অনেকেই নিশ্চয় বার্গার পছন্দ করেন৷ কেউ বিফ, আর কেউ হয়ত চিকেনের৷ তবে এবার এসেছে পোকার বার্গার৷ হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন পোকা! নেদারল্যান্ডস আর বেলজিয়ামের কয়েকটি রেস্তোরাঁয় এই বার্গার পাওয়া যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
প্রথম দেখায় দেখে মনে হবে সাধারণ হ্যামবার্গার৷ তবে আসলে একটু ভিন্ন, কারণ এমন বার্গারে মাংসের পুরের প্রায় অর্ধেক থাকে বিভিন্ন ধরণের পোকা৷ ভেরা ব্যোকেলমান এমন এক বার্গার খেয়ে বলেন, ‘‘খেতে একটু শুকনো৷ তবে গন্ধটা ভালো৷ আমি অবশ্যই আমার বন্ধুদের এটা খেয়ে দেখার পরামর্শ দেবো৷''
ভেরার পোকা বার্গারের মূল উপাদান গুবরে পোকার শূককীট৷
নেদারল্যান্ডসের এর্মোলো শহরে এই পোকা বার্গারের উৎপাদন শুরু হয়েছে৷ উৎপাদনকারীরা এখানে ৪০ বছর ধরে পোকা নিয়ে কাজ করছেন৷ মূলত প্রাণীর খাবার ও কসমেটিকস শিল্পে এই পোকা ব্যবহৃত হয়৷ তবে সম্প্রতি তারা মানুষের খাবার হিসেবে ব্যবহারের জন্যও পোকা উৎপাদন করছেন৷
প্রোটি-ফার্মের প্ল্যান্ট ম্যানেজার নিকো রুড৷ তিনি নিয়মিত তাঁর পোকার গুনাগুণ পরীক্ষা করেন৷
বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মানুষ প্রতিদিন পোকা খেয়ে থাকে৷ তবে ইউরোপে এটি এখনও ট্যাবু৷
চিকেন বা বিফ নয়, খান পোকার বার্গার!
04:19
নিকো রুড বলেন, ‘‘আমি মনে করি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পোকা খাওয়াটা সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হবে৷ অনেক ধরনের খাবারেই পোকার ব্যবহার হবে৷ তাই আমার মনে হচ্ছে, পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা বছরে কয়েকবার পোকা খাওয়া শুরু করবো৷''
পোকা বেশ পু্ষ্টিকর, কারণ এতে প্রায় ৫০ শতাংশ প্রোটিন রয়েছে৷
অন্যান্য প্রাণী প্রতিপালনের তুলনায় পোকা পালতে কম জায়গা, পানি ও খাবারের প্রয়োজন হয়৷ এছাড়া কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনও কম হয়৷
মাক্স ক্রেমার ও বারিস ওৎসেল পোকা বার্গারের উদ্ভাবক৷ ১০ হাজার ইউরো দিয়ে ২০১৪ সালে তাঁরা ‘বাগফাউন্ডেশন' প্রতিষ্ঠা করেন৷ এখন তাঁরা আরও চারজনকে নিয়োগ দিয়েছেন৷
বছর সাতেক আগে বিশ্বভ্রমণের সময় প্রথম তাঁরা খাওয়া যায় এমন পোকার সঙ্গে পরিচিত হন৷ সেখান থেকে এই ব্যবসা শুরুর বুদ্ধি পান এই দুজন৷ বারিস ওৎসেল বলেন, ‘‘আমরা যখন প্রথম আমাদের পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতজনের সঙ্গে এই আইডিয়া শেয়ার করি তখন তাঁরা আমাদের ক্রেজি বলেছিলেন৷ কারণ তাঁরা মনে করেছিলেন, এটা কোনোভাবেই কাজ করবেনা৷ তবে এখন অনেকে বলছেন, আমরা ভাল কাজ করছি৷ এরপরই তাঁরা জানতে চাইছেন, কখন তাঁরা সেগুলো চেখে দেখতে পারবেন?''
ফাস্টফুড থেকে সাবাধান!
জার্মানিতে শতকরা প্রায় ১৫ জন কিশোর-কিশোরীর অতিরিক্ত ওজন৷ এদের মধ্যে বেশিরভাগই অতিরিক্ত ওজনের কারণে অসুস্থ৷ ফাস্টফুড বা এজাতীয় খাবার খাওয়া এবং সে তুলনায় প্রয়োজনীয় হাঁটাচলা না করায় শরীরে মেদ জমে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফাস্টফুড খেলে জীবন হয়ে যেতে পারে দুর্বিসহ
পিৎসা, বার্গার, কোকাকোলা, চিপস – সবকিছু নিয়ে টেলিভিশনের সামনে বসে যাওয়া, এটা অনেক বাচ্চা এবং কিশোর-কিশোরীদের যেন নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে৷ কিন্তু এর পরিণামের কথা কি ভেবে দেখেছেন মা-বাবারা? নিয়মিত ফাস্টফুড খাওয়ার ফলে শিশুদের ফুলের মতো সুন্দর জীবন আগামীতে হয়ে যেতে পারে দুর্বিসহ
ছবি: dreamer12 - Fotolia.com
চিপস, চকলেট আর কোক
প্রায়ই দেখা যায় সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে বাচ্চারা কিছু না খেয়ে তাড়াহুড়ো করে স্কুলে চলে যায়৷ আর যাবার সময় তুলে নেয় চিপস বা চকলেট জাতীয় কিছু একটা, আর সাথে হয়ত ছোট্ট কোকের বোতল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তৈরি খাবার
স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরেও সেই একই অবস্থা! বন্ধুরা অপেক্ষা করছে খেলার জন্য বা অন্য কোথাও একসাথে যাবে তাই৷ কাজেই এই অল্প সময়ে রেডিমেড খাবার খাওয়া ছাড়া উপায় নেই৷ ফ্রিজে রয়েছে বার্গার, পিৎসা বা এ ধরণের অনেক কিছু৷ পেট ভরাই মূল লক্ষ্য , পরিণাম নিয়ে কারো যে মাথা ব্যথা নেই৷
ছবি: Fotolia/Barbara Dudzińska
শতকরা ১৫ জন কিশোর-কিশোরী মোটা
জার্মানিতে শতকরা প্রায় ১৫ জন কিশোর-কিশোরীর অতিরিক্ত ওজন৷ এদের মধ্যে বেশিরভাগই অতিরিক্ত ওজনের কারণে অসুস্থ৷ বেশি চিনি এবং বেশি চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া এবং সে তুলনায় প্রয়োজনীয় হাঁটাচলা না করায় শরীরে মেদ জমে যায়৷ সোজা কথায় – শারীরিক পরিশ্রম যে কম করে তার শরীরের ক্যালোরির প্রয়োজনও হয় কম৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুগের হাওয়া
আজকের যুগের ছেলে-মেয়েরা বেশিরভাগই বাইরে খেলাধুলা করার চেয়ে পছন্দ করে নানা ধরণের কম্পিউটার গেম৷ বন্ধুদের সাথেও যোগাযোগের মাধ্যম মোবাইল ফোন৷ আর টেলিভিশন তো রয়েছেই৷ অর্থাৎ তাদের শরীরের তেমন কোনো কাজ নেই৷ অন্যদিকে খেতে পছন্দ ‘ফাস্টফুড’, যা এ যুগের ছেলে-মেয়েদের কাছে রীতিমতো ফ্যাশান৷ কাজেই শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া খুবই সহজ৷ মনের অজান্তে অল্প বয়সে সেখানেই বাসা বাঁধে নানা কঠিন রোগ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শারীরিক সমস্যা থেকে মানসিক সমস্যা
অতিরিক্ত ওজনকে ঠিক সময়ে গুরুত্ব না দেওয়ায় দেখা দেয় শারীরিক নানা সমস্যা, যা পরে মানসিক সমস্যাও হয়ে দাঁড়ায়৷ অতিরিক্ত মোটা হওয়ায় চলাফেরায় বাঁধা হয়ে যায়৷ ফলে স্কুলেও অন্যান্য বাচ্চাদের কাছ থেকে তারা দূরে সরে যেতে বাধ্য হয়৷ সমবয়সিরাও মোটাদের নানাভাবে নানা কথা বলে উত্তেজিত করে এবং অন্যদের সাথে মিশতে নিরুৎসাহিত করে৷ ফলে মানসিকভাবে তারা অসুস্থ বোধ করে ও হতাশায় ভোগে৷ তখন খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায় আরো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অতিরিক্ত ওজন অনেক অসুখেরই পূর্বাভাস
জার্মানির উলম শহরে ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকে ৫২০ জন মোটা বাচ্চা বা কিশোর-কিশোরীকে নিয়ে গবেষণা করা হয়৷ ফলাফলে দেখা গেছে যে ওদের লিভারেরও রয়েছে অতিরিক্ত চর্বি৷ তাই প্রায়ই দেখা দেয় উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়েবেটিসের পূর্বাভাস, যা পরবর্তীতে ডায়েবেটিস এবং হার্টের জন্য হুমকিস্বরূপ৷ তাছাড়াও অতিরিক্ত ওজন থাকার ফলে অল্প বয়সেই হাড়ের জয়েন্টে সমস্যা দেখা দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সহজ সমাধান
জার্মানির স্বাস্থ্য সচেতনতা দপ্তরের কর্মকর্তা রাইনহার্ড মান মনে করেন, সন্তানকে বকাবকি বা অভিযোগ করে এর সমাধান কোনোভাবেই সম্ভব নয়৷ বাচ্চার বয়স, উচ্চতা, স্কুলের চাপ ইত্যাদি ভালো করে জেনে এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেভাবে খাবার দেওয়া উচিত৷ কারণ অনেক সময় দেখা যায়, বাড়ন্ত বয়সে যাদের ঠিকমতো খেতে দেওয়া হয় না, বড় বয়সে তারা খাওয়ার দিকে অতি মনোযোগী হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাড়ন্ত বয়স
অনেক মা-বাবাকেই বলতে শোনা যায়, ছেলে-মেয়ের বাড়ন্ত বয়সে অনেক বেশি খেতে দিতে হয়৷ কিন্তু ঠিক কতটুকু খাবার কার প্রয়োজন, তা তাদের জানা নেই৷ সময় মতো এ বিষয়ে খেয়াল রাখলে হয়ত অনেক সমস্যারই নিজে থেকে সমাধান হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/ZB
খাদ্য বিশেজ্ঞদের পরামর্শ
‘রান্নার সময় মাঝে মাঝে বাচ্চাদের সাথে নিন৷ সবজি, ফল, সালাদ – এগুলো বাচ্চাদের কাটতে শেখান এবং রান্নার পরে সাথে নিয়ে খান এবং এ বিষয়ে আলোচনা করুন৷ সন্তানদের একটু বেশি সময় দিন, শুনুন ওদের সমস্যা এবং একসাথে মিলে সেসব সমাধানের চেষ্টা করুন৷ বাজার করার সময় লক্ষ্য রাখুন কম চর্বি এবং কম মিষ্টি জাতীয় খাবার কম কেনার৷ এতে ভালো ফল নিশ্চিত৷’
ছবি: picture-alliance/Beyond
সপরিবারে সাইকেল চালান
ছুটির দিনে বাচ্চাদের নিয়ে গাড়ির বদলে সাইকেল বা পায়ে হেঁটে চলুন৷ চলে যান কোনো পার্ক বা চিড়িয়াখানায়৷ যদি ছোটবেলা থেকে এসব শেখানো হয়, পরবর্তিতে অতিরিক্ত মোটা হওয়ার হাত থেকে বাঁচা সম্ভব৷ আর ফাস্টফুডের বিজ্ঞাপণ থেকেও শিশুদের সচেতন করা প্রয়োজন৷
ছবি: DW/S. Wünsch
শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ
জন্মের পর থেকে স্বাস্থ্যকর খাবারের সাথে শিশুদের সম্পর্ক গড়ে তুলুন৷ যতটা সম্ভব ফাস্টফুড থেকে সন্তানদের দূরে রাখার চেষ্টা করুন৷ ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’ – এই প্রবাদটি কিন্তু চিরদিনের জন্যই প্রযোজ্য!
ছবি: picture-alliance/dpa
12 ছবি1 | 12
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁরা বার্গার তৈরির চেষ্টা করেছেন৷ পোকার সঙ্গে আছে পানি, মটর আর একটি গোপন মসলার মিশ্রন৷
প্রতিষ্ঠাতাদের আশা, তাঁদের বার্গার মাংস খাওয়ার পরিমাণ কমাবে৷ পরিবেশের জন্য সেটা ভালো, কারণ তখন প্রাণীর খাবার হিসেবে শস্যের ব্যবহার কম হবে৷ তাছাড়া পোকামাকড় পরিবেশবান্ধবও বটে৷
মাক্স ক্রেমার বলেন, ‘‘একই সময়ে আমরা আশা করছি, অন্যান্য দেশের জন্য আমরা মডেল হয়ে উঠবো৷ কারণ উন্নয়নশীল দেশগুলোর নাগরিকরা পশ্চিমা স্টাইল অনুসরণ করতে গিয়ে পোকা খাওয়া ছেড়ে ম্যাকডোনাল্ডস লাইফস্টাইলের মতো বিফ বার্গার খাওয়া শুরু করেছে৷''
জার্মানিতে এখনও পোকা আছে এমন খাবার পণ্য বিক্রি অবৈধ৷ তবে নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামের কিছু রেস্তোরাঁয় পোকার বার্গার পাওয়া যাচ্ছে৷ এরকম একেকটি বার্গারের দাম হয় ১২ থেকে ১৭ ইউরো৷
আগামী বছরের শুরু থেকে জার্মানিতেও পোকাসহ খাবার বিক্রি বৈধ হবে৷ বাগফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতারা তখন জার্মানিতেও ফাস্টফুড ব্যবসা শুরু করতে পারবেন৷