মরুভূমির শুকনা পরিবেশে কমলালেবু ফলিয়ে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন পেরুর এক চাষি৷ মুরগির বিষ্ঠা ও পোড়া ভুট্টার মতো উপাদান দিয়ে সার তৈরি করে তিনি লাভবান হচ্ছেন৷ প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বৃত্তাকার অর্থনীতির পক্ষে সওয়াল করছেন তিনি৷
পেরুর ইকা অঞ্চলের মরুর বুকে জলাধার ঘিরে হুয়াকাচিনা নামের একটি গ্রামছবি: imago/robertharding
বিজ্ঞাপন
পেরুর চিনচা আলতা এলাকা অত্যন্ত শুকনা ও রুক্ষ৷ বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না বললেই চলে৷ চাষবাসের জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়৷ তা সত্ত্বেও সেখানে সবুজ প্লান্টেশন গড়ে উঠেছে৷ প্রায় ৩০ বর্গ কিলোমিটার জুডে কমলালেবুর গাছ শোভা পাচ্ছে৷ এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে মুরগি ও মুরগির মালিকের উদ্ভাবনী শক্তি৷ সেই মুরগির আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ ডিমের কারণে নয় বরং মালিক হিসেবে বাস্কো মাসিয়াসের সাহায্যে এই প্রাণীগুলি আশ্চর্যজনকভাবে মরুভূমির রূপান্তর ঘটাচ্ছে৷ গ্রুপো আলিমেন্তা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা বেশ কয়েক বছর ধরে মরুভূমিতে চাষবাস করছি৷ লোকে প্রথমে আমাদের পাগল ভেবেছিল, কারণ সাধারণত মানুষ উর্বর জমিতেই চাষাবাদ করে৷ অথচ আজ আমরা মরুভূমিতেই রেকর্ড পরিমাণ কমলালেবু ফলাচ্ছি৷’’
অভিনব উপায়ে মরুভূমিতে চাষাবাদ
02:56
This browser does not support the video element.
মরুভূমির মাটি উর্বর করে তুলতে তার মুরগির প্রয়োজন হয়৷ প্রায় ৬০ লাখ মুরগি সেই কাজ করছে৷ প্রথমদিকে বাস্কো মাসিয়াস শুধু মুরগির ডিম বিক্রি করতে চেয়েছিলেন৷
কিন্তু বিপুল পরিমাণ মুরগির বিষ্ঠা নিয়ে তিনি বড়ই সমস্যায় পড়েছিলেন৷ এখন তিনি সেই বিষ্ঠাকে সারে রূপান্তরিত করে কাজে লাগাচ্ছেন৷ মুরগির খোরাকের অবশিষ্ট অংশও সেই সারে ব্যবহার করা হয়৷ ভুট্টা খেলেও মুরগিরা খোরাকের ব্যাপারে বেশ খুঁতখুঁতে৷ বাস্কো মাসিয়াস বলেন, ‘‘এটাই ভুট্টার অবশিষ্ট অংশ৷ আগে আমরা এগুলি পুড়িয়ে ফেলতাম বা ফেলে দিতাম৷ এখন আমরা সেটা ঝলসে উদ্ভিদভিত্তিক সারের উপাদান করতে শিখেছি৷ সারের মৌলিক উপাদান হিসেবেও সেটি ব্যবহার করা হচ্ছে৷’’
ভাস্কো মাসিয়াস বহু শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য অনুযায়ী বিশেষ প্রক্রিয়ায় ভুট্টার মোচা ঝলসে নেন৷ ফলে অনেক পুষ্টি অক্ষত থাকে৷ গাছ পরে ধীরে ধীরে সেই পুষ্টি শুষে নিতে পারে৷
মরুভূমিতে চাষাবাদ: পানি সাশ্রয়ে ভার্টিক্যাল ফার্ম
উচ্চ তাপমাত্রা এবং জলের সংকট। আরব আমিরাতকে এজন্য চাষাবাদের জন্য খুব একটা উপযোগী বলে মনে না হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও করোনা মহামারির ফলে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে।
ছবি: Aerofarms
মরুর দেশে
“আমি যখন মরভূমিতে টমেটো চাষের কথা বললাম, সবাই আমাকে পাগল ভেবেছিল”, বলছিলেন পিওর হারভেস্ট স্মার্ট ফার্মের প্রতিষ্ঠাতা স্কাই কুরৎস। দেশটিতে বছরে গড়ে মাত্র ১২ দিন বৃষ্টি হয়, মাত্র এক শতাংশ জমি চাষের যোগ্য। ফলে ৮০ শতাংশ খাবারই আমদানি করতে হয়। চাষাবাদের জন্যও একেবারেই অনুপযোগী বলে মনে করা হয় দেশটিকে।
ছবি: Pure Harvest
ভার্টিক্যাল ক্ষেতই সমাধান?
কিন্তু কুরৎসের মতো বেশ কয়েকজন নবীণ উদ্যোক্তা এ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। নতুন কৃষি প্রযুক্তিতে কোটি কোটি টাকাও বিনিয়োগ করছে আমিরাত সরকার। ভার্টিক্যাল ফার্মিং প্রযুক্তিও এর একটি।
ছবি: Pure Harvest
নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, সাশ্রয়ী জল
গ্রিনহাউজের মধ্যে কয়েক ধাপে একটার ওপর আরেকটা গাছের স্তর চাষ করা হয়। এলইডি আলোর সাহায্যে তাপমাত্রা ও আলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷ যাতে বাড়তি জল খরচ না হয়, সেজন্য ফোঁটায় ফোঁটায় জল দেয়ার ব্যবস্থা থাকে। তাছাড়া বাড়তি জল ওপরের স্তর থেকে নীচের গাছে যাওয়ায় অপচয় একেবারেই হয় না। এর ফলে তীব্র গরম বা কনকনে শীত, সারা বছরই চাষ করা সম্ভব হয়।
ছবি: Pure Harvest
জমির চেয়েও ভালো ফলন
আরেকটি ভার্টিক্যাল ফার্ম এরোফার্মের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক ওশিমা জানান, জমিতে যে ফসলের পাতা ছাড়তে ৩০ থেকে ৪০ দিন লাগে, এই পদ্ধতিতে সেটা ১০-১২ দিনেই করা সম্ভব। ২০২১ সালের মধ্যে রাজধানীর সবচেয়ে বড় ভার্টিক্যাল ফার্মে বিভিন্ন প্রজাতির ৮০০ ফসল ফলানোর জন্য আবু ধাবি বিনিয়োগ কার্যালয় থেকে বড় আকারের অনুদানও পেয়েছে এরোফার্ম।
ছবি: Aerofarms
খাদ্য নিরাপত্তা
২০১৮ সালে উচ্চপ্রযুক্তির খাদ্য উৎপাদনের কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তখন থেকেই নানা প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারী করমুক্ত সুবিধা নিয়ে দেশটিতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহে চাপ পড়ছে। মহামারির কারণে সব লকডাউনে থাকায় খাদ্য সংকটেও পড়েছিল দেশটি। ভার্টিক্যাল ফার্মের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে মরুর দেশ আরব আমিরাত।
ছবি: Aerofarms
5 ছবি1 | 5
পোড়া ভুট্টা, মুরগির বিষ্ঠা ও কয়েকটি অন্য উপাদান দিয়ে সার তৈরি হয়৷ মাসিয়াস তার কিছু অংশ বিক্রি করেন, বাকিটা কমলালেবু গাছের গোড়ায় দিয়ে দেন৷ গোটা প্রক্রিয়াকে বৃত্তাকার অর্থনীতি বলা হয়৷ বাস্কো বলেন, ‘‘বৃত্তাকার অর্থনীতির মাধ্যমে আমরা সবকিছুর মধ্যে দক্ষতা আনতে পারি৷ ঘটনা হলো, এর কোনোটাই নতুন নয়, প্রকৃতি এভাবেই কাজ করে৷’’
বিষয়টি খুবই সহজ৷ যতকাল সম্ভব কাঁচামাল বার বার কাজে লাগানো হয়৷ প্রচলিত অর্থনীতির মতো জঞ্জাল সৃষ্টি হয় না৷