সমকাম নিয়ে রক্ষণশীল পোল্যান্ডে সততা ও নেতৃত্ব গুণে পরিবর্তনের স্বপ্ন-সারথি হয়ে উঠেছেন রবার্ট বিড্রোন৷ স্লুপস্কের এই ‘গে' মেয়রকে তুলনা করা হচ্ছে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর সঙ্গে৷
বিজ্ঞাপন
সমর্থকদের সামনে প্রাণবন্ত, রোমাঞ্চকর ও আত্মবিশ্বাসী দেখা যায় বিড্রোনকে৷ পোল্যান্ডে প্রথম আত্মস্বীকৃত সমকামী মেয়র তিনি৷ কয়েক মাস ধরে নিজের নতুন দল নিয়ে কথা বলছেন৷ আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতেই তাঁর দলের আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে৷
তাঁর নিয়মিত কার্যক্রমে ব্যাপক সাড়া পড়ছে৷ শত শত, কখনো কখনো হাজার হাজার মানুষ তাতে আগ্রহী হচ্ছে৷ বামপন্থি ধারণা নিয়েই এগোচ্ছেন তিনি–দারিদ্র্য বিমোচন, অ্যাবরশনের বিধিনিষেধ শিথিল করা, নতুন নতুন প্রি-স্কুল তৈরি এবং রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন৷
ক্যাথলিক দেশে সমকামী
কঠোর ধর্মীয় অনুশাসনের জন্য পরিচিত সাউদার্ন পোল্যান্ড থেকে উঠে এসেছেন বিড্রোন৷ সমকামের জন্য তরুণ বয়সে তাঁকে একঘরে করা হয়৷ এজন্য এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল যে পরিত্রাণের জন্য আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন৷ পরে রাজনীতিতে এসে এলজিবিটি অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হন৷
সমকামের স্বীকৃতি উদযাপন
১৪৬ বছরের পুরনো আইন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে গেল বদলে৷ ঐতিহাসিক এই রায়ে ভারত জুড়ে উদযাপনে মেতে উঠেছেন সমকামী অধিকার কর্মীরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Maqbool
নির্যাতনের হাতিয়ার
ঔপনিবেশিক শাসনামলের এ আইন সংবিধানের সাথে ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ বলে মনে করেন ভারতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র৷ আরেক বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা বলেছেন, ‘‘এই সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিতে দেরি হওয়ায় ইতিহাসের ক্ষমা চাওয়া উচিত৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
আমার শরীর, আমার অধিকার
নিজের শরীরের ওপর নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসছেন সমকামী অধিকার কর্মীরা৷ এ পথেও ছিল বাধা৷ সামাজিক হেনস্তা তো ছিলই, আইনি সুরক্ষাও ছিল না তাঁদের পক্ষে৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
উদযাপন
রায় ঘোষণার পরপরই ভারতের বিভিন্ন স্থানে নাচে গানে উদযাপনে মেতে ওঠেন সমকামী অ্যাক্টিভিস্টরা৷ ভারতের ইতিহাসে মানবাধিকারের লড়াইয়ে একে অসাধারণ এক মাইলফলক হিসেবে দেখছেন তাঁরা৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
করণ জোহর
বলিউডের চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক করণ জোহর এক টুইটে এই রায়কে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেছেন৷ মানবতা ও সমঅধিকারের পক্ষে ভারত আরেকটু এগিয়ে গেল বলেও মনে করেন তিনি৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press
৭৩ দেশে অপরাধ
সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়ার আগ পর্যন্ত বিশ্বের ৭৪টি দেশে সমকামিতা ছিল নিষিদ্ধ৷ কিন্তু ৬ সেপ্টেম্বরের রায়ে সে তালিকা থেকে নিজের নাম সরাতে পারলো ভারত৷ নিষিদ্ধের তালিকায় বেশিরভাগই এশিয়া ও আফ্রিকার৷ বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও শ্রীলংকাও রয়েছে এই তালিকায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Maqbool
২৬ দেশে সমকামী বিয়ে
বিশ্বের ২৬টি দেশ সমকামীদের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার স্বীকৃতি দিয়েছে৷ এই তালিকায় এশিয়ার কোনো দেশ নেই৷ আফ্রিকার একমাত্র দেশ হিসেবে আছে সাউথ আফ্রিকার নাম৷ ২০০০ সালে প্রথম দেশ হিসেবে সমকামী বিয়ের স্বীকৃতি দেয় নেদারল্যান্ডস, সবশেষ ২০১৭ সালে তালিকায় নাম লিখিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, মালটা ও জার্মানি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Sankar
6 ছবি1 | 6
২০০১ সালে বিড্রোন গড়ে তোলেন ‘ক্যাম্পেইন এগেইনস্ট হোমোফোবিয়া'৷ এটা নিয়েও ব্যাপক বিতর্ক হয় দেশে৷ এর দশ বছর পর প্রথম সমকামী হিসেবে পোল্যান্ডের পার্লামেন্টে যান তিনি৷
দীর্ঘদিনের পার্টনার সিস্তফকে বিয়ে করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বিড্রোন৷ তবে পোল্যান্ডে এখনো সমকামী বিয়ে আইনসিদ্ধ নয়৷ ৪২ বছর বয়সি বিড্রোন বলেন, ‘‘আমি একজন পোল৷ অনেক বছর ধরে আমি কর দিচ্ছি এবং দেশের সেবা করেছি৷ সে কারণে দেশের অন্য সবার মতো আমার সঙ্গেও ভালো আচরণ করা হবে, সেই প্রত্যাশা করি৷''
২০১৪ সাল থেকে স্লুপস্কের মেয়র বিড্রোন৷ সেখানে সমকামী বিয়ের বৈধতা এবং নিজেদের বিয়ের করার সুযোগ আশা করেন বিড্রোন ও তাঁর পার্টনার৷
পোল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের ৯৩ হাজার মানুষের শহরটিতে বিড্রোনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী নভেম্বরে৷ শহরকে ঋণমুক্ত করায় বিড্রোনের প্রশংসা রয়েছে৷ জনমত জরিপ অনুযায়ী, শহরের ৬০ শতাংশ ভোটারের সমর্থন রয়েছে তাঁর প্রতি৷ তবে বিড্রোন এবার জাতীয় মঞ্চে ফিরতে চান৷
পোল্যান্ডের ক্ষমতাসীন জাতীয়তাবাদী, রক্ষণশীল ‘ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি (পিআইএস)-এর জন্য বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছেন বিড্রোন৷ তবে মধ্যপন্থি শিবিরে এখনো জায়গা পেতে লড়ছেন তিনি৷ ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক সিভিক প্ল্যাটফর্ম (পিও) এবং লিবারেল মডার্ন পার্টি গত মে মাসে এক মঞ্চে এসে ‘নাগরিক মোর্চা' গঠন করে৷
বিড্রোন প্রার্থীদের ভোট নষ্ট করতে পারেন বলে শঙ্কা করছেন তাঁরা৷ অ্যাবরশনের বিধি-নিষেধ শিথিল করার পক্ষে স্পষ্টভাবে বলছেন তিনি৷ পোল্যান্ডে এটি এমন স্পর্শকাতর বিষয় যে, ভোট হারানোর ভয়ে উদারপন্থিরা এ নিয়ে মুখ খুলতে চান না৷
গত বেশ কয়েক বছর ধরে বামপন্থিদের অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করেছে ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি৷ তাদের চাইল্ড সাপোর্ট প্রোগ্রাম পোল্যান্ডের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্য কোনো সোশ্যাল প্রোগ্রামের মতো নয়৷
সমকামী বিয়ে বৈধ যে সব দেশে
এ পর্যন্ত কোন কোন দেশের জনগণ সমকামীদের মধ্যে বিয়ের পক্ষে মত দিয়েছেন বা কোন দেশে সমকামী বিয়ে বৈধতা পেয়েছে, সে তথ্যই তুলে ধরা হলো ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Becerra
নেদারল্যান্ডস
বিশ্বে সর্বপ্রথম সমকামী বিয়ে বৈধ হয় এই দেশে৷ ২০০০ সালে বৈধতা পাওয়ার পর ২০০১ সালে সমকামী বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় দেশটিতে৷
ছবি: picture-alliance/DUMONT Bildarchiv/T. Linkel
কলম্বিয়া
২০১৬ সালে দেশটিতে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Rubio
আয়ারল্যান্ড
২০১৫ সালে গণভোটের মাধ্যমে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায় এই দেশে৷
ছবি: picture-alliance/empics/N. Carson
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রে সমকামী বিয়ে বৈধ হয় ২০১৫ সালে৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
স্কটল্যান্ড
২০১৪ সালে দেশটিতে সমকামী বিয়ে বৈধ হয়৷
ছবি: Reuters/R. Cheyne
ফিনল্যান্ড
২০১৫ সালে দেশটিতে সমকামী বিয়ে বৈধ হয়৷
ছবি: dapd
লুক্সেমব্যর্গ
২০১৪ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/J. Pigozne
গ্রিনল্যান্ড
২০১৫ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
ফ্রান্স
২০১৩ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: Reuters/R. Duvignau
ইংল্যান্ড, ওয়ালস
২০১৩ সালে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায় এখানে৷
ছবি: Getty Images
ব্রাজিল
২০১৩ সালে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: AFP/Getty Images
উরুগুয়ে
২০১৩ সালে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায় এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. I. Mazzoni
ডেনমার্ক
২০১২ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: Reuters/A. Kelly
আইসল্যান্ড
২০১০ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/K. Irlmeier
পর্তুগাল
২০১০ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/J.M. Ribeiro
আর্জেন্টিনা
২০১০ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: Imago/Agencia EFE/M. Arduin
সুইডেন
২০০৯ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: picture-alliance/robertharding
নরওয়ে
২০০৮ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: AFP/Getty Images/O. Morin
দক্ষিণ আফ্রিকা
২০০৬ সালে দেশটিতে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: DW
স্পেন
২০০৫ সালে এখানে সমলিঙ্গের বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিউজিল্যান্ড
২০১৩ সালে এখানে সমলিঙ্গের বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/Air New Zealand
বেলজিয়াম
২০০৩ সালে এখানে সমলিঙ্গের বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Ghirda
ক্যানাডা
২০০৫ সালে দেশটিতে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: Getty Images/D.Pensinger
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ায় সমকামীদের বিয়ে বৈধতা পেয়েছে। ২০১৭ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রতিনিধি পরিষদে এ-সংক্রান্ত বিল পাস হয়৷ এই প্রস্তাবের পক্ষে ১৪৬টি এবং বিপক্ষে পড়ে মাত্র ৪টি ভোট৷ এর আগে ১৫ই নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার ব্যুরো অফ স্ট্যাটিসটিকস বা এবিএস ঘোষণা করে যে, দেশটির জনগণ সমকামী বিয়ের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন৷ সমকামী বিয়ে বৈধতা আইনে গণভোটের পক্ষে ভোট দেন ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Khan
অস্ট্রিয়া
২০১৭ সালে দেশটির সাংবিধানিক আদালত সমকামী বিয়ের অধিকারের পক্ষে রায় দেয়৷ ২০১৯ সাল থেকে তা কার্যকর হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Bruna
জার্মানি
২০১৭ সালের ৩০শে জুন জার্মানিতে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷ অর্থাৎ ইউরোপের ১৫তম দেশ হিসেবে জার্মানিতে সমকামী বিয়ে বৈধতা পেল৷ জার্মান পার্লামেন্টে এর পক্ষে ৩৯৩টি ভোট পড়ে আর বিপক্ষে পড়ে ২২৬টি ভোট৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের রক্ষণশীল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী পার্টি সমকামী বিয়ের বিপক্ষে থাকলেও, সংসদীয় নির্বাচনের ক’মাস আগে হঠাৎ করেই ম্যার্কেল ঘোষণা করেন যে, এ বিষয়ে ভোটাভুটি হবে৷
ছবি: Reuters/A. Schmidt
মাল্টা
২০১৭ সালের জুলাই মাসে মাল্টায় সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়, যদিও এর বিরোধিতা করেছিল ক্যাথলিক চার্চ৷
ছবি: Reuters/D. Zammit Lupi
বলিভিয়া
২০০৯ সালে সংবিধান সংশোধন করে সমকামী বিয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বলিভিয়া৷ কিন্তু ২০১৬ সালে তারা ট্রান্সজেন্ডারদের নানারকম অধিকার দেয়াকে সমর্থন করে৷ দুই বছরের আইনী লড়াইয়ের পর ২০২০ সালে দেশটিতে এক সমকামী যুগল বিয়ের স্বীকৃতি পায়৷
ছবি: Reuters/D. Mercado
তাইওয়ান
২০১৯ সালের ১৭ মে এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে তাইওয়ানের সংসদ সমকামী বিয়েকে আইনগত বৈধতা দিয়ে একটি বিল পাস করে৷ ফলে সে দেশের সমকামীরা এখন তাদের বিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন৷
ছবি: DW/Chung-Lan Cheng
29 ছবি1 | 29
এর ফলে জনবান্ধব কর্মসূচির পক্ষে তবে পিআইএসের মতো জাতীয়তাবাদী ও রক্ষণশীল মনোভাবের নয়, এমন ভোটারদের টানতে পারেন বিড্রোন৷
সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তাঁকে তুলনা করছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর সঙ্গে৷ বির কারিশমা পোল্যান্ডের রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা করতে পারে, যা প্রতিষ্ঠিত দলগুলোর জন্য হয়ত চিন্তার কথা৷