1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পেঙ্গুইনের সুরক্ষায় আর্জেন্টিনায় অভিনব উদ্যোগ

৮ জুলাই ২০২০

পেঙ্গুইন শুধু অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে নয়, দক্ষিণ অ্যামেরিকার মতো অন্যান্য কিছু প্রান্তেও দেখা যায়৷ কিন্তু মানুষের কার্যকলাপের ফলে এই প্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে৷ একদল বিজ্ঞানী এই সমস্যার মোকাবিলার চেষ্টা করছেন৷

Antarktis Pinguin an der Große-Mauer-Station
ছবি: picture-alliance/Xinhua/L. Shiping

পাঁচশ’ বছর আগে ফার্দিনান্দ ম্যাগেলান প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে জাহাজ নিয়ে দক্ষিণ অ্যামেরিকার দক্ষিণতম প্রান্ত অতিক্রম করেছিলেন৷ সেখানকার জলবায়ু বরফের মতো শীতল৷ এই অঞ্চলে ম্যাগেলানিক পেনগুইন দেখা যায়৷ স্পেনের বিখ্যাত অভিযাত্রীর নাম অনুযায়ী সেগুলির নামকরণ করা হয়েছে৷

আন্দ্রেয়া রায়া রেই নিজেই অভিযান চালাতে তিয়েরা দেল ফুয়েগো গেছেন৷ জীববিজ্ঞানী হিসেবে তিনি আর্জেন্টিনার দক্ষিণ বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে সক্রিয় রয়েছেন৷ তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা নিয়মিত সেই এলাকার মোট সাতটি পেংগুইনের ডেরা পরিদর্শন করেন৷ আন্দ্রেয়া বলেন, ‘‘আমরা এখন ইসলা মার্তিওর পথে চলেছি৷ সেই কলোনিতে প্রায় পাঁচ হাজার জোড়া ম্যাগেলানিক পেঙ্গুইন ও ৫০ জোড়া জেন্টো পেঙ্গুইন থাকে৷ ১৯৭০-এর দশক থেকে এই কলোনির অস্তিত্ব রয়েছে৷ তবে নব্বইয়ের দশক থেকে সেটি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে৷ তখন থেকেই সেখানে পেঙ্গুইনের সংখ্যা বেড়ে চলেছে৷’’

সমুদ্র শান্ত রয়েছে৷ তাই গবেষকরা কোনো সমস্যা ছাড়াই তাঁদের সরঞ্জাম ডাঙায় আনতে পেরেছেন৷ অতিথি সম্পর্কে পেঙ্গুইনগুলি বেশ উদাসীন মনে হচ্ছে৷ এই দ্বীপে বেশ কয়েকটি প্রজাতির পেংগুইন মিলেমিশে থাকে৷ এই পাখিদের উপর মানুষের কার্যকলাপের প্রভাব নিয়ে গবেষণার কারণে আন্দ্রেয়া রাই পুরষ্কারও পেয়েছেন৷

ম্যাগেলানিক পেঙ্গুইন মাটি খুঁড়ে বাসা তৈরি করে৷ সেখানেই এই পাখি ডিম পাড়ে ও শাবকদের লালনপালন করে৷ কিন্তু মানুষের কার্যকলাপ এমন প্রজাতির অস্তিত্বের উপর প্রভাব ফেলে৷ সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বাড়ার ফলে সেখানে খাদ্যশৃঙ্খল বদলে গেছে৷ ফলে পেংগুইনদের খাদ্যের সন্ধান পেতে আরও বেশি সময় লাগছে৷ শাবকদের আরও বেশি সময় একা ফেলে রাখতে হচ্ছে৷ শাবকদের উপর সিগাল পাখি বা অন্যান্য শিকারি প্রাণীর কুনজর বাড়ছে৷ আন্দ্রেয়া জানান, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে সব প্রাণী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দক্ষিণের রকহপার পেঙ্গুইন তাদের মধ্যে অন্যতম৷ এই প্রজাতি শূককীটের মতো ক্ষুদ্র খোরাক খেতে অভ্যস্ত৷ অথচ পানির তাপমাত্রা বাড়ার ফলে শূককীটের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে উঠেছে৷ ফলে এই প্রজাতির পেঙ্গুইন খোরাক থেকে আরও কম শক্তি পাচ্ছে৷ দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে এই প্রজাতির সংখ্যা কমার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে৷’’

জলবায়ু পরিবর্তনে পেঙ্গুইনের খাদ্যশৃঙ্খল বদল

05:59

This browser does not support the video element.

আন্দ্রেয়া রেই ও তাঁর সহকর্মীরা পেঙ্গুইনের উপর নজর রাখতে স্বয়ংক্রিয় প্রণালী বসাচ্ছেন৷ তাঁরা কয়েকটি পাখির শরীরে বিশেষ ধরনের চিপ বসিয়েছেন৷ একটি সেন্সরের মাধ্যমে সেগুলির গতিবিধি নির্ণয় করে গোটা কলোনিজুড়ে স্বাভাবিক কার্যকলাপ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে৷

অন্তত জমির উপর পেঙ্গুইনদের দেখলে বেশ অসহায় লাগে৷ কিন্তু পেঙ্গুইন পানিতে ঝাঁপ দিতে ও সাঁতারে বেশ পটু৷ কিছু ম্যাগেলানিক পেংগুইন এমনকি উরুগুয়ে ও ব্রাজিল পর্যন্ত সাঁতরে চলে যায়, অর্থাৎ প্রায় চার হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করে৷ আন্দ্রেয়া রায়া রে মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘পেংগুইন আসলে সমুদ্রের অভিভাবক৷ সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমের স্বাস্থ্য বুঝতে হলেও এই প্রাণীর দিকে নজর দিতে হবে৷ এগুলি কী খায়, খোরাকের সন্ধানে কত দূর সাঁতরে চলে যায়, তাদের বংশবৃদ্ধির হার – এ সব জানলে সমুদ্রের উপর নির্ভরশীল এই প্রাণী কেমন আছে, সে বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়৷’’

প্রজনন ও শাবকের দেখাশোনার খাতিরে পেংগুইন সমুদ্রতটে বিচরণ করে৷ এই সময়টা পেংগুইনের জীবনের অত্যন্ত সংবেদনশীল পর্যায়৷ কিন্তু বেড়ে চলা দূষণের কারণে এই প্রাণী হুমকির মুখে পড়েছে৷ বাসা বাঁধার গর্তগুলি প্লাস্টিক বর্জ্যে ভরে যাচ্ছে৷ কাছেই উশুয়াইয়া শহর থেকেই মূলত সেগুলি ভেসে আসে৷ জীববিজ্ঞানী হিসেবে রেই বলেন, ‘‘নব্বই শতাংশ বাসার মধ্যেই প্লাস্টিক বর্জ্য পাওয়া যায়৷ প্রাণীগুলির পেট ও বিষ্ঠার মধ্যেও এমন বর্জ্যের নমুনা দেখা যাচ্ছে৷ সামুদ্রিক স্রোত ও বাতাস প্লাস্টিক বর্জ্য এমন সব জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছে, যেগুলি আপাতদৃষ্টিতে মানুষের কার্যকলাপমুক্ত বলে মনে হতো৷’’

চার বছর আগে উশুয়াইয়া শহরের নাগরিকরা সংঘবদ্ধভাবে জঞ্জালের পরিস্থিতির মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নেন৷ গোটা উপকূলে একমাত্র এখানেই এমনটা ঘটছে৷ বাতাস ও সমুদ্রের স্রোত দুর্গম এই শহরে দূষণ নিয়ে আসার ফলে আতঙ্কিত হয়ে মাইয়া মুরিয়েল এক উদ্যোগ শুরু করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘পথেঘাটে রাস্তার কুকুর জঞ্জালের বস্তা ছিঁড়ে খোরাকের খোঁজ করে৷ জঞ্জালের স্তূপ থেকে এমন বস্তা গোটা শহরের পথেঘাটে ছড়িয়ে পড়ছে৷ তারপর পাখি এসে বাকিটাও ছোঁ মেরে নিয়ে যায়৷ আমরা জঞ্জাল পুঁতে ফেলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি৷ কখনো শীতকালে বরফ পড়লে সমুদ্রতটেই জঞ্জাল পড়ে থাকে৷ বরফ গলে গেলে সেই জঞ্জাল সমুদ্রে ভেসে যায়৷’’

বিশ্বের শেষ প্রান্ত বলে পরিচিত এই অঞ্চলে এমন উদ্যোগ পেংগুইনদের স্বস্তি কিছুটা হলেও ফিরিয়ে দিচ্ছে৷

আইটর সায়েজ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ