মাইনরিটি রাইটস গ্রুপ বা এমআরসি সম্প্রতি তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইথিওপিয়া, চীন ও ইরাকে সংঘাত, উচ্ছেদের কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও আদিবাসীদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে৷ আর সেইসাথে তাদের সংস্কৃতিও হারিয়ে যেতে বসেছে৷ সংস্থাটির নীতি ও যোগাযোগ পরিচালক কার্ল সোডারবার্গ বলেছেন, যদিও আদিবাসী বা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয়, তবে বর্তমানে তাদের উপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনার মাত্রা ভয়াবহভাবে বাড়ছে৷
সিরিয়া ও ইরাকে যে যুদ্ধ চলছে তাতে বহু মানুষ গৃহহীন হচ্ছে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু, যেমন ইয়াজিদি এবং সাবিয়ান মাদিয়ানরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ স্টেট অব দ্য ওয়ার্ল্ডস মাইনরিটিস অ্যান্ড ইন্ডেজেনাস পিপলস ২০১৬-এর প্রতিবেদনে এ কথাই তুলে ধরেছেন কার্ল৷
তাই নিজেদের পূর্বপুরুষের বসতি থেকে আদিবাসী সম্প্রদায় নির্মূলের সমূহ আশঙ্কা রয়েছে৷ আশঙ্কা রয়েছে তাঁদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়ার, কেননা স্থানভেদে এ সব সংস্কৃতি লালিত হয়৷ ইরাকে সাম্প্রতিক সহিংসতায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যেমন ইয়াজিদি, তুর্কি, সাবাক, খ্রিষ্টান এবং কাকাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং গৃহহীন হয়েছে সবচেয়ে বেশি৷
জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, জঙ্গি সংগঠন তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস নৃশংস অত্যাচার চালিয়েছে ইয়াজিদিদের ওপর৷ তাঁদের হত্যা করা হয়েছে, বন্দি করা হয়েছে এবং বানানো হয়েছে দাস৷ তাঁদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে বলে গত জুন মাসেও জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ সবচেয়ে ভযাবহ হলো, আইএস আদিবাসী এবং ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ধ্বংস করছে৷ এতে করে আদিবাসীদের সংস্কৃতির পাশাপাশি তাঁদের পরিচিতিও পড়েছে হুমকির মুখে৷ কেননা যখন একটি সম্প্রদায় নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়, তখন তাদের সংস্কৃতি এবং এতিহ্য ধরে রাখাটা ভীষণ কষ্টকর হয়৷ এছাড়া পরবর্তী প্রজন্মে তাদের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়াটাও তখন সহজ হয় না৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের এই সংঘাত পরিস্থিতি চলতে থাকলে ২১১৫ সালের মধ্যে অন্তত ৭,০০০ আদিবাসী ভাষা পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে৷
জাতিসংঘের হিসেবে বিশ্বে প্রায় ৩৭ কোটি আদিবাসী রয়েছে৷ অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় পাঁচ শতাংশই এই গোষ্ঠীর অন্তর্গত৷ ছবিঘরে থাকছে কয়েকটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কথা৷
ছবি: picture-alliance/Sandra Gätkeব্রাজিলের কায়াপো গোষ্ঠীর এই সদস্যকে দেখলে মনে হতে পারে তাঁরা বোধ হয় অনেক আধুনিক৷ কিন্তু না৷ আসলে তাঁদের অবস্থান বিশ্বের অন্যতম অরক্ষিত ও সুবিধাবঞ্চিতদের দলে৷
ছবি: APছবিতে গ্রিনল্যান্ডের ইনুইট-দের একজনকে দেখা যাচ্ছে৷ মেক্সিকো ও মধ্য অ্যামেরিকার মায়া গোষ্ঠী থেকে শুরু করে আফ্রিকা কিংবা উপমহাদেশ, প্রায় সব জায়গায় আদিবাসীদের বাস৷ জানা গেছে, ৯০টি দেশে প্রায় পাঁচ হাজার আদিবাসী গোষ্ঠী রয়েছে৷
ছবি: Getty Imagesমরক্কোর ব্যারব্যার বা বর্বর গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত এঁরা৷ উত্তর আফ্রিকার প্রায় নয়টি দেশে এই আদিবাসীদের বাস৷ তাঁদের অনেকেই ‘তামাঝিঘট’ ভাষায় কথা বলেন যেটা আফ্রো-এশিয়ান ভাষা পরিবারের অন্তর্গত এবং প্রাচীন মিশরীয় ও ইথিওপীয় ভাষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট৷ আরবি সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে বাঁচাতে ব্যারব্যারদের অনেক লড়তে হয়েছে৷
ছবি: Getty Imagesইকুয়েডরের অ্যামাজন রেনফরেস্ট এলাকায় ওয়াওরানিদের বসবাস৷ সাম্প্রতিক সময়ে তাঁদের একটা অংশ ‘ইয়াসুনি ন্যাশনাল পার্ক’-এ নির্মিত ঘরবাড়িতে বসবাস শুরু করেছে৷ তবে আরেকটা অংশ এখনও বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী নয়৷ এর চেয়ে বানর আর পাখি শিকার করে জীবন কাটাতেই পছন্দ করছেন তাঁরা৷
ছবি: APভারতের ওড়িশার এই আদিবাসীরা সম্প্রতি ব্রিটিশ এক কোম্পানির প্রস্তাবিত খননকাজের প্রকল্প বাস্তবায়ন রুখে দিয়েছে৷ এই খননকাজে নিজেদের পবিত্র পাহাড় কাটা পড়ার বাস্তবতা তাঁরা মেনে নেননি৷ তবে বিশ্বের অন্য সব আদিবাসীদের পক্ষে যে এভাবে উন্নয়নের নামে এমন সব প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয়া সম্ভব হয়েছে তা নয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বরং উল্টোটাই হয়েছে৷
ছবি: Survival Internationalআদিবাসী নারী ও মেয়েরা অনেকসময় গুণগত শিক্ষা পায় না৷ তবে পেরুর কুসকো অঞ্চলের আদিবাসীদের শিক্ষা দিতে ‘প্ল্যান’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা উদ্যোগ নিয়েছে৷ সংস্থাটি আদিবাসীদের শিক্ষা কার্যক্রমে তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটানোর চেষ্টা করছে৷
ছবি: picture-alliance/Sandra Gätke
এপিবি/ডিজি (রয়টার্স)