বিশ্বায়ন ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলির প্রভাব প্রতিপত্তির সামনে বিশ্বের অনেক প্রান্তে আদিবাসী সম্প্রদায় আজ অসহায় ও বিপন্ন হয়ে উঠেছে৷ পেরুর আদিবাসীরাও এমনই এক বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
পেরুরর উকাইলি জঙ্গল৷ দেশের অন্য কোথাও গাছ কেটে এই মাত্রায় জঙ্গল সাফ করা হয়নি৷ রবার্ট গিমারেস আদিবাসীদের এক গ্রামের দিকে চলেছেন৷ শুধু নৌকায় করে সেখানে পৌঁছানো সম্ভব৷
তিনি পেরুর এই অংশে আদিবাসী সমাজের নেতা৷ রেন ফরেস্টের গভীরে এই গ্রামেই তাঁর জন্ম৷ এখন সেখানে বেশি যাতায়াত নেই৷ জায়গাটা তাঁর জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে৷ রবার্ট গিমারেস বলেন, ‘‘হত্যার অনেক হুমকি পেয়েছি৷ আমার বাড়িতেই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে৷ পরের বার কাজের সময় গ্রামে তাদের সঙ্গে দেখা না হওয়াই ভালো৷ কঠিন বিপদে রয়েছি বলে আমার বিশ্বাস৷''
তিনি এই অঞ্চলে বিশাল আকারে গাছ কাটার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাচ্ছেন৷ তাঁর বিরোধীরা অত্যন্ত শক্তিশালী৷ তিনি কখনো একা সেখানে যান না৷ এবার তাঁর সঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশানাল সংগঠনের পেরু শাখার প্রতিনিধিরা রয়েছেন৷
অ্যামাজনের বৃষ্টিপ্রধান অরণ্যকে বাঁচাবে কে?
দক্ষিণ অ্যামেরিকার অ্যামাজন নদীর অববাহিকায় বিশ্বের বৃহত্তম বৃষ্টিপ্রধান ক্রান্তিমণ্ডলীয় অরণ্য৷ ইতিমধ্যেই তার এক-পঞ্চমাংশ উধাও হয়েছে৷ সরকার এবার আরো একটি এলাকা খনিশিল্পের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সোনার খোঁজে
ব্রাজিল সরকার অ্যামাজন বৃষ্টিপ্রধান অরণ্যের আরো একটি সুবিশাল এলাকায় গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছেন খনিশিল্পের স্বার্থে৷ আমাপা ও পারা, উত্তরের এই দু’টি রাজ্য জুড়ে প্রায় ৪৬,০০০ বর্গকিলোমিটার বনভূমি কেটে ফেলা হবে, কেননা সেখানে মাটির নীচে সোনা, তামা, লোহা, ম্যাঙ্গানিজ ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ আছে, বলে মনে করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Scorza
অ্যামাজোনাস রাজ্য
ব্রাজিলের ২৬টি রাজ্যের মধ্যে বৃহত্তম রাজ্য হলো অ্যামাজোনাস৷ দেশের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এই রাজ্যটিতে জল আর জঙ্গল ছাড়া বিশেষ কিছু নেই৷ কিন্তু সেই জঙ্গল হলো বিশ্বের বৃহত্তম বৃষ্টিপ্রধান ক্রান্তিমণ্ডলীয় অরণ্য৷
ছবি: Reuters/B. Kelly
জঙ্গল কাটা চলেছে
সারা বিশ্বে প্রতিবছর বৃষ্টিপ্রধান অরণ্য কমে আসছে ও সেই অনুপাতে অ্যামাজন অঞ্চলের আদিম অরণ্যানীর তাৎপর্য বাড়ছে৷ বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড ধরে রাখে এই অরণ্য, বিশ্বের জলবায়ুর উপর তার প্রভাব অসীম৷ অথচ বছরের পর বছর এই বন কেটে চাষের জমি করা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/B. Kelly
‘সংরক্ষিত’ এলাকা?
বিগত ১২ মাসে ব্রাজিলের অ্যামাজন এলাকায় প্রায় ৩,০০০ বর্গকিলোমিটার বনভূমি বিনষ্ট করা হয়েছে৷ ‘ইমাজোন’ নামের পরিবেশ প্রতিষ্ঠানটি জানাচ্ছে যে, গাছ কাটা কিছুটা কমলেও, এখনও ব্যাপক৷ এছাড়া এই অরণ্য নিধনের ২০ শতাংশের বেশি ঘটে ‘সংরক্ষিত’ এলাকায়৷
ছবি: Reuters/B. Kelly
মুনাফার লোভে
কাঠ ও কাঠকয়লা বিক্রি তো আছেই; তার সঙ্গে আছে আগুন লাগিয়ে বন পুড়িয়ে সেই জমিতে সয়াবিনের চাষ, যা পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়৷ এছাড়া আছে বাঁধ অথবা খনি প্রকল্পের খাতিরে অরণ্য নিধন৷
ছবি: Reuters/B. Kelly
পরিণাম
২০১৬ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০১৭ সালের জুলাই মাস অবধি অ্যামাজন অরণ্যের যে ৩,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা বিনষ্ট হয়েছে, সেখানে একাধিক প্রকৃতি সংরক্ষণ এলাকা ও উপজাতিদের জন্য নির্দিষ্ট জমি ছিল৷ কিন্তু পরিবেশ সংরক্ষণবাদীদের আপত্তি সত্ত্বেও এখানে গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়৷
ছবি: Reuters/B. Kelly
বিপন্ন পরিবেশ
অ্যামাজন অঞ্চল উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্যের বিচারে বিশ্বের সমৃদ্ধতম এলাকাগুলির মধ্যে গণ্য৷ জঙ্গল কাটার ফলে গাছ ও প্রাণীর যে সব বিরল প্রজাতি বিপন্ন, তাদের অনেকে আবিষ্কৃত হবার আগেই লোপ পেতে পারে, বলে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা৷ সেই সঙ্গে এই আদিম অরণ্যের আদিবাসী উপজাতিদের সহজাত সংস্কৃতিও বিলুপ্তির মুখে৷
ছবি: Reuters/B. Kelly
7 ছবি1 | 7
তাঁরা সান্টা ক্লারা দে উচুনিয়ায় যাচ্ছেন৷ দেশের অন্যতম সংকটময় এলাকা সেটি৷ আদিবাসীদের সঙ্গে কোকো ও তালের তেল কোম্পানিগুলির সংঘাত চলছে৷
গাঁয়ের মোড়ল কার্লস ওইওস লাউডস্পিকারের মাধ্যমে সাপ্তাহিক সভার জানান দিচ্ছেন৷ সেখানে সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়৷ স্থানীয় বাসিন্দারা গ্রামের অদূরে তালের তেলের নতুন প্লান্টেশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন৷ কার্লস বলেন, ‘‘আমরা কখনো ভাবিনি, যে বহুজাতিক কোম্পানিগুলির সঙ্গে এমন সমস্যা হবে৷''
নদীর ওপারে বড় আকারে জঙ্গল কেটেতালগাছ লাগানো হয়েছে৷ সেখানে সবার প্রবেশ নিষেধ৷ এমনকি ড্রোন ব্যবহার করেও কাছে যাওয়ার উপায় নেই, কারণ কাছে গেলেই সিগনালে বিঘ্ন ঘটানো হয়৷
গ্রামের পরিবেশ বদলে গেছে৷ অতীতে এখানকার মানুষ মাছ ধরতো এবং শিকার করতো৷ এখন গোটা অঞ্চলে আর বেশি বড় প্রাণী অবশিষ্ট নেই৷ পাখিরও প্রায় দেখা মেলে না৷ কিন্তু তার বদলে মশার উপদ্রব অনেক বেড়ে গেছে৷ ফলে আদিবাসীরা আর নিজেদের ঐতিহ্য অনুযায়ী বসবাস করতে পারছেন না৷ কার্লস ওইওস বলেন, ‘‘আমরা শিকার করে, মাছ ধরে, জঙ্গলের সম্পদ ব্যবহার করে বেঁচে থাকি৷ মাটি ছাড়া আদিবাসী সমাজের অস্তিত্ব কীভাবে সম্ভব!''
এবার এই গ্রামের কর্তৃপক্ষ ২০,০০০ হেক্টর এলাকাকে পূর্বপুরুষের জমি ঘোষণা করিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাবার চেষ্টা করছে৷ সে কারণেই নাকি তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে৷ হিংসা ছড়িয়ে পড়ছে৷ কয়েক মাস আগে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে পাঁচজন চাষির মৃতদেহ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল৷ সরকারি তদন্তে খুনির সন্ধান পাওয়া যায়নি৷ কিন্তু বড় ব্যবসায়ীরা রাতারাতি এত জমি কীভাবে দখল করে?
অ্যামাজনের জঙ্গলে বেআইনি গাছ কাটার বিরুদ্ধে সংগ্রাম
দক্ষিণ অ্যামেরিকার অ্যামাজন নদীর অববাহিকার বৃষ্টিপ্রধান গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্য প্রায় দুশ’ কোটি টন কার্বন ডাইঅক্সাইড শুষে নেয়৷ ব্রাজিলের পরিবেশ দপ্তরের কর্মীরা পৃথিবীর এই সবুজ ফুসফুসকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন৷
ছবি: Reuters/U. Marcelino
সবুজ ফুসফুস
অ্যামাজন নদীর অববাহিকায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্যের আয়তন ভারতের প্রায় দ্বিগুণ৷ সেই অরণ্যের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ব্রাজিলে৷ কিন্তু পৃথিবীর এই সবুজ ফুসফুস বেআইনি গাছ কাটা আর খনিজ সম্পদের জন্য খোঁড়াখুড়ির ফলে বিপন্ন৷
ছবি: Reuters/U. Marcelino
হাতে-নাতে ধরা
মিলিটারি পুলিশ সাথে নিয়ে ‘ইবামা’-র এজেন্টরা বেআইনি গাছ-কাটিয়েদের পিছনে ধাওয়া করছেন৷ ‘ইবামা’ বলতে বোঝায় ব্রাজিলের পরিবেশ ও নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ প্রতিষ্ঠান৷ ইবামার এজেন্টরা চোরা কাঠুরিয়াদের হাতে-নাতে ধরার চেষ্টা করেন৷ ছবিতে ইবামার এক এজেন্ট কাঠ বওয়ার ট্রাকের দিকে তাক করছেন৷
ছবি: Reuters/U. Marcelino
দেরি করা নেই...
ইবামা বেআইনি কাঠ-কাটিয়েদের প্রতি খুব সদয় নয়৷ ইবামার এজেন্টদের হাতে ধরা পড়লে আর নিস্তার নেই৷ পারা রাজ্যের নোভো প্রোগ্রেসো শহরের কাছে কাঠ সুদ্ধু ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দিতে দ্বিধা করেননি ইবামার কর্মকর্তারা৷
ছবি: Reuters/U. Marcelino
বিপজ্জনক
ইবামার কাজে ঝুঁকিও কম নয়৷ কিছু কিছু চোরা কাঠুরের কাছে গুলিবন্দুক থাকে৷ গত জুন মাসে এক পুলিশকর্মী অভিযান চালানোর সময় অপরাধীদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/U. Marcelino
সাফল্যের চেয়ে অসাফল্যই বেশি
এক্ষেত্রে ইবামার কর্মকর্তারা সফল হয়েছেন বটে, কিন্তু এ ধরনের সাফল্য কমে আসছে৷ পরিবেশ বিভাগের উপরেও অর্থনৈতিক সংকটের ছাপ পড়েছে৷ বিগত কয়েক বছরে তাদের বাজেট কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ৷
ছবি: Reuters/U. Marcelino
ঢাল নেই, তলোযার নেই
‘‘কাঠ চোরাদের কাছে আমাদের চেয়ে ভালো সাজসরঞ্জাম থাকে’’, বললেন পারা রাজ্যে ইবামার প্রতিনিধি উইরাতান বারোসো৷ ‘‘যতদিন আমরা মার্কা-না-মারা গাড়ি আর ভালো রেডিও সেট না পাচ্ছি, ততদিন আমরা ভালোভাবে কাজ করতে পারব না৷’’
ছবি: Reuters/U. Marcelino
পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে
ইবামার উদ্যোগের ফলে ২০০৪ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে অ্যামাজনের অববাহিকা অঞ্চলে গাছ কাটা কমেছে প্রায় আশি ভাগ৷ কিন্তু তার পরের চার বছরে গাছ কাটা বেড়েছে ৩৫ শতাংশ৷ ২০১৫ সালে অ্যামাজন জঙ্গলের যে অংশটা কেটে ফেলা হয়, তার আয়তন হবে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের চারগুণ৷
ছবি: Reuters/U. Marcelino
জার্মানি আর নরওয়ের সাহায্য
ব্রাজিল সরকার স্বীকার করেন যে, ইবামা যাতে ঠিকমতো তার দায়িত্ব পালন করতে পারে, সেজন্য পর্যাপ্ত অর্থসংস্থান করা হয়নি৷ এখন ফুন্ডো আমাজোনিয়া বা অ্যামাজন নিধি থেকে আরো ১৫ লাখ ইউরো পরিমাণ অর্থ দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে৷ অ্যামাজন নিধির পুঁজি আসে প্রধানত জার্মানি ও নরওয়ে থেকে৷
ছবি: Reuters/U. Marcelino
8 ছবি1 | 8
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশানাল সংগঠনের হয়ে প্রোয়েটিকা নামের সংগঠন ঘটনার তদন্ত করে দুর্নীতির দৃষ্টান্তগুলি নথিভুক্ত করেছে৷ এখন তারা স্থানীয় মানুষদের তা জানাতে চায়৷ প্রোয়েটিকার প্রতিনিধি মাগালি এভিলা বলেন,‘‘আমরা গাছকাটা, বেআইনি জমির ব্যবসা ও সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতির মধ্যে যোগসূত্র স্পষ্ট করে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম৷ বহুদিন ধরে অনেক গুজব শোনা যাচ্ছিল, কিন্তু যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছিল না৷''
এই সংগঠন সব নথিপত্র একত্র করেছে এবং অসংখ্য সাক্ষাৎকার নিয়েছে৷ এই অঞ্চলে ব্যবসায়ীক চুক্তিগুলির ক্ষেত্রে চেক প্রজাতন্ত্রের ব্যবসায়ী ডেনিস মেলকা-র নাম বার বার উঠে এসেছে৷
এবার রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলিও তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছেন৷ মেলকা-র কোম্পানিগুলি সব মিলিয়ে প্রায় ১৩,০০০ হেক্টর জমি দখল করে গাছ কাটতে পেরেছে৷ সেখানে তালের তেল ও কোকো প্লান্টেশন গড়ে তোলা হয়েছে৷ স্থানীয় দূর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকরা সেই কাজে সহায়তা করেছেন৷ প্রচলিত আইনগুলিকে রাতারাতি অবৈধ ঘোষণা করে পরোক্ষভাবে কোম্পানির হাতে জমির অধিকার তুলে দেওয়া হয়েছে৷
আঞ্চলিক রাজধানী পুকালপা-য় দুই চাষির সঙ্গে দেখা হলো৷ একমাত্র হোটেলের নিরাপদ আশ্রয়ে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চান৷ ২০১৪ সালে আচমকা তাঁদের মালিকানার নথিপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল৷ এখন তাঁদের হারানো জমিতে তালগাছ বেড়ে উঠছে৷
পুলিশের কাছে নালিশ করার পর একজনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল৷ হুমকি সত্ত্বেও মামলা বন্ধ করা হয়নি৷ কর্তৃপক্ষের টনক নড়েছে, কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন, কিন্তু সমস্যার কোনো সুরাহা হয় নি৷ চাষিরা বাইরে থেকে সহায়তার আশায় রয়েছেন৷ তাঁদেরই একজন রুবেন ডিয়াস কিন্চো৷ তিনি বলেন, ‘‘এখনো আমাদের মনে আশা রয়েছে, যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে৷ আন্তর্জাতিক সংগঠন, পরিবেশ সংগঠনগুলি হস্তক্ষেপ করে একসঙ্গে কিছু করবে৷''
সান্টা ক্লারা দে উচুনিয়া গ্রামে ফেরা যাক৷ গ্রামের হর্তাকর্তারা পরে জানিয়েছেন, যে ক্যামেরা টিম চলে যাবার কয়েক ঘণ্টা পর সশস্ত্র লোকজন সেখানে টহল দিয়েছে৷ গ্রামবাসীদের মতে, প্লান্টেশন মালিক এভাবে তাদের শাসাতে চেয়েছে৷
প্রকৃতিতে যেভাবে ভারসাম্য বজায় থাকে
বিভিন্ন প্রাণী ও ইকোসিস্টেমের মধ্যে সম্পর্কের কারণে প্রকৃতিতে ভারসাম্য বজায় থাকে৷ ছবিঘরে থাকছে এমন কয়েকটি উদাহরণ৷
দু’জনেরই লাভ
ছবিতে হাঙরের নীচে চারটি ছোট্ট মাছ দেখতে পাচ্ছেন? নাম রেমোরা৷ তারা হাঙরের শরীরে থাকা খাবারের উচ্ছিষ্ট খায়৷ হাঙর খাবার খাওয়ার পর সেই উচ্ছিষ্টগুলো তৈরি হয় যা তার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর৷ এভাবে হাঙরের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার বিনিময়ে রেমোরারা হাঙরের শরীরে চেপে অনেকদূর যায়৷ এমনিতে রেমোরার শরীরে অন্য মাছের মতো ‘সুইম ব্লাডার’ না থাকায় চলাফেরা করতে একটু সমস্যাই হয়৷ ভিডিও দেখতে উপরের ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: CC BY 2.0/Derek Keats
খাবারের বিনিময়ে নিরাপত্তা
ছোট্ট যে পাখিটি দেখতে পাচ্ছেন তার নাম অক্সপেকার৷ মহিষের সঙ্গে থেকে সে মহিষের শরীরে থাকা খুশকি সহ অন্যান্য ময়লা পরিষ্কার করে, এমনকি কানের ময়লাও৷ তাতে অক্সপেকারের লাভ? অমন বড় মহিষের সঙ্গে থাকলে কার সাধ্য তার বিনষ্ট সাধন করে! অক্সপেকারের বাস সাব-সাহারা আফ্রিকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Wisniewski
সিমবায়োসিস সম্পর্ক
দেয়াল, পাথর বা গাছের গুঁড়িতে শৈবালের মতো দেখতে এই ছত্রাকটি অনেকে হয়ত দেখেছেন৷ এর নাম লিচেন৷ শেওলা আর ব্যাঙের ছাতার মধ্যে সিমবায়োসিস (পারস্পরিক সুবিধা দিয়ে ও নিয়ে বেঁচে থাকা) সম্পর্কের মাধ্যমে এটির জন্ম হয়৷ শেওলা সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য তৈরি করে, আর ব্যাঙের ছাতা পরিবেশ থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে শেওলাকে বাঁচিয়ে রাখে৷ ফলে লিচেন বেশ রোগ প্রতিরোধী ও বিভিন্ন ইকোসিস্টেমে বেঁচে থাকার ক্ষমতা আছে তার৷
ছবি: picture-alliance/H. Bäsemann
পরাগায়নে সহায়তা
ছবিটি বেশ পরিচিত৷ ফুলের উপর বসে আছে প্রজাপতি৷ সে মধু সংগ্রহ করছে৷ তা করতে গিয়ে প্রজাপতির শরীরে ফুলের পরাগরেণু লেগে যায়৷ এরপর প্রজাপতিটি যখন আরেকটি ফুলে গিয়ে বসে তখন তার শরীরে লেগে থাকা পরাগরেণু নতুন ফুলে গিয়ে পড়ে৷ এভাবে পরাগায়ন হয়ে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B.Thissen
সাহারার ধূলা খেয়ে বেঁচে থাকে অ্যামাজন
প্রথমে ছবিটি একটু বর্ণনা করা দরকার৷ উপগ্রহ থেকে পাওয়া এই ছবিতে সাগরের পানির উপর ধূলার উপস্থিতি দেখতে পাচ্ছেন? হ্যাঁ এই ধূলা সাহারা মরভূমির ধূলা৷ সেগুলো বাতাসে ভেসে যাচ্ছে অ্যামাজন অরণ্যের দিকে৷ এই ধূলা খেয়েই বেঁচে আছে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ বলে পরিচিত অ্যামাজন৷
ছবি: NASA
এখানেও লেনদেন
ছবিটি ‘হার্মিট ক্র্যাব’-এর৷ বাংলায় যাকে অনেকে সন্ন্যাসী কাঁকড়া বলে থাকেন৷ তারা তাদের সম্পদ লুকাতে ও শিকারের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে তাদের খোসায় ‘অ্যানেমোনি’ নামের একপ্রকার সামুদ্রিক প্রাণীকে থাকতে দেয়৷ বিনিময়ে অ্যানেমোনি ঐ কাঁকড়ার ফেলে দেয়া খাবার থেকে উপকৃত হয়৷
ক্লাউনফিশ
হ্যাঁ৷ নিমো৷ অ্যানিমেটেড ফিল্ম ‘ফাইন্ডিং নিমো’-র নিমো চরিত্রটি আসলে একটি ক্লাউনফিশ৷ তারাও অ্যানেমোনির মধ্যে বাস করে৷ বিষাক্ত অ্যানেমোনি ক্লাউনফিশকে শিকারির হাত থেকে রক্ষা করে৷ বিনিময়ে ক্লাউনফিশ অন্য মাছদের প্রলোভন দেখিয়ে অ্যানেমোনিদের কাছে নিয়ে আসে৷
ছবি: imago/OceanPhoto
শেওলা থেকে পুষ্টি
মধ্য ও দক্ষিণ অ্যামেরিকায় দেখা পাওয়া এই প্রাণীটির নাম স্লোথ৷ তারা সাধারণত পাতা খায়৷ কিন্তু সেখান থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না তারা৷ এই অভাব মেটাতে তারা নিজেদের লোমে থাকা শেওলা খায়৷ আর শেওলা স্লোথের শরীরে বাস করা গুবরে পোকা সহ অন্যান্য পোকার মল খেয়ে বেঁচে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Gluck
8 ছবি1 | 8
দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে নিজেদের জীবনযাত্রা অক্ষত রাখতে হলে গ্রামবাসীকে আরও ধৈর্য ধরতে হবে৷