৩ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ডিবি পরিচয়ে আব্দুল মান্নান নামের এক ব্যক্তির বাসায় প্রবেশ করে তাকে তুলে নিয়ে টাকা আদায়ের ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আটক হন৷

গত বছরের অক্টোবরে সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ছিনতাইকারী সাজিয়ে রায়হান নামের এক যুবককে আটক করা হয়৷ পরে তার কাছ থেকে টাকা দাবি করা হয় বলে অভিযোগ৷ টাকা না পেয়ে তাকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়৷

২০২০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের আউটপাড়া এলাকায় ছিনতাইয়ের অভিযোগে গাজীপুর মহানগর পুলিশের এক কনস্টেবলসহ দুজনকে আটক করে এলাকাবাসী৷ ২৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ডিবি পরিচয়ে এক গাড়িচালকের ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়৷

আর গত বছরের ৩১ জুলাই কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের কথা তো সবার জানা৷ ওই মামলায় ওসি প্রদীপসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে৷

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, এখন বছরে পুলিশের বিরুদ্ধে ২৫ হাজারের মতো অভিযোগ জমা পড়ে তাদের কাছে৷ আর গড়ে দুই হাজার পুলিশের বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুতিসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়৷ পুলিশ সদর দপ্তরের সিকিউরিটি সেল ও আইজিপির বিশেষ সেলে সরাসরি অভিযোগ করা যায়৷ আর আদালতে বা থানায় ভুক্তভোগী সরাসরি মামলাও করতে পারেন৷ তাতে কোনো বাধা নেই৷ কিন্তু বাস্তবে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করা অত সহজ নয়৷

পুলিশের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পুলিশ সদরদপ্তরে আসে তার মধ্যে রয়েছে হত্যা, অপহরণ, ছিনতাই, নির্যাতন, ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টা, যৌন হয়রানি, ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসার মতো অপরাধ৷

নূর মোহাম্মদ

This browser does not support the audio element.

পুলিশের সাবেক আইজি নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘‘পুলিশ সদস্যরা যদি কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা এবং ফৌজদারি আইনে মামলা উভয়েরই সুযোগ আছে৷ এটা ভুক্তভোগীরাও করতে পারেন৷ যদি সঠিক অভিযোগ করা যায়, তাহলে প্রতিকারও পাওয়া যায়৷ তবে সমস্যা হলো, আমরা কঠোর শাস্তি দেখতে পাচ্ছি না৷ কঠোর শাস্তি না হওয়য়া বিপথগামী সদস্যরা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন৷ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে এই প্রবণতা কমে আসতো৷’’

তার মতে , ‘‘এখানে মনিটরিং এবং সুপারভিশনের সমস্যা আছে৷ যারা মনিটরিং ও সুপারভিশনের দায়িত্বে আছেন, তাদের শাস্তির আওতায় আনা দরকার৷ কারণ, আমার অধীনস্থ কেউ অপরাধ করছেন আর আমি জানি না এটা তো হতে পারে না৷”

আর অপরাধ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান মনে করেন, ‘‘পুলিশ পাওয়ার স্ট্রাকচারের সঙ্গে যুক্ত, ফলে তারা অনেক ক্ষমতাবান৷ এটা শুধু এখন নয় , অনেক আগে থেকেই৷ আর সেখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করায় তাদের কেউ কেউ বেপরোয়া হয়ে ওঠে৷ অপরাধে জড়িয়ে পড়ে৷ আর কেউ ধরা পড়লেও তেমন কোনো শাস্তি হয় না৷ বদলি বা সাসপেন্ড হয় বড়জোর৷ ফলে অপরাধ প্রবণতা কমে না৷ আমাদের বিচার ব্যবস্থাও ঠিকমতো কাজ করে না৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘দীর্ঘদিনেও পুলিশ সংস্কার হয়নি৷ ফলে পুলিশ জনবান্ধব না হয়ে ভয়ের কারণ হিসবেই থেকে গেছে৷”

এ বিষয়ে চেষ্টা করেও পুলিশ সদর দপ্তরের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ