1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পেঁয়াজের দরবৃদ্ধি, ভারতনির্ভর আমদানি ও সরকারের সমন্বয়হীনতা

ফয়সাল শোভন
৮ নভেম্বর ২০১৯

দেশে প্রতিবছরই কোন না কোন খাদ্যপণ্য নিয়ে তৈরি হচ্ছে সঙ্কট৷ অল্প ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে৷ যার কারণে দাম চলে যাচ্ছে ক্রেতার নাগালের বাইরে৷ এইজন্য সরকারের সমন্বয়হীনতা ও প্রস্তুতির অভাবই অনেকটা দায়ী৷

Bangladesch Markt | Zwiebeln
ছবি: bdnews24.com/A. Mannan

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে প্রায় ২৪ লাখ টন৷ চলতি বছর দেশে উৎপাদন হয়েছে ২৩ লাখ টনের মত৷ কিন্তু পঁচে যাওয়াসহ নানা কারণে ৮-১০ লাখ টন পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে৷ সেই ঘাটতি পূরণে প্রতিবছরই সাত থেকে ১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়, যার সিংহভাগই আসে ভারত থেকে৷ এবারও আমদানি হচ্ছিল, কিন্তু গত মাসে হঠাৎ দেশটি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷ ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের হিসাবেই এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম এক লাফে  ৬৫ ভাগ বেড়ে গেছে৷ বছরের ব্যবধানে দাম বৃদ্ধির হার ২৮৩ ভাগ৷ এখন মিয়ানমার থেকে আমদানি করেও সেই দর নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না৷ মিশর থেকে আসার আগে আপাতত ১০০ টাকার নিচে পেঁয়াজ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী৷

পেঁয়াজ নিয়ে এমন ঘটনা যে এবারই প্রথম ঘটেছে তা নয়৷ ২০১৭ সালের শেষ দিকেও বাংলাদেশে এই পণ্যটির সংকট দেখা দিয়েছিল৷ ভারত তখন পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য ৪৩০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার করে৷ তার প্রভাবে বাংলাদেশে ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ৭৫ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা হয়েছিল৷ আট দশ লাখ টনের ঘাটতি মেটাতে গিয়েই সরকারকে বারবার এমন হিমশিম খেতে হচ্ছে৷ ২০১৭ সালে আকষ্মিক বন্যার কারণে চাল সঙ্কটেও ঠিক একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল৷

পেঁয়াজ ছাড়াও বাংলাদেশ ভারত থেকে চাল, ডাল, মরিচ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সবজি ও ফল আমদানি করে৷ প্রতিবেশী হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই দেশটি থেকে আমদানি লাভজনক৷ স্থলপথে দ্রুত আর সহজে পণ্য পৌছানো যায়, সেই সঙ্গে খরচও পড়ে তুলনামূলক কম৷

কিন্তু কিছু খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে ভারতের উপর অতি নির্ভরতায় বারবারই সঙ্কট তৈরি হচ্ছে৷ দেশে কোন পণ্য কতটুক উৎপাদন হয়েছে, কতটুকু আমদানি প্রয়োজন এবং তা কোন দেশ থেকে আমদানি করা যেতে পারে সেই বিষয়ে সরকারের সমন্বয়ের ঘাটতিও এক্ষেত্রে লক্ষণীয়৷ যার কারণে ভারত কোন পণ্যের রপ্তানি বন্ধ করলে বা শুল্ক বাড়িয়ে দিলে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে বাংলাদেশে৷ এই পরিস্থিতি দ্রুত সামাল দেয়ার মত কোন ব্যবস্থা থাকে না সরকারের হাতে৷ এলসি খুলে নতুন করে অন্য কোন দেশ থেকে পণ্য আমদানি এবং সরবরাহে যেই সময়টুকু লাগে তাতেই বাজার হয়ে ওঠে অস্থির৷ সেই পরিস্থিতিকে আরো সঙ্কটময় করে তোলেন অসাধু ব্যবসায়ীরা৷ 

প্রশ্ন হল এই ক্ষেত্রে সরকারের কী করণীয় আছে৷ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সংস্থা টিসিবি৷ তাদের কাজ,  ‘‘নিদিষ্ট কিছু সংখ্যক নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের আপদকালীন মজুদ গড়ে তুলে প্রয়োজনীয় সময়ে ভোক্তা সাধারণের নিকট সরবরাহ করার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক ভুমিকা রাখা৷'' পাশাপাশি তারা বাজারে দ্রব্যের দাম মনিটরিং করে, খাদ্য পণ্যের চাহিদা, মজুদ, আমদানির হিসাব নিকাশও রাখে৷ অন্যদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আছে ফুড প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিট বা এফপিএমইউ৷ দেশে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করাও তাদের দায়িত্ব৷ এক্ষেত্রে চাল, গমের উ‍ৎপাদন, মজুদ ও বিশ্ব বাজারের পরিস্থিতি তারা র্পযবেক্ষণ করে৷ দেশে কৃষি পণ্যের উৎপাদন দেখভাল করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর৷ মাঠ পর্যায় থেকে উৎপাদনের পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএসও৷ দেশে কৃষি বা খাদ্যপণ্য নিয়ে কাজ করা এতগুলো সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের যথেষ্ট অভাব আছে৷ একসাথে কাজ করাতো দূরের অনেক সময় একই বিষয়ে তাদের তথ্যেরও মিল থাকে না৷ যেমন এবার পেঁয়াজের উৎপাদন নিয়েই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিবিএসের রয়েছে দুই ধরনের তথ্য৷ যার মধ্যে তফাৎ প্রায় পাঁচ লাখ টনের মত৷

এই বিষয়ে সরকারের আরও মনযোগ দেয়ার সময় এসেছে৷ এই সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে প্রতিবছর খাদ্যপণ্য উৎপাদনের হিসাব ও আমদানির একটি প্রাক্কলন করা উচিত৷ কোন পরিস্থিতিতে কোন দেশ থেকে কতটুকু আমদানি করা যেতে পারে তারও একটি দিক নির্দেশনা ও প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন৷

শুধু আমদানি নয়, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদনে সমন্বয়ও গুরুত্বপূর্ণ৷ দেশে এক একবার কৃষকেরা এক একটি পণ্য উৎপাদন করে বিপদে পড়েন৷ কোনোবার হয়তো চালের দাম কম পেয়ে তারা ঝুঁকলেন আলুতে৷ আলুর বাম্পার ফলনের পর তার দাম হয়তো পড়ে গেল৷ এবারের সঙ্কটের কারণে সামনে হয়তো অনেক কৃষক পেঁয়াজ উৎপাদনের ঝুঁকতে পারেন৷ কিন্তু পরের বছর হয়তো তার দাম কমে যেতে পারে৷ এই ক্ষেত্রেও সরকারের কেন্দ্রীয়ভাবে একটি পরিকল্পনা থাকা জরুরি৷ কৃষকদের ভর্তুকি দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করে বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থা ও দাম নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে, যেমনটা এখন ইউরোপ করছে৷ ‘কমন এগ্রিকালচার পলিসির' অধীনে কৃষকদের বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে বছরে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ভর্তুকি দিচ্ছে তারা৷ যার মূল লক্ষ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষির উপর মানুষের নির্ভর মানুষের ন্যায্য জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা, বাজার স্থিতিশীল রাখা, চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং সহনীয় দামে ভোক্তাদের কাছে খাদ্যপণ্য পৌছে দেয়া৷

ফয়সাল শোভন ডয়চে ভেলের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক৷@FaisalShovon14
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ