পোলিও রোগের প্রত্যাবর্তন
১১ নভেম্বর ২০১৩এমনকি ৩০/৪০ বছর পরেও মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে রোগটি৷ পোলিও এমন একটি অসুখ, যাতে কিছু স্নায়ু ক্ষতিগস্ত হয়৷ ফলে হাত ও পায়ে অসাড়তা দেখা দেয়৷ এই অবস্থায় অন্যান্য স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ুর কাজটি হাতে নেয়৷ এর ফলে বেশ অনেক বছর ভালোই কাটতে পারে৷ কিন্তু কোনোও এক সময় অতিরিক্ত চাপ পড়ে যেতে পারে৷ বলেন কোবলেনৎস শহরের পোলিও সেন্টারের ড. আক্সেল রুয়েটৎস৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘নতুন করে আবার অসাড়তা দেখা দেয়৷ ভুক্তভোগীদের মধ্যে যারা তাদের রোগটিকে অনেকটা আয়ত্তে আনতে পেরেছিলেন, তারা ৩০/৪০ বছর পর হঠাৎ লক্ষ্য করেন অসুখটি আবার ফিরে আসতে শুরু করেছে৷ যাকে পোস্ট-পোলিও-সিনড্রোম বলা হয়৷''
দায়ী পোলিও ভাইরাস
পোলিও ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমিত হয় অসুখটি৷ মুখ ও নাকের মাধ্যমে বিস্তৃত হয় এটি৷ ছোট্ট এক ফোঁটা থুতুই বিস্তার লাভ করার জন্য যথেষ্ট৷ এছাড়া ছোঁয়াছুঁয়ির মাধ্যমেও সংক্রমিত হতে পারে অসুখটি৷ মুখ থেকে জীবাণুটি অন্ত্রে চলে আসে৷ পরে রক্তনালীতে ঢোকে৷ সাধারণত অসাড়তা দেখা দেয় আড়াআড়িভাবে৷ ডান পা বা দিকের বাহু৷ বা পা ডান বাহু আক্রান্ত হয়৷
পোলিও ভাইরাসে আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষেরই তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না৷ প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই এমনটি হয়ে থাকে৷ বলা যায় তাদের দেহে পোলিও ভাইরাস প্রতিরোধী শক্তি রয়েছে৷ তবে এই ভাইরাসেরও আবার নানা প্রকার রয়েছে৷ যেগুলি শক্তিশালী৷ তাই পোলিও ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাবার একমাত্র উপায় হলো টিকা দেওয়া৷ ১৯৬০ সালের প্রথম দিক থেকে বাচ্চাদের এই টিকা দেওয়া হচ্ছে৷ জার্মানি ১৯৯৮ সাল থেকে পোলিও মুক্ত৷ ইউরোপের অন্যান্য দেশেও পোলিও নির্মূল হয়েছে৷ তবে বিশ্বের অনেক দেশে এখনও পোলিও থাবা বিস্তার করে চলেছে৷ যেমন আফ্রিকা ও এশিয়ার বহু দেশে৷ এর মধ্যে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারতের নাম করা যায়৷
আবার ফিরে আসে রোগটি
পোলিওতে আক্রান্তদের মধ্যে যাঁরা আরোগ্য লাভ করেছেন বলে ধরে নিয়েছিলেন, বছরের পর বছর পোলিওর কোনো লক্ষণই যাঁদের মধ্যে দেখা যায়নি, তাঁদের অনেকেই হঠাৎ করে পোস্ট-পোলিও-সিনড্রোমে আক্রান্ত হন৷ যেমনটি দেখা যায় হান্স ইওয়াখিম ভ্যোবেকিং-এর ক্ষেত্রে৷ তাঁর বয়স তখন তিন৷ যখন রোগটি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে৷ ১৯৫২ সালের ঘটনা এটি৷ সম্পূর্ণ শরীর আসাড় হয়ে পড়ে তাঁর৷ এমনকি নিঃশ্বাস প্রশ্বাসও নিতে হতো যন্ত্রের সাহায্যে৷ বছর দেড়েক পর আবার কিছুটা সুস্থ বোধ করতে শুরু করেন ইওয়াখিম৷ সাধারণ স্কুলে ভর্তি হন৷ তবে বাচ্চাদের ঠাট্টা বিদ্রুপের শিকারও হতে হয়েছে তাঁকে৷ ল্যাংড়া, খোঁড়া এসব বলা হতো তাঁর উদ্দেশ্যে৷
অতিরিক্ত চাপ অনেকাংশে দায়ী
আজ এটা জানা গেছে অতিরিক্ত চাপের ফলে পোস্ট-পোলিও-সিনড্রোম দেখা দেয়৷ ভুক্তভোগীরা নানা চড়াই-উৎরাই পার হয়ে যখন কিছুটা সুস্থ বোধ করেন, তখন রোগটি আবার ফিরে আসে৷ ইওয়াখিমের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হয়েছিল ডান পা৷ সুস্থ বা পা-টি প্রায় দশ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে পড়ে৷ প্রথম দিকে অর্থপেডিক জুতা দিয়ে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করা হয়৷ ১৯৮০ সালে অপারশন করে বা পা-টি ছোট করা হয়৷ ‘‘এই প্রথম দোকানে গিয়ে সাধারণ জুতা কেনার সুযোগ হয় আমার৷ অপূর্ব এক অনুভূতি৷'' জানান ইওয়াখিম৷ কয়লা খনির ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে অনেক বছর খনির ভেতরেও কাজ করতে হয়েছে তাঁকে৷ হাতুরি বাটালি নিয়ে কাজ করতে না হলেও পর্যবেক্ষেণের কাজ করেছেন তিনি৷ হামাগুড়ি দেওয়া, মই বেয়ে ওঠা নামা করা এসব বাদ যায়নি৷ তবে শেষ দিকে কষ্টকর হয়ে ওঠে কাজটি৷ বেশ কিছুদিন পর রোগটি শনাক্ত করা হয়৷ পোস্ট-পোলিও-সিনড্রোম৷ শ্বাসকষ্ট ও ঘুমের অসুবিধা দেখা দেয় তাঁর৷ প্রায়ই ক্লান্তি ঘিরে আসতো৷ আজ তিনি বুঝেছেন, কাজের ব্যাপারে একটু বাড়াবাড়িই করে ফেলেছেন৷ ১৯৯৫ সাল থেকে হুইল চেয়ারে আবদ্ধ এই মানুষটি৷
একটি বিরল ব্যাধি
জার্মানিতে প্রায় ৭০০০০ মানুষ পোস্ট-পোলিও-সিনড্রোমে আক্রান্ত৷ সংখ্যাটা তেমন বেশি নয় বলে বিরল অসুখের মধ্যে পড়ে এটি৷ আর এই কারণে রোগটি নিয়ে গবেষণাও তেমন হচ্ছে না৷ বিশেষ কোনো বইপত্রও নেই অসুখটি সম্পর্কে৷ মেডিকেলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নেই কোনো বিশেষ লেকচারের ব্যবস্থা৷
২০০১ সালে ড. আক্সেল রুয়েটৎস কোবলেনৎস শহরে পোস্ট-পোলিও-সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগীদের জন্য বহির্বিভাগে চিকিত্সা শুরু করেন৷ এই ধরনের ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত এটিই একমাত্র৷ গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার ফলে বছরে প্রায় ৫০০ রোগী যাচ্ছেন সেখানে৷ রোগীরা বিশেষ থেরাপি সম্পর্কে জানতে চান৷ কিংবা জানতে চান শ্বাস নিতে কীভাবে সাহায্য পাওয়া যায়৷ তবে পোস্ট-পোলিও-সিনড্রোম রোগটিকে বিলম্বিত করে কিংবা থামাতে পারে এমন কোনো ওষুধ এখন পর্যন্ত বের হয়নি৷