অ্যামেরিকায় বিক্ষোভ অব্যাহত। তারই মধ্যে নিউ ইয়র্ক এবং শিকাগো কারফিউ তোলার সিদ্ধান্ত নিল। পুলিশ বিভাগে সংস্কারের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
অ্যামেরিকায় পুলিশ বিভাগে সংস্কার প্রয়োজন। মানছে দেশের বিভিন্ন প্রদেশের প্রশাসন। জনতাকে সেই আশ্বাস দিয়েই রোববার নিউ ইয়র্ক এবং শিকাগোতে কারফিউ শিথিল করেছে প্রশাসন। এর আগে শনিবারও ওয়াশিংটন, আটলান্টা, মিনেপোলিসে কারফিউ শিথিল করা হয়েছিল।
অ্যামেরিকার মিনেপোলিসে গলায় পা দিয়ে জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যা করেছিল সেখানকার পুলিশ। তারপর থেকেই দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। প্রথামিক ভাবে প্রতিবাদ হিংসাত্মক হলেও ক্রমশ তা শান্তিপূর্ণ চেহারা নেয়। শনি এবং রোববারেও দেশের প্রায় প্রতিটি শহরেই বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সাধারণ মানুষ। স্লোগানে উঠে এসেছে সেই পুরনো কথা-- 'ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটারস'। কৃষ্ণাঙ্গদের উপর নির্যাতনের নানা কথা নতুন করে উঠে এসেছে গত কয়েক দিনের আন্দোলনে।
ফ্লয়েডের মৃত্যু ও বিক্ষোভে বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের নির্যাতনে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদ চলছে৷ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দও৷
তিনি বলেন, ‘‘আমরা বর্ণবাদ কিংবা অন্য কোনো কারণে কাউকে বাদ দেয়ার বিষয়ে চোখ বন্ধ করে থাকতে পারি না৷ আমাদের মনে রাখতে হবে, সহিংসতা দিয়ে কিছু অর্জন করা যায় না৷’’
ছবি: Reuters/R. Casilli
বরিস জনসন
ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনার সমালোচনা করে চলমান বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী৷ তবে বিক্ষোভ দমনে ট্রাম্পের শক্তি প্রয়োগের ইচ্ছার সমালোচনা থেকে বিরত থেকেছেন তিনি৷
ছবি: AFP/UK Parliament/J. Taylor
চীন
যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদকে ‘মার্কিন সমাজের একটি দুরারোগ্য ব্যাধি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র৷ যুক্তরাষ্ট্রে সহিংস বিক্ষোভের খবর বেশ ভালোভাবে কাভার করছে চীনের সরকারি প্রচারমাধ্যম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Wong
ইইউ
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান হোসেপ বোরেল বলেন, পুলিশি নির্যাতনে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুতে ইউরোপ ‘হতভম্ব’ হয়ে গেছে৷ বিক্ষোভ দমাতে ‘অত্যধিক শক্তি প্রয়োগ’ না করতেও ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস যুক্তরাষ্ট্রে চলা বিক্ষোভ সমর্থনযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন৷ এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পরিবর্তন আসবে বলেও আশা করছেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kappeler
ইরান
নিজের নাগরিকদের উপর ‘সহিংস’ না হতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ এক সংবাদ সম্মেলনে মুখপাত্র আব্বাস মুসাভি মার্কিন জনগণের উদ্দেশে বলেন, ‘‘রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে আপনাদের প্রতিবাদ বিশ্ব দেখছে৷ বিশ্ববাসী আপনাদের পাশে আছে৷’’ এছাড়া মার্কিন কর্মকর্তা ও পুলিশদের প্রতি জনগণকে নিঃশ্বাস নিতে দেয়ারও আহ্বান জানান তিনি৷
ছবি: mfa.ir
ঘানা
প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আদ্দু ফ্লয়েড হত্যার ঘটনায় কৃষ্ণাঙ্গ মানুষসহ সারা বিশ্বের মানুষ ‘অবাক ও হতবিহ্বল’ হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/PhotoshotS. Haijun
ফিলিপাইন্স
প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে চলমান বিক্ষোভ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ এই ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করে দুতার্তে বলেন, অ্যামেরিকার বিক্ষোভের মতো কিছু ফিলিপাইন্সে ঘটছে না বলে নিজেকে তিনি সৌভাগ্যবান মনে করেন৷ তাহলে করোনা ভাইরাস মোকাবিলার কাজটি কঠিন হয়ে যেতো বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/Malacanang Presidential Photographers Division/K. N. Alonzo
বারাক ওবামা
ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর দেয়া প্রথম ভিডিও বার্তায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জানান, তিনি তাঁর জীবনে এমন বিক্ষোভ দেখেননি৷ সমাজের সমস্যাগুলো সমাধানের এমন সুযোগ কাজে লাগাতে তিনি মার্কিনিদের প্রতি আহ্বান জানান৷
ছবি: Getty Images
মার্ক রুটে
নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ দমনে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহারের দৃশ্য তাঁকে ‘মর্মাহত’ করেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘ফ্লয়েডকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য৷ তবে যুক্তরাষ্ট্র শুধু একমাত্র দেশ নয় যেখানে অনেক মানুষকে সমাজে পুরোপুরি গণনা করা হয় না৷’’ নেদারল্যান্ডসেও বর্ণবাদ ও বৈষম্য আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
ছবি: imago/Hollandse Hoogte/P. Hilz
10 ছবি1 | 10
শুধু অ্যামেরিকাতেই নয়, ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও। বিক্ষোভকারীরা বার বার প্রতিবাদ জানিয়েছেন পুলিশি বর্বরতার। অভিযোগ, পুলিশ বিভাগের মধ্যে বর্ণবাদী মানসিকতা এখনও প্রবল। এর আগেও একাধিকবার কৃষ্ণাঙ্গদের উপর পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে। ফলে আন্দোলনের গোড়া থেকেই বিক্ষোভকারীরা পুলিশ বিভাগের সংস্কারের দাবি তুলছিলেন।
প্রাথমিক ভাবে নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, মিনেপোলিস-সহ বিভিন্ন প্রদেশে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে, কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে। ফলে বিক্ষোভের তেজও বেড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় কারফিউ করে বিক্ষোভকারীদের আটকানোর চেষ্টা করেছে প্রশাসন। কিন্তু তাতেও ফল বিপরীত হয়েছে।
প্রতিবাদের ভয়ানক চাপে ট্রাম্প
জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদ আরো তীব্র হচ্ছে৷ ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজ ঘিরেও চলছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ এবং যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর পুলিশের নির্যাতন বন্ধ করার দাবি৷ দেখুন ছবিঘরে...
হোয়াইট হাউজের কাছের এক ভবনে আলো দিয়ে লেখা, ‘‘আমরাা শ্বাস নিতে পারছি না৷’’ মৃত্যুর আগে জর্জ ফ্লয়েড বারবার বলছিলেন, ‘‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না৷’’ বিক্ষুব্ধ সব মানুষের মনে ফ্লয়েডের সেই আকুতির প্রতিধ্বনি৷
হোয়াইট হাউজের কাছে পড়ে আছে কোনো এক প্রতিবাদকারীর ফেলে যাওয়া কোট-পিন, সেখানে লেখা, ‘‘#প্রতিবেশীকে ভালোবাসো (কোনো ব্যতিক্রম নয়)৷
ছবি: Reuters/E. Thayer
11 ছবি1 | 11
শনিবার থেকে একে একে বিভিন্ন প্রদেশ কারফিউ শিথিল করতে শুরু করে। আন্দোলনের মূলকেন্দ্র নিউ ইয়র্কে তা তোলা হয় রোববার। জনতাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আর কোনও বাধা নেই। একই সঙ্গে প্রশাসনিক স্তরেও পুলিশ বিভাগে সংস্কারের দাবি উঠেছে। কোনও কোনও জায়গায় বলা হচ্ছে, পুলিশ বিভাগ সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়ে নতুন করে তৈরি করার কথা। শুধু তাই নয়, পুলিশের জন্য একেকটি রাজ্য যে বিপুল অর্থ ব্যয় করে তা-ও কমানোর দাবি তোলা হয়েছে। পুলিশের শিক্ষা নিয়েও সরব হয়েছেন অনেকে।
ডেমোক্র্যাট রাজনীতিবিদ আলেকজান্দ্রিয়া করটেজ বলেছেন, নিউ ইয়র্কে শুধুমাত্র পুলিশ বিভাগের পিছনে প্রায় ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়। দ্রুত এই সেখানে ব্যয় সংকোচ করা দরকার। মিনেপোলিসে সিটি কাউন্সিলের ১৩ জন সদস্যের মধ্যে নয় জন দাবি তুলেছেন, দ্রুত পুলিশ বিভাগে ব্যয় সংকোচ হোক এবং প্রয়োজনে সেখানকার পুলিশ বিভাগ ভেঙে দিয়ে নতুন করে তৈরি করা হোক।
অ্যামেরিকায় এ সব দাবি নতুন নয়। পুলিশের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষ, জাতি বিদ্বেষ, ধর্মীয় বিভেদের অভিযোগ বহু দিনের। দীর্ঘ দিন ধরে দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান তা নিয়ে সরব হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনা আগুনে ঘি ঢেলেছে। প্রায় এক দশক পরে অ্যামেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে কারফিউ করতে হয়েছে। এবং এই প্রথম, বিক্ষোভকারীদের পুলিশ বিভাগে সংস্কারের দাবি প্রশাসনিক মহলেও আলোড়ন তুলেছে।