আমাদের সৌরজগতে যতগুলো গ্রহ আছে, ঠিক তেমনটি আটটি গ্রহের একটি সৌরজগতের সন্ধান পেয়েছেন নাসার কেপলার মহাকাশ টেলিস্কোপ এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স৷ বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থাটি৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার ঐ সৌরজগতের অষ্টম গ্রহের খোঁজ পান নাসার বিজ্ঞানীরা৷ এর পরপরই তাঁরা জানান, ঐ গ্রহটি পৃথিবীর মতো একটি সৌরজগতের অংশ৷
অষ্টম গ্রহটি যে নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে তার নাম কেপলার-৯০৷ আর গ্রহটির নাম কেপলার-৯০আই৷ এটিও পৃথিবীর মতো সূর্য থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে (থার্ড রক ফ্রম ইটস সান)৷ তবে দূরত্বের বিচারে কেপলার-৯০আই তার সূর্য, মানে কেপলার-৯০'এর খুব কাছে অবস্থান করছে এবং নিজের কক্ষ পথে ঘুরতে তার সময় লাগছে মাত্র ১৪ দিন৷ এ কারণে এই গ্রহের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৪২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷
নাসা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঠিক আমাদের সৌরজগতের মতো আর একটি সৌরজগত পাওয়া গেছে, যেখানে আটটি গ্রহ রয়েছে এবং সেগুলি একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে৷ তবে এই গ্রহগুলোতে জীবনধারণ সম্ভব নয়৷ এই সৌরজগতটি আমাদেরটি থেকে ২,৫৪৫ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছে৷
অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ অ্যাড্রু ভ্যানডেরব্যর্গ জানিয়েছেন, ‘‘কেপলার-৯০ নক্ষত্রটির সৌরজগত আমাদের সৌরজগতের ছোট সংস্করণ৷ আর কেপলার-৯০আই গ্রহটি পৃথিবীর চেয়ে ৩০ ভাগ বড়, কিন্তু নক্ষত্রের খুব কাছে হওয়ায় তাপমাত্রা অত্যধিক৷ তবে আমাদের পৃথিবীর মতোই এটি পাথুরে গ্রহ৷'' এটিকে খুঁজতে গুগলের মাধ্যমে একটি যন্ত্র ব্যবহার করেছেন বিজ্ঞানীরা৷ এই পদ্ধতিতে আরও নতুন নতুন গ্রহ আবিষ্কারের আশা করছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা৷
৪০ বছর ধরে মহাশূন্যে নাসার ভয়েজার
১৯৭৭ সালের ২০ আগস্ট ভয়েজার ২ মহাশূন্য ভ্রমণে যায়৷ ১৬ দিন পরে রওয়ানা হয় ভয়েজার ১৷ দুই মহাকাশযানই এতদিনে সৌরজগতের বাইরে পাড়ি দিয়েছে৷ ছায়াপথে নতুন নতুন অ্যাডভেঞ্চারের খোঁজে শুরু করেছে যাত্রা ৷
ছবি: NASA/Hulton Archive/Getty Images
দুই মহাকাশযান
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার যান ভয়েজার ২ যাত্রা শুরু করে ১৯৭৭ সালের ২০ আগস্ট৷ এ যাত্রা ৪০ বছর পর এখনও চলছে৷ হুবহু নকশায় তৈরি করা ভয়েজার ১ পিছু পিছু রওয়ানা হয় ৫ সেপ্টেম্বর৷ প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল তখনও প্রায় অজানা দুই গ্রহ বৃহস্পতি ও শনি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা৷ দীর্ঘস্থায়ী প্লুটোনাম ব্যাটিরির বদৌলতে দুই মহাকাশযানই এখনও চলছে৷
ছবি: REUTERS/NASA/JPL-Caltech
যোগাযোগব্যবস্থা
৮২৫ কেজি ওজনের (পৃথিবীতে) এই ভয়েজার যান দু’টি নাসার সবচেয়ে সফল মিশনগুলোর একটি৷ এখনও দুই মহাকাশযান নিয়মিত তথ্য ও ছবি পাঠিয়ে যাচ্ছে৷ প্রতিনিয়তই ক্রমাগত দূরে সরে গেলেও ২০৩০ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবে ভয়েজার৷
ছবি: public domain
সৌরজগতের বাইরে
২০১২ সালের ২৫ আগস্ট ভয়েজার ১ সৌরজগতের সীমানা ‘হেলিওপজ’ অতিক্রম করে৷ ওখান থেকেই শুরু আমাদের ছায়াপথ আকাশগঙ্গা বা মিল্কিওয়ের আন্তনক্ষত্রীয় এলাকা৷ পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থিত মানবনির্মিত বস্তুর নাম এখন ভয়েজার ১৷ সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব যত, এই মুহূর্তে ভয়েজার তার চেয়ে ১৩৯ গুণ বেশি দূরে অবস্থান করছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যাত্রাপথ
সৌরজগতে বেশ কয়েকটি সীমানা আছে৷ প্রথম সীমানার নাম ‘টারমিনেশন শক’৷ এখান থেকে সৌর বায়ুর চাপ হঠাৎ করেই কমতে থাকে৷ তারপর হেলিওস্ফেয়ার অতিক্রম করে আসে ‘হেলিওপজ’৷ এখানে শেষ হয় সৌরজগতের প্রতিরক্ষা ব্যুহ যা আমাদের আন্তনক্ষত্রীয় বিকিরণ থেকে রক্ষা করে৷ নাসার হিসেবে হেলিওপজ অতিক্রম করার পর প্লাজমার ঘনত্ব বেড়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪০ গুণ৷
বড় গ্রহ, বেশি ছবি
মহাকাশযানটি সম্প্রতি বেশকিছু আবিষ্কার করেছে৷ বৃহস্পতির এই ছবিটি ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি পাঠায় ভয়েজার ১৷ বৃহস্পতি ও তার চার উপগ্রহের মোট ১৭,৪৭৭টি ছবি তুলেছে মহাকাশযানটি৷ এই ছবিগুলো বিশ্লেষণ করেই বৃহস্পতির চারপাশে শনির মতোই গ্যাসের পাতলা রিং-এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NASA
বিশদ বিবরণ
এই ছবির মতো গ্রহের পরিবেশ ও জলবায়ু বিশ্লেষণ করা যায়, এমন অনেক তথ্য সংগ্রহ করে পাঠিয়েছে ভয়েজার ১৷ বৃহস্পতিকে পাশ কাটিয়ে সামনে এগুনোর সময় ভয়েজারের গতি ছিল সেকেন্ডে ১৬ কিলোমিটার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NASA
সত্যিকারের রং
শনি গ্রহের এই ছবিটি পাঠিয়েছে ভয়েজার ২৷ ১৯৮১ সালে শনির কাছাকাছি পৌঁছায় ভয়েজার৷ মহাশূন্যের অনুপাতে এটি খুব কাছ থেকে তোলা একটি ছবি৷ এই ছবি তোলার সময় ভয়েজার ২ শনি গ্রহ থেকে মাত্র ২ কোটি ১ লাখ কিলোমিটার দূরে ছিল৷
ছবি: HO/AFP/Getty Images
সব ঠিকঠাক
যুক্তরাষ্ট্রের পাসাডোনিয়ায় ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে যতদূর সম্ভব পরিচালনা করা হয় ভয়েজারের কর্মকাণ্ড৷ যেমনটি দেখা যাচ্ছে ১৯৮০ সালের এই ছবিটিতে৷ এখন যন্ত্রপাতি আরো অনেক আধুনিক হয়েছে৷ কিন্তু অবসরে গিয়েও রেহাই পাচ্ছেন না ভয়েজার প্রস্তুত করা প্রকৌশলিরা৷ এখনও মাঝেমধ্যেই নবীনদের দিকে সহায়তার হাত বাড়াতে হয় তাদের৷
ছবি: NASA/Hulton Archive/Getty Images
অ্যালিয়েনের কানে পৃথিবীর ডাক
যাত্রাপথে যদি কখনও প্রাণের দেখে মেলে, সেজন্য আগে থেকেই দু’টো সোনার ডিস্ক ভরে দেখা হয়েছে ভয়েজারে৷ এই ডিস্কগুলোতে মানুষ, পশুপাখি এবং পৃথিবীর প্রাকৃতিক বিভিন্ন দৃশ্যের ছবি ও শব্দ রেকর্ড করে দেয়া হয়েছে৷ অ্যালিয়েনরা যদি রেকর্ড প্লেয়ার না চালাতে পারে, সেজন্য কীভাবে রেকর্ড প্লেয়ার বানাতে হয়, তারও একটা নকশা দেয়া আছে ডিস্কের সাথে৷
ছবি: NASA/Hulton Archive/Getty Images
মহাকাশে শিল্প
দশকের পর দশক ধরে মহাকাশভক্তদের অভিভূত করে গেছে ভয়েজার৷ ভয়েজারের যাত্রায় অনুপ্রাণিত হয়েছেন অনেক শিল্পীও৷ ১৯৭৭ সালে, ঠিক যাত্রা শুরুর আগে, ভয়েজারের শনিগ্রহ পাড়ি রং-তুলিতে ফুটিয়ে তুলেছেন এক মার্কিন শিল্পী৷
ছবি: NASA/Hulton Archive/Getty Images
10 ছবি1 | 10
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)
বন্ধুরা, কেপলার-৯০আই গ্রহে কি পৃথিবীর মতো প্রাণ থাকতে পারে? জানান আপনার মন্ব্য, নীচের ঘরে৷