এবোলা ভাইরাসের কথা শুনে আপনার মনে আতঙ্ক তৈরি হতে পারে৷ তবে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক ভাইরাস নয়৷ এমনকি এইচআইভি-ও নয়৷ পড়ুন পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক দশটি ভাইরাস নিয়ে ডয়চে ভেলের তালিকা৷
বিজ্ঞাপন
১. পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক ভাইরাসের নাম মারবুর্গ ভাইরাস৷ জার্মানির লান নদীর পাশের শহর মারবুর্গের নামে ভাইরাসটির নামকরণ হলেও এই শহরের সঙ্গে সেটির আসলে কোনো সম্পর্ক নেই৷ ‘হেমোরেজিক' জ্বর সৃষ্টিকারী এই ভাইরাসের লক্ষণ অনেকটা এবোলার মতোই, তবে এতে আক্রান্তের মৃত্যুর আশঙ্কা ৯০ শতাংশ৷
২. এবোলা ভাইরাসের পাঁচটি ধরন রয়েছে৷ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ এবং অঞ্চলের নামে এগুলোর নামকরণ করা হয়েছে: জাইরি, সুদান, তাই ফরেস্ট, বুন্ডিবিগিয়ো এবং রোস্টান৷ বর্তমানে গিনিয়া, সিয়েরা লিওন এবং লাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে জাইরি ছড়াচ্ছে৷ আর এটিই এবোলার সবচেয়ে মারাত্মক সংস্করণ, যাতে মৃত্যুর শঙ্কা ৯০ শতাংশ৷
মহামারি ইবোলা ভাইরাস
ইবোলা বা এবোলা ভাইরাসকে চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভাইরাস হিসেবে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ এতে আক্রান্ত হলে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুর অবধারিত৷ তাই বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা জারি করেছে সংস্থাটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান মার্গারেট চান এবোলাকে মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি অন্যতম ঘাতক জ্বর হিসেবে চিহ্নিত করে বলেছেন যে, আফ্রিকায় মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে রক্তপ্রদাহজনিত এই জ্বর৷ তাই বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন তিনি৷
ছবি: picture alliance/dpa
পশ্চিম আফ্রিকায় মহামারি
মারাত্মক এবোলা ভাইরাসের আক্রমণে পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি দেশে এ পর্যন্ত প্রায় ১,০০০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৭১১৷ গিনিতে গত মার্চে প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে এবোলা ভাইরাসের প্রকোপ কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লাইবেরিয়ায় জরুরি অবস্থা
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হিসেবে বিশ্বে এই ভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলির মধ্যে অন্যতম দেশ লাইবেরিয়ায় বৃহস্পতিবার জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে৷ এতে সরকার বিভিন্ন কঠোর ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হবে৷ প্রাণঘাতী এবোলা ভাইরাস এখন আফ্রিকা থেকে বিশ্বের অন্যান্য মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
আক্রান্ত অন্যান্য দেশের নাগরিক
স্পেনের একজন প্রবীণ ক্যাথলিক ধর্মপ্রচারক মারাত্মক অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরে গেছেন৷ তিনি এবোলায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ সৌদি আরবে একজন রোগীর মৃত্যুর কারণও এবোলা বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা৷ নাইজেরিয়াতেও একজন নার্স এবোলার সংক্রমণে মারা গেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এবোলা সংক্রমণের লক্ষণ
এবোলায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মারাত্মক জ্বর এবং কারও কারও অবিরত রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে৷ সঙ্গে থাকে মাথা, পেশী এবং তলপেটে তীব্র ব্যথা৷ রোগীর একদিকে ক্ষুধা কমে যায়, অন্যদিকে শুরু হয় পাতলা পায়খানা৷ সাধারণত শরীর থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন তরল পদার্থের মাধ্যমে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আক্রান্ত চিকিৎসক
বলা বাহুল্য, আক্রান্ত ব্যক্তির পরিচর্যাকারীর মধ্যে ভাইরাসটি সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি৷ লাইবেরিয়াতে যেমন এবোলা রোগীদের পরিচর্যাকারী দুই মার্কিন স্বাস্থ্যকর্মী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর, তাঁদের চিকিৎসার জন্য সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংক্রমণের আশঙ্কা
মূলত কোনো প্রাণী বা মানুষের রক্ত, বীর্য, যোনিরস বা দেহ নির্গত অন্য কোনো তরলের সংস্পর্শে এ রোগ ছড়ায়৷ বলা বাহুল্য, অনিয়ন্ত্রিত এবং অনিরাপদ যৌন মিলনেও এ রোগের সংক্রমণ হয়ে থাকে৷ অর্থাৎ কিছু কিছু ক্ষেত্রে এইডস রোগের সঙ্গে এবোলার মিল রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
উড়ন্ত খ্যাঁকশিয়াল
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পশ্চিম আফ্রিকায় এবোলা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার প্রধান কারণ উড়ন্ত খ্যাঁকশিয়াল৷ এই প্রাণীটি ভাইরাসটি বহন করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে দিচ্ছে৷ এমনকি সংক্রমিত প্রাণীটি যখন ফলমূল ও অন্যান্য প্রাণী খাচ্ছে, তখন সেসব খাদ্যের অবশিষ্ট অংশ থেকেও ছড়িয়ে পড়ছে এবোলা৷
ছবি: imago
সংক্রমণের ঝুঁকি
তার মানে শুধু মানুষ থেকে মানুষে নয়, মানুষ যখন এবোলায় আক্রান্ত প্রাণীর রক্ত বা মাংসের সংস্পর্শে আসে, তখনও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে৷ বরং সেক্ষেত্রে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি বলে জানান চিকিৎসকরা৷ তাই খ্যাঁকশিয়াল থেকে অন্য প্রাণী বা ফলমূল হয়ে সহজেই মানুষের মধ্যে এবোলা ভাইরাস তার বংশবৃদ্ধি করে৷
ছবি: DW
৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যু
এবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুর অবধারিত৷ সেজন্যই তো একে মহামারি বলে আখ্যা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
ছবি: Reuters
বড় সমস্যা
বলা বাহুল্য, আফ্রিকায় বন্য প্রাণী খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে৷ সব বাজারেই এ সব মাংস পাওয়া যায়৷ গবেষকদের ধারণা, এ ধরনের বন্য প্রাণীর মাংস থেকে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে এবোলা৷ তার সঙ্গে অনিরাপদ যৌন মিলন তো রয়েছেই!
ছবি: picture-alliance/dpa
পরীক্ষামূলক ওষুধ এখনই নয়
এবোলা সংক্রমণ নিরাময়ের উপায় এখনো আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি৷ যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি একটি ওষুধ পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করার সময় এখনো আসেনি বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ কারণ মার্কিন দুই স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর ওষুধটি প্রয়োগে তাঁদের উন্নতির ধরণে তারতম্য দেখা গেছে৷
ছবি: LEON NEAL/AFP/Getty Images
12 ছবি1 | 12
৩. হেন্টাভাইরাস বলতে অনেক ধরনের ভাইরাসকে বোঝানো যায়৷ ধারণা করা হয় ১৯৫০ সালে কোরিয়া যুদ্ধের সময় হেন্টা নদীর তীরে অবস্থানকালে মার্কিন সেনারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন৷ এতে আক্রান্তের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে ফুসফুসে প্রদাহ, জ্বর এবং কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়া৷
৪. বার্ড ফ্লু ভাইরাসের বিভিন্ন সংস্করণ নিয়মিতই আতঙ্ক তৈরি করছে৷ এটা যৌক্তিকও কেননা এই ভাইরাসে মৃত্যুর হার সত্তর শতাংশ৷ তবে এতে সংক্রমণ সহজ নয়৷ শুধুমাত্র হাস-মুরগির সংস্পর্শে গেলে এতে সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে৷ এশিয়াতে এই ভাইরাস সংক্রমণের হার বেশি৷ কারণ সে অঞ্চলের অনেক মানুষ মুরগির খুব কাছে বসবাস করেন৷
৫. নাইজেরিয়ার একজন সেবিকা প্রথম লাসা ভাইরাসে আক্রান্ত হন৷ ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়৷ তবে ভাইরাসটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে ছড়ায়৷ পশ্চিম আফ্রিকায় এই ভাইরাস ছড়ানোর প্রবনতা বেশি৷ বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, সেখানকার ১৫ শতাংশ ইঁদুর লাসা ভাইরাস বহন করছে৷
৬. আর্জেন্টিনার ‘হেমোরেজিক' জ্বরের সঙ্গে সম্পৃক্ত জুনিন ভাইরাস৷ সমস্যা হচ্ছে এটির লক্ষণ আরো অনেক রোগের লক্ষণের মতো হওয়ায় শুরুতেই এটি সনাক্ত করা সম্ভব হয় না৷
৭. ক্রিমিয়া-কংগো জ্বরের ভাইরাস ‘টিক' পতঙ্গের মাধ্যমে ছড়ায়৷ এটির লক্ষণ অনেকটা এবোলা এবং মারবুর্গ ভাইরাসের মতোই৷
৮. বলিভিয়ার ‘হেমোরহেজিক' জ্বরের সঙ্গে সম্পৃক্ত মাচুপো ভাইরাস৷ এটি ‘ব্লাক টাইপুস' হিসেবেও পরিচিত৷ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মাত্রাতিরিক্ত জ্বর হয়, সঙ্গে শুরু হয় মারাত্মক রক্তপাত৷ জুনিন ভাইরাসের মতো এটির বৃদ্ধি ঘটে৷ মানুষ থেকে মানুষের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে৷
৯. ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলবর্তী বনভূমিতে প্রথম ‘কিয়াসানুর ফরেস্ট ভাইরাস' বা কেএফডি আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা৷ সেটা ১৯৫৫ সালের কথা৷ এই ভাইরাস টিকের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়৷ তবে ঠিক কারা এটা বহন করে তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি৷ ধারণা করা হয় ইঁদুর, পাখি এবং বন্য শুকর কেএফডি ভাইরাস বহন করে থাকতে পারে৷
১০. ডেঙ্গু জ্বর এক নিয়মিত হুমকি৷ তাই আপনি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা করলে, ডেঙ্গু সম্পর্কে আগে খোঁজ নিয়ে নিন৷ মশা বাহিত এই ভাইরাসে প্রতি বছর পর্যটনের জন্য বিখ্যাত থাইল্যান্ড এবং ভারতের মতো দেশে সবমিলিয়ে ৫০ থেকে ১০০ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হন৷ তবে পর্যটকদের চেয়ে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য এই ভাইরাস বড় হুমকি৷