বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের জেরে বন্ধ ছিল ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বাণিজ্য়। বুধবার থেকে তা আংশিকভাবে শুরু হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
গত এক সপ্তাহ পশ্চিমবঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পেট্রাপোলে হাজারখানেক ট্রাক দাঁড়িয়েছিল। সবজি, মাছ, ওষুধ-সহ নানারকম পণ্য নিয়ে ট্রাকগুলি দাঁড়িয়েছিল ভারতীয় সীমান্তে। বাংলাদেশে ট্রাকগুলি ঢুকতে পাড়ছিল না। গত বুধবার থেকে তা আবার বাংলাদেশে ঢুকতে শুরু করেছে। কিন্তু আগের মতো নয়।
বৃহস্পতিবার পেট্রাপোলের ক্লিয়ারিং এজেন্ট সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''বুধবার বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের দিক থেকে বাংলাদেশে রপ্তানির ট্রাক ঢুকেছে ৩৭২টি মতো। আর আমদানির ট্রাক ঢুকেছে ৪৫টি।''
সাধারণ সময়ে শুধুমাত্র পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে দিনে গড়ে ৪০০-র বেশি ট্রাক ঢোকে। সময় সময় তা ৫০০ ছাড়িয়ে যায়। আর বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢোকে ১৫০ থেকে ২২০ টি ট্রাক। সীমান্তের ব্য়বসায়ীরা আশা করছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বাণিজ্য় আবার আগের মতো জায়গায় পৌঁছাবে।
থমথমে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত
সারি সারি ট্রাক দাঁড়িয়ে, বন্ধ রেল, বাসও যাচ্ছে না। থমথমে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ছবি ডয়চে ভেলের ক্য়ামেরায়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
চিন্তিত যাত্রীরা
ভারতের দিকে পেট্রাপোল সীমান্তে এসে পৌঁছেছেন এই যাত্রীরা। পায়ে হেঁটে সীমান্ত পার করে তারা বাংলাদেশে ঢুকবেন। ভারত থেকে কোনো বাস এখন সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে ঢুকছে না। বাংলাদেশ সীমান্তে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করার কথা ভেবেছেন এই যাত্রীরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বাড়ছে উদ্বেগ
সীমান্ত পার করে ভারতে আসছেন এই ব্য়ক্তিরা। বাংলাদেশে তারা কাজে গেছিলেন। কার্ফিউ শুরু হওয়ার পর একটি গাড়ি ভাড়া করে তারা সীমান্তে এসে পৌঁছান। দুই দিন আগেই তাদের ভারতে আসার কথা ছিল। বস্তুত, ভারতীয় এবং নেপালি ছাত্রদের সীমান্ত পার করানোর জন্য় শনিবার সারা রাত সীমান্ত খোলা রেখে ছিল বিএসএফ। একদল ছাত্রকে ভোরবেলা সীমান্ত পার করানো হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
চলছে না বাস
দু’দেশের পর্যটকেরা বিপাকে পড়েছেন। বাড়ি ফেরা নিয়ে বেড়েছে উদ্বেগ। সীমান্ত পার করে বাস চলাচল বন্ধ। সীমান্তে দাঁড়িয়ে তেমনই একটি বাস। রবিবার সীমান্তে বিটিং রিট্রিট বন্ধ রাখা হয়। সোমবারও তা বন্ধ থাকতে পারে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
খালি পেট্রাপোল বাজার
পেট্রাপোল আন্তর্জাতিক সীমান্তে এই বাজার গমগম করে। বাংলাদেশে আন্দোলন এবং তার জেরে কার্ফিউ শুরু হওয়ার পর এই বাজারও থমথম করছে। বেশি মানুষ পারাপার করছেন না, তা-ই বাজারেও লোক নেই।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বন্ধ ট্রেন পরিষেবা
বন্ধ রয়েছে বন্ধন, মৈত্রী এবং মিতালি এক্সপ্রেস।আপাতত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মৈত্রী এক্সপ্রেস। রেলট্র্যাক বন্ধ থাকার কারণে লাল কাপড় নিশান হিসেবে বেঁধে রাখা হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অনলাইন চালান বন্ধ
অনলাইনে চালান বন্ধ। পণ্যবোঝাই গাড়ি পেট্রাপোল সীমান্তে দাঁড়িয়ে। ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে বাণিজ্যে। ভারত থেকে বহু জিনিস বাংলাদেশে যায়। সেই ট্রাকগুলি সীমান্তে দাঁড়িয়ে। কারণ সীমান্ত পার করার চালান মিলছে না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বন্ধ রপ্তানি
শনিবার থেকে সমস্ত আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পচছে মাছ, সবজি
পেট্রাপোলের ব্য়বসায়ী কার্তিক চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''সাড়ে আটশ থেকে নয়শ ট্রাক সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছে।'' এই ট্রাকগুলির ভিতর ওড়িশার মাছ আছে, সবজি আছে। এছাড়াও আছে ওষুধ। কাঁচা সবজি এবং মাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বাংলাদেশ সীমান্তেও দাঁড়িয়ে ট্রাক
বাংলাদেশ সীমান্তের দিকেও একই ছবি। সেখানেও চালান মিলছে না বলে দাঁড়িয়ে বহু ভারতীয় ট্রাক। বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ বলে চালান পাওয়া যাচ্ছে না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
চিন্তিত ব্য়বসায়ীরা
পাঞ্জাব থেকে আসা এই ব্যক্তি দুই দিন ধরে পেট্রাপোল সীমান্তে ট্রাক নিয়ে অপেক্ষায়। বাংলাদেশে পণ্য পৌঁছে কবে তিনি বাড়ি ফিরতে পারবেন, জানেন না। আদৌ যেতে পারবেন কি না, তা-ও বুঝতে পারছেন না। বহু টাকার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন ব্য়বসায়ীরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
চলছে কার্ফিউ
গত দুই দিন বাণিজ্য সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। রোববার আদালতের রায়ের পর সোমবার থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। কোভিডের সময়েও পরিস্থিতি এমন হয়নি বলে জানালেন পেট্রাপোলের ক্লিয়ারিং এজেন্ট।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অশান্তির বাতাবরণ
অশান্তির বাতাবরণে ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির সঙ্গে কথা বলে রফতানি বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট। যতক্ষণ পর্যন্ত অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে, ততক্ষণ রপ্তানি বন্ধ থাকবে। ভারতীয় ট্রাক সীমান্ত পার করে যাতে যথেষ্ট নিরাপত্তা পায়, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মুদ্রা বিনিময়ে প্রভাব
পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী দুই দেশে যাতায়াত করেন। এখন তা কমে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে মুদ্রা বিনিময় ব্য়বস্থায়। কার্যত মাছি তাড়াচ্ছে এই দোকানগুলি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
13 ছবি1 | 13
কেন এই পরিস্থিতি
বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে সরকার গোটা দেশে কার্ফিউ চালু করে। একইসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট পরিষেবা। ফলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে ব্য়বসায়ীদের বাণিজ্য় হয়, তাদের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ায় এক দেশ থেকে আরেক দেশে লরির চালান আসা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সমস্ত ট্রাক সীমান্তে আটকে পড়ে।
বিএসএফ এবং ব্য়বসায়ীদের বক্তব্য়, আরেকটি বিষয়ও সে সময় মাথায় রাখতে হচ্ছিল। ট্রাক এবং চালকদের নিরাপত্তা। ট্রাক চালকেরা যাতে আক্রান্ত না হন, সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে হচ্ছিল। ফলে প্রায় পাঁচদিন সীমান্ত কার্যত বন্ধ ছিল। খুব বেশি লরি পারাপার করতে পারেনি। বুধবার থেকে পরিস্থিতির সামান্য় উন্নতি হয়েছে। ইন্টারনেট পরিষেবা অল্প অল্প করে চালু হয়েছে। কার্ফিউও শিথিল করা হয়েছে। ফলে দুই দেশের ব্য়বসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। ধীরে ধীরে চালান আসতে শুরু করেছে। সে কারণেই কিছু ট্রাক সীমান্ত পার করতে পেরেছে।
তবে নিরাপত্তা নিয়ে এখনো চিন্তিত ব্য়বসায়ীরা। যে ট্রাকগুলি বাংলাদেশে ঢুকছে, তারা যাতে নিরাপদে নির্দিষ্ট স্থানে জিনিস রেখে ফিরে আসতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রশাসন আশ্বাস দেওয়ার পরেই লরিগুলি ছাড়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কার্তিক।
ডয়চে ভেলেকে স্থানীয় ব্য়বসায়ীরা জানিয়েছেন, নতুন করে পরিস্থিতি খারাপ না হলে আগামী সপ্তাহ থেকে ব্য়বসা আবার আগের মতো হবে বলে তারা মনে করছেন। বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে সিংহভাগ বাণিজ্য হয় ভারত-বাংলাদেশের। এছাড়াও উত্তরবঙ্গে হিলি সীমান্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেখানেও আংশিক বাণিজ্য শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। আসাম এবং ত্রিপুরা দিয়েও ধীরে ধীরে ট্রাক যাতায়াত করতে শুরু করছে। সিলেটে আন্দোলনের প্রভাব খুব বেশি পড়েনি বলে আসামের কাছাড় সীমান্ত তুলনামূলকভাবে স্বাভাবিক।