চ্যান্সেলর হওয়ার পর প্রথমবারের মতো নাৎসি নির্যাতনের স্মৃতি বিজড়িত আউসভিৎজ-বেয়ারকানাও পরিদর্শনে গেছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ বলেছেন, সেই সময়কার অপরাধ স্মরণ করা এবং তার দায় নেয়া জার্মানির জাতীয় অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত৷
বিজ্ঞাপন
চ্যান্সেলর হিসেবে ১৪ বছর দায়িত্ব পালনের পর প্রথমবারের মতো পোল্যান্ডের আউসভিৎজ-বেয়ারকানাও পরিদর্শন করলেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ এ সময় তার সঙ্গে উপস্তিত ছিলেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতাউশ মোরাভিয়েস্কি৷
এর আগে নাৎসি শাসন আমলে ইহুদি নিধনের ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে ম্যার্কেলকে সেখানে আসার আহবান জানায় দ্য ইন্টারন্যাশনাল আউসভিৎজ কমিটি৷ ম্যার্কেল বেয়ারকানাও ক্যাম্পে গিয়ে বক্তৃতায় বলেন. ‘‘জার্মানির দ্বারা এখানে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার জন্য আমি ভীষণ মর্মাহত৷'' এই অপরাধ স্মরণ করা এবং তার দায় নেয়াকে জার্মানির জাতীয় অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷
ম্যার্কেল বলেন, ‘‘ইহুদিদের জীবন রক্ষা জার্মানদের দায়িত্ব৷’’ জার্মানিতে ইহুদিবিদ্বেষ সহ্য করা হবে না বলেও যোগ করেন তিনি৷
ম্যার্কেল আউসভিৎজের একটি দেয়াল পরিদর্শন করেন, যেখানে নাৎসি আধা সামরিক বাহিনী গুলি করে কয়েক হাজার পোলিশ রাজনৈতিক বন্দিকে হত্যা করে৷
আইসভিৎজ-বেয়ারকানাও ফাউন্ডেশনের ১০তম বার্ষিকী উপলক্ষে সেখানে যান ম্যার্কেল৷ সংগঠনটিতে ছয় কোটি ৭০ লাখ ডলার অনুদান দেয়ার ঘোষণাও দেন তিনি৷
ক্রিস্টফ স্ট্রাক/এফএস
জার্মানিতে ইহুদি উপাসনালয়ে যত হামলা
জার্মানির হালে শহরে বুধবার ইহুদিদের একটি উপাসনালয়ে হামলার চেষ্টা হয়েছে৷ তবে সিনাগগে ঢুকতে না পেরে দুইজন পথচারীকে হত্যা করেন এক জার্মান আততায়ী৷ ছবিঘরে কয়েকটি সিনাগগে হামলার ঘটনা তুলে ধরা হলো৷
ছবি: Imago Images/S. Schellhorn
কোলন, ১৯৫৯: স্বস্তিকা ও হেট স্পিচ
১৯৫৯ সালের ডিসেম্বরে ‘ডয়চে রাইশপার্টাই’ নামের একটি চরম ডানপন্থি দলের সদস্যরা কোলনের সিনাগগে স্বস্তিকা এঁকে দিয়েছিল৷ এছাড়া ‘জার্মানদের দাবি: ইহুদিরা চলে যাও’ শব্দগুলোও লিখে দেয় তারা৷ এরপর জার্মানির বিভিন্ন এলাকায়ও ইহুদিবিরোধী গ্রাফিতির দেখা পাওয়া গিয়েছিল৷ ঐ ঘটনায় জড়িতদের ধরা হয়েছিল এবং ভবিষ্যতে কেউ যেন ‘মানুষের উসকানিমূলক’ কিছু করতে না পারে সেজন্য সংসদে আইন পাস হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images/Joko
ল্যুবেক, ১৯৯৪: অগ্নিসংযোগ
মার্চ মাসের এই ঘটনা সারা বিশ্বের মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল৷ চরম ডানপন্থি চার ব্যক্তি ল্যুবেকের সিনাগগে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল৷ এই ঘটনার এক বছর পর আবারও একই সিনাগগে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
এসেন, ২০০০: পাথর ছোড়া
লেবানন থেকে আসা ১০০-র বেশি ফিলিস্তিনি ২০০০ সালের অক্টোবরে এসেন শহরের পুরনো সিনাগগে পাথর ছুড়ে মেরেছিল৷ ‘মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত’-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শেষে এই হামলা করা হয়৷ এই ঘটনায় একজন পুলিশ আহত হয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/B. Boensch
ড্যুসেলডর্ফ, ২০০০: অগ্নিসংযোগ ও পাথর নিক্ষেপ
ইহুদি ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘প্রতিশোধ’ নিতে ১৯ বছর বয়সি এক ফিলিস্তিন ও ২০ বছর বয়সি মরক্কোর এক নাগরিক আগুন ও পাথর দিয়ে ড্যুসেলডর্ফের নতুন সিনাগগে হামলা করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Weihrauch
মাইনৎস, ২০১০: মলটফ ককটেল হামলা
১৯৩৮ সালে নাৎসি বাহিনী মাইনৎসের একটি সিনাগগ পুড়িয়ে দিয়েছিল৷ সেখানে নতুন করে একটি সিনাগগ নির্মাণ করা হয়৷ তবে উদ্বোধনের কিছুক্ষণ পরই সেখানে মলটফ ককটেল হামলা চালানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg/Bildarchiv Steffens
ভুপার্টাল, ২০১৪: অগ্নিসংযোগ
ফিলিস্তিনি তিন তরুণ ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ভুপার্টালের সিনাগগের প্রবেশ দরজায় দাহ্য পদার্থ ছুড়ে মেরেছিল৷ তবে এই ঘটনায় ইহুদিবিদ্বেষের পক্ষে ‘প্রমাণ পাওয়া যায়নি’ বলে আদালত রায় দিয়েছিলেন৷ জার্মানির ইহুদি ও বিদেশি গণমাধ্যম এই রায়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Seidel
বার্লিন, ২০১৯: ছুরি নিয়ে হামলা
অক্টোবরের ৪ তারিখ শাবাতের পূর্বে বার্লিনের নতুন সিনাগগে স্থাপন করা একটি বেড়ায় ছুড়ি নিয়ে উঠে পড়েছিলেন এক ব্যক্তি৷ নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে ধরে ফেলেন৷ পরে ছেড়েও দেন৷ ইহুদি নেতারা পুলিশের এই সিদ্ধান্তকে বিচারব্যবস্থার ‘ব্যর্থতা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Avers
হালে, ২০১৯: গুলি
ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের জন্য বছরের সবচেয়ে পবিত্র দিন ‘ইয়ম কিপুর’ উপলক্ষ্যে ৯ অক্টোবর সিনাগগে উপস্থিত হয়েছিলেন ৭০-৮০ জন মানুষ৷ অস্ত্র নিয়ে সেই সিনাগগে ঢোকার চেষ্টা করেছিল ২৭ বছর বয়সি জার্মান আতাতয়ী৷ তবে নিরাপত্তারক্ষীদের বাধার মুখে সিনাগগে ঢুকতে না পেরে রেগে গিয়ে গুলি করে দুইজন পথচারীকে হত্যা করেন তিনি৷ জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার জানিয়েছেন, ইহুদি-বিদ্বেষের কারণেই তিনি হামলা চালিয়েছেন৷