1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পূজার আনন্দে রূপান্তরকামীদের বিষাদ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১ অক্টোবর ২০২২

দুর্গোৎসবে শামিল সমাজের সব অংশের মানুষ৷ রূপান্তরকামীদের উদ্যোগে এবারও পূজা হচ্ছে কলকাতায়৷ ঈশ্বরের আরাধনা হচ্ছে অর্ধনারীশ্বর রূপে৷ থিমের সাজেও রয়েছে তৃতীয় লিঙ্গ৷

Transgender Puja
ছবি: Payel Samanta/DW

সমাজ তাদেরকে তির্যক নজরে দেখে৷ সমাজের মূলস্রোতে শামিল হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রূপান্তরকামীরা৷ কিন্তু দেবীর আরাধনায় কারো বাধা থাকার কথা নয়৷ তাই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা গত কয়েক বছর ধরে পুজোর আয়োজন করছেন কলকাতায়৷ এবার সঙ্গে নিয়েছেন পথশিশু ও অ্যাসিড আক্রান্তদের৷

ষষ্ঠ বছরের পূজা

২০১৭ সালে রূপান্তরকামীদের সংগঠন এটিবিএইচ বেঙ্গল পূজা শুরু করে৷ গোখেল রোডে সংগঠনের কার্যালয়ের কাছে পুজো অনুষ্ঠিত হতো৷ গত দুই বছরের মতো এবারও পূজা হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি আবাস গরিমা গৃহে৷

প্রধান উদ্যোক্তা রঞ্জিতা সিনহা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের গ্রহণ করার ক্ষেত্রে অনেক দ্বিধা এখনো আছে৷ তাহলে কীভাবে আমরা পূজায় সামিল হব? যাতে অন্য কারো দুয়ারে না যেতে হয়, তাই আমাদের ঘরেই নবরাত্রির আয়োজন৷’’

আমাদের ঘরেই নবরাত্রির আয়োজন: রঞ্জিতা সিনহা

This browser does not support the audio element.

নারী  পুরুষের সমন্বয়

শারদোৎসবে মূলত অসুরদলনী দুর্গার পূজা করা হয়৷ কোথাও কোথাও দেখা যায় পূজা পাচ্ছেন হরগৌরী৷ রূপান্তরকামীদের পুজোয় হরগৌরী রূপকে একটি মূর্তিতে সমন্বিত করা হয়েছে৷ অর্থাৎ, প্রতিমার অর্ধেক অংশে শিবের রূপ, বাকি অংশে দুর্গার৷ কেন অর্ধনারীশ্বর মূর্তির পূজা করার উদ্যোগ?

রূপান্তরের কামনা যাদের মধ্যে, তাদের মন-শরীরে নারী ও পুরুষের সমন্বয়৷ তারই প্রতিফলন হয়েছে উপাস্য দেবতায়৷

এই পূজার টানে বিদেশ থেকেও দর্শনার্থীরা আসেন৷ এদের কেউ কেউ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে গবেষণায় যুক্ত৷ যেমন কানাডা থেকে এসেছেন ফিলিপ লেগাস ও অরা ফ্রেনেট৷

তৃতীয় লিঙ্গের পুরোহিত

গরিমা গৃহের সদস্য এখন ২৫ জন৷ এদের পূজা প্রায় সর্বার্থেই স্বনির্ভর৷ অর্থাৎ পূজার উদ্যোক্তা-পরিচালক সবাই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ৷ পুরোহিতও তাদের নিজেদের সমাজের৷

বছর পাঁচেক ধরে এই পূজার পৌরোহিত্য করেন বৈশালী দাস৷ তিনি নারীতে রূপান্তরিত হয়েছেন৷ পূজা করে চলেছে অর্ধনারীশ্বর প্রতিমার৷ এমনিতেই পুরোহিত সমাজে নারীর উপস্থিতি প্রায় বিরল৷ বলা যায়, একই সঙ্গে জোড়া পাহাড় ডিঙিয়েছেন বৈশালী৷

ডয়চে ভেলেকে বৈশালী বলেন, ‘‘আমার মা রঞ্জিতা সিনহার কাছ থেকে পুজো শিখেছি৷ পাঁচ বছর অর্ধনারীশ্বর পুজো করছি৷ এর পাশাপাশি শীতলা ও মনসা পূজাও করি৷’’

পূজার থিমে তৃতীয় লিঙ্গ

তৃতীয় লিঙ্গকে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট৷ সরকারি তরফে এই সম্প্রদায়কে নিয়ে কিছু উদ্যোগও দেখা যায়৷ তবে জনসমাজে এদের ঘিরে অনুষ্ঠান বিরল৷

এবার কলকাতায় কাঁকুড়গাছি যুবকবৃন্দ-র পূজার থিম- রূপান্তরকামী৷ মানুষ ভিড় করছেন মণ্ডপে আর চিনছেন সমাজের ব্রাত্যজনকে৷ এর কতোটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে?

ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সজেন্ডার বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য রঞ্জিতার বক্তব্য, ‘‘এতে মানুষের চেতনা বাড়ে নিশ্চয়ই৷ কিন্তু কয়েকদিন দর্শনার্থীদের সামনে একটা থিম তুলে ধরলেই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায় না৷ দেখতে হবে, সারা বছর তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সমাজের সর্বক্ষেত্রে কতটা গ্রহণ করা হচ্ছে৷ সেটা না হলে থিম করে লাভ নেই৷’’

রূপান্তরকামীদের হতাশা

গত পাঁচ বছর ধরে গরিমা গৃহে অর্ধনারীশ্বরের আরাধনার পর তা বিসর্জন দেওয়া হয় না৷ এবার নতুন প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে৷ এই

পূজা ঘিরে প্রতি বছর আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের মধ্যে৷ একটা সুন্দর দিনের প্রত্যাশায় থাকেন তারা৷ কথায় কথায় উঠে আসে হতাশা৷

বৈশালীর মন্তব্য, ‘‘তৃতীয় লিঙ্গ আইনী স্বীকৃতি পেলেও আমরা তেমন এগোতে পারিনি৷ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর অন্য রাজ্যে কিছু কাজ এগিয়েছে৷ আমাদের রাজ্যে তা হয়নি৷’’

গণিতে স্নাতকোত্তর, বিএড পড়ুয়া রূপান্তরকামী সুমনা প্রামাণিক আগে ছিলেন সুমন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার আমাদের কোন সমস্যার সমাধান করেছে? আমাদের পায়ের তলায় জমি নেই, মাথার উপর ছাদ নেই৷ মাঝেমধ্যে মনে হয় আত্মহত্যা করে নিই! আর ওই পুজোর থিম লোক দেখানো, কিছু মানুষের আত্মসন্তুষ্টি৷’’

দুর্গাকে ভক্তরা বলেন দুর্গতিনাশিনী৷ প্রশ্ন থাকে, তিনি বৈশালী-সুমনাদের দুর্গতি দূর করবেন কবে?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ