উত্তর অ্যামেরিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূলে অ্যাশ গাছেদের সংকট: এমারাল্ড অ্যাশ বোরার নামের একটা পোকা তাদের সর্বনাশ করছে৷ গাছগুলো একেবারেই যেত, যদি না সেই খবর পেয়ে কাঠঠোকরার দল এসে হাজির হতো!
বিজ্ঞাপন
পক্ষিবিশারদরা শুনলেই রাগ করবেন, কেননা কাঠঠোকরারা তো আর দঙ্গল বেঁধে বাস করে না৷ তবে তারা গাছের ফোকরে বাসা বাঁধে, আর গাছের বাকলে পোকামাকড় ঠুকরে খায়৷ অ্যাশ গাছের সবুজ পোকাটির ল্যাটিন নাম – এগ্রিলাস প্লানিপেনিস – বা ইংরেজি নাম –এমারাল্ড অ্যাশ বোরার – না জানলেও, কাঠঠোকরারা পোকাটিকে ভালোভাবেই চেনে ও দৃশ্যত সুখাদ্য বলে মনে করে৷
বিজ্ঞানীরা এমারাল্ড অ্যাশ বোরারকে চেনেন ২০০২ সাল যাবৎ, যখন মিচিগান রাজ্যের ডেট্রয়েট শহরে পোকাটি প্রথম আবিষ্কৃত হয়৷ এ পর্যন্ত সেই পোকা লক্ষ লক্ষ গাছের মৃত্যু ঘটিয়েছে৷ কাজেই তার মোকাবিলা করা দরকার – কিন্তু পন্থাটা কী? বিজ্ঞানীরা যখন তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন, তখন ভালো খবর এসেছে ক্যানাডার রাজধানী অটাওয়ার পক্ষিবিশারদদের কাছ থেকে৷ তারা নাকি দেখেছেন, রাজধানী ও তার পারিপার্শ্বিকে কাঠঠোকরাদের সংখ্যা বেড়ে তিনগুণ হয়ে গেছে – সব রেকর্ড ভঙ্গ করে! আর এই কাঠঠোকরারা নাকি সকলেই অ্যাশ গাছে বাসা বেঁধেছে৷
যেমন অটাওয়ার কাছে প্রখ্যাত গ্যাটিনো পার্ক, যেখানে বহু অ্যাশ গাছ কাটতে হয়েছে৷ আজ গ্যাটিনোতে কাঠঠোকরাদের ভিড়৷ শক্ত ঠোঁট দিয়ে কাঠ ফুটো করে পোকামাকড় ধরার এক্সপার্ট এই সাদা-কালো, মাথায় একটি লাল ফুটকি দেওয়া পাখিটি৷ এদের জিভ খুব লম্বা আর চ্যাটচ্যাটে, তা-তে আবার সরু সরু লোম বসানো থাকে; পোকার সন্ধান পেলে পাখিরা ঐ জিভ দিয়েই সেই পোকা টেনে বার করে৷ বলতে কি, এমারাল্ড অ্যাশ বোরার পোকার চেয়ে তার কীটই অ্যাশ গাছের পক্ষে বেশি বিষাক্ত – কাঠঠোকরারা সেই কীটকেই গাছের বাকলের ভেতর থেকে টেনে বার করে আনে৷ সাদা সাদা এই কীটই গাছের মৃত্যু ঘটায়৷
পাখি আমার রঙিন পাখি
শুধু পুরুষ পাখিরাই নয়, পক্ষিজগতে স্ত্রী পাখিরাও কিছু কম যায় না৷ পুরুষ পাখিরা সাধারণত একটু বেশি রংচঙে হয়, স্ত্রী পাখিদের আকৃষ্ট করার জন্য৷ রংয়ের বাহারে কিন্তু স্ত্রী পাখিরাও কম যায় না, বলছেন গবেষকরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P.Pleul
স্কারলেট ম্যাকাউ
দক্ষিণ অ্যামেরিকার ম্যাকাউ পাখিদের সঙ্গে রংয়ের বাহারে পাল্লা দিতে পারে, এমন টিয়া খুব কমই আছে৷ ওদের আবার স্ত্রী আর পুরুষের মধ্যে পালকের কোনো ফারাক নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P.Pleul
একই অঙ্গে দু’টি রূপ
সাধারণত পুরুষ পাখিরা বেশি রঙিন হয়, কেননা তাদের স্ত্রী পাখিদের মন ভোলাতে হয়৷ মধ্য অ্যামেরিকার এই ‘শাইনিং হানিক্রিপার’ পাখিগুলোকে দেখলে তা বোঝা যায়৷ বলুন তো পুরুষ পাখি কোনটি? ঠিক ধরেছেন, ডানদিকেরটা!
ছবি: Bill Holsten
পুরোপুরি আলাদা
কখনো-সখনো বিশ্বাস করা শক্ত হয় যে, পুরুষ আর স্ত্রী পাখি দু’টি একই প্রজাতির! ‘স্কারলেট-রাম্পড ট্যানেজার’ পাখিদের মধ্যে পুরুষ পাখিটা মূলত কালো, এক পিছনের দিকটা লাল হওয়া ছাড়া; সেই সঙ্গে রুপালি ঠোঁট আর ঘন লাল চোখের মণি৷ স্ত্রী পাখিগুলোর কিন্তু মাথাটা ধূসর, শরীরের ওপরের দিকটা জলপাই রংয়ের আর পাখাগুলো বাদামি৷
ছবি: Bill Holsten
নখের আমি, নখের তুমি
দুনিয়ার অর্ধেক পাখি আসলে পাসিফর্মেস গোত্রের, অর্থাৎ যাদের পায়ের তিনটে নখর থাকে সামনের দিকে আর একটি থাকে পিছনের দিকে – ফলে দাঁড়ে বসতে সুবিধা হয়৷ এই প্যাসেরাইন পাখিদের বহু প্রজাতির স্ত্রী পাখিরা খুবই সাদামাটা, আবার কোনো কোনো প্রজাতিতে নয়৷
ছবি: Bill Holsten
প্রতিযোগী
পাখি আকারে যতো বড়ো হবে, ততোই নাকি সেই প্রজাতির স্ত্রী পাখিদের রংচঙে হবার সম্ভাবনা বাড়বে, বলছেন গবেষকরা৷ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে স্ত্রী পাখিদের বাহার বেশি হয়, কেননা তাদের পুরুষ পাখিদের মন জয় করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়৷
ছবি: Bill Holsten
স্বর্গের পাখি
নামই হল বার্ডস অফ প্যারাডাইস৷ এদের ক্ষেত্রে পুরুষ পাখিরা হয় যেমন রংচঙে, তেমনই তাদের লেজে দু’টি লম্বা পালক থাকে৷ স্ত্রী পাখিদের মন জয় করার জন্য পুরুষ স্বর্গের পাখিদের নাচ একটা দেখার মতো জিনিস: লেজের পালক ঘোরানোটাও যেন অস্ট্রিচ ফেদার ঘোরানোর মতো৷ আবার গালগলা ফুলিয়ে গোল তুলোর বল হয়ে যাওয়াটাও তার মধ্যে পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P.Schulze
শিখিপুচ্ছ
পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাচা – ময়ূরকে সে কথা বলে দিতে হবে না৷ বর্ষা এলে, মেঘ ঘনালে ময়ূরের পেখম তুলে নৃত্য উপমহাদেশের একটি সুপরিচিত ও সুপ্রাচীন দৃশ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U.Anspach
শকুন রাজা
দক্ষিণ অ্যামেরিকার ‘কিং ভালচার’-এর বাকি শরীরটা সাদা, ছাইরং আর কালো পালক দিয়ে ঢাকা৷ কিন্তু তাদের মাথাটা খুবই রংচঙে৷ নাম ‘শকুন রাজা’ হয়েছে সম্ভবত এই কিং ভালচার ছোটখাটো শকুনদের মড়ির কাছে ঘেঁষতে দেয় না বলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Lopez
চঞ্চু মানেও ঠোঁট
কথা হচ্ছে ধনেশ পাখিদের নিয়ে৷ এদের ঠোঁট হয় আশ্চর্য ধরনের: মোটা, পুরু, রংচঙে৷ সেই ঠোঁটের দরুন এদের শিকারও করা হয়েছে বহুদিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.Jensen
চিংড়ি খেয়ে লাল
ফ্লেমিঙ্গো পাখিরা লাল হয় কী খেয়ে জানেন? বাঁকানো ঠোঁট দিয়ে মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জলের ওপর থেকে লাল চিংড়ি আর প্ল্যাঙ্কটন ছেঁকে নেয় ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’-এর গল্ফ খেলার এই পাখিগুলো৷ লাল চিংড়ি খায়, তাই তাদের পালকের রং হয়ে যায় লাল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Hiekel
স্টারলিং ইজ এ স্টার
জার্মানিতে স্টারলিং-রা কালো-বাদামি, খুব বিশেষত্ব নেই তাদের৷ কিন্তু বিশ্বের অন্যত্র তাদের রং খোলে, যেমন পূর্ব আফ্রিকার এই ‘সুপার্ব স্টারলিং’-দের৷ হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন, পাখিটার নামই সুপার্ব স্টারলিং৷ দেখতেও সুপার্ব!
ছবি: picture-alliance/dpa/G.Graudins
11 ছবি1 | 11
কীটনাশক দিয়ে যে এই আপদ দূর করার চেষ্টা করা হয়নি, এমন নয়৷ কিন্তু গাছের পর গাছে ইনজেকশন দিয়ে বিষপ্রয়োগের খরচা পোষায়নি৷ এরপর ভিমরুল দিয়েও কীট নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে, কেননা ভিমরুলরা এই ধরনের পোকার ডিম ও তার কীট খেয়ে থাকে৷ কিন্তু ছ'হাজার ভিমরুল আর কতটা করবে৷ সে হিসেব এখনও চলেছে৷
এরই মধ্যে মাঠে নেমে গেল কাঠঠোকরারা, যদিও তারা এমারাল্ড অ্যাশ বোরার-এর ডিম ধ্বংস করতে পারবে কিনা, সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের সন্দেহ আছে৷ ওদিকে বিপদ তো আর কমেনি, বরং বেড়েই চলেছে৷ অটাওয়ার ফরেস্ট্রি সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট জানাচ্ছে, পোকা লাগার প্রথম বছরে দু'শোটি গাছ কাটতে হয়েছিল; পরে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় সাত হাজারে!
আপাতত ক্যানাডার সবুজে ঢাকা সুদৃশ্য রাজধানীতে অ্যাশ গাছের সবুজ পোকার সঙ্গে ভিমরুল আর কাঠঠোকরাদের যুদ্ধ চলতে থাকুক...৷
কি বন্ধুরা, দারুণ মজার না গল্পটা৷ জানান কেমন লাগলো, নীচের ঘরে৷
বহুগামী পাখিদের কথা
পাখিদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই একগামী হয়ে থাকে৷ অর্থাৎ বাকি দশ শতাংশের স্বভাব একটু ভিন্ন৷ ছবিঘরে জেনে নিন এমন কয়েকটি পাখির কথা৷
ছবি: Imago
সঙ্গী যখন ঘুমে, উনি তখন খোঁজে
দেখতে সুন্দর এই ব্লুটিট পাখির স্বভাব একটু উড়ু-উড়ু৷ সকালবেলায় পুরুষ সঙ্গীটি যখন ঘুমে বিভোর তখন তিনি আশেপাশে বেরিয়ে পড়েন৷ তখন যদি অন্য কোনো পুরুষ পাখিকে গান গাইতে দেখেন তাহলে কিছুক্ষণের জন্য তার সঙ্গে একটু, মানে একটুখানি আনন্দ করে নেন!
ছবি: picture alliance/Arco Images GmbH
রাজহাঁসের কথা
ছবিই বলে দিচ্ছে রাজহাঁস এমনিতে দীর্ঘদিনের জন্য সম্পর্কে জড়াতে আগ্রহী৷ কিন্তু মাঝেমধ্যে যে ‘বিবাহবহির্ভূত’ সম্পর্কে জড়ানোর অভ্যাস কারও কারও নেই সেটা কিন্তু নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না!
ছবি: Otto Durst/Fotolia
ঝাঁক পছন্দ তাদের
তোতাপাখিরা সবসময় এক ঝাঁক হয়ে থাকতে পছন্দ করে৷ ঝাঁকের মধ্যেই এই পাখিরা একজন আরেকজনকে বেছে নিয়ে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলে৷ উদ্দেশ্য থাকে অনেকদিন একসঙ্গে থাকার৷ কিন্তু তারপরও রাজহাঁসের মতোই তাদেরও কারও কারও এক-আধটু মনে স্বাদ জাগে অন্যকিছু করার!
ছবি: Fotolia/H.Lange
ধারণা ছিল ভুল
একসময় বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল সারস পাখিরা বোধ হয় একগামী হয়ে থাকে৷ কিন্তু পরে জানা গেছে, সেটি সত্যি নয়৷ মাইগ্রেশনের সময় তারা নাকি অন্য কোনো সঙ্গীকে সঙ্গে নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Rössler
সব পেঙ্গুইন এক নয়
ছবিতে গালাপাগোস পেঙ্গুইনদের দেখতে পাচ্ছেন৷ মনে হচ্ছে যেন তারা একে অপরের জন্যই জন্মেছে৷ কিন্তু আসলেই কি তাই? উত্তর – হয়ত কিংবা হয়ত নয়৷ কিন্তু বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, রকহপার পেঙ্গুইন একগামী হয়ে থাকে৷ অর্থাৎ এই জাতের পেঙ্গুইন জোড়াদের একজন আরেকজনের চেয়ে কয়েক হাজার মাইল দূরে থাকলেও একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে৷