শহীদুল আলমকে ‘নির্যাতনের’ তদন্তের আহ্বান
৭ আগস্ট ২০১৮প্রখ্যাত আলোকচিত্রী এবং অ্যাক্টিভিস্ট শহীদুল আলমকে রবিবার রাতে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে যায় একদল লোক৷ সেই ঘটনার পর পুলিশ প্রথমে এই মানবাধিকার কর্মীকে আটকের খবর অস্বীকার করলেও সোমবার দুপুরে তাঁকে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারার আওতায় গ্রেপ্তারের খবর জানায় এবং একইদিন বিকেলে ঢাকার একটি নিম্ন আদালতে হাজির করে৷
আদালতে রিমান্ডের আবেদনে পুলিশ দাবি করে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে শহীদুল আলম ‘‘দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে কল্পনাপ্রসূত অপপ্রচার চালাচ্ছেন৷ এর মাধ্যমে জনসাধারণের বিভিন্ন শ্রেণিকে শ্রুতিনির্ভর মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে উসকানি দিয়েছেন, যা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর৷ সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ ও অকার্যকররূপে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপন করেছেন৷''
<iframe src="https://www.facebook.com/plugins/video.php?href=https%3A%2F%2Fwww.facebook.com%2Farafatul%2Fvideos%2F10160737693590506%2F&show_text=0&width=560" width="560" height="315" style="border:none;overflow:hidden" scrolling="no" frameborder="0" allowTransparency="true" allowFullScreen="true"></iframe>
অন্যদিক, শহীদুল আলমকে রিমান্ডে নেয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই বলে আদালতকে জানান তাঁর আইনজীবীরা৷ আটকের পর তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন আইনজীবীরা৷ তবে আদালত শহীদুল আলমের সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন৷
ওদিকে, আদালতে প্রবেশ এবং বের হওয়ার সময় শহীদুল একাধিকার বলেছেন, ‘‘আমাকে আঘাত করা হয়েছে৷ আমার রক্তাক্ত পাঞ্জাবী ধুয়ে আবার পরানো হয়েছে৷'' আদালতে তাঁকে খালি পায়ে অন্যদের সহায়তা নিয়ে হাঁটতে দেখা গেছে৷ মঙ্গলবার অবশ্য হাইকোর্ট শহীদুল আলমকে গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজত থেকে দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে৷
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘সরকার এবং সরকারপন্থিরা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার সমালোচনা করায় আলমকে ৫ আগস্ট আটক করা হয়৷''
বিবৃতিতে পুলিশ হেফাজতে শহীদুল আলমকে ‘নির্যাতনের' ঘটনার তদন্তের পাশাপাশি তিনিসহ শান্তিপূর্ণভাবে সরকারের সমালোচনা করায় যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের সবাইকে অনতিবিলম্বে ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে৷
‘‘বরং কর্তৃপক্ষের উচিত, ক্ষমতাসীন দলের তরুণ ও যুবক সমর্থকসহ যারা লাটি এবং চাপাতি নিয়ে শিশুদের উপর আক্রমণ করেছে তাদের বিচার করা,'' লেখা হয়েছে বিবৃতিতে৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করার পাশাপাশি ২০ সাংবাদিকের উপর হামলার বিষয়টিও বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে৷ এতে লেখা হয়েছে, ‘‘যদিও সাংবাদিকদের উপর হামলাকারীদের কেউ কেউ হেলমেট পরে ছিল, তারপরও সাংবাদিকরা হামলাকারীদের কয়েকজন আওয়ামী লীগের তরুণ ও যুবকর্মী বলে চিহ্নিত করেছে৷''
প্রসঙ্গত, ঢাকায় ২৯ জুলাই সড়ক দুর্ঘটনায় দুই স্কুলশিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে বিভিন্ন স্কুল এবং কলেজের শিক্ষার্থীরা৷ এরপর কয়েকদন রাজপথে বিভিন্ন গাড়িচালকের লাইসেন্স পরীক্ষাসহ নানা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে তারা৷ কিন্তু গত শুক্রবার শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ এবং ছাত্রলীগের কর্মীরা চড়াও হলে ছাত্র বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়৷ স্কুল শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাজপথে বিক্ষোভ শুরু করে৷ ফলে গত কয়েকদিনে কয়েকশত শিক্ষার্থীর পাশাপাশি সাংবাদিক, পুলিশ এবং ছাত্রলীগের কর্মীরা আহত হয়৷ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারেরও ঘটনা ঘটে৷
এদিকে, চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)৷ ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের মিশনের প্রধানরা বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘‘আমরা আশা করি সকল পক্ষ শান্তি থাকবে এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানানোর মানুষের অধিকারের প্রতি সম্মান জানাবে৷ বিক্ষোভকারী, সাংবাদিক ও অন্যদের ওপর বেআইনি হামলা বন্ধ হওয়া দরকার৷''