সুইজারল্যান্ডের সুপারমার্কেট চেইন কুপ এক আজব ঘোষণা দিয়েছে৷ এ মাসের শেষ থেকে সুপারমার্কেটটির বেশকিছু শাখায় পাওয়া যাবে নানা রকম পোকামাকড় দিয়ে তৈরি ফাস্ট ফুড৷ মজার ব্যাপার হলো, খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থাগুলো একে সমর্থনও দিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
সুইজারল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম সুপারমার্কেট চেইন ‘কুপ'৷ আগস্টের শেষ নাগাদ মুরগি, গরু এবং শূকরের মাংসের পাশাপাশি পোকামাকড় দিয়ে তৈরি ফাস্টফুডও বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা৷
সুইস স্টার্ট আপ কোম্পানি এসেনটোর উৎপাদন করা উচ্চ আমিষযুক্ত শূককীট দিয়ে তৈরি হবে এই খাবারগুলো৷ তবে আপাতত সারা দেশে নয়, শুধু জেনেভা, বার্ন ও জুরিখের বাছাই করা কিছু দোকানে পাওয়া যাবে এই খাবার৷
মে মাসে পোকামাকড় দিয়ে খাবার তৈরির বিধান রেখে পরিবর্তন হয় দেশটির খাদ্য নিরাপত্তা আইন৷ এরপরই এলো এমন ঘোষণা৷
ভাবছেন একটা পোকা ধরে তেলে ভেজে ফেললেই হলো? বিষয়টা মোটেও এতোটা সহজ না৷ সুইস নিরাপত্তা আইন অনুসারে মানুষের খাওয়ার উপযুক্ত করার জন্য কঠোর তত্ত্বাবধানের মধ্যে অন্তত চার প্রজন্ম ধরে বংশবিস্তার করাতে হয় এই পোকাগুলোকে৷
এসেনটোর সহপ্রতিষ্ঠাতা ক্রিস্টিয়ান ব্যার্টশ বলছেন, শূককীটের সাথে ভাত, গাজর, শাক, পেঁয়াজ এবং সামান্য মরিচ মেশালে যা হয়, তা সত্যিকার অর্থেই অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা৷
‘ন্যূনতম পরিবেশ ঝুঁকি'
গত এক দশক ধরেই খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ পোকা-ভিত্তিক খাবারের উপকারি দিকগুলো বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করে গেছেন৷
২০১৩ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা এফএও-র এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘‘পোকামাকড় পরিবেশের খুব কম ক্ষতি করে আমাদের খাবার জোগাতে পারে৷ জীবনযাত্রা ও প্রকৃতির উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে৷ কিন্তু সাধারণ মানুষ এই দিকগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানে না৷''
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা ৯০০ কোটিতে পৌঁছুবে৷ খাদ্যের চাহিদার সাথে তাল মেলাতে হলে উৎপাদনও এখনকার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হতে হবে৷ গবেষকরা বলছেন, এই বাড়তি চাহিদা মেটাতে বিকল্প খাদ্যব্যবস্থা হতে পারে নানা ধরনের পোকামাকড়৷
প্রাথমিকভাবে আগস্টের ২১ তারিখে ক্রেতাদের জন্য এই ধরনের খাবার উন্মুক্ত করে দেবে কুপ৷ তারপর অপেক্ষা, কেমন সাড়া মেলে তা দেখার৷
পোকামাকড় দিয়ে করুন সকালের নাস্তা!
পোকামাকড়ে অনেক আমিষ রয়েছে এবং এগুলো চাষ করাও সহজ৷ ফলে ভবিষ্যতে খাবারের চাহিদা মেটাতে এই পোকামাকড়ের কাছেই যেতে হতে পারে, বলছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
খেতে সুস্বাদু
পোকামাকড় খেতে সুস্বাদু৷ গরু, ছাগল, ভেড়ার চেয়ে এগুলো পালতে খরচ যেমন কম পড়ে, তেমনি পরিশ্রমও হয় কম৷ এছাড়া এরা গ্রিনহাউস গ্যাসও কম উৎপাদন করে৷ তাহলে আমরা বেশি করে পোকামাকড় খাই না কেন?
ছবি: picture-alliance
পুষ্টিমানেও সেরা!
বিয়ারের সঙ্গে ভাজা তেলোপোকা আর বিচ্ছু৷ আর কি চাই! এশিয়ার অনেক দেশের মানুষের প্রিয় খাবার এটি৷ সেই সঙ্গে এই খাবার স্বাস্থ্যকরও৷ পোকো, বিশেষ করে লার্ভা বা শূককীটগুলো, একেকটি যেন আমিষের স্বর্গ! যেমন একশো গ্রাম উইপোকায় রয়েছে ৬১০ ক্যালরি – যা একটি চকলেটের চেয়ে বেশি৷ এছাড়াও এতে আছে ৩৮ গ্রাম আমিষ ও ৪৬ গ্রাম চর্বি৷
ছবি: picture-alliance/Christoph Mohr
আরও গুণ
শুধু আমিষ নয়, পোকামাকড়ে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রন, ভিটামিন ও খনিজ, জানিয়েছে স্বয়ং বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, এফএও৷ সংস্থাটি সারা বিশ্বে খাবার হিসেবে পোকার জনপ্রিয়তা বাড়াতে চাইছে৷
ছবি: picture-alliance/Wildlife
সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়
পোকার কদর সারা বিশ্বেই৷ তবে এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ অ্যামেরিকার মানুষের কাছে একটু যেন বেশিই প্রিয়৷ ছবিতে শুঁয়াপোকার একটি মেনু দেখা যাচ্ছে৷ আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের জনপ্রিয় একটি খাবার এটি৷
ছবি: picture-alliance/africamediaon
জার্মানিতেও রেস্টুরেন্টে পোকার আগমন
ছবিটি মেক্সিকোর একটি রেস্তরাঁর৷ পোকার এই স্ন্যাকটি সবার খুব পছন্দের৷ তবে জার্মানিতেও নতুন চালু হওয়া অনেক রেস্তরাঁয় ঘাসফড়িং, শুঁয়াপোকা ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে৷
ছবি: AP
পোকা ভাজা
কড়া করে ভাজা গুবরে পোকা, শূককীট ও পঙ্গপালের এই মেনুটি কলম্বিয়ায় একটি জনপ্রিয় খাবার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফড়িংয়ের গ্রিল
ফ্রান্সের একটি নামকরা খাবার কোম্পানি গ্রিল করা ফড়িংয়ের এই মেনুটি অনলাইনে বিক্রি করছে৷ প্রতি ৩০-গ্রামের একটি বোতলের দাম নয় ইউরো বা ৯০০ টাকা!
ছবি: Ynsect
আহারযোগ্য এক হাজার পোকা
বিশ্বে প্রায় এক হাজার রকমের পোকা রয়েছে যেগুলো আহারযোগ্য৷ এর বেশিরভাগই যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিকর৷ তাই পোকা কিভাবে আরও বেশি পরিমাণে খাওয়ার যোগ্য করা যায় সে চিন্তা করার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
প্রিয় পাঠক, পোকামাকড় খেতে আপনি কি প্রস্তুত? লিখুন নীচের ঘরে৷