পৃথিবীতে ফিরেছেন জার্মানির গেয়ার্স্টসহ তিন নভোচারী
১০ নভেম্বর ২০১৪
মহাকাশে ১৬৫ দিন কাটানোর পর রাশিয়ার মাক্সিম সুরাইয়েভ ও অ্যামেরিকার রিড ওয়াইজম্যানের সঙ্গে পৃথিবীতে ফিরেছেন জার্মান নভোচারী আলেক্সান্ডার গেয়ার্স্ট৷ সোমবার ভোরে মহাকাশযান সোইয়ুজ তাঁদের নিয়ে কাজাখস্তানে অবতরণ করে৷
বিজ্ঞাপন
কাজাখস্তানে সোইয়ুজ থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তিন নভোচারীকে কম্বলে জড়িয়ে দেয়া হয়৷ ভূপৃষ্ঠে পা রাখার কিছুক্ষণ পর এক টেলিভিশন চ্যানেলকে রুশ ভাষায় গেয়ার্স্ট বলেন, ‘‘সার্বিক সহায়তার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ৷''
আইএসএস-এ গিয়ে কাজ করা জার্মানির একাদশতম মহাকাশচারী গেয়ার্স্ট আইএসএসে পৌঁছানোর পর থেকেই টুইটারে নিজের নানান অভিজ্ঞতার কথা লিখে আসছিলেন৷ ৩৮ বছর বয়সি গেয়ার্স্ট সোমবার জার্মানির কোলন শহরে ফিরবেন৷ বন শহরের পাশের শহর কোলনে তাঁর অপেক্ষায় আছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা৷ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন আইএসএসে ১৬৫ দিন থাকার ফলে তাঁর শরীরের কী অবস্থা হয়েছে চিকিৎসকরা তা পরীক্ষা করে দেখবেন৷ মহাকাশে দিনগুলো কেমন কেটেছে গেয়ার্স্ট তা জানাবেন আগামী বৃহস্পতিবার৷ সেদিন এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার কথা৷
মহাশূন্যে হাত বাড়াচ্ছে ইউরোপ
চালকযুক্ত স্পেস ক্যাপসুলটির নাম ওরিয়ন৷ এসা এবং নাসা ২০১৭ সালে যৌথভাবে এই ক্যাপসুলটিকে মহাশূন্য প্রেরণ করবে৷ এসা দেবে মুখ্য মডিউলটি৷
ছবি: ESA/Foster + Partners
তারা থেকে তারায়
চালকযুক্ত স্পেস ক্যাপসুলটির নাম ওরিয়ন৷ এসা এবং নাসা ২০১৭ সালে যৌথভাবে এই ক্যাপসুলটিকে মহাশূন্য প্রেরণ করবে৷ এসা দেবে মুখ্য মডিউলটি৷ ক্যাপসুলটি প্রথমে চন্দ্র প্রদক্ষিণ করবে৷ তারপর মহাশূন্যে অবস্থান নেবে একটি নির্দিষ্ট বিন্দু হিসেবে৷ হয়তো মঙ্গলগ্রহ যাত্রার পথে তা কাজে লাগবে৷
ছবি: ESA-D. Ducros, 2012
মাধ্যাকর্ষণ না থাকায় অভ্যস্ত হওয়া
প্রথমে ইউরোপের নভচারীদের পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস’এ যাত্রা করার পালা৷ এসা’র অ্যাস্ট্রোনট ইটালির লুকা পার্মিতানো একটি জলের চৌবাচ্চায় স্পেস ওয়াক অভ্যেস করছেন৷ স্থান: কোলোনের কাছে ইউরোপীয় নভচারী কেন্দ্র (ইএসি)৷
ছবি: ESA/H. Rueb, 2010
আইএসএস’র জন্য তিন ইউরোপীয় নভশ্চর
লুকা পার্মিতানো আইএসএস’এ থাকবেন এ’বছরের মে মাস থেকে নভেম্বর মাস অবধি৷ ২০১৪ সালে এ’ভাবেই যাবেন জার্মানির আলেক্সান্ডার গের্স্ট৷ তারপরে যাবেন একজন মহিলা, ইটালির সামান্থা ক্রিস্টোফোরেত্তি৷
ছবি: dapd/NASA
মানুষের বদলে মাল পরিবহণ
তিন ইউরোপীয় নভশ্চর আইএসএস’এ যাবেন রুশ সোয়ুজ রকেটে চড়ে৷ এসা ইতিমধ্যে তথাকথিত অটোম্যাটিক ট্রান্সফার ভেহিকেল বা এটিভি’র মাধ্যমে আইএসএস’এ মালপত্র পাঠায়৷ পরের যাত্রা আগামী ১৮ই এপ্রিল৷ এটিভি’তে সাত টন খাদ্য ও সরঞ্জাম পাঠানো যায়৷
ছবি: ESA/S.Corvaja/dapd
চন্দ্রবাসের স্বপ্ন
চন্দ্রপীষ্ঠে এ’ধরনের একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন থেকে এসা এখনও অনেক দূর৷ সেখানে জন পাওয়া গেলে, তা’তে চাঁদের ধুলো মিশিয়ে বাড়িঘর তৈরি করা যেতে পারে৷ এবং চাঁদে জল আছে কিনা, চীনের চাঙ-ই ৩ রোভার চন্দ্রযান তা এ’বছরেই জানতে পারবে৷ চন্দ্রে অবতরণের পর এসা ঐ রোভারে তথ্য পাঠানোর ভার নেবে এবং তার গতিবিধি পরিচালনা করবে৷
ছবি: ESA/Foster + Partners
ডার্মস্টাট থেকে স্যাটেলাইট পরিচালনা
এসা’র ইউরোপীয় মহাকাশ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বা এসক থেকে চাঙ-ই ৩’এর আগের চীনা মহাকাশযানগুলিতে তথ্য পাঠানোয় সাহায্য করা হয়েছিল৷ চীনের আগের মহাকাশযানগুলি চন্দ্র প্রদক্ষিণ করেছে কিন্তু চন্দ্রপীষ্ঠে অবতরণ করেনি৷ এসক থেকে অপরাপর বহু গবেষণা ও যোগাযোগ সংক্রান্ত স্যাটেলাইটের যাত্রার উপর নজর রাখা হয়৷
ছবি: ESA - J. Mai
থ্রি-ডি’তে আমাদের ছায়াপথ
এ’বছরের অক্টোবর মাসে স্পেস প্রোব বা মহাশূন্য অভিযাত্রী যান ‘গাইয়া’ তার যাত্রা শুরু করবে৷ ইন্টারোফেরোমিটারের সাহায্যে আলোকতরঙ্গ থেকে আমাদের নক্ষত্রপুঞ্জের একটি থ্রি-ডি ছবি তৈরি করবে এবং ‘মিল্কি ওয়ে’ ছায়াপথের অনেক রহস্য উদঘাটন করবে৷ এসা’র গবেষকরা অন্তত এক বিলিয়ন নতুন তারা আবিষ্কার করার আশা করছেন৷ এমনকি তিন বিলিয়নও হতে পারে৷
ছবি: ESA/Medialab
গ্রহাণুর সন্ধানে
রোজেট্টা স্পেস প্রোব’টি ২০০৪ সাল যাবৎ ৬৭/পি চুরজুমভ-গেরাসিমেঙ্কো ধূমকেতু অভিমুখে যাত্রা করছে৷ ২০১৪ সালের সূচনায় মহাকাশযানটি ধূমকেতুটির কক্ষপথে যোগদান করবে৷ তবে ধূমকেতু অবধি পৌঁছতে পৌঁছতে রোজেট্টা অনেক কিছু দেখবে: নাসা’র ডিপ ইমপ্যাক্ট প্রোজেক্টাইলটি কিভাবে টেম্পল ওয়ান ধূমকেতুতে আঘাত করবে৷ এচাড়া রোজেট্টা দেখবে মঙ্গলগ্রহ এবং স্টাইনস ও লুটেশিয়া নামের দ’টি অ্যাস্টেরয়েড বা গ্রহাণু৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধূমকেতুর উপর অবতরণ
২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে রোজেট্টা ফিলি নামের এই রোবোটটিকে ধূমকেতুর উপরে নামাবে৷ কোলোনে অবস্থিত জার্মান বিমান ও মহাকাশযাত্রা কেন্দ্র ডিএলআর থেকে সেই অবতরণ নিয়ন্ত্রণ করা হবে৷ কাজটা শক্ত হবে, কেনান ধূমকেতুটির মাধ্যাকর্ষণ খুব বেশি নয়৷ রোজ্ট্টা ধূমকেতুটির রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ করবে৷
ছবি: ESA/AOES Medialab
স্যাটেলাইটের রিসাইক্লিং সম্ভব নয়
অর্ধশতাব্দী ধরে মহাকাশে রকেট ও স্যাটেলাইট পাঠানো হচ্ছে৷ এক সেন্টিমিটারের চেয়ে বড় প্রায় ছ’লাখ নানা ধরনের ও আকারের স্ক্র্যাপ এ’ভাবে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে৷ এসা চাপ দিচ্ছে মহাশূন্যে আবর্জনা কমানোর জন্য: অকেজো স্যাটেলাইটগুলোকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রিতভাবে ভূপাতিত করতে হবে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
মূলত আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ গেয়ার্স্ট আইএসএসে তাঁর প্রথম অভিযানে আরেকটি অনন্য কৃতিত্বের অংশীদার হয়েছেন৷ গতমাসে যুক্তরাষ্ট্রের রিড ওয়াইজম্যানের সঙ্গে ‘স্পেসওয়াক' করেছেন তিনি৷ এর ফলে ‘স্পেসওয়াক' করা তৃতীয় জার্মান নভোচারী এখন আলেক্সান্ডার গেয়ার্স্ট৷
১৬৫ দিনের অভিযানে আইএসএসে কমান্ডার, অর্থাৎ নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন রাশিয়ার নভোচারী মাক্সিম সুরাইয়েভ৷ তিনি জানান, বিভিন্ন কাজে যখনই দায়িত্ব বণ্টনের এবং নেতৃত্বের প্রশ্ন এসেছে তাঁরা তখন সৌহার্দ্যকে অটুট রাখার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ এর ফলে কখনো কোনো মনোমালিন্য হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ তাঁদের এই দৃষ্টান্তকে ‘অনুকরণীয়' হিসেবে বর্ণনা করে সুরাইয়েভ বলেন, ‘‘আমরা প্রত্যেকটা কাজ করেছি সহযোগিতার মনোভাব ধরে রেখে৷ আমি মনে করি, সবারই এখান থেকে কিছু শেখা উচিত এবং আইএসএস ক্রুদের দেখানো এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা উচিত৷ ''