ওজোন গহ্বর ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিজ্ঞানীরা৷ ৮০'র দশক থেকে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলা ওজোন স্তরের গহ্বরটা সংকুচিত হওয়ার ফলে বড় ধরনের হুমকির মুখ থেকে বেঁচে যাবে পৃথিবী৷
ছবি: NASA
বিজ্ঞাপন
৩৫ বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন যে, স্ট্র্যাটোসফেরিক ওজোন স্তরের বিস্তার ঘটেছে৷ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শূন্যস্তর হলো বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় মুখ্য স্তর৷ বায়ুমণ্ডলের ৯০ শতাংশ ওজোন পাওয়া যায় পৃথিবীর ‘রক্ষা বলয়' হিসেবে পরিচিত এই স্তরে৷
ওজোন অক্সিজেনের একটি রূপভেদ৷ যার রাসায়নিক সংকেত হচ্ছে তিনটি অক্সিজেন পরমাণুর একত্রিকরণ৷ সূর্য থেকে যে অতিবেগুনি রশ্মি ছড়িয়ে পড়ে, তা ফিল্টার করে এই শূন্যস্তর এবং সেই পন্থায় মানুষকে রক্ষা করে চর্ম ও চোখের ক্ষতির হাত থেকে৷ মাঠের ফসলকেও অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ থেকে রক্ষা করে এই ওজোন স্তর৷ বিজ্ঞানীরা বুধবার এই তথ্য জানিয়ে বলেন, এই উন্নয়ন থেকেই বোঝা যায় সংকট কালে এক হয়ে কাজ করলে বিশ্বের যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবেলা করা সম্ভব৷
ট্র্যাটোসফেরিক ওজন স্তরের বিস্তার ঘটেছেছবি: picture-alliance/dpa
নাসা-র বিজ্ঞানী পল নিউম্যান জানান, ‘‘২০০০ থেকে ২০১৩ সাল অবধি ওজনের মাত্রা চারগুণ বেড়েছে৷ উত্তর অক্ষাংশে প্রায় ৩০ মাইল জুড়ে এর বিস্তার হয়েছে৷'' আনুমানিক ৭০-এর দশকের শেষের দিকে ওজন স্তর পাতলা হতে থাকে৷ মানবসৃষ্ট ক্লোরো-ফ্লুরো-কার্বন অর্থাৎ সিএফসি, যা থেকে ক্লোরিন ও ব্রোমিন নিসৃত হয়৷ এই নিঃসরণের ফলে ওজন স্তরের ঘনত্ব কমে যাচ্ছিল৷ সৃষ্টি হয়েছিল ফাটল বা গহ্বরের৷ বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করলে ১৯৮৭ সালে বিশ্বের দেশগুলো সিএফসি নির্গমন কমানোর ব্যাপারে একমত হয়৷ এর ফলে সিএফসি নির্গমন হার এই কয়েক বছরে অনেকটা কমেছে৷
প্রাকৃতিক দুর্যোগ যাদের নিত্যসঙ্গী
বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নতুন নয়৷ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডোর মতো দুর্যোগ মোকাবিলা করেই এগিয়ে চলছে মানুষ৷ তবে দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক৷ বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Jewel Samad/AFP/Getty Images
সবচেয়ে ভয়ংকর টর্নেডো
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় টর্নেডোর ঘটনা ঘটে ১৯৮৯ সালে৷ সেবছরের ২৬ এপ্রিল মানিকগঞ্চ জেলার দৌলতপুর এবং সাটুরিয়া এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যায় প্রলয়ংকরী টর্নেডো৷ এতে প্রাণ হারায় ১,৩০০ মানুষ৷
ছবি: David L. Nelson/AFP/Getty Images
পুরোপুরি ধ্বংস
২৬ এপ্রিলের টর্নেডোতে কার্যত ছয় বর্গকিলোমিটার এলাকা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়৷ সেসময় অবজারভার পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘‘ধ্বংসযজ্ঞ এতই নিঁখুত যে, সেখানে কিছু গাছের চিহ্ন ছাড়া দাঁড়ানো আর কোনো বস্তু নেই৷’’
ছবি: David L. Nelson/AFP/Getty Images
ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় টর্নেডো
আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার পর অন্যতম টর্নেডোপ্রবণ দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ৷ সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টর্নেডোতে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারায়৷
ছবি: picture alliance / AP Photo
পূর্বাভাষের প্রযুক্তি নেই
টর্নেডোর পূর্বাভাষের কোনো প্রযুক্তি নেই বাংলাদেশে৷ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এ কে এম মাকসুদ কামাল এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমাদের দেশে না থাকলেও এখন টর্নেডোর পূর্বাভাষ দেয়া সম্ভব৷ অ্যামেরিকা এবং ইউরোপ এক ধরনের রাডার ব্যবহার করে অন্তত ৪৫ মিনিট আগে টর্নেডোর পূর্বাভাষ দিতে পারে৷ আর এ ধরনের পূর্বাভাষ দিয়ে জীবন ও সম্পদ রক্ষার নজির আছে৷’’
ছবি: picture alliance / AP Photo
ঘূর্ণিঝড়ের নিয়মিত শিকার বাংলাদেশ
টর্নেডো ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়েরও নিয়মিত শিকার হয় বাংলাদেশ৷ উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত বাংলাদেশে মৌসুমী ঘূর্ণিঝড়ের তালিকায় ১৫৮২ সালের কথা উল্লেখ রয়েছৈ৷ সেসময় বাকেরগঞ্জের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারায় দু’লাখ মানুষ৷
ছবি: Reuters
স্বাধীনতা পরবর্তী বড় দুর্যোগ
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল৷ সেসময় চট্টগ্রামে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে প্রাণ হারায় কমপক্ষে ১৩৮,০০০ মানুষ৷ প্রায় এক কোটি মানুষ ঘরছাড়া হয়৷ ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটারের মতো৷
ছবি: AFP/Getty Images
আইলার আঘাত
সর্বশেষ ২০০৯ সালে সাইক্লোন আইলায় কয়েকশত মানুষ প্রাণ হারায়৷ সাইক্লোনের পরপরই ডায়েরিয়া ছড়িয়ে পড়লে প্রাণ হারায় কমপক্ষে চার ব্যক্তি৷ এভাবে নিয়মিতই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করছে বাংলাদেশ৷
ছবি: DW
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এখন বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবও পড়তে শুরু করেছে৷ বিশেষ করে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রের পানি বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় বিশাল এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: Jewel Samad/AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
বিজ্ঞানীরা বলেন, ‘‘ঐ চুক্তিতে না পৌঁছালে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর বিশ্বে অন্তত আরো ২০ লাখ মানুষ ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত হতেন৷'' অবশ্য তাঁদের কথায়, ‘‘ওজন স্তরের বিশাল গহ্বরটি বন্ধ করতে এখনো আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে৷''
ওজোন স্তর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির তেজস্ক্রিয়া থেকে আমাদের রক্ষা করে৷ সুতরাং গহ্বর যত বড় হবে, তত মানবজাতির জন্য তা হুমকি হয়ে দাঁড়াবে৷ রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ ইত্যাদিতে ব্যবহৃত ক্লোরো-ফ্লুরো-কার্বন বা সিএফসি মন্ট্রিয়ল পরিবেশ চুক্তি অনুযায়ী ধীরে ধীরে বর্জন করা হলেও, এ ধরণের রাসায়নিক বহুকাল ধরে বায়ুমণ্ডলে থেকে যায়৷