পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার গণভোটের পরিকল্পনা
২৫ এপ্রিল ২০২২![জেলেনস্কি](https://static.dw.com/image/61571387_800.webp)
রোববার যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দাদের একটি রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। গত ২২ এপ্রিলের সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, পূর্ব ইউক্রেনের খারসনে রাশিয়া গণভোটের পরিকল্পনা করছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, 'সাজানো' গণভোট করে রাশিয়া প্রমাণ করার চেষ্টা করবে, ওই অঞ্চলের মানুষ রাশিয়াপন্থি এবং তারা রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হতে চায়। এর আগে ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়ার যুদ্ধের সময়েও রাশিয়া ঠিক একই কাজ করেছিল।
বস্তুত, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার অব্যবহিত আগে লুহানস্ক এবং দনেৎস্ক নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা করেছিল। ওই দুই অঞ্চলেই রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যথেষ্ট সক্রিয়। রাশিয়ার মদতে তারা সে কাজ করেছিল বলে ইউক্রেনের দাবি। পূর্ব ইউক্রেনের এই সবকয়টি অঞ্চলেই রাশিয়া গণভোট করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে গত সপ্তাহে দাবি করেছিল জেলেনস্কির প্রশাসন।
রাশিয়া অবশ্য এবিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। তবে রাশিয়ার সেনা জানিয়েছে, পূর্ব ইউক্রেনের একাধিক শহরে লাগাতার লড়াই চলছে। কয়েকটি জায়গা এখন তাদের দখলে। পাশাপাশি খারকিভে ইউক্রেনের সেনার একটি অস্ত্রের ভান্ডার ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া।
কিয়েভে ব্লিংকেন
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছিলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেন পরিদর্শনে যেতে পারেন দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। রোববার কিয়েভে গিয়ে পৌঁছেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। তারা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানানো হয়েছে। জেলেনস্কির গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী রাতে ইউক্রেন টিভির এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তখনো বৈঠক চলছে।
হোয়াইট হাউস অবশ্য এই সফরকে গোপন রাখতে চাইছে। এবিষয়ে এখনো পর্যন্ত মার্কিন প্রশাসন কোনো মন্তব্য করতে চায়নি। আদৌ দুই মার্কিন প্রশাসক ইউক্রেন গেছেন কি না, তা-ও জানাতে সম্মত হয়নি হোয়াইট হাউস।
তবে ইউক্রেন প্রশাসনের দাবি, বৈঠকে জেলেনস্কি দুই মার্কিন মন্ত্রীর কাছে নির্দিষ্ট কিছু অস্ত্রের দাবি করেছেন। তবে অ্যামেরিকা তা দিতে সম্মত হয়েছে কি না, তা জানা যায়নি। গত সপ্তাহে জেলেনস্কি জানিয়েছিলেন, তিনি আশা করছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট কিয়েভের অবস্থা দেখে যাবেন। যদিও হোয়াইট হাউস স্পষ্ট করে দেয়, এই পরিস্থিতিতে বাইডেন ইউক্রেন যাবেন না।
এখনো মারিউপলে আটকে সাধারণ মানুষ
রোববার রাতে ইউক্রেনের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, একাধিক আবেদনের পরেও মারিউপলে সেফ প্যাসেজ তৈরি করতে দিচ্ছে না রাশিয়ার সেনা। ফলে এখনো বহু সাধারণ মানুষ সেখানে আটকে আছে। ইউক্রেনের অভিযোগ, একাধিকবার সেফ প্যাসেজের চুক্তি হলেও রাশিয়া তা মানছে না। রাশিয়া অবশ্য আগে জানিয়েছিল, সেফ প্যাসেজের মাধ্যমে মারিউপলের মানুষকে রাশিয়ার দিকে পালানোর সুযোগ করে দেওয়া হবে। কিন্তু ইউক্রেন তা মানতে চায়নি।
পাঁচ মিলিয়ন বাস্তুহারা
জাতিসংঘের শরণার্থী সংক্রান্ত সংস্থা জানিয়েছে, এখনো পর্যন্ত ইউক্রেন থেকে ৫১ লাখ ৮৬ হাজার ৭৪৪ জন মানুষ প্রতিবেশি দেশগুলিতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এপ্রিলে সবচেয়ে বেশি মানুষ পালিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। ইস্টারের সময় বাস্তুহারা মানুষের ঢল নেমেছে বলে জাতিসংঘের দাবি। তাদের আশঙ্কা, যত দিন যাবে, এমন মানুষের সংখ্যা আরো বাড়বে। এরই মধ্যে পোপ ফ্রান্সিস আরো একবার যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেছেন। কিন্তু রাশিয়া এখনো পর্যন্ত তাতে সম্মত হয়নি।
লুহানস্কেও সাধারণ মানুষের মৃত্যু
লুহানস্কের গভর্নর দাবি করেছেন, রাশিয়ার লাগাতার গোলাবর্ষণে বহু সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গোলাবর্ষণের সময় রাশিয়া শুধুমাত্র সামরিক স্থাপনাগুলিকে টার্গেট করছে না, সাধারণ মানুষের বাড়িও বিপুল পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি, ডিপিএ)