বাংলাদেশ থেকে তুরস্ক অবধি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পোশাক শ্রমিকরা এখন শিশু শ্রম, বেতন পেতে দেরির কথা কিংবা পাচারের কথা মোবাইলে জানাচ্ছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো মনে করছে, প্রযুক্তির এমন ব্যবহার অধিকার রক্ষায় সহায়ক হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তৈরি দু'টি মোবাইল সেবায় বিনা খরচে নিজের পরিচয় গোপন রেখে পোশাক শ্রমিকরা তাদের প্রতি বা তাদের আশেপাশের কারো প্রতি কোনো অবিচার করা হলে তা উপযুক্ত জায়গায় জানানোর সুযোগ পাচ্ছেন৷ বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পোশাক প্রস্তুত করা স্থানীয় কারখানাগুলো যাতে শ্রমিকদের বেআইনিভাবে কাজে লাগাতে না পারে বা আধুনিক দাসত্বের শিকার যাতে কেউ না হয়, সেজন্য এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ এটি ব্যবহার করে বড় পোশাক নির্মাতাদের আগেভাগে সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে৷
নিউইয়র্কভিত্তিক স্টার্ন স্কুল অফ বিজনেসের সারাহ লেবোভিৎস এই প্রসঙ্গে জানান, যারা পোশাক তৈরি করেন, তাদের সঙ্গে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থানগত দূরত্ব অনেক৷ এই দূরত্ব মিটিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর যোগাযোগের উপায় বের করা এক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল৷ প্রযুক্তি এক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে বলে জানান তিনি৷
পোশাক শ্রমিকদের জন্য তৈরি দুই ব্যবস্থা, লেবারলিংক এবং লেবারভয়েসেস, প্রায় একইরকমভাবে কাজ করে৷ শ্রমিকরা এই ব্যবস্থায় ফোন করে খুব সহজে ১ চেপে ‘হ্যাঁ' বা ২ চেপে ‘না' বলে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন৷ তাদের কাছে জানতে চাওয়া প্রশ্নগুলো অনেকটা এরকম হয়: আপনার সঙ্গে কি ন্যায্য ব্যবহার করা হচ্ছে? সময়মতো বেতন দেয়া হচ্ছে? ‘ফায়ার এক্সটি' কি লক করে রাখা হয়েছে? আপনি কি কোনো শিশু শ্রমিক দেখেছেন?
বাংলাদেশি পোশাক শ্রমিকদের পাশে জার্মানি
রানা প্লাজা বিপর্যয়ের দেড় বছর পর জার্মানি যে ‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’ চালু করেছে, সে উপলক্ষ্যে ফেডারাল অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন মন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার বাংলাদেশ যান৷ নিজের চোখে দেখেন সেখানকার মানুষ ও তাঁদের উন্নয়নকে৷
ছবি: DW/S. Burman
‘মেড ইন বাংলাদেশ’
রানা প্লাজা বিপর্যয় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গার্মেন্টস রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে৷ চালু হয়েছে ‘‘অ্যাকর্ড’’, ‘‘অ্যালায়েন্স’’ এবং ‘‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’’ মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, যার উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের গার্মেন্টস ওয়ার্কারদের কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা৷
ছবি: DW/S. Burman
একযোগে
জার্মান উদ্যোগের লক্ষ্য হলো, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এক করা৷ গাজিপুরের ডিবিএল গ্রুপ ‘‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’’-এ যোগ দিয়েছে ও ইতিমধ্যেই একাধিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করেছে৷ জার্মান উন্নয়নমন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার তাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং এই আশা প্রকাশ করেন যে, অন্যান্য সংস্থাও এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবে৷
ছবি: DW/S. Burman
মোটরসাইকেলে
প্রায় দেড়’শ নতুন লেবার ইনস্পেক্টরদের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে, কারখানাগুলোর পরিস্থিতির উপর নজর রাখার জন্য৷ কোনো সংকট ঘটলে যানজট এড়িয়ে চটজলদি অকুস্থলে পৌঁছানোর জন্য তাদের মোটরসাইকেল দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: DW/S. Burman
লুডো খেলাও সচেতনতা বাড়ায়
গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকরা প্রধানত মহিলা, নিজেদের আইনি দাবিদাওয়া সম্পর্কে তাঁদের বিশেষ ‘জানকারি’ নেই৷ কাজেই কারখানায় ‘‘মহিলাদের কাফে’’ সৃষ্টি করে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, সেই সঙ্গে বিনোদনের জন্য লুডো খেলা৷
ছবি: DW/S. Burman
কাজের জায়গায়
পরিস্থিতি কিছুটা অন্যরকম৷ দিনে দশ থেকে চোদ্দ ঘণ্টা কাজ৷ ‘‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’’ এই অনলস কর্মীদের কাজের পরিবেশের উন্নতি ঘটাতে চায়৷
ছবি: DW/S. Burman
রাজনীতিও শামিল
বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গাজিপুরের ডিবিএল গ্রুপের ফ্যাক্ট্রিতে জার্মান উন্নয়নমন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলারের সঙ্গে যোগ দেন এবং সহযোগিতা সম্পর্কে আলোচনা করেন৷ গার্মেন্টস শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি ঘটানোর জন্য সরকারের উদ্যোগ বিশেষভাবে প্রয়োজন৷
ছবি: DW/S. Burman
মিনি ফায়ার ব্রিগেড
গ্যার্ড ম্যুলার গাজিপুরে ডিবিএল গ্রুপের কারখানার নতুন ‘খুদে দমকল বাহিনীর’ উদ্বোধন করেন৷ এই ফায়ার ব্রিগেড এক কিলোমিটার ব্যাসের এলাকার মধ্যে অগ্নি নির্বাপণে সক্ষম৷ ম্যুলারের সঙ্গে ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ৷
ছবি: DW/S. Burman
চাইল্ড কেয়ার
শ্রমিক কল্যাণ উদ্যোগের অংশ হিসেবে কারখানা প্রাঙ্গণে ডে-কেয়ার সেন্টার সৃষ্টি করে মহিলা শ্রমিকদের শিশুসন্তানদের দেখাশোনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Burman
সবে মিলে করি কাজ
জার্মান সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা, মালিকপক্ষ, বিদেশি ক্রেতা এবং অপরাপর সংশ্লিষ্টরা সকলে একত্রিত হয়ে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করছেন৷
ছবি: DW/S. Burman
লক্ষ্য
বাংলাদেশ বর্তমানে ২৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের গার্মেন্টস রপ্তানি করে থাকে৷ সরকার সেটাকে ২০২১ সাল – অর্থাৎ দেশের পঞ্চাশতম বার্ষিকীর মধ্যে ৫০ বিলিয়নে দাঁড় করাতে চান৷ জার্মান উন্নয়ন মন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার গত ৭ই অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন৷
ছবি: DW/S. Burman
10 ছবি1 | 10
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ হাজারেরও বেশি শ্রমিকের লেবারভয়েসেসে করা ফোন যাচাই করে দেখা গেছে প্রতি পাঁচটি কারখানার একটিতে শিশু শ্রমের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে, জানান সেবাটির পরিচালক আয়ুশ খান্না৷
তিনি বলেন, ‘‘উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মোবাইল ব্যবহারের হার এখন নব্বই শতাংশের বেশি৷ ফলে সাপ্লাই চেইনের মধ্যে স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতা বাড়াতে এই প্রযুক্তির ব্যবহার খুবই স্বাভাবিক৷''
উল্লেখ্য, পশ্চিমা দেশগুলোতে পোশাক রপ্তানির হিসেবে বিশ্বের মধ্যে চীনের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান৷ আর বাংলাদেশের আশি শতাংশের বেশি রপ্তানি আয়ের উৎস পোশাক খাত যেখানে চল্লিশ লাখের মতো মানুষ কাজ করে৷ তবে বাংলাদেশের শ্রমিকদের মাসিক আয় ৬৮ মার্কিন ডলারের মতো যেখানে চীনে একজন শ্রমিকের গড় আয় ২৮০ মার্কিন ডলার৷