নিজের ঢাক নিজেই পেটাচ্ছে পুলিশ৷ তুলে ধরতে চাইছে তাদের মানবিক মুখ৷ কতটা কাজ হচ্ছে তাতে?
বিজ্ঞাপন
ভিডিওটা দেখে চমকে উঠেছিলাম৷ কলকাতার বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে, আবাসনের সামনে হাত মাইক ব্যবহার করে পুলিশের কর্মকর্তারা গাইছেন, ‘উই শ্যাল ওভারকাম’, ‘আমরা করব জয়’৷ করোনার তখন প্রথম ঢেউ৷ লকডাউন চলছে৷ অপ্রত্যাশিত ভাইরাসের আক্রমণে মানুষ ভীত, সন্ত্রস্ত, ঘরবন্দি এবং বিষাদগ্রস্ত৷ তখন সবাইকে চাঙ্গা রাখতে করোনাজয়ের গান গাইছে পুলিশ৷ ভূতের মুখেো রামনামের মতো, অ্যামেরিকার নাগরিক অধিকার আদায়ের জন্য প্রতিবাদের এই গান কি না পুলিশের মুখে? যাদের পরিচয়, অধিকারের আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করার জন্য, নির্মমভাবে বেধড়ক লাঠি, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার জন্য৷ তারাই গাইছে এই গান৷ আর তা দেয়া হচ্ছে কলকাতা পুলিশের টুইটারে৷ নেটিজেনরা তা হামলে পড়ে দেখছেন৷ সংবাদপত্র থেকে ডিজিটাল মিডিয়ায় তা খবর হচ্ছে৷
কলকাতা পুলিশ, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ বা ভারতের অন্য কোনো রাজ্যের পুলিশের খবরের কাগজ নেই৷ সংবাদ বুলেটিনও তারা সচরাচর বের করে না৷ তাদের হাতিয়ার হলো সামাজিক মাধ্যম৷ কলকাতা পুলিশের ওয়েবসাইট আছে৷ টুইটারে অতি সক্রিয় তারা৷ এখানে শুধু কলকাতা পুলিশের অ্যাকাউন্টই নয়, বিভিন্ন থানার, পুলিশের বড়কর্তাদের আলাদা অ্যাকাউন্ট আছে৷ সেখানে থেকে সমানে টুইট করা হয়৷ আর সেসব টুইট দেখলে মনে হবে, পুলিশের থেকে বড় বন্ধু আমজনতার আর কেউ নেই৷ মানুষ বিপদে পড়লেই সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ তার কাছে হাজির৷ দিল্লি পুলিশের তো স্লোগানই হলো, ‘আপকা সাথ, আপকে লিয়ে সদৈব’, মানে, ‘আপনাদের সঙ্গে, আপনাদের জন্য পুলিশ সবসময় প্রস্তুত’৷ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের স্লোগান হলো, ‘উই কেয়ার, উই ডেয়ার’৷ আর কলকাতা পুলিশের ওয়েবসাইটে গর্বের সঙ্গে জানানো হয়েছে, ‘যে কোনো চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত’৷
দক্ষিণ এশিয়ায় যেভাবে পুলিশের নীতিপুলিশি
কোন কোন বিষয়ে পুলিশ, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার পুলিশ, তার নীতিপুলিশি দেখিয়ে আসছে, তার কিছু দৃষ্টান্ত দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Altaf Qadri
দক্ষিণ এশিয়ায় যা হয়
ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে পুলিশকর্তাদের নানা ধরনের আইনবহির্ভূত নীতি আরোপ করায় জড়িত থাকার কথা শোনা যায়৷ বিভিন্ন গোষ্ঠীর সাথে মিলে বা কখনো বিরোধিতা করেও নীতিপুলিশিতে দেখা যায় পুলিশি সম্পৃক্ততা৷ ব্যক্তিগত ও গণপরিসরের মধ্যে ফারাক না করতে পারাও লক্ষণীয় হয়ে ওঠে এক্ষেত্রে৷
ছবি: AFP/Str
নীতিপুলিশি কোনটি?
বিশ্বের বেশ কিছু অঞ্চলে প্রায়ই দেখা যায় পুলিশ তাদের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়৷ যুক্তি হিসাবে দেখানো হয় নৈতিকতা, মূল্যবোধের প্রশ্ন, যা অনেক ক্ষেত্রেই সেই অঞ্চলের আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ে৷ ক্রমশই, এই ‘নীতিপুলিশি’ দক্ষিণ এশিয়ায় বাস্তবতার অংশ হয়ে উঠেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Altaf Qadri
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক উদাহরণ
সম্প্রতি, চলচ্চিত্র পুলিশকে হেয় করার অভিযোগকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হয়েছেন শিল্পীরা৷ মামলার এজাহারে বলা হয়েছে চলচ্চিত্রটি আসলে ‘সুস্থ বিনোদনের পরিপন্থী’৷ কোন বিনোদন সুস্থ, আর কোন বিনোদন তা নয়, এই বিচার কি আদৌ পুলিশে এক্তিয়ারে রয়েছে, প্রশ্ন তুলছেন অনেকে৷
ছবি: bdnews24
ব্যক্তিগত পরিসরেও পুলিশি
ভারতের আইন অনুযায়ী ব্যক্তিগত পরিসরে পর্নো ছবি দেখা কোনো অপরাধ নয়৷ কিন্তু তা উপেক্ষা করে, ২০০৮ সালে পুলিশ দশ নারী ও এক যুগলকে গ্রেপ্তার করে মহারাষ্ট্রের লোনাভলা অঞ্চলে৷ যুক্তি, সমাজে অশ্লীলতা ছড়াচ্ছেন তারা৷ দু’বছর সেই মামলা চলার পর আদালত রায় দেয় যে ব্যক্তিগত স্তরে পর্ন দেখা মোটেও তা করেনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Klose
‘অপারেশন মজনু’
লায়লা-মজনুর গল্প অন্যদের কাছে ভালোবাসার নজির হলেও ভারতে ‘অপারেশন মজনু’ ছিল পুলিশের নীতিপুলিশির উদাহরণ৷ ২০১১ সালে অলকা পাণ্ডে নামের এক নারী পুলিশকর্মীর নেতৃত্বে গাজিয়াবাদ পুলিশ বিভিন্ন পার্কে টহল দেওয়া শুরু করে৷ অপারেশনের অংশ হিসাবে প্রেমিকযুগলদের উঠবস করিয়ে তার ভিডিও করে তারা৷ এই অপারেশনের যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে পাণ্ডে বলেন যে ‘নিষ্পাপ মেয়েদের খারাপ ছেলেদের হাত থেকে বাঁচাতেই’ এমনটা করেছিলেন তারা৷
ছবি: DW/P. M. Tiwari
ভারতে আরো যা
অপারেশন মজনু ছাড়াও ভারতে একাধিকবার জনসমক্ষে এসেছে পুলিশের এক্তিয়ার বহির্ভূত কীর্তিকলাপ৷ যেমন ভ্যালেন্টাইন ডে পালন, সমকামিতা ইত্যাদি প্রসঙ্গে বিভিন্ন পুলিশকর্মীদের মন্তব্য শিরোনামে উঠে এসেছে৷ আলোচিত হয়েছে নির্যাতিত, ধর্ষিত নারীকে নিয়ে করা পুলিশের নানা কটু মন্তব্যও৷
ছবি: AFP/Getty Images/P. Singh
পাকিস্তানের নীতিপুলিশির উদাহরণ
পার্কে কোনো যুগল দেখলেই তাদের অভিভাবকদের কাছে নালিশ জানানোর অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে পাকিস্তানের পুলিশের৷ শুধু তাই নয়, নালিশ না করার ক্ষেত্রে ঘুস নেবার কথাও শোনা গেছে সেখানে৷
ছবি: Reuters/F. Mahmood
পুলিশের সহায়তায় যারা
দক্ষিণ এশিয়ায় নীতিপুলিশির কাজে পুলিশকে সহায়তা করতে দেখা যায় রাজনৈতিক গোষ্ঠী, ধর্মীয় সংগঠন ও কখনো কখনো কর্তৃপক্ষকেও৷ জনতোষ নীতি বনাম আইন বনাম সামাজিক মূল্যবোধের অমীমাংসিত দ্বন্দ্ব দক্ষিণ এশিয়ায় নীতিপুলিশির বান্ধব পরিস্থিতি তৈরি করছে বলে মনে করেন অনেকে৷
ছবি: dapd
8 ছবি1 | 8
হ্যাঁ, যা বলছিলাম, কলকাতা পুলিশের টুইট দেখলে রীতিমতো অবাক হয়ে যেতে হয়৷ এত মানবিক, এত সাহায্যকারী যে বলার নয়৷ অনেকটা অনুপম রায়ের গানের লাইনের মতো, বাড়িয়ে দাও তোমার হাত৷ তাহলেই পুলিশ সেই হাত ধরে সব সমস্যার সমাধান করে দেবে৷ যেমন গত ৪ সেপ্টেম্বর জোড়াসাঁকো থানা এলাকায় এক বৃদ্ধকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ৷ তার পায়ে পচন ধরতে শুরু করেছিল৷ একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ তিনি এখন সুস্থ৷ অথবা এয়ারটেল ও ক্রাই ইন্ডিয়ার সঙ্গে জোট বেঁধে গরিব বাচ্চাদের স্মার্ট ফোন এবং ফ্রি ডেটা সহ সিম কার্ড দেয়ার কাজ করছে কলকাতা পুলিশ৷ করোনাকালে জীবানুমুক্ত করার কাজ নিয়মিত চালাচ্ছে তারা৷ চুরি যাওয়া মোবাইল ফোন ফিরিয়ে দিচ্ছে মালিকদের কাছে৷ রাস্তায় পড়ে থাকা এটিএম কার্ড ও টাকা খুঁজে বের করে মালিকের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে৷ করোনাকালে তো খাবার পৌঁছে দেয়া, হাসপাতালে পৌঁছে দেয়ার কাজ খুবই সক্রিয়তার সঙ্গে করেছে পুলিশ৷ এসবই উঠে এসেছে তাদের টুইটার অ্যাকাউন্টে৷ রীতিমতো সক্রিয় প্রচার চলছে৷
এমন নয় যে, মানুষের পাশে থাকার এই কাজগুলো পুলিশ করেনি৷ করেছে৷ সাধারণ লোককে সাহায্য করার কাজ তারা অবশ্যই করছে৷ তার জন্য তারা প্রচারও করতে পারে সামাজিক মাধ্যমে৷ ভালো কাজের প্রচার তারা কেন করবে না৷ অবশ্যই করবে৷ কারণ, মিডিয়ায় তো তাদের ভালো কাজের কথা সাধারণত আসে না৷ তাই দরকার হলে তারা বুলেটিন বের করবে৷ চাইলে কাগজও বের করতে পারে৷ কিন্তু মুশকিল হলো, এই কিঞ্চিত ভালো কাজ সত্ত্বেও যে পুলিশকে নিয়ে সাধারণ মানুষের লাখ লাখ অভিযোগ আছে৷ অভিযোগ, এই পুলিশই ঘুস ছাড়া কোনো কাজ করে না৷ খুব গরিব খেটে খাওয়া মানুষের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা তোলে৷ ট্রাক, ম্যাটাডোরের কাছ থেকে ঘুষ খাওয়ার দৃশ্য দেখতে দেখতে তো মানুষের চোখ পচে গেছে৷ তা আর নতুন করে কোনো বিতৃষ্ণার জন্ম দেয় না৷ থানায় গেলে পুলিশ এফআইআর নিতে চায় না৷ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল, নেতা, প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে ফল হয় না৷ তারা শত অন্যায় করলেও পুলিশ নড়ে বসে না৷ ক্ষমতাসীন দল, মন্ত্রী, আমলাদের হয়ে তারা হেন কাজ নেই যা করে না৷ পুলিশের এই যে ভাবমূর্তি আমজনতার মনে গেঁথে গেছে, যাদের অভিজ্ঞতা বলে, পুলিশে ছুঁলে আঠারো ঘা, তারা যখন পুলিশেরই এই মানবিক মুখ দেখেন, তখন কি তাদের মনে একটু সহানুভূতি জাগে?
প্রশ্নটা মাথায় আসতেই ফোন ঘোরালাম বন্ধু, পরিচিতদের কাছে৷ তারা সকলেই একবাক্যে বললেন, পুলিশ যখন মানবিক কাজ করে, সাহায্যের হাত বাড়ায়, তখন যে ভালোলাগা জন্মায় তা আদতে বেশিক্ষণ টেকে না৷ কারণ, এরপরই তো পুলিশের সেই চিরাচরিত ছবিটা সামনে চলে আসে৷ যার মধ্যে না কি মানবিকতার ছিঁটেফোটাও থাকে না৷ তাই নিতান্ত বাধ্য না হলে কেউ আইনরক্ষকের কাছে যান না৷
কিছুদিন আগের কথা৷ করোনাকালেনরওয়ের প্রধানমন্ত্রীকে জরিমানা করেছিল সেদেশের পুলিশ৷ আমাদের দেশের টাকায় এক লাখেরও বেশি জরিমানা৷ প্রধানমন্ত্রীর অপরাধ ছিল, তিনি নিজের জন্মদিন পালন করতে গিয়ে করোনাবিধি ভেঙেছিলেন৷ দশজন আমন্ত্রিতের জায়গায় ১৩ জনকে ডেকেছিলেন৷ আর প্রধানমন্ত্রী রীতিমতো ক্ষমা চেয়ে জরিমানা দিয়েছিলেন৷ আমাদের এই উপমহাদেশে কবে যে এরকম দৃশ্য দেখা যাবে! কবে যে ক্ষমতার সঙ্গে নয়, ন্যায়ের সঙ্গে থাকতে শিখবে পুলিশ৷ কবে যে দেখতে পারব, ঘুষ নেয়ার জন্য, অন্যায়ভাবে লাঠি চালানোর জন্য, সাধারণ মানুষের উপর জোরজুলুম করার জন্য পুলিশের শাস্তি হচ্ছে আর সেকথা সগর্বে টুইট করছে পুলিশ নিজেই৷ অথবা কোনো রাজনৈতিক দল, তাদের কর্তারা অন্যায় আবদার করলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে নিচ্ছে এবং সেকথা টুইটারে জানাচ্ছে, অথবা নিয়মিত কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সেই কথা ফলাও করে বলছে তারা৷ তখন বোঝা যাবে, সত্যি সত্যি পুলিশ নিজেদের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সাধারণ মানুষের দিকে৷ তাদের বাঁচার কাজ সহজ করছে৷ গুণ্ডারা ভয় দেখাচ্ছে না, সিন্ডিকেটের কাছ থেকে বালি, ইট কিনতে হচ্ছে না, থানায় গেলে অভিযোগ লেখা হচ্ছে, সেই অভিযোগের সুরাহা হচ্ছে৷ না হলে কয়েকটা মানবিক ঘটনা তুলে ধরে যে ভাবমূর্তির বদল হয় না, হবে না৷
বামেরা একসময় স্লোগান দিতেন, পুলিশ তুমি যতই মার, মাইনে তোমার একশ বারো৷ সে পুলিশ তো এখন নেই৷ সপ্তম বেতন আয়োগের সুপারিশ কর্যকর হওয়ার পর পুলিশের মাইনেও প্রচুর বেড়েছে৷ তাদের দিন আনি দিন খাই অবস্থা আর নেই৷ তাহলে কেন ঘুসের, তোলাবাজির অভিযোগ উঠবে পুলিশের বিরুদ্ধে?
অথচ, পুলিশ চাইলে কী না করতে পারে৷ বইমেলায় হারিয়ে যাওয়া চাবি পর্যন্ত উদ্ধার করে দিতে পারে৷ অবশ্য সেই চাবি যদি কোনো প্রভাবশালী মানুষের হয়, তাহলেই তা উদ্ধার করা হবে৷ যে কোনো অপরাধীকে তারা চেষ্টা করলেই ধরে ফেলতে পারে৷ পকেটমার, ছিনতাইকারী, চোর, ডাকাত চাইলেই ধরতে পারে৷ কিন্তু.....৷
নিজের আসল কাজটা ঠিকভাবে না করলে শুধু টুইট করে, কাগজ বের করে, টিভি চ্যানেল চালিয়ে এবং প্রচারের সব কটা মাধ্যম ব্যবহার করে, উই শ্যাল ওভারকাম গয়ে নিজেদের ভাবমূর্তি বদল করতে পারবে না তারা৷ তাদের মানবিক মুখ বারবার ঢেকে যাবে অমানবিক বিজ্ঞাপনে৷ আর বলতেই হচ্ছে, সে বড় সুখের সময় নয়৷ তাই দয়া করে, নিজেদের কাজটা ঠিকভাবে করুক পুলিশ৷ তখন আর প্রচারের জন্য কিছু না করলেই চলবে৷ মানুষের ধারণা আপনেই বদলে যাবে৷
পুলিশের কপি-কাট-পেস্ট সাংবাদিকতা
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ১ সেপ্টেম্বর পুলিশের নিজস্ব সংবাদভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল ‘পুলিশ নিউজ’ উদ্বোধন করেন৷ এই পোর্টালের জন্য একটি পৃথক রিপোর্টিং টিম থাকবে এবং তারা পুলিশের সদস্য হবেন বলে জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: news.police.gov.bd
পুলিশের সাংবাদিকতা
পুলিশের নিজস্ব সংবাদভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল ‘পুলিশ নিউজ’ (news.police.gov.bd) আনুষ্ঠানিকভাবে ১ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করেছে৷ এই পোর্টালের জন্য একটি পৃথক রিপোর্টিং টিম থাকবে বলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানান মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ৷ টিমের সবাই পুলিশের সদস্য হবেন৷ এছাড়া পুলিশ নিউজ সাংবাদিকতার ‘গোল্ডেন রুলস’ অনুসরণ করবে বলেও জানান তিনি৷
ছবি: bdnews24
উদ্দেশ্য
দুটি উদ্দেশ্যের কথা বলেছেন মহাপরিদর্শক৷ এক, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের অর্জন তুলে ধরা৷ দুই, পজিটিভ বাংলাদেশের খবর প্রচার করা৷ তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ নিউজ হবে পজিটিভ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি৷’’
ছবি: news.police.gov.bd
মূলধারার সংবাদমাধ্যম?
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া আইজিপি বেনজীর আহমেদের বক্তব্যে তেমন আভাস পাওয়া গেছে৷ তিনি বলেন, পুলিশ নিউজের ওয়েবসাইট থেকে সাংবাদিকরা পুলিশের কার্যক্রম-সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহ করতে পারবেন৷ এছাড়া এতে মূলধারার সংবাদমাধ্যমের মতো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খবরও পরিবেশন করা হবে বলে জানান তিনি৷
ছবি: news.police.gov.bd
৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত সংবাদের উৎসসমূহ
২৬ আগস্ট থেকে পুলিশ নিউজে সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে৷ ৭ সেপ্টেম্বর মোট ১৮টি সংবাদ প্রকাশ করা হয়৷ এর মধ্যে চারটি বাদে বাকিগুলো বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া সংবাদ৷ বিডিনিউজ থেকে চারটি, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসস থেকে তিনটি, সমকাল থেকে দুটি এবং দেশ রূপান্তর, ঢাকা পোস্ট, বাংলাদেশ প্রতিদিন, জাগো নিউজ ও প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে একটি করে প্রকাশ হওয়া সংবাদের সূত্র উল্লেখ করে পুরো বা আংশিক প্রকাশ করা হয়েছে৷
ছবি: news.police.gov.bd
বাকি চারটির উৎস
পুলিশ নিউজে ৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশ হওয়া ১৮টি সংবাদের দুটির উৎস ছিল পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট ও পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি৷ বাকি দুটি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘ডিএমপি নিউজ’ থেকে নেয়া হয়েছে৷
ছবি: news.police.gov.bd
কপি-কাট-পেস্ট সাংবাদিকতা
৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত সংবাদগুলোর কোনোটিই পুলিশ নিউজের করা নিজস্ব সংবাদ নয়৷ সবগুলোই বিভিন্ন জায়গায় (গণমাধ্যম ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি) প্রকাশিত সংবাদের পুরো বা আংশিক অংশ ছিল৷ শুধু শিরোনামে পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ অর্থাৎ মহাপরিদর্শক যে রিপোর্টিং টিমের কথা বলেছেন তার উপস্থিতি এখনও টের পাওয়া যায়নি৷
ছবি: news.police.gov.bd
ডিএমপি নিউজ
আইজিপি বেনজীর আহমেদ জানান, তিনি যখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে ছিলেন তখন ‘ডিএমপি নিউজ’ (https://dmpnews.org/) চালু করেছিলেন৷ প্রায় সাড়ে নয় বছর ধরে চালু থাকা ঐ ওয়েবসাইটে এখন প্রতিদিন গড়ে চার লাখ ‘ভিজিট’ হয় বলে জানান তিনি৷
ছবি: dmpnews.org
ডিএমপি নিউজেও কপি-কাট-পেস্ট
৮ সেপ্টেম্বর তামিম ইকবালের নেপালের এভারেস্ট প্রিমিয়ার লিগে খেলার আবেদন নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়৷ সেখানে দেয়া তথ্যের কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি৷ তবে অনলাইনে খোঁজ করে দেখা যায়, প্রায় পুরো তথ্যই জাগোনিউজ২৪ (https://www.jagonews24.com/sports/cricket/697616) থেকে নেয়া হয়েছে৷ জাগো নিউজকে দেয়া আকরাম খানের বক্তব্যও ডিএমপি নিউজে ব্যবহার করা হয়েছে৷ তবে কোথাও জাগো নিউজের নাম উল্লেখ করা হয়নি৷
ছবি: dmpnews.org
সাংবাদিকতার মান?
নয় বছরের বেশি সময় ধরে চালু থাকা ডিএমপি নিউজের একটি শিরোনাম এই প্রশ্ন তোলার যৌক্তিকতা তুলে ধরছে৷ তামিমকে নিয়ে করা সংবাদের শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘নেপালের এভারেস্ট প্রিমিয়ার লিগে খেলবেন তামিম’৷ যদিও আকরাম খানকে উদ্ধৃত করে রিপোর্টেই বলা হয়েছে, তামিম আবেদন করেছেন৷ কিন্তু বোর্ড অনুমতি দিবে কিনা জানা যায়নি! পুলিশ নিউজের পুলিশ কাম সাংবাদিকদের সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণ না দিলে একই চিত্র দেখা যেতে পারে৷
ছবি: news.police.gov.bd
কিছু প্রশ্ন
‘পুলিশ নিউজ’ চালুর একটি লক্ষ্য, পুলিশের অর্জন তুলে ধরা৷ প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশের যদি অর্জন থাকে তাহলে সেটি জনসংযোগ বিভাগের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যমে পাঠানো যেতে পারে৷ গণমাধ্যম যদি মনে করে সেটি আসলেই ‘অর্জন’ তাহলে তা প্রকাশ করবে৷ এজন্য পুলিশের নিজস্ব নিউজ পোর্টাল কেন জরুরি? পুলিশ কি নিজের ঢোল নিজেই পেটাতে চাইছে? আরেকটি যে লক্ষ্যের কথা বলা হচ্ছে, পজিটিভ বাংলাদেশের খবর প্রচার করা, সেটি কি পুলিশের কাজ?
ছবি: Fotolia/Marek
বিএনপির প্রতিক্রিয়া
৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘পুলিশ যখন সাংবাদিকতা করতে চায়, তাহলে বুঝতে হবে যে এই রাষ্ট্র আর নেই৷ এই রাষ্ট্রে করবে না কেন? পুলিশকে এত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যে ওরা নিজেরাই বলে বাতির রাজা হচ্ছে ফিলিপস, মাছের রাজা ইলিশ আর দেশের রাজা হচ্ছে পুলিশ৷’’