আজকের বিশ্বে খাদ্যের বেড়ে চলা চাহিদা মেটাতে বিশাল আকারে কৃষিকাজ চলছে৷ সার, কীটনাশক ইত্যাদি প্রয়োগ করে দ্রুত ফসল তোলার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে৷ জার্মান বিজ্ঞানীরা পোকামাকড় আকর্ষণ করে এর এক বিকল্প পদ্ধতি তুলে ধরছেন৷
বিজ্ঞাপন
বন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা কাছের একটি শহরের খেতে নিয়মিত কীটপতঙ্গ পর্যবেক্ষণ করেন৷ কীটপতঙ্গ দূর করার বদলে কৃষিকাজকেই তাদের সঙ্গে মানিয়ে চলতে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন তাঁরা৷ সবার আগে খেতের আলের দিকে চোখ চলে যায়৷ ঝোপঝাড় ও জংলি ফুল দিয়ে সাজানো সেই সীমানা৷
বন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোফেসর টোমাস ড্যোরিং ও তাঁর টিম এভাবে খেতে আরও কীটপতঙ্গ আকর্ষণ করতে চান৷ সেই ঝোপের মধ্যে ৫০টিরও বেশি প্রজাতির গুবরে পোকা শীতযাপন করে৷ বসন্তকালে তারা আবার জেগে উঠলে খেত বেশি দূরে থাকে না৷ প্রো. ড্যোরিং বলেন, ‘‘এটা এক ধরনের গুবরে পোকা, সেটি নানা রকম অনিষ্টকারী কীট খেয়ে ফেলে৷ তাদের বিশাল ঝাঁক খেতের উপর উড়ে বেড়িয়ে সেই সব কীট ধ্বংস করে৷
মহাপতঙ্গ: বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাতটি পোকামাকড়
বৃহদাকারের পাখাযুক্ত প্রজাপতি থেকে লম্বা পায়ের ‘ক্রাউলি’, এখানে থাকছে কয়েকটি বড় আকারের পোকামাকড়ের কথা৷
ছবি: picture-alliance/chromorange/C. Wojtkowski
‘ম্যার্কোডনটিয়া সার্ভিকর্নেস’
এই গুবুরে পোকা সতেন সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে৷ মূলত এটির মুখের কাছে থাকা অস্বাভাবিক বড় চোয়ালের কারণে এটিকে এত লম্বা মনে হয়৷
ছবি: picture-alliance/AFP Creative/J. Saget
‘জায়ান্ট ওয়েটা’
বিশ্বে এগারো প্রজাতির জায়ান্ট ওয়েটা রয়েছে, এবং এটি সর্বোচ্চ দশ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে৷ এই হিসেবের মধ্যে অবশ্য তাদের ভাজ করা লম্বা পা আর এন্টেনা অবশ্য এই হিসেবের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি৷ একটি জায়ান্ট ওয়েটার ওজন হতে পারে ৭০ গ্রাম পর্যন্ত৷
ছবি: picture-alliance/WILDLIFE/M. Carwadine
‘গলিয়েথ’ পোকা
বিশ্বের সবচেয়ে বড় পোকামাকড়ের মধ্যে গলিয়েথ পোকা অন্যতম৷ এগুলো লম্বায় ১১ সেন্টিমিটার এবং ওজনে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে৷ বিশ্বে গলিয়েথ পোকার পাঁচ ধরনের প্রজাতি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/B. Trapp
‘‘কুইন আলেক্সান্ড্রা’স বার্ডউইং’’
বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রজাপতি এটি৷ এই প্রজাতির নারী প্রজাপতির পাখা ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে৷
ছবি: Mark Joy
‘তরান্তুল হক’ বোলতা
এটি মাকড়সা বোলতা হিসেবেও পরিচিত, কেনটা এটি তরান্তুল মাকড়সা শিকার করে৷ এজন্য তারা তাদের হুল ব্যবহার করে, যেটি বিশ্বের অন্যতম যন্ত্রণাদায়ক হুল৷
ছবি: picture-alliance/Mary Evans Picture Library/K. Lucas
‘অ্যাটলাস বিটল’
‘রাইনোসেরস বিটলের’ এই প্রজাতি কুস্বভাবের জন্য পরিচিত৷ একটি পুরুষ পোকা ১৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/H. Schmidbauer
‘জায়ান্ট ওয়াটার বাগ’
মাংসাশী মিঠাপানির পোকামাকড়দের মধ্যে অন্যতম বড় প্রজাতির জলপোকা এটি৷ আকারে ১২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়৷
ছবি: picture-alliance /Bruce Colem/J. Dermit
7 ছবি1 | 7
কৃষি পরিবেশবিদরা খেতের ধারে এমন সব উপকারী পোকামাকড়ের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেন, যারা ক্ষতিকারক কীট খেয়ে ফেলে৷ ফলে কীটনাশকের আর প্রয়োজন পড়বে না বলে তাঁদের আশা৷ প্রো. টোমাস ড্যোরিং বলেন, ‘‘এখানেই লেডিবাগ প্রজাতির শূককীট রয়েছে, যারা অ্যাফিড বা জাবপোকা খায়৷ সার্বিক একটা প্রণালী হিসেবে আমরা উপকারী পোকামাকড়ের মাধ্যমে ক্ষতিকারক কীটের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে পারি৷ তবে তাদের একেবারে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হবে না৷ তা সত্ত্বেও আমরা গোটা কাঠামোকে স্থিতিশীল করে তুলতে পারি৷’’
খেতের ধারে গবেষকরা ফুলের সারি সৃষ্টি করেছেন৷ ফুলগুলি একসঙ্গে ফোটে না, একের পর এক তাদের বিকাশ ঘটে৷ ফলে পোকামাকড়ের খাদ্যের অভাব হয় না৷ প্রো. ড্যোরিং বলেন, ‘‘এখানে যেমন দেখা যাচ্ছে, নানা ধরনের পোকা এই ফুল ব্যবহার করতে পারে৷ খেতের ফাঁক দিয়ে ট্রাকটর চলে৷ ফলে সেখানকার মাটি সাধারণত বেশ শক্ত হয়৷ সে কারণে অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এর তেমন উপযোগিতা নেই৷ মাটির এমন বৈশিষ্ট্যের ফলে সেখান থেকে আয়ের অঙ্ক কম৷ আয়ের চিন্তা না থাকায় সেই জায়গা পোকামাকড় আকর্ষণ করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে৷’’
শুধু ধারে নয়, এই খেতের উপরের অংশও জার্মানির বেশিরভাগ খেতের থেকে ভিন্ন৷ গবেষকরা আগাছা ধ্বংস করতে কোনো রকম রাসায়নিক ব্যবহার করেন না৷ ফলে পোকারা খেতের মধ্যেও খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে, যেমন বীজ, পরাগ, ক্যামোমিল ইত্যাদি৷
খেতের ধারে ফুলের মেলা, কোনো কীটনাশক নয়, সারের পরিমাণও কম এবং ফসল পরিবর্তনের মতো পদক্ষেপ বেশ সফল হচ্ছে৷ প্রচলিত কৃষিক্ষেত্রের তুলনায় এখানে জীববৈচিত্র্য প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি৷ সেইসঙ্গে পরাগবহনকারী পোকাদের মাত্রা ৫০ শতাংশ বেশি৷
খাবারের তালিকায় যখন পোকামাকড়
বৈশ্বিক খাদ্য শিল্প ইতোমধ্যে প্রকৃতির উপর চাপ সৃষ্টি করে ফেলেছে৷ মোটের উপর জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে তাতে ভবিষ্যতে খাবারের চাহিদা মেটাতে বিকল্প ভাবা জরুরি হয়ে পড়েছে৷ এক্ষেত্রে আহারযোগ্য পোকামাকড় একটা ভূমিকা রাখতে পারে৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
দুপুরের খাবারে পঙ্গপাল
বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে চাষাবাদের উপযোগী জমিও কমছে৷ ফলে গোটা বিশ্বের মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে৷ আর মাংস উৎপাদনের কারণেও পরিবেশের ওপর চাপ পড়ছে৷ এই চাপ কমাতে অনেকে কীটপতঙ্গ খাওয়ার কথা ভাবছেন৷ ছবিতে টোকিওতে এক ব্যক্তিকে ডিমের সঙ্গে পঙ্গপাল খেতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Yamanaka
কঙ্গোতে খাওয়া হচ্ছে শুঁয়োপোকা
খাদ্য হিসেবে কীটপতঙ্গ খাওয়া হচ্ছে বহুকাল ধরে৷ তবে এই চর্চা গোটা বিশ্বে ছড়ায়নি৷ এক দেশে যেটা খাওয়া হয়, অন্য দেশে হয়ত সেটা খাওয়ার কথা ভাবাই যায় না৷ ছবিতে কঙ্গোতে অলিভ অয়েলের সঙ্গে পোড়া শুঁয়োপোকা খাওয়ার দৃশ্য৷
ছবি: Getty Images/AFP/J.D. Kannah
ধীরে ধীরে চর্চা শুরু হচ্ছে
ইউরোপ এবং উত্তর অ্যামেরিকায় খাদ্য হিসেবে পোকামাকড়ের ব্যবহার এখনো দুর্লভ এবং মানুষের মধ্যে এক্ষেত্রে এক ধরনের সঙ্কীর্ণতা কাজ করে৷ তবে পরিবেশবিদরা বিষয়টি জনপ্রিয় করার চেষ্টা করেছেন৷ টেকসই খাদ্যের উৎস হিসেবে পোকামাকড়কে বিবেচনা করছেন তারা৷ ছবিতে সিডনির এক শেফ তাঁর তৈরি ঝিঁঝিঁ পোকা দিয়ে রান্না করা খাবার দেখাচ্ছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Khan
পাম অয়েলের বিকল্প?
ইন্দোনেশিয়ার স্টার্টআপ বাইটব্যাক পাম অয়েলের বিকল্প হিসেবে কীটপতঙ্গ ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে৷ ইন্দোনেশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাম অয়েল উৎপাদনের এক বিতর্কিত বিষয়, কেননা, এতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে কীটপতঙ্গ ব্যবহার এক ভালো বিকল্প হতে পারে বলে মনে করেন স্টার্টআপটির প্রতিষ্ঠাতারা৷
ছবি: Founders Valley/Biteback Indonesia
কীটের ললিপপ
২০৫০ সাল নাগাদ মাংসের চাহিদা বর্তমানের চেয়ে ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে৷ তবে এই পরিমান মাংস উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কৃষিজমি এবং প্রাণীখাদ্য তখন থাকবে কিনা তা এক বড় প্রশ্ন৷ এক্ষেত্রে মানুষের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে পারে কীটপতঙ্গ৷ ছবিতে কীট এবং ঝিঁঝিঁপোকার তৈরি ললিপপ দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Bleier
মধুর বদলে খান মৌমাছি
কীটপতঙ্গ বিকল্প খাদ্য হতে পারে সত্যি, তবে সেটাকে সার্বজনীন রূপ দিতে আরো সময় এবং উদ্যোগ প্রয়োজন৷ যেসব দেশে এ ধরনের খাদ্যের চর্চা এখনো শুরু হয়নি, সেসব দেশে এই বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি৷ ছবিতে বার্লিনে একজনকে রোস্ট করা মৌমাছি দেয়া কেক খেতে দেখা যাচ্ছে৷