ক্যাথলিক গির্জায় যৌন নিপীড়ন বিষয়ক সম্মেলনের শেষ দিনে গির্জায় শিশুদের যৌন নিপীড়নের বিষয়ে কঠোর হতে বলেছেন পোপ ফ্রান্সিস৷ তবে পোপ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা৷
বিজ্ঞাপন
রবিবার সম্মেলনের শেষ দিনে পোপ বলেন, গির্জায় যৌন নিপীড়নের প্রতিটি ঘটনার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ যৌন নিপীড়নের সাথে জড়িত থাকা পাদ্রীদের ‘শয়তান' উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন সমাজেই শিশুদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটতো৷ শিশুদেরকে ‘হিংস্র হায়েনার' হাত থেকে রক্ষা করতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যৌন নিপীড়নকারী এই ‘শয়তানদের মোকাবেলা করা হবে'৷ ‘‘শিশুদের যৌন নীপিড়নের হাত থেকে বাঁচাতে আমি সবাইকে কাজ করার জন্য আন্তরিক আহ্বান জানাই,'' বলেন পোপ৷
সারা বিশ্ব থেকে ১৯০ জন গির্জা প্রধান, ১১৪ জন বিশপ, ১০ জন নারী প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশ নেন৷ ক্যাথলিক গির্জায় পাদ্রীদের দ্বারা শিশুদের যৌন নিপীড়নের এ ঘটনা অস্ট্রেলিয়া, অ্যামেরিকা, চিলি, জার্মানিসহ সারা বিশ্বে আলোচিত হয়েছে৷
পোপ ফ্রান্সিসের পাঁচ বছর
ক্যাথলিক চার্চ এবং সার্বভৌম ভ্যাটিকান সিটির প্রধান হিসেবে পাঁচ বছর পূর্ণ করলেন পোপ ফ্রান্সিস৷ এ সময়ে বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছেন, কখনো কখনো কোনো কোনো মহলের সমালোচনারও শিকার হয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Agentur Andina/J. C. Guzmán
সেই সন্ধ্যা
২০১৩ সালের ১৩ মার্চ পোপ নির্বাচিত হয়েছিলেন হর্খে মারিও ব্যার্গোগলিও৷ সেন্ট পিটার্স স্কয়্যারে সেদিন ছিল লাখো ভক্তের ভিড়৷ পোপ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে দেয়া ভাষণ শুরু করেছিলেন দু’টি মাত্র শব্দ দিয়ে, ‘বুয়োনা সেরা ’, অর্থাৎ ‘শুভ সন্ধ্যা!’
ছবি: Reuters
সংস্কার কমিটি ‘কে নাইন’
পোপ হয়েই ন’জন কার্ডিনালকে নিয়ে একটি সংস্কার কমিটি গঠন করেন ভ্যাটিকান প্রধান৷ চার্চের সংগঠন এবং নির্দেশনায় সংস্কারের দায়িত্ব দেয়া হয় তাঁদের৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L'Osservatore Romano
দুর্বলের পাশে
আফ্রিকা থেকে ইউরোপে প্রবেশ করতে গিয়ে তখন অনেকের প্রাণ যাচ্ছিল৷ পোপ বলেছিলেন বিষয়টি তাঁর ‘হৃদয়ে কাঁটা’ হয়ে বিঁধে৷ ২০১৩ সালে ইটালির লাম্পেডুসা সফরে গিয়েছিলেন পোপ৷ শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশী সেদিন আশা করেছিলেন, পোপের আগমন উপলক্ষ্যে হয়ত তাঁদের ইটালিতে থাকার অনুমতি দেবে সরকার৷ সে আশা অবশ্য পূরণ হয়নি৷
ছবি: AFP/Getty Images
বিনম্রতার প্রতীক
ছবির এই গাড়িটি ৩০ বছরের পুরোনো রেনল্ট বা রেনঁ মডেলের৷ গাড়িটি তাঁকে উপহার দিয়েছিলেন ভেরোনার এক যাজক৷ পোপ ফ্রান্সিস নিজে চালাতে চেয়েছিলেন গাড়িটি৷ কিন্তু নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে বলে সেই অনুমতি তাঁকে দেয়া হয়নি৷
ছবি: Reuters
সেলিব্রিটি ফ্রান্সিস
পোপ ফ্রান্সিসের জনপ্রিয়তা বিশ্বের অনেক সেলিব্রিটির মনেই হিংসার জন্ম দিতে পারে৷ খ্রিষ্টান নন, এমন কোটি কোটি মানুষও তাঁকে পছন্দ করেন৷ তাই তো ইতিহাসের প্রথম পোপ হিসেবে রোলিংস্টোন ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে স্থান পেয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture alliance/dpa/ROLLING STONE
সেতুবন্ধন
পোপ ফ্রান্সিস সবসময় সংঘাত, হানাহানির বিরুদ্ধে৷ তাই কখনো মধ্য আফ্রিকা এবং কলম্বোর বিবদমান দুই পক্ষ, কখনো যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবা, কখনো বা যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর সম্পর্কোন্নয়নের উদ্যোগে দেখা গেছে তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Agentur Andina/J. C. Guzmán
সব ধর্মে বন্ধুত্ব
সব ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে বন্ধুত্বের মনোভাব উৎসাহিত করতে দৃষ্টান্তমূলক কিছু কাজ করেছেন তিনি৷ জেরুসালেমে গিয়ে যেমন প্রার্থনা করেছেন, একইসঙ্গে গ্র্যান্ড মুফতি মোহাম্মদ হোসেনের সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়ে আসতেও ভোলেননি৷ মিশরে গিয়েও কপটিক চার্চের প্রধান এবং গ্র্যান্ড ইমাম দু’জনের সঙ্গেই দেখা করেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Roque
জনতার পোপ
গত জানুয়ারিতে চিলি সফরে গিয়েছিলেন পোপ৷ রাজধানী সান্তিয়াগো থেকে বিমানে উত্তরের শহর ইকিকে যাচছেন৷ বিমানের দুই ক্রু এসে তাঁর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের এক পর্যায়ে জানালেন যে তাঁরা পরস্পরকে বিয়ে করবেন৷ পোপ তো বেজায় খুশি৷ ওই বিমানে তক্ষুণি দুই তরুণ-তরুণীর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে দিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/Osservatore Romano
সমালোচনা
পোপ ফ্রান্সিসের সমালোচনাও নেহাত কম নয়৷ ধর্মযাজকদের একটি অংশ তাঁকে খুব কট্টর মনে করেন৷ ওপরের পোস্টারে গির্জার ভিতরে কারো প্রতি ন্যূনতম ক্ষমা প্রদর্শন না করার জন্য সমালোচনা করা হয়েছে৷ অনেকে আবার মনে করেন, তিনি অতিরিক্তি ধর্মনিরপেক্ষ, তাঁর মানবতাবোধও অতিরিক্ত সাহসী৷ কেউ কেউ বলেন, পোপ ফ্রান্সিস খুব বেশি প্রচারমুখী, তাই যেভাবে যেখানে গেলে প্রচার জুটবে সেখানে ঠিক সেভাবেই হাজির হন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press
9 ছবি1 | 9
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী গির্জা প্রধান ও বিশপরা বিভিন্ন সময়ে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে নিপীড়ত হওয়ার ঘটনা শোনেন৷
পোপের বক্তব্য বকবকানি!
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী যৌন নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিরা যৌন নির্যাতন ঠেকাতে পোপ কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেননি বলে নিন্দা জানান৷ জ্য-মারি ফুরব্রিংগার নামে নিপীড়নের শিকার সুইজারল্যান্ডের এক ব্যক্তি বলেন,পোপ তাঁর বক্তৃতায় শয়তানদের বিষয়ে বলেছেন৷ পোপের বক্তৃতাকে ‘বকবকানি' বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
পিটার সন্ড্রেস নামে নিপীড়নের শিকার যুক্তরাজ্যের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘‘তিনি (পোপ) শয়তানদের বিষয়ে কথা বলেছেন, কিন্তু যৌন নিপীড়নকারীদের গির্জা থেকে চিরতরে বহিষ্কার করার বিষয়ে কোনো কথা বলেননি৷''
ফ্রান্সেস্কো জানার্ডি নামে ইটালীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘ভ্যাটিকান মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে৷ আমরা পোপের কাছ থেকে এ বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ দেখতে চেয়েছিলাম৷ এ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট বিশপদের ও তাঁদের যারা বাঁচাতে চেয়েছেন তাঁদের নাম প্রকাশ হোক, আমরা এটা দেখতে চেয়েছিলাম,'' বলেন তিনি৷ পোপের বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ তিনি বলেন, তাঁরা এ বিষয়ক তথ্য প্রকাশ করার বদলে এগুলো ধংস করে ফেলেছে৷
আরআর/জেডএইচ (এএফপি)
যে পাঁচ দেশে শিশুরা সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানির শিকার
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংগঠিত শিশু যৌন হয়রানির পরিসংখ্যান ঘেঁটে একটি তালিকা তৈরি করেছে ব্রিটেনের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস৷ দেখুন কোন দেশগুলোর নাম এসেছে সেই তালিকায়...
ছবি: picture-alliance/dpa
দক্ষিণ আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতি তিন মিনিটে একটি শিশুকে ধর্ষণ করা হয় বলে ট্রেড ইউনিয়ন ‘সলিডারিটি হেল্পিং হ্যান্ড’-এর করা এক জরিপ থেকে জানা গেছে৷ দেশটির মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল-এর ২০০৯ সালে করা আরেক জরিপে প্রতি চারজন পুরুষের একজন জীবনের কোনো এক সময়ে কাউকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন৷ ২০০০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ৬৭,০০০ শিশু ধর্ষণ এবং নিগ্রহের মামলা নথিভুক্ত হয়েছিল৷
ছবি: Fotolia/Kitty
ভারত
দ্য এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস ২০১৩ সালে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারতে শিশুদের উপর যৌন নিপীড়ন মহামারি পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ দেশটিতে ২০০১ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে শিশু ধর্ষণের অন্তত ৪৮,০০০ মামলা হয়েছে৷ ২০০১ সালের তুলনায় ২০১১ সালে ধর্ষণের হার বেড়েছিল ৩৩৬ শতাংশ৷
ছবি: Getty Images/D. Berehulak
জিম্বাবোয়ে
জিম্বাবোয়ের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ২০১২ সালে দেশটির পুলিশের মুখপাত্র চ্যারিটি চারাম্বা’র বরাতে জানায়, সেখানে শিশু ধর্ষণের হার ক্রমশ বাড়ছে৷ ২০১১ সালে দেশটিতে ৩,১৭২ টি শিশু যৌন নিপীড়নের ঘটনা নথিভুক্ত হয়৷ এছাড়া ২০০৯ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জিম্বাবোয়ের রাজধানী হারারেতে শুধুমাত্র একটি ক্লিনিকে চার বছরে ৩০,০০০ নিপীড়নের শিকার ছেলে ও মেয়েকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Imago/Xinhua
যুক্তরাজ্য
২০০০ সালে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, যুক্তরাজ্যে প্রতি ২০০ প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজনের বেশি পেডোফিল৷ ২০১২-১৩-তে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস-এ ষোল বছরের কম বয়সি ১৮,৯১৫ শিশু যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
২০১০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সেবছর ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সি ১৬ শতাংশ শিশু যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে৷ দেশটির প্রতি চার নারীর একজন এবং প্রতি ছয় পুরুষের একজন ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলেও জানা গেছে চিলড্রেন এসিসমেন্ট সেন্টারের আরেক গবেষণায়৷