পোলিশ ট্রাম্পের জয়ে কার পরাজয়?
১৩ জুলাই ২০২০বিশ্বের যে সব দেশে বর্তমানে চরম জাতীয়তাবাদী, বিতর্কিত শক্তির হাতে ক্ষমতা রয়েছে, পোল্যান্ড সেগুলির মধ্যে অন্যতম৷ তাই সে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে বাড়তি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে৷ রোববারের নির্বাচনের ফলাফল এখনো চূড়ান্ত না হলেও ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেই দুদা সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন বলে পূর্বাভাষ পাওয়া যাচ্ছে৷ সে ক্ষেত্রে মাত্র ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনি ক্ষমতায় টিকে যাবেন৷ তাঁর প্রতিপক্ষ ওয়ারশ শহরের মেয়র ও উদারপন্থি শিবিরের মেয়র রাফাল ত্রজাকভস্কি ৪৯ শতাংশ ভোট পেয়ে অল্পের জন্য জয়ের স্বাদ পেলেন না৷ চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত না হলেও রোববার রাতে দুদা জয়ের দাবি করেছেন৷ প্রায় ৭০ শতাংশ ভোটার এ দিন তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করায় তিনি বিশেষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ হওয়া সত্ত্বেও ইইউ-র মৌলিক মূল্যবোধ উপেক্ষা করার অভিযোগে পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির মতো দেশের সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে৷ দুদা এমন ‘ইললিবারাল ডেমোক্র্যাসি’ বা উদারপন্থা-বিরোধী গণতন্ত্রের অন্যতম প্রবক্তা৷ বিশেষ করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্বের অভিযোগে ইইউ তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ এমন প্রেক্ষাপটে দুদার জয় চূড়ান্ত হলে তাঁর জাতীয়তাবাদী-রক্ষণশীল ‘আইন ও বিচার' পার্টি পিআইএস-এর ক্ষমতা ২০২৩ সালের সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত অটুট থাকবে৷ উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে এই দল প্রথম ক্ষমতায় এসেছিল৷ সংসদে যথেষ্ট আসন না থাকায় দলটি প্রেসিডেন্টের ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল৷ উদারপন্থি প্রার্থীর জয় হলে সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেতো৷
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পিআইএস দলের জয় চূড়ান্ত হলে পোল্যান্ডে বিচার বিভাগের পর সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাও খর্ব করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ স্থানীয় পর্যায়ের প্রশাসনিক কাঠামোও দুর্বল করার প্রচেষ্টা হবে বলে বিরোধীরা মনে করছে৷ সংসদে বিরোধী পক্ষের শক্তি আগেই খর্ব করা হয়েছে৷ এমন স্বৈরাচারী প্রবণতা পোল্যান্ডের সঙ্গে ইইউ-র সংঘাত আরও তীব্র করে তুলতে পারে৷
বিরোধী উদারপন্থি শিবিরের প্রার্থী ত্রজাকভস্কি এমন অবস্থাতেও হাল ছাড়তে প্রস্তুত নন৷ তিনি বলেন, আদালতের মুক্তি, সংবিধান সুরক্ষা ও নারী অধিকার নিশ্চিত করতে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে৷ তাঁর মতে, একবার জেগে ওঠার পর আবার ঘুমিয়ে পড়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না৷
বিশ্বের অনেক দেশের মতো পোল্যান্ডের মানুষের মধ্যেও আদর্শগত ভিত্তিতে বিভাজন সম্পর্কে অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত দুদার জয় অ্যামেরিকার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের উপরও প্রভাব ফেলবে কিনা, তা নিয়েও জল্পনাকল্পনা চলছে৷ ট্রাম্প এর ফলে বাড়তি উৎসাহ পাবেন, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ দেখছেন না পর্যবেক্ষকরা৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এএফপি)