আমাদের সৌরজগতের ‘কাছে' এমন একটি গ্রহ শনাক্ত করা গেছে, যার সঙ্গে পৃথিবীর অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে৷ অর্থাৎ সেখানে প্রাণের বিকাশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
অন্য গ্রহে প্রাণের সন্ধানের স্পৃহা এমন একটা সময় থেকে চলে আসছে, যখন এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি শুধু কল্পনা বা কল্পবিজ্ঞানের জগতেই পাওয়া যেত৷ তারপর বিচ্ছিন্নভাবে মহাকাশ থেকে রেডিও সংকেত শোনার উদ্যোগ শুরু হলো৷ তারপর এলো ‘সেটি' বা ‘সার্চ ফর এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল ইনটেলিজেন্স' নামের এক সার্বিক উদ্যোগ৷ এর মধ্যে পাইওনিয়ার ও ভয়েজার মহাকাশযান পৃথিবীর মানুষের বার্তা নিয়ে রওনা হয়ে আমাদের সৌরজগত ছেড়ে মহাকাশের গভীরে চলে গেছে৷ প্রযুক্তির আরও উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে অনেক নতুন উদ্যোগও যোগ হয়েছে৷ আমাদের সৌরজগত ও পৃথিবীর মতো গ্রহের সন্ধান এর অন্যতম৷ ‘এক্সোপ্ল্যানেট' পর্যায়ের গ্রহগুলির পরিবেশ প্রাণ সৃষ্টির উপযুক্ত বলে ধরে নেওয়া হয়৷ কিন্তু শতশত আলোকবর্ষ দূরের এই সব জগত সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষমতা আজও মানুষের হাতে আসেনি৷ তবে বিজ্ঞানীদের কাছে এটা প্রথম পদক্ষেপ৷'
সাড়ে বারো হাজার কিলোমিটার দূর থেকে ছবি
নয় বছর ঘুরে ঘুরে অবশেষে প্লুটোর কাছে গেল মহাকাশযান নিউ হরাইজন্স৷ কাছে মানে, ১২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরে৷ সেখান থেকেই তোলা হয়েছে ছবি৷ এ নিয়েই ছবিঘর৷
ছবি: Reuters/NASA/APL/SwRI
এই প্রথম....
মহাবিশ্বে ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হলো মানব সভ্যতা৷ ১৪ই জুলাই সৌরজগতের শেষ সীমায় প্লুটোর সবচেয়ে কাছ দিয়ে, অর্থাৎ ১২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূর দিয়ে উড়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র তৈরি মহাকাশযান নিউ হরাইজন্স৷
ছবি: JHUAPL/SwRI
মানুষহীন মহাকাশযান থেকে ছবি...
নাসার তৈরি মহাকাশযান নিউ হরাইজন্সে কিন্তু কোনো মানুষ নেই৷ স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরাই তুলেছে ছবি৷ ক্যামেরা খুব শক্তিশালী বলেই সাড়ে বারো হাজার কিলোমিটার দূর থেকেও এমন ছবি তুলতে পেরেছে নিউ হরাইজন্স৷ সাড়ে বারো হাজার কিলোমিটারকে বেশি দূর মনে হচ্ছে? পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব কিন্তু এর চেয়ে ৩০ গুণ বেশি!
ছবি: Reuters/NASA/APL/SwRI
ঐতিহাসিক মুহূর্ত
২০০৬ সালের ১১ই জানুয়ারি ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল এয়ারফোর্স স্টেশন থেকে নিউ হরাইজন্সকে উৎক্ষেপণ করে নাসা৷ মহাকাশযানটিকে পাঠানো হয় প্লুটো নিয়ে গবেষণায় সহায়তার জন্য৷ সেই থেকে চলছিল প্রতীক্ষা – কবে প্লুটোর কাছাকাছি যাবে, কবে পাঠাবে ছবি! ১৪ই জুলাই মেরিল্যান্ডে নাসার অভিযান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে সবাই ছিলেন সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায়৷ ছবি দেখামাত্রই তাই উল্লাসে ফেটে পড়েন সবাই৷
নিউ হরাইজন্সের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, প্লুটোর ব্যস ২ হাজার ৩৭০ কিলোমিটার৷ আরেকটি বিষয়, প্লুটোকে আগে সবাই গ্রহ বলতেন, কিন্তু নিউ হরাইজন্স উৎক্ষেপণের পর থেকে এর নাম হয়েছে ‘বামন গ্রহ’৷
ছবি: Reuters/NASA New Horizons
যেখান থেকে শুরু
২০০৬ সালের ১১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার এই কেপ ক্যানাভেরাল এয়ারফোর্স স্টেশন থেকেই যাত্রা শুরু করেছিল নিউ হরাইজন্স৷ সেই থেকে মহাকাশযানটি ছুটেই চলেছে সেকেন্ডে ১৬ কিলোমিটার বেগে৷
ছবি: NASA
তুলনা
সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ বুধ, শুক্র, পৃথিবী এবং মঙ্গল৷ বামন গ্রহ সেরেসের পরে বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন৷ দু’টি ক্ষুদ্র বিন্দুর মতো দেখাচ্ছে প্লুটো এবং তার চাঁদ শ্যারনকে৷ এই বিন্দুর মতো প্লুটোর ব্যাসই প্রায় ২,৩৭০ কিলোমিটার৷ আগে একে আরো বড় মনে করা হতো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিশাল ক্যামেরা
এটি নিউ হরাইজন্সে ক্যামেরা সংযোজনের সময়ের ছবি৷ লং রেঞ্জ রিকনেসেন্স ইমেজ, সংক্ষেপে ‘লরি’ নামের এই ক্যামেরার ওজন ৮ দশমিক ৬ কিলোগ্রাম৷ ক্যামেরার প্রায় পুরোটা জুড়েই আছে বেশ বড় এক দূরবীন৷ দূরবীনটির ওজন ৫ দশমিক ৬ কিলোগ্রাম৷
ছবি: NASA
7 ছবি1 | 7
এমনই এক ‘এক্সোপ্ল্যানেট'-এর আবিষ্কার নতুন করে আলোড়ন তুলেছে৷ সিগনাস নক্ষত্রমণ্ডলের এই গ্রহটি প্রায় ১,৪০০ আলোকবর্ষ দূরে৷ নাসা-রকেপলার স্পেস টেলিস্কোপ এটির সন্ধান পেয়েছে৷ আপাতত তার নাম রাখা হয়েছে কেপলার-৪৫২বি৷ গ্রহটি পৃথিবীর তুলনায় প্রায় ৬০ শতাংশ বড়৷ সেটি যে নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে, সেটি আয়তন ও উত্তাপের নিরিখে আমাদের সূর্যেরই মতো, তবে তার বয়স বেশি৷ বয়সের বিষয়টি প্রাণের সম্ভাবনার জন্য বিশেষ তাৎপর্য রাখে৷ কারণ প্রায় ৬০০ কোটি বছর প্রাচীন এই নক্ষত্রের কাছে গ্রহটি এত সময় কাটিয়েছে৷ ফলে সেখানে প্রাণ সৃষ্টির সম্ভাবনা অনেক বেশি বলে মনে করেন নাসা-র বিজ্ঞানী জোন জেনকিন্স৷ গ্রহটির এক বছর হয় ৩৮৫ দিনে৷ গ্রহটির সঙ্গে নক্ষত্রের দূরত্ব পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্বের তুলনায় সামান্য বেশি৷ অঙ্কের হিসেব অনুযায়ী, এই গ্রহের পৃষ্ঠ বেশ পাথুরে, বায়ুমণ্ডল অত্যন্ত ঘন এবং হয়ত সেখানে সক্রিয় আগ্নেয়গিরিও রয়েছে৷ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর প্রায় দ্বিগুণ৷
বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ: কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
মহাকাশে বাংলাদেশের একটি নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর কথা প্রথম শুরু হয় ১৯৯৯ সালে৷ অনেক ধাপ পেরিয়ে ২০১৮ সালের ১২ মে ভোর ০২:১৪ তে কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় এটি৷ ছবিগুলো সব ফাইল থেকে নেয়া৷
সার্কভুক্ত ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা আগেই নিজেদের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে৷ বাংলাদেশও সে তালিকায় নাম তুলতে চাইছে৷ ২০১৮ সালের ১২ মে বাংলাদেশ মান সময় ভোর ০২:১৪ তে কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় এটি৷
ছবি: NASA
প্রকল্প অনুমোদন
এতে ব্যয় হয়েছে ২,৯৬৮ কোটি টাকা৷
ছবি: NASA/dpa
নতুন সময়সীমা
প্রথম পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৫ সালের জুনে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপিত হওয়ার কথা ছিল৷ পরে সেটা এক দফায় বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নকশা তৈরি হচ্ছে
যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ‘স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল’ এ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসাবে উপগ্রহের নকশা তৈরির কাজ শুরু করে৷
ছবি: ESA/ATG medialab
বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচবে
সরকার বলছে, দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো এই স্যাটেলাইট ব্যবহার করতে পারবে৷ এছাড়া এর মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবাও দেয়া সম্ভব হবে৷ এতে বছরে ১১০ কোটি টাকার বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চল্লিশটি ট্রান্সপন্ডার
বঙ্গবন্ধু কৃত্রিম উপগ্রহে ট্রান্সপন্ডার মোট ৪০টি থাকবে৷ এর মধ্যে বাংলাদেশ ১২টি ব্যবহার করবে৷ বাকিগুলো ভাড়া দেয়া হবে৷ এ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের স্বপ্ন দেখছে সরকার৷
ছবি: ESA/NASA via Getty Images
দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন
উপগ্রহটি নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি ‘গ্রাউন্ড স্টেশন’ নির্মাণ করে হবে৷
ছবি: ESA–J. Huart, 2013
নতুন কোম্পানি গঠন
স্যাটেলাইটটি একবার উৎক্ষেপণ হয়ে যাওয়ার পর সেটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা একটি কোম্পানি চালু করবে সরকার৷
ছবি: ESA/Mixed-Reality Communication GmbH
8 ছবি1 | 8
উল্লেখ্য, ২০০৯ সাল থেকে কেপলার টেলিস্কোপ আমাদের সৌরজগতের কাছের নক্ষত্রগুলিতে পৃথিবীর মতো গ্রহের খোঁজ করে চলেছে৷ এখনো পর্যন্ত মোট ১,০৩০টি গ্রহ নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা গেছে৷ তাছাড়া প্রায় ৪,৭০০ ‘প্রার্থী' গ্রহ রয়েছে৷ ১১টি গ্রহের সঙ্গে পৃথিবীর বিশেষ মিল পাওয়া গেছে, যেগুলির মধ্যে ৯টির নক্ষত্র আমাদের সূর্যের মতো৷
অন্য গ্রহে প্রাণীদের খোঁজার ক্ষেত্রে সম্প্রতি আরও উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং গত সোমবারই প্রায় ১০ কোটি ডলার মূল্যের এক ১০ বছর ব্যাপী প্রকল্প চালু করেছেন৷ রুশ শিল্পপতি ইউরি মিলনার ‘ব্রেকথ্রু লিসন' নামের এই উদ্যোগের অর্থায়ন করছেন৷ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে বুদ্ধিমান প্রাণীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করাই এর উদ্দেশ্য৷ ব্রহ্মাণ্ডের এত গভীরে এর আগে অনুসন্ধান চালানো হয়নি৷ আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমানে আরও ভালোভাবে তাদের পাঠানো সংকেত খোঁজা সম্ভব৷ এই প্রকল্পের মাধ্যমে যে তথ্য পাওয়া যাবে, তা সব মানুষের নাগালে রাখা হবে৷