পৃথিবীর বৃহত্তম টেলিস্কোপ চিলিতে?
১২ মে ২০১৭টেলিস্কোপটি মহাকাশে বাসযোগ্য গ্রহ অনুসন্ধানে, ডার্ক ম্যাটার এবং কৃষ্ণ গহ্বর সংক্রান্ত গবেষণা প্রচেষ্টাকে নতুন পথ দেখাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
১৫টি ইউরোপীয় দেশ ও ব্রাজিলের সমন্বয়ে গঠিত সংঘ সাউদার্ন অবজার্ভেটরি (ইএসও) এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছে৷ এই সংস্থাই চিলির অন্য বড় টেলিস্কোপগুলা চালাচ্ছে৷
কেরো আরমাজোনস নামে যে স্থানে এই টেলিস্কোপটি স্থাপন করা হয়েছে, সেটি চিলির আন্টোফাগাস্টা শহরের ১৩০ কিমি. দক্ষিণে অবস্থিত৷
দু'বছর আগে এখানে একটি পাহাড়ের উপরিভাগকে সমতল করা হয়েছে, যাতে প্রকৌশল বিদ্যার উচ্চভিলাসী এই কাজ শুরু করা যায়৷ যেখানে ৮০মিটার উঁচু গম্বুজের সঙ্গে এমন একটি জানালা থাকবে, যেটি তারকারাজির আবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঘুরবে৷ এই নির্মাণ কাজ আগামী ২৬ মে শুরু হওয়ার কথা, যেটি ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
সম্প্রতি মাদ্রিদে বার্তা সংস্থা ডিপিএকে ইএসও-র মহাপরিচালক টিম ডে জুউ বলেন, বিদ্যমান টেলিস্কোপ ও এই ইএলটির মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, যেমনটা গ্যালিলিওর খোলা চোখ এবং তার টেলিস্কোপের মধ্যে ছিল৷
এই টেলিস্কোপটির মিরর বিদ্যমান যে কোনো টেলিস্কোপের চেয়ে অন্তত পাঁচগুণ বড়৷ এটা বিদ্যমান টেলিস্কোপগুলোর চেয়ে ১৩ গুণ বেশি আলো একত্রিত করতে পারে, এটা ছবিকেও অনেক বেশি স্পষ্ট করবে৷
সৌরজগতের বাইরের কোনো গ্রহে জীবনের অস্তিত্ব সম্ভব কিনা, সেটা খুঁজে বের করা এই টেলিস্কোপের অন্যতম উদ্দেশ্য৷ আকৃতির কারণেই এটি অনেক বড় ছবি তুলতে পারবে, যাতে সম্ভবত ওই সব গ্রহের পরিবেশের গুনাগুন সরাসরি পরিমাপ করা যাবে৷
ডে জুউ বলেন, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সৌরজগতের বাইরের প্রথম বাসযোগ্য গ্রহ এক দশকের মধ্যেই আবিষ্কার হতে পারে৷
এটা একটু অন্য রকম যে, আতাকামা মরুভূমির মতো দুর্গম স্থানে স্থাপন করা এই টেলিস্কোপটা অন্য গ্রহের প্রাণের প্রমাণ পেতে সাহায্য করতে পারে৷
এটা এমন এক মরুভূমি, যেটা পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক স্থানের একটি৷ ১ লাখ ৫ হাজার বর্গ কিমি. আয়তনের এই মরুভূমির কোনো কোনো স্থানে কখনো বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে রেকর্ডে নেই৷ জায়গাটা অবশ্য মহাশূন্য পর্যবেক্ষণের জন্য উপযোগী জায়গা৷ এখানকার রাতের আকাশ সাধারণত পরিষ্কার থাকে৷
নির্মাণের সময় এই টেলিস্কোপের পাঁচটা মিরর থাকবে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড়টা হবে প্রাথমিকভাবে ৩৯ মিটার ব্যাসের৷ ১ দশমিক ৪ মিটার ব্যাসের অনেকগুলো ষড়ভূজাকার অংশ একত্রিত করে এটা তৈরি করা হবে৷
ডে জুউ বলেন, এই আকারের একটা আয়না তৈরি কিভাবে সম্ভব সেটা কারোরই জানা নেই৷ এমনকি কেউ সেটা করতে পারলেও সেখানে বহন করে নিয়ে যাওয়া অসম্ভত৷
১ দশমিক ১ বিলিয়ন ইউরো খরচে নির্মিতব্য এই প্রকল্প মূলত ইউরোপীয় দাতাদের টাকায় হচ্ছে৷ প্রকল্পটির কথা প্রথমে নব্বইয়ের দশকে ভাবা হয়, যখন ইএসও ১০০ মিটার ব্যাসের একটি টেলিস্কোপ নির্মাণ করতে চেয়েছিল৷
এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩ থেকে ৪ বিলিয়ন ইউরো খরচ হত৷ পরে এটাকে কমিয়ে ৩৯ মিটারে নিয়ে আসা হয়৷
বড় আকারের টেলিস্কোপ নির্মাণে এটিই একমাত্র উদ্যোগ নয়৷ যুক্তরাষ্ট্রে ৩০মিটার ব্যাসের একটি টেলিস্কোপ নির্মাণে অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে৷
একুশ শতকের প্রথম দিকে এ ধরনের বেশ কিছু উদ্যোগ ইউরোপেও নেওয়া হয়৷ পরে একত্রে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে তাদের আলাদা আলাদা সেই উদ্যোগ থেকে সরিয়ে আনা হয়৷
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন ডে জুউ৷ তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা যে কারও মান বাড়াতে সাহায্য করে৷
এসএন/ডিজি (ডিপিএ, রয়টার্স)