পূর্ণকুম্ভ শুরু, দুই লাখ কোটি রাজস্বের আশায় যোগী সরকার
১৩ জানুয়ারি ২০২৫চার হাজার হেক্টর এলাকা ভাগ করা হয়েছে ২৫টি সেক্টরে। মানুষ যাতে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারেন সেজন্য তৈরি করা হয়েছে ৩১টি অস্থায়ী সেতু। আশেপাশে তাকালেই চোখে পড়ছে শুধু মানুষ। কুম্ভমেলা শুরুর প্রথম দিনেই ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ চলে এসেছেন প্রয়াগরাজে, গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে।
ডিডাব্লিউর এবি রউফ গিয়ানি প্রয়াগরাজ থেকে জানাচ্ছেন, ''গোটা ভারত থেকে এসে মানুষ এখানে সমবেত হয়েছেন। একটু কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে নানান ভাষায় তারা কথা বলছেন। প্রচুর বাঙালি যেমন এসেছেন, তেমনই বিহার, ওড়িশা, আসাম, রাজস্থান, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, দক্ষিণ ভারতের সব রাজ্য থেকে অসংখ্য মানুষ সমবেত হয়েছেন। তারা সঙ্গমে স্নান করছেন।''
রউফ বলেন, ''আমাদের গাড়িতে ‘প্রেস' স্টিকার ছিল। কিন্তু আমরা মিডিয়া সেন্টারের কাছাকাছিও গাড়ি নিয়ে যেতে পারলাম না। ভিড়ের জন্য অনেকখানি আগে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে হলো।''
অগণিত মানুষের মেলা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সমাবেশ। হিন্দুরা পুণ্যার্জনের জন্য কুম্ভে গিয়ে সঙ্গমে স্নান করেন। তাদের বিশ্বাস, পাপও ধুয়ে যাবে এই সঙ্গমের জলে।
দুই লাখ কোটি টাকা রাজস্বের আশা
তবে মহাকুম্ভের শুধু যে ধর্মীয় দিক আছে এমন নয়, আছে বিশাল একটা আর্থিক দিকও। উত্তরপ্রদেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের হিসাব, ৪৫ দিনের পূর্ণকুম্ভে আসবেন ৪০ কোটিরও বেশি মানুষ। অর্থাৎ, অ্যামেরিকা ও রাশিয়ার য়ে জনসংখ্যা তার থেকেও বেশি মানুষ এই প্রয়াগরাজে আসবেন। তারা যদি গড়ে পাঁচ হাজার টাকা খরচ করেন, তাহলেই দুই লাখ কোটি টাকা এসে যায়।
সংবাদসংস্থা আইএএনএসের হিসাব, গড়ে প্রত্যেক মানুষ ১০ হাজার টাকা খরচ করবেন। তাহলে চার লক্ষ টাকা আসবে, যা ভারতের জিডিপি-র এক শতাংশ।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানিয়েছেন, ''২০১৯ সালে অর্ধকুম্ভে ২৪ কোটি মানুষ প্রয়াগরাজে এসেছিলেন। রাজ্যের অর্থনীতিতে সেই অর্ধকুম্ভের অবদান ছিল এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। তিনি জানিয়েছেন, ৪০ কোটি মানুষ এলে অন্তত দুই লাখ কোটি টাকা রাজ্যের অর্থনীতিতে আসবে।''
যোগী বলেছেন, ''যে কোনো সময়ে ৫০ লাখ থেকে এক কোটি মানুষ প্রয়াগরাজে থাকতে পারবেন এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে।''
রউফ জানিয়েছেন, ''দেড় লাখ তাঁবুর ব্যবস্থা করেছে সরকার। সেই সঙ্গে থাকছে এক লাখ ৪৫ হাজার রেস্টরুম, তিন হাজার কিচেন এবং ৪০ হাজার পুলিশ। ভক্তরা একটা বিষয়ে একমত, অসাধারণ ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে। তাদের এই নিয়ে কোনো নালিশ নেই।''
যোগী সরকার এই পূর্ণকুম্ভের জন্য সাত হাজার কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ রেখেছে।
কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডারস(সিএটিটি) জানিয়েছে, খাবার, জল, বিস্কুট, ফলের রস মিলিয়ে ২০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে তারা মনে করছে। এছাড়া তেল, প্রদীপ, গঙ্গাজল, মূর্তি, ধুপকাঠি, ধর্মীয় বই মিলিয়ে আরো ২০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হবে।
বাস, নৌকা, ট্যাক্সি, মালবহনকারী গাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা আসবে। গাইড, বেড়ানোর প্যাকেজসহ পর্যটন সংক্রান্ত বিষয় থেকে আরো ১০ হাজার কোটি টাকা আসতে পারে বলে তাদের দাবি।
এছাড়া অস্থায়ী মেডিক্যাল শিবির, আয়ুর্বেদ-সামগ্রী, ওষুধ থেকে আসতে পারে তিন হাজার কোটি টাকা। এছাড়া ডিজিটাল পেমেন্ট, ওয়াইফাই, মোবাইল চার্জিং স্টেশন থেকে এক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হবে। বিনোদন ও মিডিয়া জগত, বিজ্ঞাপন, বিভিন্ন প্রমোশনাল কাজকারবার থেকে আসতে পারে ১০ হাজার কোটি টাকা।
অসংখ্য বাঙালি এসেছেন
রউফ জানিয়েছেন, ''প্রচুর বাঙালি এসেছেন। মাঝেমধ্যেই বাংলায় কথা শোনা যাচ্ছে। এরকমই বাংলায় কথা শুনে এক নারীকে জিজ্ঞাসা করলাম, কোথা থেকে আসছেন, কী নাম? তিনি বললেন, তার নাম বিউটি বিশ্বাস। আসছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে। এখানে এসে এত মানুষ দেখেই ভালো লাগছে। কোথায় থাকবেন জানতে চাইলে পাশ থেকে নয়ন শীল বললেন, টিভিতে দেখেছি, সরকার থাকার ব্যবস্থা করেছেন। এখন সেখানে যাচ্ছি। প্রথমবার এসেছি। স্নান করবো। আনন্দ করবো। ছোট মেয়েকে বাড়িতে মায়ের কাছে রেখে স্বামী-স্ত্রী চলে এসেছেন।''
মালদহ থেকে স্ত্রী ও দিদিকে নিয়ে এসেছেন পঞ্চাশ বছর বয়সি একজন। তিনি জানালেন, চার-পাঁচদিন থাকবেন। স্নান করবেন। তারপর ফিরবেন নিজের বাড়িতে। আপাতত তিনি আনন্দ করবেন এই মানুষের মধ্যে, মানুষকে দেখতে দেখতে।
জলের তলার ড্রোন, এআই ক্যামেরা
আর এই লাখ লাখ মানুষের নিরাপত্তার জন্য রয়েছে সাত স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জলের তলায় একশ মিটার পর্যন্ত যেতে পারে এমন ড্রোন নজর রাখছে নদীর ভিতরে। আর উপরে ১২০ মিটার উঁচু থেকে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে প্রচুর ড্রোন।
দুই হাজার সাতশ এমন ক্যামেরা লাগানো হয়েছে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে কাজ করে। বিভিন্ন পুলিশ থানায় আছেন ৫৬টি সাইবার টিম, যারা সমানে ড্রোন ও ক্যামেরার পাঠানো ছবি বিশ্লেষণ করছেন।
এর পাশাপাশি ৯২টি রাস্তা সারাই করা হয়েছে, ৩০টি ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে, বিভিন্ন ভাষায় আটশ সাইনেজ লাগানো হয়েছে। অস্ত্রোপচার করা যায় এমন প্রচুর অস্থায়ী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে।
সবমিলিয়ে একটা বিপুল কর্মযজ্ঞ চলছে মানুষের এই উৎসবকে সফল করে তোলার জন্য।
জিএইচ/এসিবি(পিটিআই, এএনআই)