জার্মানির রাজনৈতিক মঞ্চে সাম্প্রতিকতম আবির্ভাব হলো ‘পেগিডা’ নামধারী এক অভিবাসন বিরোধী আন্দোলন, যার সূচনা পুবের ড্রেসডেন শহরে৷ কিন্তু পেগিডা-ই যেন জার্মানদের ‘‘সাইলেন্ট মেজরিটি’’-কে সোচ্চার করে তুলেছে৷
বিজ্ঞাপন
শিল্প-বাণিজ্যের নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে রাজনীতিক মহল এবং – সবচেয়ে বড় কথা – সাধারণ জার্মানরা পেগিডা-র অভিবাসন বিরোধী মনোভাবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যাবৎ এ দেশে যে মূল্যবোধ গড়ে উঠেছে, এবং বিদেশে এ দেশের যে ভাবমূর্তি সৃষ্টি হয়েছে, পেগিডা-র মতো আন্দোলন তাকে বিপন্ন করছে, বলে পেগিডা-বিরোধীদের বক্তব্য৷
পাল্টা ব়্যালি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় আন্দোলন চালিয়ে এই জার্মানরা জানান দিচ্ছেন যে, পেগিডা-ই জার্মানির প্রতিভূ নয়৷ পেগিডা বা ‘‘প্রতীচ্যের ইসলামিকরণের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমী ইউরোপীয়বর্গ'' বিগত দশ সপ্তাহ ধরে ড্রেসডেনে তাদের মিছিল ও জনসভা করে আসছে৷ জার্মানির রাজনীতিক মহল তথা প্রধান দু'টি গির্জার কর্মকর্তারা তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন৷ যেমন ক্যাথলিক, তেমনই প্রটেস্টান্ট গির্জার প্রধান ও বিশপবর্গের বক্তব্য হলো: যিশুখ্রিষ্ট স্বয়ং উদ্বাস্তুর সন্তান ছিলেন, কাজেই শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়াটা একটি খ্রিষ্টান কর্তব্য৷
অপরদিকে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল থেকে শুরু করে অপরাপর রাজনীতিকরা প্রধানত বিদেশে জার্মানির ভাবমূর্তি মলিন হতে পারে, এমন আশঙ্কা দেখছেন৷ প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউক জাতির প্রতি তাঁর বড়দিনের ভাষণে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের প্রতি বিশেষ সহানুভূতির ডাক দিয়েছেন৷ এমনকি ম্যার্কেল মন্ত্রীসভার প্রবীণ অর্থমন্ত্রী ভোলফগাং শয়েবলে, যিনি পেগিডা-র বক্তব্য অন্তত শুনে দেখার সপক্ষে, তিনিও বলেছেন: ‘‘আমাদের সমৃদ্ধির কথা ভাবলে, আমরা কী ধরনের জাতি হব, যদি আমরা উদ্বাস্তুদের প্রত্যাখ্যান করি?''
২০১৪ সালে জার্মানি: কয়েকটি আবেগঘন মুহূর্ত
বিশ্বকাপ জয়, বার্লিন প্রাচীরকে স্মরণ, পেগিডা বির্তক – জার্মানদের জন্য এক আবেগী বছর ছিল ২০১৪৷ বছরটিতে যেসব ব্যক্তি এবং ঘটনা মানুষের নজর কেড়েছিল, সেসব নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Reuters
সমকামী ফুটবলার
জার্মানির ফুটবলের জগতে সমকামিতার বিষয়টি এখনো এক ‘ট্যাবু’ হিসেবে রয়ে গেছে৷ ২০১৪ সালের ৯ জানুয়ারি জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার টোমাস হিটসেলস্প্যার্গার ঘোষণা করেন যে তিনি সমকামী৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বুন্ডেসভের’-এ আরো নারী
২৭ বছর বয়সি ল্যাফটেন্যান্ট ইয়ানিন আসেল জার্মান সামরিক বাহিনীর কোনো সাবমেরিনের প্রথম নারী ‘ওয়াচ অফিসার’৷ ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে তিনি এই দায়িত্ব রয়েছেন৷ ছোটবেলা থেকেই এরকম কিছু একটা করার স্বপ্ন দেখেছিলেন ইয়ানিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Charisius
একজন প্রেসিডেন্টের হাজতবাস
জার্মানির অন্যতম সফল ফুটবল ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের ম্যানেজার এবং প্রেসিডেন্ট উলি হ্যোনেস ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার দায়ে কারাভোগ করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Hase
চ্যান্সেলরের সঙ্গে ‘সেলফি’
নিজের দেশে এবং বিদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একজন সম্মানিত নারী জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ মার্কিন ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস’ তাঁকে ঘোষণা করেছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী হিসেবে৷ তা সত্ত্বেও জনগণের কাছ থেকে খুব একটা দূরে থাকেন না তিনি৷ বরং মাঝেমাঝেই বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে ‘সেলফি’ তুলতে হয় তাঁকে৷
ছবি: Reuters
মহাকাশে একজন জার্মান
২০১৪ সালের ২৮ মে জার্মান মহাকাশচারী আলেক্সান্ডার গ্যার্স্ট পৃথিবী ছেড়ে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন আইএসএস-এ চলে যান৷ তিনি ফিরে আসেন নভেম্বরের ১০ তারিখ৷ মহাকাশে অবস্থানকালে টুইটারে বেশি সক্রিয় ছিলেন গ্যার্স্ট৷ তাঁর তোলা বিশ্বের বিভিন্ন ছবি গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে৷
ছবি: Reuters
চতুর্থ তারকা
বিশ্বকাপের ২০০৬ এবং ২০১০ সালের আসরে শিরোপা জিততে ব্যর্থ হয় জার্মানি৷ ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে ব্রাজিলের মাটিতে অবশেষে চূড়ান্ত বিজয় পেয়েছে তারা৷ জার্মান জাতীয় দলের জার্সিতে যোগ হয়েছে চতুর্থ তারকা৷ ফুটবলের এই পরাশক্তি এখন পর্যন্ত চারবার বিশ্বকাপ জয় করেছে৷
ছবি: Reuters
গন্তব্য জার্মানি
২০১৪ সালে দু’লাখের মতো মানুষ জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন৷ গত বেশ কয়েকবছরের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় সংখ্যা৷ মূলত সিরিয়া, ইরাক এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের মানুষরা এসব আবেদন করেছেন৷ বিষয়টি নিয়ে জার্মানিতে বিতর্ক চললেও সামগ্রিকভাবে যুদ্ধ শরণার্থীদের স্বাগত জানাতে এখনো প্রস্তুত জার্মানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Marc Müller
কোলনে সহিংসতা
ইসলামপন্থিদের বিপক্ষে প্রতিবাদ জানাতে ২০১৪ সালের ২৬ অক্টোবর কোলনে রাস্তায় নামে জার্মান ফুটবল ‘হুলিগানস’ এবং কিছু উগ্র ডানপন্থি৷ সালাফিস্টদের বিরুদ্ধে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষের এই সমাবেশ এক পর্যায়ে দাঙ্গার রূপ নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Schmülgen
একসময় সেখানে একটি দেয়াল ছিল...
অবিশ্বাস শোনালেও বার্লিন প্রাচীরের পতনের ২৫ বছর হয়ে গেল৷ গত ৯ নভেম্বর দেয়ালের পতনের ২৫ বছর পূর্তি বেশ বড় করে উদযাপন করেছে জার্মানি৷
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
বিদায়, টুচে
একটি ম্যাকডোনাল্ডস রেস্তোরাঁয় বিরোধ মেটাতে গিয়ে তুর্কি বংশোদ্ভূত তরুণী টুচে মারা যান৷ নভেম্বর মাসে হাজার হাজার মানুষ তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
ড্রেসডেনের দিকে চোখ সবার
২০১৪ সালের শরৎকালে ড্রেসডেনে শুরু হয় ‘পেগিডা’ প্রচারণা৷ কয়েক হাজার মানুষ ইসলামবিরোধী সমাবেশে অংশ নেয় সেখানে৷ সমালোচকরা বলছেন, ইসলামবিরোধী এই প্রচারণার পেছনে রয়েছে ডানপন্থি এবং বর্ণবাদী উদ্দেশ্য৷ তবে পেগিডার সমর্থকরা মনে করেন, জার্মানির মূলধারার সমাজ কার্যত এভাবে যৌক্তিক সমালোচনা করছে৷
ফেসবুক ও টুইটারে পেগিডা-র বিরুদ্ধে ঝড় বয়ে গেছে৷ বার্লিনে ছাত্র-ছাত্রীরা একটি ওয়েবসাইট শুরু করেছেন, যেখানে তাঁরা উদ্বাস্তুদের সঙ্গে তাঁদের ফ্ল্যাট শেয়ার করার প্রস্তাব দিচ্ছেন৷