পোর্শের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’, তোপের মুখে জার্মান অর্থমন্ত্রী
২৬ জুলাই ২০২২
জার্মান গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি ‘পোর্শে'র প্রধান অলিভার ব্লুমের সঙ্গে কথিত আলাপের জেরে তোপের মুখে পড়েছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার৷ বলা হচ্ছে, সরকারের ইলেকট্রিক ফুয়েল পলিসি নিয়ে তারা আলাপ করেছিলেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির পাবলিক ব্রডকাস্টার জেডডিএফ-এর নিউজ শো ‘ডি আনস্টাল্ট'-এ শুক্রবার পোর্শে প্রধানের একটি উক্তি প্রচারিত হয়৷ সেখানে তিনি গত জুন মাসে অর্থমন্ত্রী লিন্ডনারেরসঙ্গে সরকারের ই-ফুয়েল পলিসি নিয়ে একাধিক আলাপের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন৷ এই পলিসি বর্তমান জোট সরকার আগামীতে অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে৷
‘‘ই-ফুয়েল যুক্ত করার জোট সরকারের পরিকল্পনায় আমরা বিরাট ভূমিকা রেখেছি,'' উক্তিটিতে উল্লেখ করা হয়৷ ‘‘আমরাই মূল চালিকাশক্তির ভূমিকা পালন করেছি৷ জোট সরকারের সঙ্গে আমাদের খুব নিবিড় যোগাযোগ আছে৷ ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার তো আমাকে গত কয়েকদিন ধরে ঘণ্টায় ঘণ্টায় আপডেট দিচ্ছিলেন, ‘‘যোগ করেন তিনি৷
গত ডিসেম্বরে জার্মানির নতুন জোট সরকার কাজ শুরু করে৷ এতে সামাজিক গণতন্ত্রী পার্টি ছাড়াও আছে পরিবেশবাদী সবুজ দলও ব্যবসা বান্ধব ফ্রি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বা এফডিপি৷
সরকার গঠনকালীন যেসব চুক্তি হয়, তাতে ২০৩৫ সাল নাগাদ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে পেট্রোল ও ডিজেলের গাড়িগুলো আস্তে আস্তে উঠিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল৷ তারা ২০৩০ সাল নাগাদ জার্মানির রাস্তায় দেড় কোটি ইলেকট্রিক গাড়ি নামানোর পরিকল্পনাও করে৷
জার্মানির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মন্ত্রী
01:45
অর্থমন্ত্রী লিন্ডনার এফডিপির নেতা৷ তার অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে পরে জবাবে বলা হয়, ই-ফুয়েল নিয়ে লিন্ডনারের অবস্থান নতুন কিছু নয়৷
‘‘গত জুনে তিনি ইইউর কমবাসন ইঞ্জিন তুলে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েও তিনি মন্তব্য করেন৷ তখন মি. ব্লুমের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি বা কোনো প্রভাব বিস্তারের সুযোগ তৈরি হয়নি,'' টুইটার পোস্টে বলা হয়৷
তবে এফডিপির একজন মুখপাত্র পরে বলেন, গেল অক্টোবরে যখন জোট সরকারের দর কষাকষি চলছিল, তখন লিন্ডনারের সঙ্গে ব্লুমের খুব ছোট্ট একটা ফোনালাপ হয় এবং তাতে ই-ফুয়েল বিষয়ে কিছু প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা হয়৷
পোর্শের পক্ষ থেকে রোববার ভেল্ট আম জনটাগ পত্রিকায় দেয়া বক্তব্যে বলা হয়, পোর্শে প্রধান বাড়িয়ে বলেছেন৷ ব্লুমে নিজেও বিল্ড পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে নিজের বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন৷ বলেছেন যে, তিনি ঘটনাটি বলতে গিয়ে ‘ভুল শব্দ' ব্যবহার করেছেন৷
গত এপ্রিল মাসে, পোর্শে তাদের ই-ফুয়েল প্রযুক্তি উন্নয়নে সাড়ে সাত কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে৷ ব্লুমে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ফক্সভাগেন গ্রুপের সিইওর দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন৷
ই-ফুয়েলকে জীবাশ্ম জ্বালানির টেকসই বিকল্প হিসেবে ধরা হয়৷ কমবাসন ইঞ্জিনগুলোতে জ্বালানি তেলের পরিবর্তে এটি ব্যবহারযোগ্য এবং এই বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস, যেমন, পানি ও কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে তৈরি করা হয়৷
জেডএ/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
জার্মানির নতুন মন্ত্রিপরিষদে যারা আছেন
শলৎস সরকারের মন্ত্রিসভায় নারী রয়েছেন পঞ্চাশ শতাংশ৷ শুধু তাই নয়, দেশটিতে প্রথম কোনো নারী হলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ চলুন জেনে নেয়া যাক, কারা কারা রয়েছেন নতুন সরকারে৷
জার্মানির সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডির রাজনীতিবিদ ওলাফ শলৎস দেশটির নবম চ্যান্সেলর নির্বাচিত হয়েছেন৷ তিনি এসপিডির চতুর্থ রাজনীতিবিদ যিনি এই পদ পেলেন৷ শলৎস এর আগে ম্যার্কেলের মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী এবং ডেপুটি চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেছেন৷ হামবুর্গের সাবেক এই মেয়রের মধ্যডানপস্থি দল গত সেপ্টেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে বিস্ময়করভাবে জিতে যায়, যদিও গত কয়েক বছর ধরে দলটির জনপ্রিয়তা কম ছিল৷
ছবি: Michael Kappeler/picture alliance/dpa
অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার (এফডিপি)
মিডিয়াস্যাভি ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার ২০১৩ সাল থেকে জার্মানির মুক্ত গণতন্ত্রী দল এফডিপির প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন৷ তিনি এমন এক সময় দলটির দায়িত্ব নেন, যখন সেটি সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার মতো অবস্থাতেও ছিল না৷ লিন্ডনারের নেতৃত্বে সেই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দলটি এবং শলৎস সরকারের অর্থমন্ত্রী হয়েছেন দলটির প্রধান৷
অর্থনীতি ও জলবায়ু সুরক্ষামন্ত্রী এবং ভাইস চ্যান্সেলর ব়্যোবার্ট হ্যাবেক (সবুজ দল)
জার্মানির সবচেয়ে প্রভাবশালী অর্থনীতি মন্ত্রণালয়ে জলবায়ু সুরক্ষাকে অন্তর্ভূক্ত করতে সক্ষম হয়েছে সবুজ দল৷ আর সেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন সবুজ দলের সহ-প্রধান ৫২ বছর বয়সি ব়্যোবার্ট হ্যাবেক৷ তিনি দলটির অপেক্ষাকৃত উদারপন্থি ‘বাস্তববাদী’ অংশের সদস্য৷ শিশুদের জন্য বই লেখা এই রাজনীতিবিদ তার নিজের রাজ্য স্লেশভিশ-হল্সটাইনে পরিবেশ এবং কৃষিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷
ছবি: Reuhl/Fotostand/picture alliance
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক (সবুজ দল)
সবুজ দলের চল্লিশ বছর বয়সি চ্যান্সেলর প্রার্থী আনালেনা বেয়ারবক চ্যান্সেলর হতে না পারলেও শলৎসের মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে পেরেছেন৷ তিনি ইতোমধ্যে জার্মানির চীন নীতি কঠোর করার ইঙ্গিত দিয়েছেন৷
ছবি: Bernd Settnik/picture alliance/dpa
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফায়েজার (এসপিডি)
শলৎসের মন্ত্রিপরিষদের সবচেয়ে বড় বিস্ময় সম্ভবত ন্যান্সি ফায়েজার৷ এসপিডি দলের এই নারী রাজনীতিবিদকে জার্মানির বড় মন্ত্রণালয়গুলোর একটি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন উগ্র ডানপন্থিদের প্রতি সরকার আরো কড়া হতে সম্ভবত তাকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ তিনি হচ্ছেন জার্মানির প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷
ছবি: Hannibal Hanschke/REUTERS
স্বাস্থ্যমন্ত্রী কার্ল লাউটারবাখ্ (এসপিডি)
টেলিভিশন টকশো-তে স্পষ্টভাষী হিসেবে জার্মানদের কাছে জনপ্রিয় লাউটারবাখ্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ তিনি করোনা সংক্রমণ রোধে সবার জন্য টিকা বাধ্যতামূলক করার মতো কড়া পদক্ষেপ নিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/dpa
বিচারমন্ত্রী মার্কো ব্যুশমান (এফডিপি)
এফডিপির ৪৪ বছর বয়সি রাজনীতিবিদ মার্কো ব্যুশমান ২০০৯ সালে প্রথম কেন্দ্রীয় সংসদের সাংসদ নির্বাচিত হন৷ পরবর্তীতে দলটির চরম দুর্দিনেও প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ছিলেন তিনি৷ মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষায় তৎপর হিসেবে সুনাম রয়েছে তার৷
ছবি: Torsten Sukrow/SULUPRESS.DE/picture alliance
প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিষ্টিন লাম্বব্রেশট্ (এসপিডি)
ম্যার্কেল সরকারের সর্বশেষ বিচারমন্ত্রীকে এবার দেশটির সামরিক বাহিনীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক অবশ্য ধারণা করেছিলেন ৫৬ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হবে, কেননা সামরিক বিষয়ে তার জ্ঞান সীমিত৷
ছবি: Hannibal Hanschke/REUTERS
খাদ্য এবং কৃষিমন্ত্রী চেম ও্যজডেমির (সবুজ দল)
সবুজ দলের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ চেম ও্যজডেমির অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকারে জায়গা পেলেন৷ জার্মান মন্ত্রি পরিষদে এই প্রথম একজন তুর্কি বংশোদ্ভূত রাজনীতিবদ জায়গা পেলেন৷ তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত চেম প্রায় এক দশক ধরে সবুজ দলের সহ-চেয়ারম্যান৷
১৯৮৯ সালে পূর্ব জার্মানিতে সবুজ দলের প্রথম শাখা চালু করা স্টেফি ল্যামকেকে জার্মানির সবচেয়ে বড় নামের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ ১৯৯৪ থেকে ২০০২ সাল অবধি জার্মান সংসদে থাকাকালে আফগান যুদ্ধে জার্মানির অংশগ্রহণের ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি৷
ছবি: Hendrik Schmidt/picture alliance/dpa
পরিবহণ ও ডিজিটাল অবকাঠামোমন্ত্রী ফল্কার ভিসিং (এফডিপি)
সঙ্গে গড়া জোট সরকারে তাই তিনি অপরিচিত কোনো মুখ নন৷ এর আগে পাঁচ বছর রাইনল্যান্ড-পালাটিনাট রাজ্যের রাজ্য সংসদে অর্থনীতি মন্ত্রণালয় সামলেছেন তিনি৷
ছবি: Michael Kappeler/picture alliance/dpa
নির্মাণ এবং গৃহায়ণমন্ত্রী ক্লারা গেভিৎস (এসপিডি)
শলৎসের মন্ত্রিপরিষদে জায়গা পাওয়া প্রাক্তন পূর্ব জার্মানির দুই রাজনীতিবিদের একজন ক্লারা গেভিৎস৷ জার্মানিতে বেড়ে ওঠা গৃহায়ণ সমস্যার সমাধানে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Imago Images/M. Müller
শ্রম এবং সমাজ বিষয়ক মন্ত্রী হুবার্টাস হাইল (এসপিডি)
ম্যার্কেলের সর্বশেষ সরকারে থাকা পদটি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন এসপিডির হাইল৷ তার দল যে তার উপর সন্তুষ্ট - এটা তারই ইঙ্গিত৷ জার্মানিতে ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর পাশাপাশি ‘হোম ওয়ার্কার’-এর ঘাটতি মোকাবিলা ও তাদের মজুরি বৃদ্ধিতে মনোযোগ দেবেন তিনি৷
ছবি: Uwe Koch/Eibner-Pressefoto/picture alliance
অর্থনীতি সহায়তা এবং উন্নয়নমন্ত্রী স্যোয়েনিয়া শুলৎসে (এসপিডি)
ম্যার্কেল সরকারের পরিবেশমন্ত্রী স্যোয়েনিয়া শুলৎসে হচ্ছেন শলৎসের প্রথম উন্নয়নমন্ত্রী৷ ৫৩ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদ পরমাণু বিদ্যুতের ঘোরবিরোধী এবং বিভিন্ন পরিবেশ বিষয়ক সংস্থার সদস্য৷
ছবি: Birgit Maass/DW
শিক্ষা এবং গবেষণামন্ত্রী বেটিনা স্টার্ক-ভাটসিঙ্গার (এফডিপি)
হাসে এফডিপির প্রধান ৫৩ বছর বয়সি বেটিনা স্টার্ক-ভাটসিঙ্গার নতুন জোট সরকারের অন্যতম সমঝোতাকারী ছিলেন৷ অর্থ এবং শিক্ষাবিষয়ক নীতির বিশেষজ্ঞ তিনি৷
ছবি: Michael Kappeler/picture alliance/dpa
পরিবার, জ্যেষ্ঠ নাগরিক, নারী, এবং যুবমন্ত্রী আনে স্পিগেল (সবুজ দল)
৪১ বছর বয়সি আনে স্পিগেল ইতোমধ্যে রাজনীতিতে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছেন৷ রাজ্য পর্যায়ে পরিবার, এবং জলবায়ু সুরক্ষা মন্ত্রণালয় সামলানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে তার৷ এবার কেন্দ্র সরকারে তার অবস্থান নিশ্চিত হলো৷
ছবি: Armando Babani/AFP
‘চিফ অব স্থাফ’ এবং স্পেশাল অ্যাফেয়ার্সমন্ত্রী ভল্ফগাং স্মিডট (এসপিডি)
মন্ত্রিপরিষদে শলৎসের ডানহাত হবেন ভল্ফগাং স্মিডট৷ শলৎস যখন হামবুর্গের মেয়র ছিলেন, তখন তিনি তার সঙ্গে কাজ করেছেন৷ তিন দলের মধ্যকার মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কাজে মূলত সমন্বয় করবেন স্মিডট৷
ছবি: Kay Nietfeld/picture alliance/dpa
সংস্কৃতি এবং গণমাধ্যম বিষয়ক কমিশনার ক্লাউডিয়া ব়্যুথ (সবুজ)
জার্মানির সংস্কৃতি নীতি নিয়ে কাজ করবেন ক্লাউডিয়া ব়্যুথ৷ চ্যান্সেলরের দপ্তরে ডয়চে ভেলের দায়িত্বেও থাকবেন ৬৬ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদ৷ লেখক: বেন নাইট, লিসা হ্যানেল / এআই