তিনজনকে হত্যা করেছিলেন আর্নেস্ট লি জনসন৷ তবে আইনজীবীদের দাবি, তাদের মক্কেল মানসিক প্রতিবন্ধী৷ এ কারণে পোপ ফ্রান্সিসও জানিয়েছিলেন মৃত্যুদণ্ড মওকুফের অনুরোধ৷ তারপরও জনসনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে মিশৌরির কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Missouri Department of Corrections/AP/picture alliance
বিজ্ঞাপন
এক দোকানে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে, স্ক্রুড্রাইভার দিয়ে খুঁচিয়ে, তারপর গুলি করে মেরি ব্র্যাচার, মাবেল স্রাগস এবং ফ্রেড জোনসকে হত্যা করা হয়েছিল ২৭ বছর আগে৷ তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আর্নেস্ট লি জনসন সেদিন ডাকাতি করতে গিয়ে ওই তিনজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন৷ কিন্তু শুরু থেকেই তার আইনজীবীরা দাবি করে আসছেন, জন্মের পর থেকে জনসন ‘অ্যালকোহল সিনড্রোমে' আক্রান্ত, তার আইকিউ এমন যে মানসিক বিকাশ চার বছরের শিশুদের মতো৷ এসব কারণে মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ড হলেও আইনজীবীরা চেয়েছিলেন আসামিকে বেঁচে থাকার সুযোগ দেয়া হোক৷
পোপ ফ্রান্সিসও সমর্থন জানিয়েছিলেন সেই আবেদনে৷ এক চিঠিতে মিশৌরির গভর্নর মাইক পার্সনকে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘দয়া করে সবকিছুর আগে মি. জনসনের মানবিকতার দিকটা এবং সেই সঙ্গে মানবজীবনের পবিত্রতার বিষয়টি বিবেচনায় নিন৷'' এর জবাবে এক বিবৃতিতে গভর্নর পার্সন মৃত্যুদণ্ড মওকুফে অপারগতা জানিয়ে বলেন, ‘‘প্রাপ্ত তথ্য বলছে, মি. জনসন অপরাধ সংঘটনের জন্য দীর্ঘ পরিকল্পনা করেছেন এবং পরে তা বাস্তবায়নও করেছেন৷ তিনজন বিচারক মি. জনসনের মামলা পুনর্মূল্যায়ন করেই মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশ করেছেন৷''
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ভয়ংকর কিছু উপায়
গিলোটিনে মাথা কাটা, হাতির পায়ে পিষ্ট করা- প্রাচীনকালে এ ধরনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পদ্ধতি অনেককে আতঙ্কিত করে৷ কিন্তু এরচেয়েও নৃশংস কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যার কথা হয়ত আপনাদের জানা নেই৷ সেগুলো দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: fotolia
শরীরকে দ্বিখণ্ডিত করা
বহু বছর আগে ইংল্যান্ডে এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো৷ অপরাধী দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে সাজা দেয়ার স্থানে নিয়ে যাওয়া হতো৷ তারপর দুই পা’র মাঝ বরাবর কেটে ফেলা হতো৷
ছবি: picture-alliance/Godong/C. Leblanc
শূলে চড়ানো
রোমান সাম্রাজ্যে এ পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ছিল৷ যীশু খ্রীস্টকেও এভাবেই মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল৷ কাঠের তক্তার সঙ্গে হাত ও পায়ে পেরেক ঠুকে সেই তক্তা দাঁড় করিয়ে দেয়া হতো৷ এভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত ব্যক্তিটি৷
ছবি: Reuters/J. Costa
কলম্বিয়ার টাই
কলম্বিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশে প্রথমে অপরাধীর মাথা কেটে ফেলা হতো৷ তারপর জিভ টেনে বের করে মাথাটা গাছে বেঁধে রাখা হতো৷
ষাঁড়ের পেটে
সিসিলিতে অ্যাক্রাগাসের শাসনামলে এই ভয়াবহ পদ্ধতির প্রচলন শুরু হয়৷ লোহার ষাঁড় বানানো হতো৷ অপরাধীকে ঐ ষাঁড়ের পেটে ঢুকিয়ে এর নীচে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হতো৷ ষাঁড়ের মুখ দিয়ে বের হতো অপরাধীর আর্তনাদ৷ মনে হতো ষাঁড়টিই চিৎকার করছে৷
ছবি: picture alliance/Blickwinkel/W. G. Allgoewer
সেপুকু
জাপানী যোদ্ধা সামুরাই এই পদ্ধতি ব্যবহার করতেন৷ নিজের হাতেই অপরাধীর অন্ত্র বের করে আনতেন, আর যখন অপরাধী ছটফট করতো, তখন সামুরাইয়ের কোনো সহযোগী তরবারি দিয়ে অপরাধীর শিরচ্ছেদ করে দিতো৷
ছবি: Museum Kunstpalast, Düsseldorf, Graphische Sammlung
লিং চি
চীনে বিংশ শতাব্দিতে এসে এই পদ্ধতি বাতিল করা হয়৷ এ ধরণের মৃত্যুদণ্ডে অপরাধীর প্রতিটি অঙ্গ একে একে ছিন্ন করা হতো৷ আর চেষ্টা করা হতো, যাতে সে দীর্ঘ সময় এ অবস্থায় জীবিত থাকে৷
ছবি: Fotolia/D. Presti
জীবন্ত পুড়িয়ে মারা
১৯৩৭ সালে জাপানের সৈন্যরা বন্দি চীনাদের এই শান্তি দিয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
স্প্যানিশ থাবা
প্রাচীন কালে স্পেনে লোহা দিয়ে বিড়ালের থাবার মতো ধারালো হাতিয়ার বানানো হতো৷ আর অপরাধীর চামড়া ঐ হাতিয়ার দিয়ে খুবলে নেয়া হতো৷ চামড়ায় সংক্রমণের কারণে ঐ ব্যক্তির মৃত্যু ছিল অবধারিত৷
ছবি: fotolia
ক্যাথরিন হুইল
অপরাধীকে চাকার সঙ্গে বেঁধে দেয়া হতো৷ আর জল্লাদ ঐ চাকা ঘুরাতে থাকত, পাশাপাশি লাঠি দিয়ে প্রহার করতো৷ ফলে হাড্ডি ভেঙে ঐ ব্যক্তির মৃত্যু হতো৷
ছবি: Reuters/J. Young
9 ছবি1 | 9
মঙ্গলবার মিশৌরির সময় অনুযায়ী সন্ধ্যা ৬টা ১১ মিনিটে ৬১ বছর বয়সি আর্নেস্ট লি জনসনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ মিশৌরির ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশন জানায়, বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে৷
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট সদস্যরাও জনসনের মৃত্যুদণ্ড মওকুফের আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ তা সত্ত্বেও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় তীব্র হতাশা ব্যক্ত করেছেন তারা৷ এক বিবৃতিতে ডেমোক্র্যাট সদস্য কোরি বুশ এবং এমানুয়েল ক্লেভার বলেন, নিজের আচরণের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই- এমন মানুষের এরকম শাস্তিকে কোনোভাবেই সুবিচার বলা যায় না, এটা নিষ্ঠুরতা৷
মৃত্যুর আগে শেষ লিখিত বিবৃতিতে কৃতকর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন জনসন৷ মানুষ হত্যা করায় তিনি বিমর্ষ- বিবৃতি এ কথা জানানোর পাশাপাশি পরিবার এবং অন্য স্বজনদের ভালোবাসার প্রতিদানস্বরূপ অনিঃশেষ কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন তিনি৷
মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে যেসব দেশ
বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশে এখনও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর রয়েছে৷ তবে চলতি শতকে কয়েকটি দেশ এই শাস্তি প্রথা বাতিল করেছে৷