কিয়েভ-সহ উত্তর ইউক্রেন থেকে রাশিয়া পিছিয়ে এলেও পূর্ব ইউক্রেনে নতুন করে আক্রমণের আশঙ্কা। মঙ্গলবার জাতিসংঘে জেলেনস্কির বক্তৃতা।
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়া নতুন করে আক্রমণের পরিকল্পনা করেছে। পূর্ব ইউক্রেনের একটি বড় অংশ রাশিয়া দখল করে নিতে চাইছে। খারকিভ এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার সেনার সংখ্যা বেড়েছs বলেও দাবি করা হয়েছে।
লুহানস্ক অঞ্চলে দুইটি শহরে রাশিয়ার সেনা নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তার দাবি, সেভেরোদনেৎস্ক পর্যন্ত এগোতে চাইছে রাশিয়ার ফৌজ। লুহানস্ক অঞ্চলের প্রশাসনিক সদর দপ্তর সেভেরোদনেৎস্ক। ক্রাইমিয়ার যুদ্ধের সময় থেকেই এই অঞ্চলটিতে রাশিয়াপন্থিদের দাপট। এবারেও সেই বিষয়টিকে রাশিয়া কাজে লাগছে বলে অভিযোগ।
ইউক্রেন যুদ্ধে যেসব অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করে ২৪ ফেব্রুয়ারি৷ নিজস্ব অস্ত্র ছাড়াও পশ্চিমাদের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার মোকাবিলা করছে ইউক্রেন৷
ছবি: Alexander Zemlianichenko/AP/picture alliance
কিনজাল মিসাইল
মিগ-৩১ বিমানের গায়ে সাদা কিনজাল মিসাইল দেখতে পাচ্ছেন৷ শব্দের গতির চেয়ে এর গতি প্রায় পাঁচগুণ বেশি৷ তাই একে হাইপারসনিক মিসাইল বলা হয়৷ ১৯ মার্চ রাশিয়া জানায়, ইউক্রেনের পশ্চিমের একটি বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস করতে এই মিসাইল ব্যবহার করা হয়েছে৷ আর ২৯ মার্চ এক ঊর্ধ্বতন মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা জানান, রাশিয়া নিয়মিত এমন মিসাইল ব্যবহার করছে৷ ছবিটি ২০১৮ সালে তোলা৷
ছবি: Alexander Zemlianichenko/AP/picture alliance
ভ্যাকুয়াম বোমা
এই বোমা থার্মোব্যারিক বোমা বা অ্যারোসল বোমা নামেও পরিচিত৷ ছবিতে রাশিয়ার টিওএস-১এ থার্মোব্যারিক রকেট লঞ্চার দেখা যাচ্ছে, যেটা থেকে ভ্যাকুয়াম বোমা ছো়ড়া হয়৷ ইউক্রেন যুদ্ধে এই সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে৷ ভ্যাকুয়াম বোমার আঘাতে অনেক বড় আগুনের গোলা সৃষ্টি হয়৷ এটি সুরক্ষিত ভবন, যন্ত্রপাতি ধ্বংস করতে পারে৷ মানুষকে মেরে ফেলতে কিংবা আহত করতে পারে৷
ছবি: Leonid Faerberg/ZUMAPRESS/picture alliance
ক্লাস্টার বা গুচ্ছ বোমা
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল বাচেলেট বুধবার জানান, রাশিয়া জনবহুল এলাকায় অন্তত ২৪ বার এমন বোমা ব্যবহার করেছে বলে তার অফিস অভিযোগ পেয়েছে৷ এই বোমার এমন নামকরণের কারণ এই বোমায় অনেকগুলো ছোট ছোট বোমা (বম্বলেট) থাকে৷ ক্লাস্টার বোমা বিস্ফোরিত হলে ছোট বোমাগুলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে৷ ফলে একটা বিশাল এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ ছবিটি ফাইল থেকে নেয়া৷
ছবি: MOHAMMED ZAATARI/AA/picture alliance
কালিবা ক্রুজ মিসাইল
ইউক্রেনের সামরিক ও সরকারি ভবনে হামলা চালাতে কালিবা ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করেছে রাশিয়া৷ ছবিটি ফাইল থেকে নেয়া৷
ছবি: Tass/imago images
ইস্কান্দার ব্যালিস্টিক মিসাইল
এই মিসাইল সর্বোচ্চ ৫০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে৷ বড় ভবন ও সুরক্ষিত, দুর্ভেদ্য অবকাঠামো ধ্বংস করতে পারে এটি৷ বেলারুশ থেকে কিছু ইস্কান্দার মিসাইল ইউক্রেনের দিকে ছোড়া হয়েছে বলে জানা গেছে৷
ছবি: Russian Defense Ministry via AP/picture alliance
আর্টিলারি সিস্টেম
২৬ ফেব্রুয়ারির এই ছবিতে ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রাশিয়ার বেলগোরোদ এলাকায় ‘উরাগান’ মাল্টিপল রকেট লঞ্চার সিস্টেম দেখা যাচ্ছে৷ তার দুদিন আগে ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছিল রাশিয়া৷ উরাগান ছাড়াও রাশিয়ার কাছে সোভিয়েত আমলের ডিজাইন করা ‘গ্রাট’, ‘স্ম্যার্শ’ রকেট লঞ্চার আছে৷
ছবি: Mikhail Voskresenskiy/SNA/imago images
ফসফরাস বোমা?
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ২৫ মার্চ জানান, রাশিয়া ইতিমধ্যে ফসফরাস বোমা ব্যবহার করেছে৷ লুহানস্কের গভর্নর জানান একটি গ্রামে এমন বোমা হামলায় দুই শিশুসহ কমপক্ষে চারজন মারা গেছেন৷ জেলেনস্কির মন্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র জানান, রাশিয়া ‘‘কখনও আন্তর্জাতিক কনভেনশন লঙ্ঘন করেনি৷’’ ছবিতে ১৯৪৫ সালে ফসফরাস বোমার ব্যবহার দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: United Archives International/imago images
জ্যাভলিন মিসাইল
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল ব্যবহার করছে ইউক্রেন৷ পশ্চিমা দেশগুলো এসব তাদের সরবরাহ করেছে৷ গত ডিসেম্বরের ছবিতে জ্যাভলিনসহ ইউক্রেনের সেনাদের দেখা যাচ্ছে৷
এটি একটি অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল৷ এটিও পশ্চিমের কাছ থেকে পেয়েছে ইউক্রেন৷
ছবি: LEILA GORCHEV/AFP/Getty Images
বায়রাকতার ড্রোন
যুদ্ধ শুরুর আগে ইউক্রেনকে এই ড্রোন দিয়েছিল তুরস্ক৷ এটি ব্যবহার করে রাশিয়ার মিলিটারি কনভয়ের উপর হামলার ভিডিও প্রকাশ করেছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী৷
ছবি: Emrah Yorulmaz/AA/picture alliance
ক্ষয়ক্ষতির হিসাব
ওরিক্স মিলিটারি অ্যানালিসিস ব্লগের তথ্য উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) পর্যন্ত রাশিয়ার ৩১৮টি ট্যাঙ্ক ধ্বংস হয়েছে কিংবা সেনারা ফেলে পালিয়ে গেছেন৷ এছাড়া পাঁচশর বেশি সাঁজোয়া যান, ১৬টি ফাইটার জেট, ৩৫টি হেলিকপ্টার ও নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছে ওরিক্স৷ আর ইউক্রেন হারিয়েছে ৭৯টি ট্যাঙ্ক, প্রায় ২০০টি সাঁজোয়া যান, ১২টি জেট ও ১৩টি জাহাজ৷
ছবি: Efrem Lukatsky/AP Photo/picture alliance
11 ছবি1 | 11
লুহানস্কের গভর্নর ঘোষণা করেছেন, রাশিয়া যে কোনো সময় বড় আক্রমণ চালাতে পারে। ফলে তার আগে সমস্ত নাগরিক যেন নিরাপদ স্থানে চলে যান। সকলকে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। হোয়াইট হাউসের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও জানিয়েছেন, পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়া নতুন করে সেনা মজুত করছে। পূর্ব এবং দক্ষিণ ইউক্রেনের একটি অংশ দখল করাই তাদের উদ্দেশ্য। যদিও রাশিয়া এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। ওই মার্কিন কর্মকর্তার বক্তব্য, 'রাশিয়া প্রথমে গোটা ইউক্রেনই দখল করতে চেয়েছিল। তা না হওয়ায় এখন তাদের লক্ষ্য পূর্ব ইউক্রেন।' এই লড়াই দীর্ঘদিন চলবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
বুচার ঘটনায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি
01:07
জাতিসংঘে জেলেনস্কি
মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বক্তৃতা দেওয়ার কথা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বুচায় গণকবর নিয়ে এদিন কথা বলার কথা ইউক্রেনেরপ্রেসিডেন্টের। তার আগে সোমবার সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি অভিযোগ করেছেন, রাশিয়া চেষ্টা করছে অত্যাচারের সমস্ত চিহ্ন নষ্ট করে দিতে। সংবাদমাধ্যমের কাছে জেলেনস্কির আর্জি, বুচা-সহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে তারা যেন তথ্য নথিভুক্ত করে।
মস্কো অবশ্য বুচায় গণকবরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। রাশিয়ার দাবি, এ ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। রাশিয়াকে ফাঁসাতেই ওই গণকবরের তথ্য সামনে আনা হয়েছে।
সোমবার রোমানিয়ার পার্লামেন্টে বক্তৃতা দিয়েছেন জেলেনস্কি। সেখানে তিনি বলেছেন, বরোদিয়াঙ্কার মতো শহরে বুচার থেকেও বেশি অত্যাচার চলেছে। তার আশঙ্কা, ওই শহর থেকে বুচার চেয়েও বেশি মৃতদেহ উদ্ধার হবে। এই ঘটনার আন্তর্জাতিক এবং নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছেন জেলেনস্কি। মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদের বক্তৃতাতেও এই দাবি করতে পারেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের অবস্থান
বুচার ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পোল্যান্ডে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেছেন, ''সন্দেহ নেই ইউক্রেনে ওই ঘটনা ঘটেছে। সাধারণ মানুষের উপর চরম অত্যাচার করা হয়েছে। নারীদের উপর যৌন অত্যাচার চালানো হয়েছে। যা ঘটেছে, তা এককথায় যুদ্ধাপরাধ।''
ওই একই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা। আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে রাশিয়ার উপর আরো কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপানোর আর্জি জানিয়েছেন তিনি। এদিকে, কিয়েভের পশ্চিমে মতিঝিন অঞ্চলের মেয়র এবং তার পরিবারের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। হাত বাঁধা অবস্থায় তাদের খুন করা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার নিষেধাজ্ঞা
বুচার ঘটনার পর রাশিয়ার প্রতি আরো কঠোর হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাশিয়াকে আর কোনো বিলাসী দ্রব্য রপ্তানি করা হবে না। এর আগেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল অস্ট্রেলিয়া।