1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পৃথিবীটা যদি খেরা সধন গ্রাম হতো!

আশীষ চক্রবর্ত্তী১৭ অক্টোবর ২০১৪

ভারতের ‘খেরা সধন' গ্রাম৷ সেখানে অনেক পরিবারের এক সন্তান হিন্দু, তো অন্যজন মুসলমান৷ কবি নজরুল লিখেছিলেন, ‘হিন্দু-মুসলিম দুটি ভাই....এক বাগানে দুটি তরু, দেবদারু আর কদমচারা৷' পৃথিবীটা যদি খেরা সধনের মতো হতো!

Symbolbild Hängematte
প্রতীকী ছবিছবি: Monkey Business - Fotolia.com

কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্বপ্নের বাগানে এখন বিষবৃক্ষের ছড়াছড়ি৷ যেই ভারতবর্ষকে দেবদারু আর কদমের বাগান ভেবেছিলেন সেখানেই বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়, হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিল্লির মসনদের ‘দখল' নিতে পারে হিন্দুত্ববাদী দল, গুজরাট দাঙ্গায় পরোক্ষ মদতের দায় মাথায় নিয়েও প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন নরেন্দ্র মোদী৷

স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর চুরুলিয়ার ‘দুখু মিয়া' ভারত ছেড়ে চলে এসেছিলেন বাংলাদেশে৷ তাঁকে জতীয় কবির মর্যাদা দিয়ে সম্মানিত হয়েছিল বাংলাদেশ৷ বাংলাদেশও ধর্মনিরপেক্ষতার স্বপ্ন দেখেছে৷ পটপরিবর্তনের ধাপে ধাপে সংবিধান নিয়ে চলেছে দেদার কাটাছেঁড়া৷ বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয় না৷ তবু ধর্মীয় সংখ্যালঘুর সংখ্যা লঘু থেকে লঘুতর হতে হতে আজ মোট জনসংখ্যার মাত্র দশ শতাংশ! স্থানীয় রাজনীতিতে যোগ-বিয়োগের অঙ্ক মেলানো কিংবা সম্পত্তি গ্রাস করার দুরভিসন্ধি থেকে চালানো হয় হিন্দুদের ঘর-বাড়ি-মন্দিরে হামলা৷ আদালত যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে রায় দিলেও ধর্ষিত হয় নারী, পোড়ে মন্দির, পোড়ে বাড়ি৷

কারো কারো হয়ত বলতে ভালো লাগবে, ‘‘খেরা সধনের ৫০ কিলোমিটার দূরে ওই যে তাজমহলটা আছে না...!''ছবি: Fotolia/JR Photography

বিদ্রোহী কবি অবশ্য এমন দিনেরও পূর্বাভাষ পেয়েছিলেন৷ বড় দুঃখ নিয়ে তাঁকেই একসময় লিখতে হয়েছিল,

‘‘মাভৈঃ! মাভৈঃ! এতদিনে বুঝি জাগিল ভারতে প্রাণ

সজীব হইয়া উঠিয়াছে আজ শ্মশান গোরস্থান!

ছিল যারা চির-মরণ-আহত,

উঠিয়াছে জাগি ব্যথা-জাগ্রত,

‘খালেদ' আবার ধরিয়াছে অসি, ‘অর্জুন' ছোঁড়ে বাণ৷

জেগেছে ভারত, ধরিয়াছে লাঠি হিন্দু-মুসলমান!''

হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কে লাঠালাঠিই যে চূড়ান্ত সত্যি নয় তা ‘ব্যবসা' বন্ধ কিংবা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই পরিষ্কার বোঝা যেত৷ আজকাল ব্যবসারও কত রকমফের! কেউ মোটা দাগে শুধু ব্যবসায়ী, কেউ অস্ত্রব্যবসায়ী, ধর্মব্যবসায়ী কিংবা মাদকব্যবসায়ী৷ সবারই ‘বাজার' ভালো রাখে ‘ভেদাভেদ'৷ হিন্দু-মুসলিমে ভেদাভেদ, মুসলিম-খ্রিষ্টান, মুসলিম-বৌদ্ধ কিংবা মুসলিম-ইহুদিতে ভেদাভেদ – রমরমা ব্যবসার জন্য কোনো-না-কোনো ভেদাভেদ তাদের চাই-ই চাই৷

সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষ যদি মানুষ পরিচয়টাকেই বড় মানতো! দারুণ হতো, তাই না?ছবি: imago/blickwinkel

ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রাকে এতদিন চিনতাম মূলত তাজমহলের জন্য৷ শহরটিকে হঠাৎ নতুনভাবে জানলাম৷ ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া' এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আগ্রা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের এক গ্রামের কথা৷ নাম খেরা সধনপ্রতিবেদনটি পড়লে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী অনেকেই আশা করি আগ্রা এবং তাজমহলকে চিনবেন খেরা সধনকে দিয়ে৷ কারো কারো হয়ত বলতে ভালো লাগবে, ‘‘খেরা সধনের ৫০ কিলোমিটার দূরে ওই যে তাজমহলটা আছে না...!''

সত্যিই স্বপ্নের গ্রাম খেরা সধন৷ দিল্লির মসনদে এখন হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির নেতা নরেন্দ্র মোদী৷ এক সময় মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল আগ্রা৷ সম্রাট আওরঙ্গজেব সেই রাজধানী সরিয়ে নেন দিল্লিতে৷ খেরা সধন গ্রাম এখনো আওরঙ্গজেবকে স্মরণ করে৷ টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদক কথা বলেছেন গ্রামবাসীর সঙ্গে, জেনেছেন খেরা সধন এমন এক গ্রাম, যেখানে হিন্দু-মুসলমানে ভেদাভেদ একজনও মানে না৷

নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি, বা আরো কট্টর ধর্মীয় দলগুলোর কথা খেরা সধনের কেউ কানেই তোলে না৷ সম্প্রতি ভারতে যে ‘লাভ জিহাদ'-এর আওতায় মুসলমান তরুণদের হিন্দু পরিচয় দিয়ে ব্যাপক হারে হিন্দু মেয়েদের বিয়ে করে মুসলমান করার ‘অভিযোগ' উঠেছে, সে কথা শুনলে খেরা সধনের মানুষ হাসেন৷ সেখানে মুসলমান বাবা আর হিন্দু মা তাঁদের সন্তানকে ঘটা করে বিয়ে দেন হিন্দু-মুসলিম দম্পতির সন্তানের সঙ্গে৷ এমন গ্রামে ‘লাভ জিহাদ'-এর কী দরকার, বিজেপি, শিবসেনার মতো ধর্মভিত্তিক দলেরই বা স্থান কোথায়!

আশীষ চক্রবর্ত্তী, এই ব্লগটির লেখকছবি: DW/P. Henriksen

একটা সময় খেরা সধন ছিল হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম৷ মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব তাঁদের ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করেছিলেন – এমনটি স্থানীয়রা যুগ যুগ ধরে শুনে আসছেন৷ স্থানীয় বলতে, শুধু ‘হিন্দু' বা শুধু ‘মুসলমান' ধরে নেবেন না যেন৷ খেরা সধনে মুসলমান আর হিন্দুরা ধর্ম পরিচয়ে আলাদা হয়েও জীবনযাপনে এক৷ একই পরিবারে বসবাস তাঁদের৷ সেখানে বিক্রম সিংয়ের মা খুশনুমা মুসলমান, বাবা কমলেশ সিং হিন্দু৷ বিক্রমের স্ত্রী-র নাম শাবানা আর তাঁর বোন সীতার স্বামীর নাম ইনজামাম৷

এমন পরিবার অনেক আছে খেরা সধন গ্রামে৷ আওরঙ্গজেব চেয়েছিলেন সবাইকে মুসলমান করে দিতে, নরেন্দ্র মোদী এখনো চান হিন্দুত্ববাদের জয় হোক, কিন্তু খেরা সধনের মানুষ দু'জনকেই ‘কাঁচকলা' দেখিয়ে গাইছেন মানবতার জয়গান৷

পিন্টু ভট্টাচার্যের একটা গানের কথা মনে পড়ছে৷ ভারতের এই প্রয়াত শিল্পী গেয়েছিলেন,

‘‘এমন হয় না কেন গো

চিরসুখের দেশ এই পৃথিবী,

কোনো ছলনাই বাঁচেনা কোথাও

শুধু ভালোবাসাই চিরজীবী৷''

পৃথিবীটা যদি একটা খেরা সধন গ্রাম হতো! সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষ যদি ‘মানুষ’ পরিচয়টাকেই বড় মানতো! দারুণ হতো, তাই না?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ