কয়লার ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন করতে চলেছে পোল্যান্ড৷ প্রতিবেশী দেশটির এ উদ্যোগে বড় রকমের বিপর্যয়ের ঝুঁকি দেখছে জার্মানি৷
বিজ্ঞাপন
পোল্যান্ডের বিদ্যুৎ খাতের শতকরা ৭০ ভাগই কয়লা নির্ভর৷ ফলে ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দূষণও সবচেয়ে বেশি৷ অথচ একদিকে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে, অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা৷
দেশের সবচেয়ে বড় বাদামি কয়লার খনি ২০৩৫ সালের পর ‘খালি’ হয়ে যাবে৷ ওই খনির কয়লা পোল্যান্ডের ২০ ভাগ বিদ্যুতের চাহিদা মেটায়৷
এছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি থাকার কারণে সে দেশের গ্যাস দিয়ে শতকরা পাঁচ ভাগ বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ হতো৷ এ বছরই শেষ হতে চলেছে দ্বিপাক্ষিক সেই চুক্তির মেয়াদ৷ সাম্প্রতিক সময়ে মস্কোর সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি ঘটায় চুক্তি নবায়ন করবে না পোল্যান্ড৷
পৃথিবীর দুর্লভ সম্পদ
২৯ জুলাই পালিত হয়েছে বিশ্ব ওভারশুট দিবস৷ বিশ্বের প্রাকৃতিক সম্পদের হিসেব নিকেশ আর বরাদ্দ ঠিক করা হয় দিনটিতে৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফুরিয়ে আসছে প্রকৃতির এসব সম্পদ৷
ছবি: AFP/S. Qayyum
পানি-জীবনের উৎস
পৃথিবীর কিছু অংশে মিঠা পানির প্রাপ্যতা অনেকটা ‘টেকেন ফর গ্রান্টেড’, আবার কোথাও এটা বিলাসিতা৷ পৃথিবীর সঞ্চিত পানির মাত্র আড়াইভাগ মিঠা৷ যার অর্ধেক আবার বরফ হয়ে জমে আছে৷ বাকি যা থাকলো তার ৭০ ভাগ চলে যাচ্ছে কৃষিকাজে৷ ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মিঠা পানির সংকটে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/Zumapress
ভূমি-সোনার চেয়েও দামি
গোটা বিশ্ব জুড়ে বাড়ছে জনসংখ্যা৷ তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভূমির চাহিদা৷ এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন আর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভূমির পরিমাণ কমছে আর কিছু হয়ে পড়ছে বসবাস অনুপযোগী৷ অধিক জনসংখ্যা কিংবা আবাদি জমির অভাবে থাকা দেশগুলো এখন হন্যে হয়ে ভূমি খুঁজছে৷ এর মধ্যেই আফ্রিকায় ভূমির খোঁজে নেমেছে চীন আর সৌদিআরব৷
ছবি: Imago/Blickwinkel
জীবাশ্ম জ্বালানি-দ্য স্পিক অব ডেবিল
পৃথিবীর দুর্লভ সম্পদের মধ্যে তেল বা জীবাশ্ম জ্বালানির নাম তালিকার শীর্ষে থাকে৷ কারণ এগুলোর ঘাটতি পূরণের কোনো সুযোগ নেই৷ দিন দিন বাড়ছে জ্বালানির চাহিদা, আর কমছে মজুদ৷ প্রাকৃতিক এই সম্পদের মজুদ শেষ হলে ইরাক, লিবিয়ার মতো দেশগুলো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpaH. Oeyvind
কয়লা-বিচ্ছিন্নতার সময়
কয়লার ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য৷ দূষণের কথা জেনেও, জার্মানির মতো দেশও কয়লা পোড়ানো থেকে সরে আসতে নারাজ৷ ফলে শূন্য হয়ে আসছে মজুদ৷ পোল্যান্ডে লিগনাইটের (সাদা কয়লা) ভাণ্ডারে যা আছে, তা বড়জোর ২০৩০ পর্যন্ত যেতে পারে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কঠিন কয়লাগুলো আরো কিছুদিন হয়তো টিকে থাকবে৷ তবে সেটা খুব বেশি নয়৷ ফলে, কয়লা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে পোল্যান্ড৷
ছবি: picture alliance/PAP/A. Grygiel
বালি-সবখানেই আছে, কোথাও নেই
মরুভূমির দিকে তাকিয়ে বলা যেতেই পারে, বালির কোনো অভাব পড়বে না৷ কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে বালি তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াটা খুব ধীর৷ এ কথা ঠিক, বালি নবায়নযোগ্য সম্পদ৷ তবে যে হারে বালি ব্যবহার হচ্ছে, প্রকৃতি সেই গতিতে বালি তৈরি করতে পারছে না৷ ২০৫০ সালের মধ্যে পূর্ব আফ্রিকার মতো উন্নয়নশীল এলাকায় জনসংখ্যা হবে দ্বিগুণ৷ তখন বালিও হয়ে উঠতে পারে একটি দুর্লভ প্রাকৃতিক সম্পদ৷
ছবি: picture-alliance/ZB/P. Förster
বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতি
অনিয়মতান্ত্রিক আচরণ আর বনভূমি উজাড় করার ফলে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অনেক প্রাণীকূলই অস্তিত্বের সংকটে৷ মোটা দাগে, পশু হলো মানুষের সম্পদ৷ পাঙ্গোলিন, গণ্ডার, ভ্যাকিটাস বা সমুদ্রিক বেশি কিছু প্রাণী বিলুপ্তপ্রায় তালিকায় নাম লিখিয়েছে৷ বনভূমির উপর অত্যাচার না থামলে মানুষের জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়বে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/I. Damanik
সবচেয়ে দামি সম্পদ? সময়...
দেখে মনে হচ্ছে সবকিছু ভেঙে পড়ছে৷ কিংবা একটি সুন্দর আগামী বিনির্মাণে কিচ্ছু করার নেই৷ তবে হ্যাঁ এখনও একটা জিনিস আছে, সেটি হলো সময়৷ যা একই সঙ্গে দুর্লভ এবং প্রচণ্ড মূল্যবান৷ কারো কারো মতে পরবর্তী ১২ বছরের জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা গেলে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় খুব বেগ পেতে হবে না৷ সময়টা এখনও আছে৷ ফুরিয়ে যায়নি৷
ছবি: AFP/S. Qayyum
7 ছবি1 | 7
পোল্যান্ড মনে করে, ভবিষ্যতে নিশ্চিত বিপর্যয় এড়াতে অবিলম্বে কয়লার ওপর নির্ভরতা কমানো জরুরি ৷তাই পারমাণবিক শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে পলিটিকা এনার্গেৎসনা পোলস্কি (পিইপি) পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে সরকার৷ এর আওতায় আগামী ২০২৬ সাল থেকে দেশের দুটি স্থানে ছয়টি রিয়্যাক্টর তৈরির কাজ শুরু হবে৷ ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩৩ থেকে ২০৪৩ সালের মধ্যে সবগুলো রিয়্যাক্টর পুরোপুরি কাজ শুরু করবে৷
রিয়্যাক্টরগুলো তৈরি করতে যে ৩০ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে, তা নিজের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয় বলে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় কাজটি শেষ করার পরিকল্পনা ছিল৷ গত বছর পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেই দুদা আর যুক্তরাষ্ট্র্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের এ বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনাও হয়েছিল৷ কিন্তু ট্রাম্পের বিদায়ে পরিস্থিতি বদলে গেছে৷ পরিবর্তিত পরিস্তিতিতে পোল্যান্ডের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে ফ্রান্স৷ এখন ফ্রান্সের সহায়তা নিয়েই পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে পোল্যান্ড৷
কিন্তু বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে জার্মানিতে৷ গত জানুয়ারিতে জার্মানির সংসদে বিশেষজ্ঞদের তৈরি করা একটি প্রতিবেদন পেশ করেছে গ্রিন পার্টি৷ সেখানে বলা হয়েছে, পোল্যান্ড যেখানে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট করার পরিকল্পনা করেছে, সেই জায়গাটি জার্মানির সীমান্ত সংলগ্ন৷ এর ফলে সেখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে জার্মান নাগরিকদের, বিশেষ করে বার্লিন এবং হামবুর্গের মানুষদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বড় রকমের আশঙ্কা রয়েছে৷ বুন্ডেসটাগের পরিবেশ বিষয়ক কমিটির চেয়ারপার্সন উরসুলা কোটিং-উল ডয়চে ভেলেকে বলেন, সেখানে দুর্ঘটনা ঘটলে জার্মানির অন্তত ১৮ লাখ মানুষকে সরিয়ে নিতে হবে৷ পোল্যান্ড অবশ্য দাবি করছে, তাদের পক্ষ থেকে পরিবেশগত ঝুঁকির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে এবং তাতে তেমন কোনো ঝুঁকির আশঙ্কা ধরা পড়েনি৷ এদিকে এক বিবৃতিতে জার্মানির পরিবেশ মন্ত্রণালয় ডয়চে ভেলেকে বলেছে, ‘‘পোল্যান্ড পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন শুরু করলে তার ফলে জার্মানির মানুষের কোনো ক্ষতি হবে না তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে সরকার৷’’