অন্য গ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে ২০২৪ সালে একঝাঁক টেলিস্কোপ নিয়ে মহাকাশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হচ্ছে ‘প্লেটো’ নামের এক অবজারভেটরি যান৷ সৌরজগত সম্পর্কেও নতুন তথ্যের খোঁজ চালানো হবে এই অভিযান৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের গভীরে ছড়িয়ে রয়েছে এমন অসংখ্য নক্ষত্র, যাদের চারিপাশে প্রদক্ষিণ করছে অনেক গ্রহ৷ সম্প্রতি মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা একাধিক এমন গ্রহের সন্ধান পেয়েছে৷ বহু দূরের এই সব গ্রহ বা ‘এক্সোপ্ল্যানেট' সম্পর্কে অবশ্য চটজলদি খুব বেশি তথ্য পাওয়া কঠিন৷ তাদের আলোর ছটা বিশ্লেষণ করে বড়জোর গ্রহের উপাদান সম্পর্কে জানা যায়৷
দূরের গ্রহ সন্ধানের উদ্যোগ আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে নতুন এক অভিযানের পরিকল্পনা করেছে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা৷ এর আওতায় ২০২৪ সালে ‘প্লেটো' নামের এক অবজারভেটরি যান মহাকাশ থেকেই গ্রহের অনুসন্ধান চালাবে৷ ছয় বছর ধরে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের গভীরের রহস্য উন্মোচন করবে এই যান৷ এই অভিযানের জন্য প্রায় ৬০ কোটি ইউরো ধার্য করা হয়েছে৷ জার্মানির এয়ারোস্পেস সেন্টার ডিএলআর এই অভিযানের মূল দায়িত্বে থাকবে৷
মহাশূন্যে হাত বাড়াচ্ছে ইউরোপ
চালকযুক্ত স্পেস ক্যাপসুলটির নাম ওরিয়ন৷ এসা এবং নাসা ২০১৭ সালে যৌথভাবে এই ক্যাপসুলটিকে মহাশূন্য প্রেরণ করবে৷ এসা দেবে মুখ্য মডিউলটি৷
ছবি: ESA/Foster + Partners
তারা থেকে তারায়
চালকযুক্ত স্পেস ক্যাপসুলটির নাম ওরিয়ন৷ এসা এবং নাসা ২০১৭ সালে যৌথভাবে এই ক্যাপসুলটিকে মহাশূন্য প্রেরণ করবে৷ এসা দেবে মুখ্য মডিউলটি৷ ক্যাপসুলটি প্রথমে চন্দ্র প্রদক্ষিণ করবে৷ তারপর মহাশূন্যে অবস্থান নেবে একটি নির্দিষ্ট বিন্দু হিসেবে৷ হয়তো মঙ্গলগ্রহ যাত্রার পথে তা কাজে লাগবে৷
ছবি: ESA-D. Ducros, 2012
মাধ্যাকর্ষণ না থাকায় অভ্যস্ত হওয়া
প্রথমে ইউরোপের নভচারীদের পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস’এ যাত্রা করার পালা৷ এসা’র অ্যাস্ট্রোনট ইটালির লুকা পার্মিতানো একটি জলের চৌবাচ্চায় স্পেস ওয়াক অভ্যেস করছেন৷ স্থান: কোলোনের কাছে ইউরোপীয় নভচারী কেন্দ্র (ইএসি)৷
ছবি: ESA/H. Rueb, 2010
আইএসএস’র জন্য তিন ইউরোপীয় নভশ্চর
লুকা পার্মিতানো আইএসএস’এ থাকবেন এ’বছরের মে মাস থেকে নভেম্বর মাস অবধি৷ ২০১৪ সালে এ’ভাবেই যাবেন জার্মানির আলেক্সান্ডার গের্স্ট৷ তারপরে যাবেন একজন মহিলা, ইটালির সামান্থা ক্রিস্টোফোরেত্তি৷
ছবি: dapd/NASA
মানুষের বদলে মাল পরিবহণ
তিন ইউরোপীয় নভশ্চর আইএসএস’এ যাবেন রুশ সোয়ুজ রকেটে চড়ে৷ এসা ইতিমধ্যে তথাকথিত অটোম্যাটিক ট্রান্সফার ভেহিকেল বা এটিভি’র মাধ্যমে আইএসএস’এ মালপত্র পাঠায়৷ পরের যাত্রা আগামী ১৮ই এপ্রিল৷ এটিভি’তে সাত টন খাদ্য ও সরঞ্জাম পাঠানো যায়৷
ছবি: ESA/S.Corvaja/dapd
চন্দ্রবাসের স্বপ্ন
চন্দ্রপীষ্ঠে এ’ধরনের একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন থেকে এসা এখনও অনেক দূর৷ সেখানে জন পাওয়া গেলে, তা’তে চাঁদের ধুলো মিশিয়ে বাড়িঘর তৈরি করা যেতে পারে৷ এবং চাঁদে জল আছে কিনা, চীনের চাঙ-ই ৩ রোভার চন্দ্রযান তা এ’বছরেই জানতে পারবে৷ চন্দ্রে অবতরণের পর এসা ঐ রোভারে তথ্য পাঠানোর ভার নেবে এবং তার গতিবিধি পরিচালনা করবে৷
ছবি: ESA/Foster + Partners
ডার্মস্টাট থেকে স্যাটেলাইট পরিচালনা
এসা’র ইউরোপীয় মহাকাশ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বা এসক থেকে চাঙ-ই ৩’এর আগের চীনা মহাকাশযানগুলিতে তথ্য পাঠানোয় সাহায্য করা হয়েছিল৷ চীনের আগের মহাকাশযানগুলি চন্দ্র প্রদক্ষিণ করেছে কিন্তু চন্দ্রপীষ্ঠে অবতরণ করেনি৷ এসক থেকে অপরাপর বহু গবেষণা ও যোগাযোগ সংক্রান্ত স্যাটেলাইটের যাত্রার উপর নজর রাখা হয়৷
ছবি: ESA - J. Mai
থ্রি-ডি’তে আমাদের ছায়াপথ
এ’বছরের অক্টোবর মাসে স্পেস প্রোব বা মহাশূন্য অভিযাত্রী যান ‘গাইয়া’ তার যাত্রা শুরু করবে৷ ইন্টারোফেরোমিটারের সাহায্যে আলোকতরঙ্গ থেকে আমাদের নক্ষত্রপুঞ্জের একটি থ্রি-ডি ছবি তৈরি করবে এবং ‘মিল্কি ওয়ে’ ছায়াপথের অনেক রহস্য উদঘাটন করবে৷ এসা’র গবেষকরা অন্তত এক বিলিয়ন নতুন তারা আবিষ্কার করার আশা করছেন৷ এমনকি তিন বিলিয়নও হতে পারে৷
ছবি: ESA/Medialab
গ্রহাণুর সন্ধানে
রোজেট্টা স্পেস প্রোব’টি ২০০৪ সাল যাবৎ ৬৭/পি চুরজুমভ-গেরাসিমেঙ্কো ধূমকেতু অভিমুখে যাত্রা করছে৷ ২০১৪ সালের সূচনায় মহাকাশযানটি ধূমকেতুটির কক্ষপথে যোগদান করবে৷ তবে ধূমকেতু অবধি পৌঁছতে পৌঁছতে রোজেট্টা অনেক কিছু দেখবে: নাসা’র ডিপ ইমপ্যাক্ট প্রোজেক্টাইলটি কিভাবে টেম্পল ওয়ান ধূমকেতুতে আঘাত করবে৷ এচাড়া রোজেট্টা দেখবে মঙ্গলগ্রহ এবং স্টাইনস ও লুটেশিয়া নামের দ’টি অ্যাস্টেরয়েড বা গ্রহাণু৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধূমকেতুর উপর অবতরণ
২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে রোজেট্টা ফিলি নামের এই রোবোটটিকে ধূমকেতুর উপরে নামাবে৷ কোলোনে অবস্থিত জার্মান বিমান ও মহাকাশযাত্রা কেন্দ্র ডিএলআর থেকে সেই অবতরণ নিয়ন্ত্রণ করা হবে৷ কাজটা শক্ত হবে, কেনান ধূমকেতুটির মাধ্যাকর্ষণ খুব বেশি নয়৷ রোজ্ট্টা ধূমকেতুটির রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ করবে৷
ছবি: ESA/AOES Medialab
স্যাটেলাইটের রিসাইক্লিং সম্ভব নয়
অর্ধশতাব্দী ধরে মহাকাশে রকেট ও স্যাটেলাইট পাঠানো হচ্ছে৷ এক সেন্টিমিটারের চেয়ে বড় প্রায় ছ’লাখ নানা ধরনের ও আকারের স্ক্র্যাপ এ’ভাবে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে৷ এসা চাপ দিচ্ছে মহাশূন্যে আবর্জনা কমানোর জন্য: অকেজো স্যাটেলাইটগুলোকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রিতভাবে ভূপাতিত করতে হবে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে ‘এল-টু' নামের একটি এলাকা থেকে পর্যবেক্ষণের কাজ চালাবে ‘প্লেটো'৷ সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদ থেকে দূরের এই অবস্থানের সুবিধা হলো, সেখান থেকে সারা বছর ধরে মহাকাশের গভীরে নজর রাখা যায়৷
‘প্লেটো'-র মধ্যে থাকবে ৩৪টি ছোট টেলিস্কোপ ও ক্যামেরা৷ তাদের মূল কাজ হবে পৃথিবীর মতো গ্রহগুলিকে আরও খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করা৷ কোনো গ্রহ তার নক্ষত্রের থেকে বিশেষ এক দূরত্বে থাকলে জল থাকতে পারে, ফলে সেখানে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা রয়েছে৷ ১৯৯৫ সালে প্রথমবারের মতো এমন একটি গ্রহের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল৷ এখনো পর্যন্ত প্রায় ৭৭৫টি ‘এক্সট্রাসোলার' গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে৷
শুধু পৃথিবীর মতো গ্রহ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ নয়, ‘প্লেটো' আমাদের সৌরজগতের সঙ্গে অন্যান্য নক্ষত্র ব্যবস্থার গঠনেরও তুলনা করবে৷