১৯৩৯ সালে পোল্যান্ড দখলের পর সেখানে নাৎসি জার্মানির গড়ে তোলা কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পগুলোর সঙ্গে পোল্যান্ডের নাম জড়ানো হলে হলোকস্ট আইনে তা অপরাধ বলে বিবেচিত হবে৷ বৃহস্পতিবার দেশটির সেনেট এ সংক্রান্ত একটি বিল পাস করে৷
বিজ্ঞাপন
এর আগে গত সপ্তাহে পোল্যান্ডের সংসদের নিম্নকক্ষে বিলটি পাস হয়৷ এখন প্রেসিডেন্ট আনজেই ডুডাকে আগামী ২১ দিনের মধ্যে সই করে এই বিলকে আইনে পরিণত করতে হবে, নয়তো ভেটো দিতে হবে৷ তবে প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যে বিলের পক্ষে তাঁর মত প্রকাশ করেছেন৷
হলোকস্ট বিলে বলা হয়েছে, দখলকৃত পোল্যান্ডে নাৎসি জার্মানির তৈরি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পগুলোকে ‘পোলিশ ডেথ ক্যাম্প' বলে কেউ উল্লেখ করলে তাঁকে জরিমানা কিংবা সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হবে৷ জার্মানির তৃতীয় রাইখ সরকারের চালানো নির্যাতনের সঙ্গে পোল্যান্ডের জড়িত থাকার অভিযোগও অবৈধ বলে বিবেচিত হবে৷
ঐতিহাসিক অনেক ভুলের প্রেক্ষিতে পোল্যান্ডের ভাবমূর্তি রক্ষায় এই আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার৷ তবে যুদ্ধ নিয়ে কাজ করা গবেষকরা এই আইনের আওতায় পড়বেন না বলে জানানো হয়েছে৷
Bundestag commemorates Holocaust
02:53
এর আগে বিলটি পাস না করতে পোল্যান্ডের সেনেটের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল ইসরায়েল৷ বিশেষ করে আইনের একটি ধারার প্রতি আপত্তি ছিল তাদের৷ ঐ ধারায় নাৎসি জার্মানির ইহুদি নিধনের সঙ্গে পোল্যান্ডের জড়িত থাকার বিষয়টি এড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে, বলে অভিযোগ ইসরায়েলের৷
যুক্তরাষ্ট্রও বিলের ব্যাপারে তাদের উদ্বেগ জানিয়েছিল৷ বিলটি সেনেটে উত্থাপিত হওয়ার আগে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নাওয়ার্ট বলেছিলেন, ‘‘বিলটি আইনে পরিণত হলে তা বাক স্বাধীনতা ও অ্যাকাডেমিক ডিসকোর্সকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে৷'' এছাড়া পোল্যান্ডের কৌশলগত স্বার্থ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে পোল্যান্ডের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই আইনের প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে, তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি৷
উল্লেখ্য, ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত নাৎসি জার্মানির দখলে ছিল পোল্যান্ড৷ সেই সময় পোল্যান্ডের প্রায় ১৯ লক্ষ নাগরিককে হত্যা করা হয়েছিল৷ এছাড়া দেশটিতে থাকা প্রায় ৩২ লক্ষ ইহুদির মধ্যে মাত্র তিন লক্ষ ৮০ হাজার জন সেই সময় প্রাণে বাঁচতে পেরেছিলেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের হলোকস্ট মেমোরিয়াল ইয়াদ ভাসেম৷
পোল্যান্ডের হলোকস্ট বিলেরও বিরোধিতা করেছে ইয়াদ ভাসেম৷ তারা বলছে, এই বিল ‘‘হলোকস্টের সময় জার্মানরা পোল্যান্ডের নাগরিকদের কাছ থেকে যে সহায়তা পেয়েছিল, সেই ঐতিহাসিক সত্যকে অস্পষ্ট করার জন্য দায়ী৷'' তবে নাৎসিদের তৈরি ক্যাম্পগুলোকে ‘পোলিশ' বলাটাও ‘ইতিহাসকে ভুলভাবে উত্থাপন' বলে মনে করে ইয়াদ ভাসেম৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি)
স্মরণে হিটলারের পরাজয়ের দিন
৭০ বছর আগের এই দিনে প্রায় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া যুদ্ধের দামামা বন্ধ হয়েছিল৷ সেদিনই হিটলারের বাহিনী আত্মসমর্পন করেছিল৷ তাই জার্মানি প্রতি বছর স্মরণ করে সেই দিনটিকে৷
ছবি: DW/F. Müller
দীর্ঘতম যুদ্ধের স্মৃতি
আখেন শহরের হ্যুর্টিগেনের কাছের এই জঙ্গলে হিটলারের বাহিনীর সঙ্গে মিত্র বাহিনীর ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছিল৷ ১৯৪৪ সালের অক্টোবরে শুরু হয়ে ১৯৪৫ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে এই যুদ্ধ৷ তারপর আত্মসমর্পন করে জার্মানরা৷ জার্মানির মাটিতে আর কোথাও এত দীর্ঘ যুদ্ধ হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Oliver Berg
রেমাগেনের সেই ‘অলৌকিক’ সেতু
রেমাগেন শহরের এই সেতুটি ‘মিরাকল অফ রেমাগেন’ নামে পরিচিত৷ এমন নামকরণের কারণও আছে৷ ১৯৪৫ সালের ৭ই মার্চ প্রথমবারের মতো রাইন নদীর ওপরের এই সেতু অতিক্রম করে মিত্র বাহিনী৷ শুরু হয় জার্মান বাহিনীর বোমা বর্ষণ৷ মিত্র বাহিনী দখল করে নেয়ার দশ দিন পর ধসে পড়ে ব্রিজটি৷ কিন্তু আধুনিক জার্মানি সেই ইতিহাস ভুলেনি৷ ব্রিজটির ধ্বংসাবশেষের মধ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে ‘শান্তির জাদুঘর’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Thomas Frey
রাইশভাল্ডের সমাধি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত অ্যামেরিকান যোদ্ধাদের মৃতদেহ যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হলেও ব্রিটিশ যোদ্ধাদের জার্মানিতেই সমাধিস্থ করা হয়৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের ১৫টি সমাধি রয়েছে জার্মানিতে৷ এর মধ্যে রাইশভাল্ড বনাঞ্চলের এই ‘কমনওয়েলথ ওয়ার সেমেট্রি’-ই সবচেয়ে বড়৷ ৭৬৫৪ জনকে সমাধিস্থ করা হয় এখানে৷
ছবি: Gemeinfrei/DennisPeeters
সবচেয়ে বড় যুদ্ধের স্মৃতি
জার্মানির মাটিতে সবচেয়ে বড় যুদ্ধটি হয়েছিল এই সিলো হাইটসে৷ ১৯৪৫ সালের ১৬ এপ্রিল বার্লিন অভিমুখে অভিযানের অংশ হিসেবে আক্রমণ শুরু করে সোভিয়েত বাহিনী৷ ৯ লাখ সৈন্য নিয়ে গড়া সোভিয়েত বাহিনীর মুখোমুখি হয়েছিল ৯০ হাজার জার্মান৷ অনেক সৈন্য মারা যায় সেই যুদ্ধে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Patrick Pleul
রুশ-জার্মান জাদুঘর
১৯৪৫ সালের ৮ই থেকে ৯ই মে-র মধ্যে বার্লিন-কার্লহোর্স্ট অফিসার্স মেস-এ আত্মসমর্পনের দলিলে স্বাক্ষর করে জার্মান বাহিনী৷ সেখানেও গড়ে তোলা হয়েছে জাদুঘর৷ জাদুঘরের মূল আকর্ষণ ইংরেজি, জার্মান এবং রুশ ভাষায় লেখা আত্মসমর্পনের সেই দলিল৷
ছবি: picture-alliance/ZB
সোভিয়েত সৈন্যদের স্মরণে
১ হাজার বর্গ মিটার জায়গা জুড়ে ট্রেপটাওয়ারের এই স্মৃতিসৌধ৷ দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় বার্লিন অভিযানে যেসব সোভিয়েত সৈন্য প্রাণ হারিয়েছিলেন, তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই গড়ে তোলা হয় এটি৷ স্মৃতিসৌধের মূল কাঠামোটি আসলে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দুটি প্রতীকি পতাকা৷ ‘রেড আর্মির’ প্রয়াত সদস্যদের স্মরণ করতে পতাকা দুটির আদল তৈরি করা হয়েছে লাল গ্রানাইট পাথর দিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/Matthias Tödt
পস্টডাম সম্মেলন
নাৎসি বাহিনীর আত্মসমর্পনের পর জার্মানির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় বসে মিত্র শক্তির প্রধান তিন দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং রাশিয়ার প্রধান৷ পস্টডামের সেসিলিয়ানহোফ প্যালেসে বসে সেই বৈঠক৷ হ্যারি ট্রুম্যান, উইনস্টন চার্ইল এবং জোসেফ স্ট্যালিন অংশ নিয়েছিলেন সেই বৈঠকে৷