পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণার সুফল চট্টগ্রামে
২২ মে ২০২৩এবছর বাম্পার ফলন ও পর্যাপ্ত মজুত সত্ত্বেও পেঁয়াজের বাজারে চলছে অস্থিরতা৷ কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ৷ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি তাই বলেছিলেন পর্যাপ্ত উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও বেশি মুনাফার আশায় পেঁয়াজ মজুত করে বাজার অস্থিতিশীল করা হয়েছে৷
রোববার রাজধানীর বাড্ডা আলাতুন্নেছা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া পুরস্কার এবং গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, দাম কমিয়ে আনতে পেঁয়াজ আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে৷
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন বর্তমান বাজার বিবেচনায় পেঁয়াজ আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে৷ তিনি আরো বলেন, দেশের কৃষকরা যাতে পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য পান সেজন্য মূলত ইমপোর্ট পারমিট বন্ধ রাখা হয়েছে৷ এখন যেহেতু ভোক্তাদের বাজারে গিয়ে পেঁয়াজ কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, তাই আমদানি করা ছাড়া উপায় নেই৷
এদিকে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক রোববার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং আরও ২-৩ দিন বাজার পরিস্থিতি দেখে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷
ওইসময় কৃষিমন্ত্রী জানান, কৃষকের কাছে, গুদামে ও আড়তে কী পরিমাণ পেঁয়াজ আছে, তা দেখতে গত ২-৩ দিন মাঠ পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা খোঁজ নিয়েছেন৷ তিনি তথ্য পেয়েছেন যে যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুত আছে৷ তবে, দাম আরও বৃদ্ধির আশায় তারা বাজারে বিক্রি করছে না৷ সিন্ডিকেটের হাত আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি৷
এদিকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হতে পারে খবরে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজে দাম তিন থেকে পাঁচ টাকা কমে গেছে৷ গত সপ্তাহের শেষে খাতুনগঞ্জ পাইকারি মোকামে পেঁয়াজের দর ওঠেছিল কেজি ৭৫ টাকা৷ তখন খুচরায় প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৮০ টাকা৷
এমন পরিস্থিতিতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সম্প্রতি পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিতে কৃষি মন্ত্রণালয়কে চিঠি লিখেছেন৷ কৃষি মন্ত্রণালয়ও এক সপ্তাহ আগে জানায়, দাম কমাতে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হতে পারে৷ এ খবর প্রকাশ হতেই বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে৷ রোববার খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে৷
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিদিন পেঁয়াজের দাম বাড়ছে৷ দেশের কৃষকরা যাতে উপযুক্ত দাম পান, সে জন্য দুই মাস ধরে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার৷ এর সুযোগ নিচ্ছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও কৃষকরা৷ পাবনা, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর থেকে পেঁয়াজ আনা হয়৷ তারা জানান, প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৬৮ থেকে ৭০ টাকা দরে কিনতে হয় আড়তদারদের৷ এর সঙ্গে গাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ মিলে পেঁয়াজের প্রতি কেজিতে আরও চার-পাঁচ টাকা যোগ হয়৷ ফলে এখানে ৭৫-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে৷
উল্লেখ্য, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন৷ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজ সংরক্ষণকালে প্রক্রিয়াজাত করতে গিয়ে ক্ষতি হয় ২৫ শতাংশ৷ স্থানীয়ভাবে পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ লাখ ৪ হাজার মেট্রিকটন৷ প্রতি বছর পেঁয়াজ আমদানি করা হয় ৬ থেকে ৭ লাখ মেট্রিক টন৷ এ ছাড়া আমদানিকৃত পেঁয়াজ প্রক্রিয়াজাতকরণে ক্ষতির পরিমাণ ৮ থেকে ১০ শতাংশ৷
জেকে/এসিবি (দ্য ডেইলি স্টার, বাংলা ট্রিবিউন)