হ্যারি পটার ম্যানিয়া যখন দুনিয়ার সর্বত্র, তখন জাদুবিদ্যার স্কুল, নাকি ডাকিনিবিদ্যের কলেজ? পোল্যান্ডে হতেই বা বাধা কী! চলুন, সোচা দূর্গের প্রাচীরের আড়ালে সে-রকম একটি প্রতিষ্ঠান দেখে এবং চেখে আসা যাক৷
বিজ্ঞাপন
নানা ধরনের ম্যাজিক স্পেল বা মন্তর এদের সকলেরই জানা আছে৷ ‘কলেজ অফ উইজার্ডি' বা ডাইনিবিদ্যের কলেজের এই কোর্সে যে ১৩০ জন অংশ নিচ্ছেন, তারা সকলে জাদুকর বা ডাইনি হওয়ার প্রশিক্ষণ পাবেন৷ হাতে ম্যাজিক ওয়ান্ড বা জাদুকাঠি নিয়ে এরা ভূত-প্রেত-দত্যি-দানোর সঙ্গে লড়বেন৷
তিন দিন ধরে এরা শিখবেন তথাকথিত ‘লার্প' বা লাইভ রোল প্লেয়িং৷ সারা বিশ্ব থেকে ফ্যান্টাসির ফ্যানরা আসেন এই লার্প উপভোগ করতে৷
প্রশিক্ষণার্থীদের পাঁচটি কোর্সের মধ্যে একটি বেছে নিতে হয়, যেমন, তারা রোজা কিংবা ওঝা হওয়ার প্রশিক্ষণ নিতে পারেন৷ অ্যারিথম্যান্টিক-এর মতো বিষয়ে ক্লাস করতে হয়, যেখানে সংখ্যার সাহায্যে ভবিষ্যদ্বাণী করা শেখানো হয়৷
দূর্গের কারাকক্ষে বিস্টোলজি বিষয়টি পড়ানো হয়, যা দিয়ে অপদেবতাদের বিতাড়ন করা সম্ভব৷
জাদুবিদ্যার স্কুল
04:24
সিমন বোরুতা'র অ্যালকেমি ক্লাস সবসময়েই ভরা থাকে৷ এখানে ছাত্র-ছাত্রীরা নানা ধরনের পদার্থ মিশিয়ে জাদু পানীয় তৈরি করতে শেখেন৷
‘প্রফেসর অফ অ্যালকেমি' সিমন বোরুতা বললেন, ‘‘ঐন্দ্রজালিক সব পানীয় সৃষ্টির জন্যে অ্যালকেমি কাজে লাগে৷ প্রেমে পড়িয়ে দেবার পানীয়, মন ভালো কিংবা খারাপ করে দেবার বা কাউকে রক্ষা করার পানীয়, এ সবই তার মধ্যে পড়ে৷ উদ্দেশ্য ভালো কিংবা খারাপ, দু'ই হতে পারে৷ সাধারণত অ্যালকেমি আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে জড়িত৷''
তবে উঠতি জাদুকরেরাও তো আর জাদু দিয়ে হোমওয়ার্ক করিয়ে নিতে পারেন না, তাই পড়া মুখস্থ করতে হয়৷ মুখস্থ করলেই হবে না, প্র্যাকটিস করতে হবে৷ কোনো জাদুমন্তর ভুলে গেলে, এই বইটাতে তা আবার দেখে নিতে হবে৷ প্রত্যেক পড়ুয়াকে এরকম একটা জাদুবিদ্যার ‘টেক্সট বই' দেওয়া হয়েছে৷
সাজসরঞ্জামের দায়িত্বে আছেন আগাটা সুইস্টাক৷ তিনি বললেন, ‘‘থিয়েটার আর ফিল্মের রিকুইজিটের মধ্যে ওটাই ফারাক: রোল প্লেয়িং-এ সত্যিই এখানে-সেখানে যেতে হয়, বইটা পড়তে হয়, সব কিছু ব্যবহারযোগ্য হওয়া চাই, ধরাছোঁয়ার মতো হওয়া চাই৷ মাঝেমধ্যে আমরা গন্ধ ব্যবহার করে থাকি, যা এই ‘খেলুড়েরা' তাদের অবচেতন মনে উপলব্ধি করতে পারেন ও সেই সব জায়গার সঙ্গে যুক্ত করেন৷''
বাইরে খেলার জন্য আছে যেমন ধরা যাক ‘অগ্নিগোলক'৷ এখানে খেলুড়েদের তাদের পুরো সাজে দেখতে পাওয়া যায়৷ সাজপোশাকের জন্য দূর্গের বাইরে আছেন একদল মেক-আপ শিল্পী ও কসটিউম ডিজাইনার, যারা খেলুড়েদের সঠিক পোশাক পরাচ্ছেন ও মেক-আপ দিচ্ছেন৷
কবরখানার জাদু
কবরখানায় পাওয়া যায় একটা শহর বা দেশের অতীত, তার মনীষীদের কাহিনী আর সেই সঙ্গে একটা অদ্ভুত পরিবেশ৷ এ কারণে জার্মানি বা ইউরোপের অনেক কবরখানা পর্যটকদের টানে৷
ছবি: DW/A. Termeche
রোম্যান্টিক: প্যারিসের প্যার লাশেইজ কবরখানা
এখানে অস্কার ওয়াইল্ড, ইউজিন দেলাক্রোয়া, মারিয়া কালাস, এডিথ পিয়াফ, ফ্রেডেরিক শোপ্যাঁ, জিম মরিসনের মতো শিল্পীরা চিরনিদ্রায় শায়িত৷ গাছের ছায়ায় ঢাকা একটি নিরাভরণ অথচ রোম্যান্টিক পরিবেশ, যা মানুষকে টানে প্যারিসের উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত এই পৃথিবী বিখ্যাত কবরখানাটিতে৷
ছবি: Paris Tourist Office/Marc Verhille
ভ্যাটিকানের কাম্পো সান্তো টয়টোনিকা
জার্মান আর ফ্লেমিশ ভাষী মানুষদের কাছে খুবই প্রিয় ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স গির্জার ঠিক পাশে পাম গাছ, কেপারের মুকুল আর করবী ফুলের ঝাড় লাগানো এই কবরখানাটি৷ কবরখানার মাটি আর দেয়ালের প্রতিটি ইঞ্চি কবরে ঢাকা৷ অনেক কবরের উপর যিশুখ্রিষ্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার কাহিনী থেকে নানা দৃশ্য পাথরে খোদাই করা আছে৷
ছবি: picture-alliance/R. Braum
মিলানের চিমিতোরো মনুমেন্তালে
গ্রিক টেম্পল, মিশরীয় পিরামিড, বিশ মিটারের বেশি উঁচু ওবেলিস্ক স্তম্ভ- এ সব মিলিয়ে মিলানের সিমিতেরো মনুমেন্তালে বা ‘বিশাল কবরখানার’ নাম সার্থক৷ এখানে যাঁদের সমাধি তাঁরা যে বিত্তবান ছিলেন, সেটা মরণের পরেও বোঝা যায়৷ ইটালির সবচেয়ে সুন্দর ও চমকদার কবরখানাগুলির মধ্যে গণ্য হয় এই সিমিতেরো মনুমেন্তালে৷ দু’লাখ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে কবরখানাটি খোলা হয় ১৫০ বছর আগে, ১৮৬৬ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Themendienst
জীবনকে যারা ভালোবাসতেন: কোলোনের মেলাটেন কবরখানা
মধ্যযুগে স্থানটি ছিল বধ্যভূমি, আজ সেখানে প্রায় ৫৫,০০০ কবর৷ তার মধ্যে আছে ‘লাখপতিদের গোরস্তান’, যেখানে ওডিকোলোন যাদের আবিষ্কার, কোলোনের সেই ফারিনা পরিবারের কবরও আছে৷ অন্যদিকে কার্নিভালের সং দেওয়া কবরও পাওয়া যাবে৷
ছবি: DW/ Maksim Nelioubin
হামবুর্গের ইহুদি কবরখানা
কবরখানাটির বিশেষত্ব হলো এই যে, নাৎসি আমলের বিভীষিকা সত্ত্বেও এখানকার প্রায় নয় হাজার প্রস্তরফলকের মধ্যে ছয় হাজার এখনও অক্ষত আছে৷ চারশ’ বছরের পুরনো এই কবরখানাটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বলে ঘোষণা করার কথা বিবেচনা করছে ইউনেস্কো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Heimken
হামবুর্গের ওহল্সডর্ফ কবরখানা
এলাকার হিসেবে বিশ্বে চতুর্থ: ৯৬৬ হেক্টর৷ বছরে প্রায় বিশ লাখ মানুষ আসেন এখানকার স্মৃতিসৌধ, জলাশয়, ভাষ্কর্য আর গোরদান সংক্রান্ত মিউজিয়ামটি দেখার জন্য৷ ১৮৭৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত এখানে প্রায় ১৪ লাখ মানুষকে সমাধিস্থ করা হয়েছে৷ কবরের সংখ্যা প্রায় দু’লাখ পঁয়ত্রিশ হাজার, তার মধ্যে সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর হেলমুট স্মিটের কবরও আছে৷
ছবি: picture-alliance/BREUEL-BILD
সংগীতপ্রেমীদের জন্য ভিয়েনার কেন্দ্রীয় কবরখানা
মোৎসার্ট, বেটোফেন, ব্রাম্স, স্ট্রাউস আর শুবার্টের মতো সুবিখ্যাত সংগীতস্রষ্টা এখানে শায়িত৷ খোলা হয় ১৮৭৪ সালে৷ এখানকার তিন লাখ ত্রিশ হাজার কবরের মধ্যে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটারের পথ আছে৷
ছবি: Elizabeth Subercaseaux
7 ছবি1 | 7
কসটিউম ডিজাইনার নিকোলাই ভিশার বলেন, ‘‘আমার যেটা সত্যি ভালো লাগে, সেটা হলো, যখন ওরা পোশাক পরে দেখবার জন্য প্রথমবার এখানে আসেন৷ ওরা যেন বদলে যান! সেই মুহূর্ত থেকে ওরা যেন অন্য কেউ হয়ে যান, অন্য আচার-ব্যবহার করেন, অন্যভাবে হাঁটেন৷ ওদের অঙ্গভঙ্গি বদলে যায়৷ অন্য কোনো চরিত্রে ঢুকে যাবার জন্য পোশাকটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ৷''
কোনো কোনো রোল বা ভূমিকা গভীরভাবে নাড়া দেয়৷ ডাকিনিবিদ্যের কলেজ আসলে একটি নাট্যশালা, যেখানে বড় বড় আবেগ-অনুভূতি বুক কাঁপিয়ে দেয়৷
কলেজ অফ উইজাড্রির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ক্লাউস রাস্টেড৷ তিনি মনে করেন, ‘‘সিনেমা দেখে চরিত্রদের জন্য সহানুভূতি অনুভব করা যায়৷ কিন্তু রোল প্লেয়িং-এ পঞ্চেন্দ্রিয় দিয়ে সব কিছু অনুভব করা যায়৷ শিল্পকলার গ্রাহক না হয়ে, নিজেই শিল্পকলার অংশ হওয়া যায়৷''
শিক্ষার্থীরা তাদের জাদুকরি বিদ্যার পাঠশালের কথা এত সহজে ভুলে যাবেন না৷ সোচা দুর্গের প্রাকারের পিছনে তারা যে অভিজ্ঞতা করেছেন, তা চিরকাল রাখা থাকবে স্মৃতির আড়ালে৷
ডানিয়েলা স্প্যাট/এসি
বেনিনের ভুডু ফেস্টিভ্যাল
ভুডু একটি আদিম ধর্ম, যাতে ডাকিনিবিদ্যা ও জাদুর একটা বড় ভূমিকা আছে৷ ভুডুর চল পশ্চিম আফ্রিকার বেনিনেই সবচেয়ে বেশি৷ ভুডু বর্ষপঞ্জিতে ১০ই জানুয়ারি হলো একটি বিশেষ দিন ও সরকারি ছুটির দিনও বটে৷
ছবি: K. Gänsler
সরকারি ছুটির দিন
বেনিন ভুডু উৎসবে শুধু ভুডু অনুরাগীরাই নন, বহু পর্যটক ও কৌতূহলীরাও আসেন৷ দশই জানুয়ারি তারিখটিকে ভুডু দিবস ও সরকারি ছুটির দিন বলে ঘোষণা করা হয় ১৯৯৮ সালে৷
ছবি: K. Gänsler
উইদা ভুডু ফেস্টিভ্যাল
বেনিনের বৃহত্তম ভুডু উৎসব উদযাপিত হয় উইদা শহরের পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন স্মৃতিসৌধটির কাছে৷ এই তোরণটি সৃষ্টি করা হয়েছে অতীতের সেই সব ক্রীতদাসের স্মৃতিতে, যারা এই স্থানটি থেকে জাহাজে ওঠার পর আর কোনোদিন দেশে ফিরতে পারেননি৷
ছবি: K. Gänsler
রণপা পরে সৈকতে
ভুডু ফেস্টিভ্যাল চলাকালীন উইদা-কোতোনুর বেলাভূমিতে শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানই নয়, আরো অনেক কিছু দেখতে পাওয়া যায়৷ কিছু স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এটাই হলো বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন৷
ছবি: K. Gänsler
যে গাঁয়ের যেমন আচার
ভুডু বেনিনের সর্বত্র৷ উপকূল থেকে বহু দূরে, দেশের অভ্যন্তরে ছোট ছোট গ্রামেও মানুষজন ভুডুর অনুষ্ঠান করেন, যেমন পেতেপা গ্রামে৷ গ্রামটি সাবেক ডাহোমি রাজ্যের রাজধানী আবোমির কাছে৷
ছবি: K. Gänsler
ভুডু যেখানে দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ
বেনিনে ভুডুর কতো অনুসারী বাস করেন, তা কারো জানা নেই৷ একটি সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বেনিনে ভুডু চর্চাকারীদের সংখ্যা ১২ লাখ, কিন্তু বাস্তবিক হয়ত তার চেয়ে অনেক বেশি৷ বেনিনে যদি কেউ বলেন যে, তিনি খ্রিষ্টান অথচ গোপনে ভুডুর চর্চা করেন, তাহলে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই৷
ছবি: K. Gänsler
বসন্তের (অপ)দেবতা
বেনিনে ভুডু এতই বিস্তৃত যে, গ্রামে-গঞ্জে নানা ধরনের ভুডু দেবতার বেদী দেখতে পাওয়া যায়৷ এটি হলো পৃথিবী ও বসন্ত রোগের দেবতা জাপাটার বেদী৷
ছবি: K. Gänsler
দেবতার জন্য বিয়ার ও মদ্য
শুধুমাত্র বেদী তৈরি করে দেবতাদের খুশি করা যায় না৷ পুজোআচ্চা আর পুজোর উপচারের দিকেও নজর রাখতে হয়৷ বেনিনে যেমন দেবতার ভোগে বিয়ার, মদ বা সিগারেট দেওয়া চলে৷ একটা মুর্গি বা ছাগল হলেও আপত্তি নেই৷ সেটা নির্ভর করে বিশেষ দেবতাটির পছন্দ-অপছন্দের ওপর৷
ছবি: K. Gänsler
ভবিষ্যদ্বাণী
যারা জানতে চান, ভবিষ্যতে কি ঘটবে বা ঘটতে পারে, তারা ‘ফা’ নামের ভবিষ্যৎদ্রষ্টার কাছে যেতে পারেন৷ তবে সব প্রশ্ন করা চলবে না৷ যেমন ‘আমি কবে মারা যাব?’, এ প্রশ্নটি নিষিদ্ধ৷
ছবি: K. Gänsler
প্রথাগত ভেষজবিদ্যাকে বাঁচিয়ে রাখা
শুধু আচার-অনুষ্ঠান আর হাত গোনাই নয়, ওষধি হিসেবে জঙ্গলের জড়িবুটি সম্পর্কে বিপুল জ্ঞান ভুডু ধর্মে সংগৃহীত রয়েছে, তার মধ্যে বহু শতাব্দী থেকে চলে আসা একটি ম্যালেরিয়ার ওষুধও আছে৷
ছবি: K. Gänsler
ভুডু মানেই ফেটিশ আর টাবু
ফেটিশ হলো ভূতপ্রেত ঢুকে আছে, এমন বস্তু; আর টাবু হল, যা কিছু নিষিদ্ধ৷ বেনিনের ফেটিশের বাজারে ভুডু অনুষ্ঠানের জন্য আবশ্যক সব উপচারই পাওয়া যায়, এমনকি চিতাবাঘের মাথা পর্যন্ত৷
ছবি: K. Gänsler
সুভেনির
টুরিস্টদের জন্য আছে সুভেনির৷ যেমন এই মূর্তি দু’টি কিনলে নাকি প্রেম বা দাম্পত্যে সফল হওয়া যায়৷ সম্ভবত বিদেশি টুরিস্টদের জন্য তৈরি হয়েছিল এ ধরনের সুভেনির৷
ছবি: K. Gänsler
ভুডু আর রাজনীতি
বেনিনের রাজনীতিতেও ভুডুর প্রভাব অনুভব করা যায়৷ উইদার সর্বোচ্চ ভুডু প্রতিনিধি ডাগবো হেউনন জানালেন যে, সব প্রার্থীরাই নির্বাচনের আগে তাঁর আশীর্বাদ নিয়ে যান৷ তিনি স্বয়ং রাজনীতিতে কোনো ভূমিকা নেন কিনা, হেইনন তা বলতে রাজি নন৷