বাতাসে অ্যাসবেস্টসের ফাইবার অত্যন্ত ক্ষতিকর৷ অথচ পুরনো বাড়ির মেরামতি কিংবা ভেঙে ফেলার কাজে অ্যাসবেস্টসের সংস্পর্শে আশার ঝুঁকি রয়েছে৷ সেটি এডা়তে এক অভিনব পোর্টেবল অ্যাসবেস্টস ডিটেক্টর তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা৷
বিজ্ঞাপন
ইংল্যান্ডের একটি কনস্ট্রাকশন সাইট – শুধু যে কর্মীরা এখানে কাজ করছেন, এমন নয়৷ বিজ্ঞানীরা এখানে একটি পোর্টেবল রিসার্চ স্টেশন স্থাপন করেছেন৷ মোবাইল গবেষণা কেন্দ্রটি স্থাপনের কারণ: বাতাসে অ্যাসবেস্টসের রোঁয়া উড়ছে কিনা, তা নির্ধারণ করা৷
হেরফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ ক্রিস স্টপফোর্ড বলেন, ‘‘এটি অ্যাসবেস্টস ডিটেক্টরের একটা প্রোটোটাইপ৷ আপাতত একটি ল্যাপটপের সঙ্গে জোড়া রয়েছে৷ যন্ত্রটিতে যতো ধুলার কণা ঢুকছে, ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাদের প্রত্যেকটি কণার স্ক্যাটারিং প্যাটার্ন বা আলো বিচ্ছুরণের নকশা দেখা যাচ্ছে, যা থেকে ধুলিকণাটির প্রকৃতি নির্ণয় করা সম্ভব৷ দেখা যাচ্ছে, এখানে খুব ধুলা থাকলেও,অ্যাসবেস্টসের ফাইবার বা রোঁয়া নেই৷ যন্ত্রতে বাতাস ঢুকে এমন একটি কক্ষে যাচ্ছে, যেখানে ধুলিকণাটির উপর লেজারের আলো পড়ে তার স্ক্যাটারিং প্যাটার্ন দেখা যায়৷ সেই স্ক্যাটারিং প্যাটার্নকে একটি ম্যাগনেটিক ফিল্ডে ফেলা হয়৷ ধুলিকণাটি যদি অ্যাসবেস্টসের রোঁয়া হয়, তাহলে সেটা চৌম্বকশক্তির আওতায় এলে ঘুরপাক খেতে শুরু করে৷''
ট্যানারি শিল্পে স্বাস্থ্য ঝুঁকি
ক্রমেই হাজারিবাগের চামড়া শিল্পে দূষণের মাত্রা বাড়ছে৷ পরিবেশ দূষণ ছাড়াও ট্যানারি শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের রয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি৷ পানি ও বাতোসে রাসায়নিকের উপস্থিতির কারণে নানারকম অসুখে ভুগছেন এলাকার বাসিন্দারা৷
ছবি: DW
একটি ট্যানারির ভেতরের চিত্র
হাজারিবাগে কমপক্ষে ২০০টি ট্যানারি রয়েছে, যাতে ২৫ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন৷ এ সব ট্যানারিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যবহৃত হয় ক্রোম পাউডার, কপার সালফেট, সোডিয়াম, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড, অ্যাসিড, ব্লিচিং পাউডারসহ নানারকম রাসায়নিক৷ শ্রমিকরা নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়া খালি হাত-পায়ে ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজ করার ফলে চর্মরোগ তাঁদের নিত্যসাথী৷ এছাড়া রাসায়নিকের প্রভাবেও অন্যান্য রোগে ভোগেন নিম্ন আয়ের শ্রমিকরা৷
ছবি: DW
হুমকির মুখে শ্রমিকদের নিরাপত্তা
চামড়া শিল্পে কাজকরা এ সব শ্রমিকদের শতভাগই অশিক্ষিত৷ তাই এ শিল্পে কাজ করা শ্রমিকদের কাজের জন্য বেশিরভাগ ট্যানারিতেই নেই কোনো চুক্তিপত্র৷ ফলে নিম্ন আয়ের এ সব শ্রমিকদের পেশাগত নিরাপত্তাও মারাত্মক হুমকির মুখে৷
ছবি: DW
আজও সচেতন নন শ্রমিকরা
ট্যানারিতে কাজ করা শ্রমিকদের বেশিরভাগই স্বাস্থ্য সচেতনও নন৷ তবে বড় ট্যানারি কারখানাগুলোতে কাজের পরিবেশ ভালো৷ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জামও রয়েছে এ সব ট্যানারিতে৷ তারপরও শ্রমিকরাই নাকি এ সব সরঞ্জাম ব্যবহার করতে চান না, অভিযোগ এমনটাই৷
ছবি: DW
‘দীপ নিভে গেছে মম...’
দীর্ঘ সময় ধরে যাঁরা ট্যানারি শিল্পে কাজ করেছেন, তাঁদের বেশিরভাগের জীবনপ্রদীপ ৫০ বছরেই নিভে গেছে৷
ছবি: DW
অকাল মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে চামড়া শিল্প
ট্যানারি শিল্পে কাজ করা শ্রমিকরা একরকম মৃত্যুকূপের বাসিন্দা৷ স্বাস্থ্য ঝুঁকি জেনেও বছরের পর বছর এ শিল্পে কাজ করে চলছেন বাংলাদেশের হাজার হাজার শ্রমিক৷
ছবি: DW
নেই কোনো স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা
ট্যানারি শিল্পে কাজ করা শ্রমিকদের বড় একটা অংশ কাজ করেন দৈনিক ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা৷ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও এ সব শ্রমিকদের জন্য মালিকদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যসেবার কোনো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে৷
ছবি: DW
এলাকাবাসীরাও দূষণের কবলে
শুধু শ্রমিকরাই নন, ট্যানারি শিল্পের দূষণের ছোবলে আক্রান্ত হাজারিবাগ এলাকার কয়েক লাখ বাসিন্দা৷ এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে হাজারিবাগ থেকে এ সব ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থানান্তর হওয়ার কথা থাকলেও, এ খাতের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন ‘‘নানান জটিলতার কারণে এ স্থানান্তর আগামী দু’বছরেও সম্ভব হবে না৷’’
ছবি: DW
শিশুশ্রম – এখনও বাস্তব হাজারিবাগে
দুঃখের খবর, তবুও এটাই সত্য৷ ট্যানারি শিল্পের শ্রমিকদের বড় একটা অংশ ১৮ বছরের কম বয়সি শিশু৷ শিশুদের মজুরি যেমন কম, তেমনই দুর্ঘটনার শিকার হলে তাদের কোনো ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয় না৷
ছবি: DW
প্রতিদিন ৭৫ মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য!
হাজারিবাগের ২০০টি চামড়াশিল্প থেকে গড়ে প্রতিদিন ৭৫ মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য (লবণ, হাড়, চামড়ার বর্জ্য) নির্গত হয়৷ নির্গত হয় ২১ হাজার ৬০০ ঘনমিটার তরল বর্জ্য, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ এই বর্জ্যের মধ্যে আছে ক্রোমিয়াম, সীসা, অ্যামোনিয়া, সালফিউরিক অ্যাসিড প্রভৃতি৷ কিন্তু কোনো কারখানাতেই এই বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই৷ ফলে এ সব বর্জ্য আশেপাশের জলাশয় দূষণ করা ছাড়াও গিয়ে মেশে বুড়িগঙ্গা ও ভূগর্ভের পানিতে৷
ছবি: DW
মৃত্যুকূপের বাসিন্দা নারীরাও
ট্যানারিতে কাজ করা শ্রমিকদের মধ্যে আছেন নারীরাও৷ ট্যানারির বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিকের প্রভাবে এ সব নারী শ্রমিকরাও আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগে৷
ছবি: DW
10 ছবি1 | 10
কোনো ম্যাগনেটিক ফিল্ড বা চৌম্বকশক্তির এলাকায় পড়লে অ্যাসবেস্টস ফাইবার ঘুরতে শুরু করে৷ বিজ্ঞানীরা এই গুণটির উপর ভিত্তি করে তাদের অ্যাসবেস্টস ডিটেক্টর সৃষ্টি করেছেন৷ স্টপফোর্ড বলেন, ‘‘এই রোঁয়াটি বাতাসে অ্যাসবেস্টসের রোঁয়ার চেয়ে এক হাজার গুণ বড়৷ কিন্তু এটিকে লেজার বিমে ফেললে সাধারণ অ্যাসবেস্টস ফাইবারের মতোই তা আলোকিত হয়ে প্রায় সেই ধরনের একটি স্ক্যাটারিং প্যাটার্ন সৃষ্টি করে৷''
কখনো-সখনো বিজ্ঞানীরা বাস্তবিক অ্যাসবেস্টসের ফাইবার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান – যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ৷ প্রযুক্তি অনেকদূর এগনোর ফলে আজ এ ধরনের গবেষণা সম্ভব৷ কয়েক বছর আগেও সংশ্লিষ্ট সাজসরঞ্জামের দাম বড় বেশি ছিল৷ ক্রিস স্টপফোর্ড বলেন, ‘‘আগে যে এটা করা হয়নি, তার মূল কারণ ছিল অর্থসংস্থান৷ লেজার ছিল খুব দামী; কম্পিউটারের খরচও ছিল অনেক৷ কাজেই গবেষকরা তখন কোনো সস্তার পোর্টেবল অ্যাসবেস্টস ডিটেক্টর তৈরি করতে পারেননি, যা অকুস্থলে ব্যবহার করা যায়৷ আজকাল লেজার আর কম্পিউটারের দাম কমেছে৷''
তাদের প্রোটোটাইপ যন্ত্রটি কাজ করবে বলে গবেষকদের বিশ্বাস৷ এমনকি পদ্ধতিটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হবে বলেও তাঁরা আশা রাখেন৷ প্রকল্পের সমন্বয়কারী অ্যালান আর্চার বলেন, ‘‘হাতে নিয়ে ঘোরা যায়, এমন একটি অ্যাসবেস্টস ডিটেক্টর তৈরির পরিকল্পনা আছে আমাদের – পরে থাকবার মতো একটি যন্ত্র৷ কাজেই পূর্তকর্মী যখন ড্রিল চালাচ্ছেন কিংবা হাতুড়ি পেটাচ্ছেন, তখন তিনি যে বাতাসে শ্বাস নিচ্ছেন, যন্ত্রেও ঠিক সেই বাতাসই ঢুকবে৷ সেই বাতাসে অ্যাসবেস্টস থাকলে যন্ত্রটি কাঁপতে শুরু করবে ও একটি অডিও অ্যালার্ম দেবে৷ নিঃশ্বাসে অ্যাসবেস্টসের একটি রোঁয়া ঢোকাও ক্ষতিকর; কাজেই বাতাসে অ্যাসবেস্টস ফাইবার যতো বেশি এড়িয়ে চলা যায়, ততোই মঙ্গল৷''