দাম বাড়তে বাড়তে বাংলাদেশের খুচরা বাজারে এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়৷ লাগামহীন পেঁয়াজের দাম নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন ভোক্তরা৷ অতিরিক্ত দামের কারণে পেঁয়াজ ছাড়াই বাজার সারছেন অনেকে৷
বিজ্ঞাপন
পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার পর বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি ঢাকায় খোলা ট্রাকে ৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করলেও সরবারহ না থাকায় তাতে ভাটা পড়েছে৷
পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পদক্ষপে নেওয়া হবে বলে মন্ত্রীরা বার বার আশ্বাস দিলেও এনিয়ে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ চোখে পড়েনি৷ ফলে ক্রমাগত বেড়েই চলছে বাঙালিদের রান্নার অন্যতম এই অনুষঙ্গের দাম৷
ঢাকার বাজারে বর্তমানে এক কেজি পেঁয়াজ ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, কয়েকদিন আগেও এর দাম ছিল ১৪০-১৫০ টাকা৷
ঢাকার মিরপুরের পীরেরবাগ কাচাবাজারে দেশি ক্রস জাতের এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়৷ আর বাছাই করা তুলনামূলক ভালো মানের পেঁয়াজের দাম চাওয়া হচ্ছিল প্রতি কেজি ২০০ টাকা৷
ডয়চে ভেলের কসটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এক প্রতিবদনে বলছে, পীরেরবাগ কাচাবাজারে একটি মুদি দোকানের সামনে প্রায় আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে অন্তত পাঁচজন ক্রেতাকে পেঁয়াজের দাম শুনে ভ্রু কুচকাতে দেখা যায়৷ অন্য দুটি দোকানে গিয়েও একই দাম দেখেন তারা এবং এক পর্যায়ে পেঁয়াজ ছাড়া কাচাবাজারের অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনেই বাড়ি ফেরেন৷
পেঁয়াজ ছাড়া মজাদার রান্না
চড়া দামের কারণে পাতে পেঁয়াজ নেই? তবুও ঘরে থাকা অন্যান্য উপকরণ দিয়ে বানিয়ে দেখতে পারেন দেশি স্বাদের এই রান্নাগুলি৷
ছবি: Rangoli Restaurant
শুক্তো
পেঁয়াজ ছাড়া রান্নার কথা ভাবলেই মাথায় আসে নিরামিষ রান্নার কথা৷ আর শীতের মরসুমে নানা রকমের সবজি দিয়ে শুক্তো রান্নার মজাই আলাদা৷ অল্প মেথি, মৌরি বা পাঁচফোড়ন বাগাড় দিয়ে পছন্দের সবজির সাথে দুধ বা নারকেল বাটা বা সর্ষে দিয়ে খুব কম সময়েই বানানো যায় এই পদটি৷ পশ্চিমবঙ্গে জনপ্রিয় এই রান্নায় পেঁয়াজ, রসুন একদমই দেওয়া হয় না৷
ছবি: DW/S. Surita
পাতুরি
শুধু সর্ষেবাটা, কাঁচা মরিচ ও সর্ষের তেল দিয়ে মেখে কলাপাতায় মুড়ে সেঁকে নিলেই তৈরি মজার ‘পাতুরি’৷ ইলিশ, ভেটকি ছাড়া চিংড়ি বা ছানা দিয়েও বানানো যায় এই পদটি৷ পাতুরি সেঁকার কাজ কয়লার চুলাতেই সবচেয়ে ভালো হয়৷
ছবি: DW/S. Surita
ইডলি-দোসা
দক্ষিণ ভারতে প্রচলিত এই পদ বর্তমানে বাংলাদেশের রান্নাঘরেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ মূলত ডাল ও চালবাটা দিয়ে তৈরি এই দুটি খাবার পরিবেশন করা হয় নানা ধরনের চাটনি ও সাম্বার নামের ডালের স্যুপের সাথে৷ স্বাদ বদল করতে এই পদটি চেখে দেখতে পারেন৷
ছবি: Eesha Kheny
মুগডালের খিচুড়ি
নিরামিষ খিচুড়ি মূলত করা হয় মুগের ডাল দিয়ে৷ রসুন বা পেঁয়াজের জায়গায় বাগাড় দেওয়া হয় পাঁচফোড়ন, শুকনা মরিচ বা গরম মশলা দিয়ে৷ আদাবাটার সাথে নানা রকম সবজিও দেওয়া হয় এই খিচুড়িতে৷
ছবি: Colourbox/FormaA
লাবড়া
পাঁচমিশালি সবজির আরেকটি নাম লাবড়া৷ সাধারণত পুজোবাড়িতে নিরামিষ খিচুড়ির সাথে খাওয়া হয় এই লাবড়া৷ আলু, মিষ্টি কুমড়া, বাঁধাকপি, ফুলকপি, সিম ও বেগুনের এই সবজি রান্না করতে ব্যবহৃত হয় শুকনা মরিচ, পাঁচফোড়ন ও তেজপাতা৷ অনেক সময় ধরে কষিয়ে মাখামাখা এই পদটি শুধু রুটি দিয়েও খেতে পছন্দ করেন অনেকে৷
ছবি: DW/S. Surita
কালীপুজোর পাঁঠার মাংস
মাছ বা মাংষ রান্না পেঁয়াজ ছাড়া কল্পনাই করা যায় না৷ কিন্তু কালীপুজোর সময় যে পাঁঠা বলি দেওয়া হয়, সেই মাংস রান্নায় থাকেনা পেঁয়াজ বা রসুন৷ শুধু আদা, জিরে ও ধনেবাটা সাথে বেশি করে কাঁচা মরিচ দিয়ে ঝাল ঝাল এই পদটি পুজোবাড়িতে খুব জনপ্রিয়৷ এক এক পুরোনো বনেদী হিন্দু পরিবারে রয়েছে এক এক ধরনের মশলা দিয়ে এই মাংস রান্নার প্রচলন৷
ছবি: Lars Bevanger
ইলিশের তেল ঝোল
বাংলাদেশের সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গেও রয়েছে ইলিশের নানা রকমের রান্নার জনপ্রিয়তা৷ তার মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত ইলিশের ‘তেল ঝোল’, যা অন্য মাছ দিয়েও করা হয়৷ শুধু কালোজিরের বাগাড় ও কাঁচামরিচের স্বাদের উপর ভিত্তি করেই করা হয় এই রান্নাটি৷ কেউ কেউ মাছের সাথে ডালের বড়ি ভাজা দিয়েও এই রান্নাটি করে থাকেন৷
ছবি: DW/S. Surita
বিদেশি যে যে পেঁয়াজ ছাড়া রেসিপি
শুধু দেশি স্বাদের রান্না কেন, পেঁয়াজ ছাড়া এমন অনেক বিদেশি রান্না করা যায় যা দেশি স্বদ থেকে খুব বেশি দূরে নয়৷ পিৎজা বা পাস্তা রান্নায় সচরাচর পেঁয়াজ ব্যবহার করেন না ইতালিয়ানরা৷ মূলত টমেটো ও নানা রকমের হার্ব, চিজ দিয়েই বানানো যায় অনেক ধরনের পাস্তা বা পিৎজা৷ স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিরা পেঁয়াজ ছাড়া মুরগির রোস্ট বা সালাদও বানাতে পারেন৷
পেঁয়াজের পরিবর্তে যা
ভারতের অনেক গোষ্ঠীদের মধ্যেই প্রচলিত নেই পেঁয়াজ বা রসুনের ব্যবহার৷ কিন্তু সমস্বাদ আনতে তারা ব্যবহার করেন হিং, যা দিয়ে বাগাড় দিলে ডাল বা সবজিতে আসে অবিকল রসুনের স্বাদ৷ এই হিং ব্যবহার করা হয় রাজস্থান বা উত্তরপ্রদেশের বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় খাবার রান্নায়৷
ছবি: Getty Images/S.Hussain
9 ছবি1 | 9
এই বাজারের মুদি দোকানি মুরাদ হোসেন বলেন, ‘‘মিরপুর-১ নম্বরের পাইকারি বাজার থেকে প্রতি কেজি ১৫৫ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনেছি৷ এর সঙ্গে পরিবহন ব্যয় যোগ করে প্রতি কেজি ১৭০ টাকায় বিক্রি করছি৷ দাম বেশি হওয়ায় বিক্রিও কমে গেছে৷’’
কেনাকাটা করতে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব এক নারী বলেন, "দুইশ টাকা যদি পেঁয়াজ কিনতেই খরচ করতে হয় তাহলে অন্যান্য সদাই করব কীভাবে? পেঁয়াজের এত দাম আমার জীবনে দেখিনি৷ স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে আর পেঁয়াজ খাওয়া সম্ভব না৷’’
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বাংলাদেশে আঘাত হানার পর আরেক দফা বেড়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম এখন ২০০ টাকা ছুঁইছুঁই৷ বুলবুল আঘাত হানার খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে৷
ঢাকায় পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারেও পেঁয়াজের সরবরাহে টান পড়েছে বলে সেখানকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন৷ আলহাজ বাণিজ্য বিতানের পরিচালক অমিতাভ কুন্ডু বলেন, "বাজারে মালের সাপ্লাই নাই বললেই চলে৷ পেঁয়াজ নাই, ক্রেতাও নাই৷ পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি দেড়শ টাকা এবং মিশরের পেঁয়াজ ১১৫ টাকা থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে৷’’
গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে এসে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার পর খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে টিসিবি৷ সর্বশেষ প্রতিদিন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ৩৫টি ট্রাক বসিয়ে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছিল তারা৷ একজন ক্রেতা এক কেজি করে পেঁয়াজ কিনতে পারছিলেন৷ আর ট্রাক সেলের ডিলার পাচ্ছিলেন প্রতি দিন এক টন করে পেঁয়াজ৷
সরবরাহ ঘাটতির কারণে এই পেঁয়াজ বিক্রিতে ভাটা পড়েছে বলে সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন৷ তবে টেকনাফ থেকে পেঁয়াজের ট্রাক ঢাকার পৌঁছালে আবার বিক্রি শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা৷